রসে রসনায় – পর্ব ১০
বাঙালির পার্বণ মানেই পেটপুজোর ভরপুর আয়োজন। আসন্ন দুর্গাপুজোকে ঘিরে আমাদের এই বিভাগেও আজ থেকে থাকছে বিশেষ আয়োজন। পরপর চারটি শুক্রবার, পুজোর চারদিনের রেসিপি। জেনে নিন আমিষ-নিরামিষ ও মিষ্টির রকমারি। জানিয়েছেন জয়ন্তী ঠাকুর।
◾ পনির পরোটা
আমাদের জলখাবারের মধ্যে পরোটা অতি প্রিয় খাবার। স্বাদ ও স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে, একেবারে ঘরোয়া পদ্ধতিতে পনির পরোটার রেসিপি জানালাম ২/৩ জনের হিসেবে।
উপকরণ
- ময়দা ৪০০ গ্রাম
- পনির ১৫০ গ্রাম
- সুজি ১ টেবিল চামচ
- রিফাইন্ড তেল ৪ টেবিল চামচ
- ধনেপাতা ২ টেবিল চামচ
- কাঁচালঙ্কা কুচি ১ চা চামচ
- আদা কুচি ১ চা চামচ
- জোয়ান আধ চা চামচ
- গরম মশলা গুঁড়ো আধ চা চামচ
- নুন ও চিনি পরিমানমতো
প্রণালী
প্রথমে সুজি একটু হালকা গরমজলে ১০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। এরপর ময়দার মধ্যে রিফাইন্ড তেল, জোয়ান, নুন, চিনি ও সুজি দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিয়ে, হালকা গরমজল দিয়ে ময়দাটা নরম করে মেখে নিন । ময়দা মাখার পরে একটা ভিজে পাতলা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখুন ১৫ মিনিট, যাতে পরোটা বেলার সময় ফেটে না যায়। পুর তৈরির জন্য আগে পনির গ্রেট/কুরিয়ে নিন। গ্যাসে কড়াই বসিয়ে ১ টেবিল চামচ তেল দিন। তেল গরম হওয়ার পর তাতে আদাকুচি, কাঁচালঙ্কা কুচি, ধনেপাতা কুচি ও গ্রেট করা পনির দিয়ে, গরম মশলার গুঁড়ো ছড়িয়ে হালকা করে ভেজে নিন। ব্যস, পুর তৈরি। পুর ঠান্ডা হতে দিন। এবার মাখানো ময়দা থেকে লেচি কেটে গোল করে বাটির আকারে তৈরি করে তারমধ্যে পুর ভরে ভালোভাবে মুখটা বন্ধ করে একে একে বেলে নিন। এরপর গ্যাসে তাওয়া বসিয়ে, এক এক করে ভেজে নিন আর আলুর দম আর মিক্সড আচারের সঙ্গে গরম গরম পরিবেশন করুন। এরই সঙ্গে তাই দিয়ে দিলাম কাশ্মীরি আলুর দমের রেসিপি।
◾ কাশ্মীরি আলুর দম
রোজকার আলুর দমের থেকে কাশ্মীরি আলুর দমের স্বাদ বেশ খানিকটা আলাদা। উৎসব মরসুমে পরোটার সঙ্গে খাওয়ার রেসিপি হিসেবে তাই আজ এটাই দিলাম ২/৩ জনের মতো ।
উপকরণ
- আলু ৪০০ গ্রাম
- সরষের তেল ২ টেবিল চামচ
- পেঁয়াজ ১টা মাঝারি মাপের
- টমেটো ১টা মাঝারি মাপের
- আদা ও রসুন বাঁটা ১ চা চামচ
- কাজু বাদাম বাঁটা ১ টেবিল চামচ
- ঘি আধ চা চামচ
- সাদা জিরে গোটা আধ চা চামচ
- কাশ্মীরি লঙ্কার গুঁড়ো আধ চা চামচ
- গরম মশলা গুঁড়ো আধ চা চামচ
- ধনে ও সাদা জিরে গুঁড়ো আধ চা চামচ
- হলুদ আধ চা চামচ
- নুন-চিনি পরিমানমতো
প্রণালী
