রূপকথার মোড়কে একালের গল্প
আকারে ছোট হলেও বিনোদন ক্ষেত্রে টেলিভিশনের গুরুত্ব আজ অসীম। মেগা থেকে রিয়ালিটি, গেম শো থেকে ম্যাগাজিন–টিভি শোয়ের চাহিদা ছিল, আছে, থাকবে। এই বিভাগে তারই খবর পড়বেন প্রতি সপ্তাহে।
স্টার জলসার নতুন মেগা ‘পঞ্চমী’-র হাত ধরে ছোটপর্দায় কামব্যাক রাজদীপের। জুটি বাঁধছেন সুস্মিতার সঙ্গে। মেগার সেট ঘুরে লিখেছেন সোমনাথ লাহা।
কালার ফিউশন স্টুডিওতে পৌঁছে চোখে-মুখে তাক লেগে যাওয়ার মতোই অবস্থা। এক ঝটকায় মনে হবে রীতিমতো কোনও ধনী পরিবারের অন্দরে প্রবেশ করেছি। ড্রয়িংরুমের মাঝখান দিয়ে সিঁড়ি উঠে দোতলায় চলে গিয়েছে। ঝাঁ চকচকে আসবাবপত্র, ডাইনিং রুম। ড্রইংয়রুমের দেওয়ালে গ্লাস পেন্টিংয়ের পাশাপাশি ময়ূরের ছবি। বেডরুমের দেওয়ালে থ্রি ডি পেন্টিং, ঘর সংলগ্ন ছোট বাগান। ভুল ভাঙলো কিছুক্ষণ পরেই। আসলে এটাই স্টার জলসায় শুরু হতে চলা নতুন মেগা ‘পঞ্চমী’-তে চৌধুরী বাড়ির অন্দরমহল। সেই বাড়ির ছেলে কিঞ্জলই এই গল্পের নায়ক। মাত্র ১৫ দিনে এই সুদৃশ্য ঝাঁ চকচকে সেটটি তৈরি করেছেন শিল্প নির্দেশক নরেন্দ্র ওঝা।
ধারাবাহিকের নায়কের বাড়ির অন্দরমহলেই সাংবাদিক সন্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল। উপস্থিত ছিলেন মেগার নায়ক কিঞ্জল ও নায়িকা পঞ্চমী রূপে যথাক্রমে অভিনেতা রাজদীপ গুপ্ত ও অভিনেত্রী সুস্মিতা দে। সঙ্গে মেগার কাহিনি-চিত্রনাট্যকার তথা সৃজনশীল পরিচালক ও প্রযোজক সাহানা দত্ত। উপস্থিত সহ প্রযোজক রোহিত সামন্তও। একদা ছোটপর্দার পরিচিত অভিনেতা রোহিত হাত রেখেছেন প্রযোজনাতেও। সাহানার সঙ্গে যৌথভাবে দু’বছর যাবত রোহিত তৈরি করেছেন প্রযোজনা সংস্থা মিসিং স্ক্রু। সেই প্রযোজনা সংস্থার ব্যানারেই নির্মিত হয়েছে মেগা ধারাবাহিক ‘পঞ্চমী’।
মেগার কাহিনি আধুনিক সময়কালের হলেও, এর মধ্যে রয়েছে রূপকথার মোড়ক। পাশাপাশি গল্পের মধ্যে রয়েছে ইমোশনাল টাচও। একজন মানুষ আসলে দ্বিধাবিভক্ত। তার দু’রকমের চাওয়া-পাওয়া, ইচ্ছে-অনিচ্ছে, সুখ-দুঃখের টানাপোড়েন, দোটানার আবেগপূর্ণ কাহিনিকেই রূপকথার মোড়কে তুলে ধরা হয়েছে। মেগার কাহিনি আবর্তিত হয়েছে গ্রামের মেয়ে পঞ্চমীকে কেন্দ্র করে। জন্মলগ্ন থেকে তাকে মানুষের মতো দেখতে হলেও সে আসলে সাপ। সাপেরা তার কথা শোনে। কিন্তু তার এহেন অদ্ভুত ক্ষমতার উৎস কী, পঞ্চমী নিজে তা জানে না। জন্ম থেকেই শিবভক্ত সে। তার বড় হওয়া বাবা নীলকন্ঠের মন্দিরে। সে চায় নীলকন্ঠের মতোই মানুষের কল্যাণ করতে, সকলকে বাঁচাতে। কিন্তু তার সর্পসত্ত্বা চায় মায়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে। ফলে দ্বৈতসত্ত্বার টানাপোড়েনে জর্জরিত পঞ্চমী।
