রসে রসনায় – পর্ব ০১
এই কলমে থাকবে দুটি করে রেসিপি। একটি রোজকার তালিকায় থাকা খাবারের পদ। আর একটি রাখা হবে উৎসব-পার্বণকে ভেবে। কলমটি থাকবে প্রতিমাসে পনের দিন অন্তর। লিখবেন রিংকু মিত্র। শুরু আজ।
◾লাউশাক চিংড়ি ভর্তা
বাঙালি রসনা এমন, সেখানে রান্না সুস্বাদু হলেই হলো। এছাড়া খাদ্য সংস্কৃতিতে সে যে যথেষ্ট বৈচিত্রবিলাসী, সেটাও বলার অপেক্ষা রাখে না। এহেন বাঙালির রোজকার খাবারের পাতে স্বাদ-বৈচিত্র্য আনতে এই পদটির জুড়ি মেলা ভার। ভর্তা ভালোবাসেন না, এমন বাঙালি খুব কমই আছেন। আজ তালিকায় থাকল তেমনই একটি। এখানে আমি ২ জনের আন্দাজমতো উপকরণ জানালাম।
উপকরণ
- লাউশাক এক আঁটি–কচি পাতাগুলো বেছে নিন, কচি ডাঁটাও দিতে পারেন
- ছোট চিংড়ি মাছ ১০০ গ্রাম
- একটা গোটা রসুন
- কাঁচা লঙ্কা ৪/৫ টা (ঝাল কমবেশির ব্যাপারটা নিজেরা দেখে নেবেন)
- এক চা চামচ কালো জিরে
- আন্দাজমতো নুন আর সামান্য চিনি
- সর্ষের তেল ৩ টেবল চামচ
প্রণালী
লাউশাকের পাতা আর কচি ডাঁটা ভালো করে ধুয়ে জল ঝরিয়ে নিন।
এরপর কড়াইতে দুই টেবল চামচ তেল দিয়ে চিংড়ি মাছ আর কালো জিরে একসঙ্গে ভেজে নিয়ে একটি পাত্রে তুলে রাখুন। কড়া ভাজা হবে। তবে, দেখবেন যেন পুড়ে না যায় !
এবার ওই তেলেই রসুন, কাঁচালঙ্কা ভাজুন (এটাও সামান্য কড়া ভাজা) এবং এর মধ্যে শাকটা দিয়ে আন্দাজমতো নুন মিশিয়ে ঢাকা দিয়ে দিন।
শাক মজে এলে, তার সঙ্গে চিংড়ি আর কালোজিরে ভাজাটা মিশিয়ে দিন।
একটু নাড়াচাড়া করে পুরোটা ভালো করে মিশিয়ে, মিশ্রণটা শিল-নোড়ায় বেটে নিন। আমি শিল-নোড়ায় বাটি। আপনারা মিক্সিতেও বাটতে পারেন।
এবার আর একবার কড়াইতে এক টেবল চামচ তেল দিয়ে পুরো ভর্তাটা একটু কষিয়ে নিয়ে গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।
◾কেরালা চিকেন স্টু
স্বাদের সঙ্গে স্বাস্থ্যের মেলবন্ধন যাঁরা ঘটাতে চান, তাঁদের জন্য বিশেষ উপযোগী হবে এই পদটি। একদম কম মশলাতে তৈরি করা যায় অতি সুস্বাদু এই পদ। তবে, যাঁদের নারকেল সহ্য হয় না, তাঁদের এটা না খাওয়াই ভালো। যাঁদের নারকেল খেতে মানা নেই, তাঁরা জেনে রাখুন, নারকেল হলো অত্যন্ত উচ্চ পুষ্টিগুণসম্পন্ন একটি ফল। আমি এখানে ৪ জনের আন্দাজে উপকরণ জানালাম।
উপকরণ
- মুরগির মাংস ৫০০ গ্রাম
- একটা বড় পেঁয়াজ কুচোনো
- আদা-রসুন বাটা দুই চা চামচ
- নারকেলের দুধ বড় এক কাপ–এটা একেবারে ঘন ব্যবহার না করে, আপনারা যেমন গ্রেভি চান, সেই অনুপাতে জল মিশিয়ে নিন (আন্দাজ ২/৩ কাপ)
- শুকনো লঙ্কা দুটো আর কাঁচা লঙ্কা দুটো কুচোনো–ঝাল কম চাইলে লঙ্কার বিচি বের করে ফেলে দিতে পারেন
- একটা মাঝারি সাইজের টমেটো কুচোনো
- একটা বড় সাইজের আলু বড় বড় টুকরো করে কাটা
- এক টেবল চামচ লেবুর রস
- সামান্য ধনেপাতা কুচি
- গোলমরিচ গুঁড়ো হাফ চা চামচ
- নুন আন্দাজমতো
- সাদা তেল দুই টেবল চামচ
প্রণালী
মুরগি ভালো করে ধুয়ে জল ঝরিয়ে রাখুন। জল ঝরে গেলে তাতে নুন আর গোলমরিচ গুঁড়ো দিয়ে মেখে অন্তত কুড়ি মিনিট রাখতে হবে।
এরপর কড়াইতে তেল দিয়ে, তেল গরম হলে, তার মধ্যে পেঁয়াজ কুচি দিযে ভালো করে ভাজতে থাকুন। পেঁয়াজ হালকা বাদামি রং হলে, তাতে শুকনো লঙ্কা আর কাঁচা লঙ্কা কুচি দিয়ে দিন।
এরই সঙ্গে দিতে হবে আদা-রসুন বাটা। একটু কষাবার পর, কাঁচা গন্ধ চলে গেলে, মুরগি আর নুন দিয়ে ঢাকা দিয়ে দিন। নুন আগেই মাখানো ছিল। সেই বুঝেই এবারের নুনের পরিমাণ রাখবেন। সবকিছু দিয়ে কষাতে থাকুন।
এরপর টমেটো কুচি দিয়ে আবার কষাতে হবে। তেল ছেড়ে এলে নারকেলের দুধ মেশান। তারপর ঢাকা দিয়ে রান্না করতে থাকুন।
এবার টুকরো করে কাটা আলুটা দিতে হবে। কিছুক্ষণ পর মুরগি আর আলু সেদ্ধ হলে লেবুর রস দিয়ে দিন। নামাবার সময় সামান্য ধনেপাতা কুচি মেশালে স্বাদ জমে যাবে। হাতে গড়া রুটি বা পাউরুটির সঙ্গে পরিবেশন করুন।