আলু ছুলে দুই ভাগ করে কেটে, ধুয়ে নিন। তারপর সামান্য তেলে হলুদ ও আন্দাজমতো নুন দিয়ে আলু ভেজে তুলে রাখুন । এবার কড়াইতে আরও একটু তেল দিয়ে সাদা জিরে ফোড়ন দিন। এরপর তারমধ্যে পেঁয়াজ ও টমেটো কুচি দিয়ে, হালকা করে ভেজে, তার সঙ্গে আদা-রসুন বাঁটা দিয়ে কষাতে থাকুন। এরপর বাকি সব মশলা দিয়ে, আরও একটু কষিয়ে নিন। কষানো হলে ভাজা আলুগুলো দিয়ে আর একটু নাড়াচাড়া করে গরম জল দিয়ে দিন পরিমাণ মতো। মাখামাখা হবে, সেই হিসেবে জল দেবেন। আলু সেদ্ধ হয়ে গেলে কাজু বাদাম বাঁটা দিয়ে, নাড়াচাড়া করে ওপর থেকে ঘি-গরম মশলা গুঁড়ো ছড়িয়ে নামিয়ে নিন। কাশ্মীরি আলুর দম তৈরি।
◾ রোস্টেড তিল কাতলা
পুজোয় বাঙালির খাবার পাতে যতই বৈচিত্রের সমাহার থাক, বাঙালির যে কোনও পার্বণে মাছ একটি অত্যাবশ্যকীয় পদ। যাঁরা কাতলা মাছের একই ধরনের ঝোল-ঝাল খেতে খেতে ক্লান্ত, তাঁদের জন্য আজ অন্যরকম একটি পদের রেসিপি জানালাম। আমি এখানে ৫ জনের হিসেবে রেসিপি দিয়েছি।
উপকরণ
- কাতলা মাছ ৫০০ গ্রাম
- রোস্টেড তিল গুঁড়ো ১০০ গ্রাম
- সরষের তেল ৩ টেবিল চামচ
- কাঁচালঙ্কা ৪টি
- কসৌরি মেথি গুঁড়ো আধ চা চামচ
- ধনে গুঁড়ো আধ চা চামচ
- কালো জিরে ১ চা চামচের ৩ ভাগের ১ ভাগ
- আদা বাঁটা ১ চা চামচ
- তেজপাতা ২টি
- হলুদ আধ চা চামচ
- নুন-চিনি পরিমাণমতো
প্রণালী
মাছ ভালো করে ধুয়ে, নুন-হলুদ মাখিয়ে রেখে দিন ৫ মিনিট। এরপর গ্যাসে কড়াই বসিয়ে পুরো তেলটা দিয়ে দিন। তেল গরম হওয়ার পরে মাছের পিসগুলো হালকা করে ভেজে তুলে রাখুন। এবার ওই তেলে কালো জিরে ফোড়ন দিন। ফোড়ন তৈরি হয়ে গেলে একে একে আদা বাঁটা, ধনে গুঁড়ো, কাঁচালঙ্কা, নুন ও চিনি দিয়ে কষাতে থাকুন । কষানোর মধ্যেই সামান্য গরম জল দিয়ে, ভেজে রাখা মাছটা দিন। ঝোলটা মাখা মাখা হবে, সেই হিসেবে জল দেবেন। ঝোল ফুটে উঠলে রোস্টেড তিলের গুঁড়ো ও কসৌরি মেথি গুঁড়ো দিয়ে নামিয়ে দিন।
◾ দইপোয়া
উৎসব মানেই শেষ পাতে একটি মিষ্টির পদ না থাকলেই নয়। পুজোর প্রথম দিন অর্থাৎ এবারের সপ্তমী স্পেশাল হিসেবে বানাতে পারেন দইপোয়া। বেশ অন্যরকম স্বাদের এই মিষ্টি। আমি এখানে ২/৩ জনের উপযোগী রেসিপি জানালাম।
উপকরণ
- ময়দা ১ কাপ
- দই ১ কাপ
- চিনি ১ কাপ
- মৌরি আধ চা চামচ
- ছোট এলাচের গুঁড়ো আধ চা চামচ
- সাদা তেল ৫ টেবিল চামচ
প্রণালী
ময়দা, চিনি ও দই একটা বাটির মধ্যে ভালোভাবে মিশিয়ে নিয়ে গোলা তৈরি করুন, পরিমাণমতো জল দিয়ে। এরপর ওই গোলার মধ্যে মৌরি ও এলাচ গুঁড়ো দিয়ে আর একটু ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। গোলাটা খুব ঘন বা পাতলা করবেন না। এরপর গ্যাসে কড়াই বসিয়ে সাদা তেল দিন। তেল গরম হওয়ার পরে ছোটো গোল হাতা দিয়ে একটা একটা করে দইপোয়া তেলে দিয়ে লালচে করে ভেজে তুলুন। মিডিয়াম আঁচে ভাজবেন। না হলে পুড়ে যেতে পারে।
গরম গরম পরিবেশন করুন।