অন্যদিকে রয়েছে কিঞ্জল চৌধুরী। হাসিখুশি, প্রাণোচ্ছ্বল কিঞ্জল বিদেশে থেকে পড়াশোনা করেছে। একজন সম্ভবনাময় ব্যবসায়ী কিঞ্জলের লক্ষ্য হল সাপের বিষ থেকে জীবনদায়ী ঔষুধ তৈরি করা। কিন্তু তার কোষ্ঠীতে রয়েছে সাপের ফাঁড়া। এ বছর তার ফাঁড়া তথা মৃত্যুযোগ রয়েছে। সেই কারণেই তাকে প্রায় কোথাওই যেতে দেওয়া হয় না। এমতাবস্থায় ঘটনাচক্রে পঞ্চমীর সঙ্গে দেখা হয় কিঞ্জলের। পঞ্চমীর অলৌকিক ক্ষমতার কথা শুনে কিঞ্জলের মা তাকেই নিজেদের বাড়িতে নিয়ে আসেন ছেলের রক্ষাকর্তা হিসেবে। কিন্তু পঞ্চমী যে নিজেই মনুষ্যরূপী সাপ। সেকথা কেউই জানে না। এমনকি পঞ্চমী নিজেও জানে না। আসলে তার মায়ের মৃত্যুর জন্য দায়ী এই চৌধুরী পরিবারকে ধ্বংস করার পাশাপাশি কিঞ্জলকেও মারতে হবে পঞ্চমীকে। কিন্তু যাকে সে ভালবাসে তার উপর সে প্রতিশোধ নেবে কি করে! এমন দ্বিধাবিভক্ত পরিস্থিতিতে কি করবে পঞ্চমী? সে কি পারবে তার মায়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে? নাকি কল্যাণকামী সত্ত্বার কাছে হার মানবে প্রতিশোধস্পৃহা! সেই উত্তর জানতে চোখ রাখতে হবে টেলিভিশনের পর্দায়।
মেগায় পঞ্চমীর চরিত্রে রয়েছেন সুস্মিতা দে। ইতিপূর্বে ‘অপরাজিতা অপু’, ‘বৌমা একঘর’ -র মতো ধারাবাহিকে তাঁর অভিনয় মন ছুঁয়ে গিয়েছে দর্শকদের। অপরদিকে এই ধারাবাহিকের হাত ধরে দীর্ঘ ছ’বছর পর ছোটপর্দায় ফিরছেন রাজদীপ গুপ্ত। একদা স্টার জলসার জনপ্রিয় মেগা ‘ওগো বধূ সুন্দরী’-র হাত ধরেই নিজের অভিনয় কেরিয়ার শুরু করেছিলেন এই অভিনেতা। তাঁকে এই ধারাবাহিকে দেখা যাবে কিঞ্জলের ভূমিকায়। ধারাবাহিকে অন্যান্য চরিত্রে রয়েছেন কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়, স্নেহা চট্টোপাধ্যায়, অরিজিৎ চৌধুরী, ত্রমিলা ভট্টাচার্য, অঙ্কিতা মাঝি প্রমুখ। ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে আসা ধারাবাহিকের প্রোমো নজর কেড়েছে দর্শকদের। রীতিমতো জোরকদমে বারুইপুর, নলবনের আউটডোরে চলছে মেগার শুটিং।
ছ’বছর পর ছোটপর্দায় কামব্যাক প্রসঙ্গে রাজদীপের মত, “স্টার জলসা আর সাহানাদি–এই দু’জনের সঙ্গেই একটা ইমোশন জড়িয়ে রয়েছে। এখান থেকেই আমি কেরিয়ার শুরু করেছিলাম। এখানে ফিরে বেশ ভালোই লাগছে। কারণ এটা আমার স্বাচ্ছন্দ্যের জায়গা। আমি কোনওদিন নিজেকে একটা নির্দিষ্ট মাধ্যমে আবদ্ধ রাখতে চাইনি। আমি experiment করতে ভালবাসি। আমার চরিত্র কিঞ্জল খুব হাসিখুশি। সে যেমন লোকের পিছনেও লাগে, তেমনই নিজের কাজটাও মন দিয়ে করে। ঠিক আমার মতো। সেই কারণেই আমায় অভিনয় করতে হচ্ছে না, বিহেভ করতে হচ্ছে। আর এই টিমটাও খুব ভালো। সহ অভিনেতারাও খুবই ভালো। সকলেই খুব খেটে সিরিয়াসলি কাজটা করছি। একটা ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে কাজটা শুরু করেছি। আশা করছি সকলের ভালো লাগবে।” “আমি পঞ্চমী হতে পেরে খুব খুশি। অন্যরকম একটা গল্প। আমার খুব পছন্দ হয়েছে। পঞ্চমী গ্রামের সহজ সরল একটা মেয়ে। সেই চরিত্রে অভিনয় করতে পেরে বেশ ভালো লাগছে। এরকম চরিত্র এর আগে করিনি। ইউনিটের সকলে খুব ভালো। মজা করে শুটিং করছি”–জানান সুস্মিতা।
মেগার কাহিনিকার, সৃজনশীল পরিচালক তথা প্রযোজক সাহানার মন্তব্য, “আমি এই সময়ে দাঁড়িয়ে এখনকার মতো করে একটা রূপকথার গল্প বলতে চেয়েছি। রূপকথাটা মোড়ক, ইমোশনটাই আসল। বিজ্ঞানের সঙ্গে এটার কোনও সংঘাত নেই। চারিদিকে এখন এতো বেশি ঘরোয়া গল্প হচ্ছে যে আমরা কল্পনাশক্তি থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। তাই শহুরে আধুনিকতার সময়ে দাঁড়িয়ে রূপকথার গল্প বলার চেষ্টা করেছি। একজন মানুষের দুটো সত্ত্বা। একটা মানুষের, একটা সাপের। একজন চায় প্রতিশোধ নিতে, আরেকজন যার উপর প্রতিশোধ নিতে আসে তাকেই রক্ষা করতে চায়। এই দুয়ের টানাপোড়েনে ক্ষতবিক্ষত একজন মানুষের ইমোশনাল জার্নিকেই তুলে ধরেছি।” মেগার সহ প্রযোজকের রোহিত জানান, “যতদিন যাচ্ছে আমরা ছোটবেলাটা হারিয়ে ফেলছি। আমার কাছে এই গল্পের রূপকথার অংশটি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সবকিছু বিজ্ঞান দিয়ে ভাবি। কিন্তু রাতে দেখা স্বপ্ন সেটা তো বিজ্ঞানের equation মেনে হয় না। আমাদের লক্ষ্য এই গল্পের হাত ধরে ছোটবেলায় ফিরে যাওয়া। আধুনিক সময়ের মধ্যে এখানে রূপকথাকে যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।” ‘পঞ্চমী’ দেখা যাবে ৫ ডিসেম্বর থেকে স্টার জলসায়, সোম থেকে রবি প্রতিদিন রাত ৮.৩০-এ।