Monday, May 12, 2025
টলিউডলাইম-Light

শিকড় ছেঁড়া মানুষের কথা অতনুর ছবিতে

নতুন ছবির মুক্তি হোক বা নির্মাণ। পোস্টার, ট্রেলার রিলিজ। ছবি হিট এবং ফ্লপ। তারকাদের জীবনের ওঠাপড়া। বাংলা ও হিন্দি মিলিয়ে সিনেমার দুনিয়ায় প্রতি মুহূর্তে ঘটে চলেছে নানা বৈচিত্রপূর্ণ ঘটনা। সেইসবই এই বিভাগে, প্রতি সপ্তাহে। পরিচালক অতনু ঘোষের বহু আলোচিত ছবি ‘আরো এক পৃথিবী’ আগামী শুক্রবার মুক্তি পাচ্ছে প্রত্যাশার ভিন্ন আবেগ নিয়ে। লিখেছেন নির্মল ধর

কেরিয়ারের প্রথম সাতটা বছরে পনেরোটা টেলিফিল্ম বানিয়েই প্রমাণ দিয়েছিলেন, তিনি অন্য ভাবনার মানুষ! ছবি বানানো তাঁর কাছে শুধু অর্থ অর্জনের পন্থা নয়, নিজের মনের ভেতর কুড়ে কুড়ে খেতে থাকা কিছু যন্ত্রনা, কিছু ভালোবাসার কথাও দর্শকদের জানানো। ২০০৯ সালে যখন তিনি বড়ো পর্দায় কাজ শুরু করলেন, সেই প্রথম ‘অংশুমানের ছবি’-তেও অতনু ঘোষ বুঝিয়ে দেন, তিনি বড়ো পর্দাতেও একই রকম ভাবনার প্রতিফলন দেখাবেন। পথভ্রম ঘটবে না তাঁর। পরবর্তী নয়টি ছবিতে সেটার প্রমাণ দিয়েছেন তিনি। এর আগের পরপর তিনটি ছবি ‘ময়ূরাক্ষী’, ‘রবিবার’ এবং ‘বিনিসুতোয়’–অতনু দুতিনটি চরিত্রের আন্তসম্পর্কের জটিলতার সঙ্গে সঙ্গে সিনেমার ভাষা নিয়েও সাহিত্যঘেঁষা পরীক্ষায় ব্রতী ছিলেন। তাঁর এই তিনটি ছবিই জানিয়ে দিয়েছিল কোনও রকম সমঝোতা বা আপোস মনোভাবে তিনি বিশ্বাসী নন। নিজস্ব চিন্তায় আত্মমগ্ন।

এবার আসছে অতনুর দশ নম্বর ছবি ‘আরো এক পৃথিবী’ ! এই প্রথম তিনি নিজের শহর কলকাতার বাইরে গিয়ে ছবি করলেন। এ ছাড়াও আরও অনেক ‘প্রথম’ রয়েছে এই ছবিতে ! সারা পৃথিবী এখন ছিন্নমূল মানুষে ছেয়ে আছে। বিশেষ করে অর্থনৈতিক ভাবে এগিয়ে থাকা ইউরোপে এবং আমেরিকায়। জীবন ও জীবিকার সন্ধানে ওই সব দেশে ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় অনুন্নত দেশের বহু মানুষই চলে যান। কেউ কেউ বাঁচেন, আবার অনেকেই বাঁচেন ভয়ংকর ‘বিপজ্জনক’ পরিমণ্ডলে! অতনুর এই ছবির বিষয় তেমনই চারজন ভারতীয়, যাঁরা লন্ডন শহরে জীবনের লড়াই চালাচ্ছেন প্রাণটুকু নিয়ে টিকে থাকার জন্য।

এই ছিন্নমূল চার চরিত্র হলো, মাঝবয়সী সঙ্গীতকার ভায়োলিন বাজিয়ে বাউন্ডুলে শ্রীকান্ত মুন্সী, স্বামী পরিত্যক্তা-প্রতারিত-গৃহহীন প্রতীক্ষা, রহস্যময়ী আয়েশা এবং খুবই আবেগপ্রবণ তরুণ অরিত্র। এঁরা চারজনই লন্ডন শহরে বেঁচে থাকার লড়াই করছেন। শুধু এঁরা নন, সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন আফ্রিকা, কোরিয়া, আরব থেকে একইভাবে সৌভাগ্যের খোঁজে আসা কিছু মানুষও। অতনু এই প্রথম তাঁর সিনেমায় সরল ন্যারাটিভে গল্প বলায় প্রয়াসী হচ্ছেন, যা তাঁর আগের বেশিরভাগ ছবিতে সেভাবে দেখা যায়নি।

Img 20230124 Wa0051
শিকড় ছেঁড়া মানুষের কথা অতনুর ছবিতে 8

এই প্রথম তিনি প্রধান নারী চরিত্রের (প্রতীক্ষা) জন্য নির্বাচন করেছেন বাংলাদেশের এক তরুণী অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিনকে। তাসনিয়া বাংলাদেশের একজন অত্যন্ত শক্তিশালী ও জনপ্রিয় অভিনেত্রী। তাঁরও বড়ো পর্দায় এটাই প্রথম কাজ। বাংলা ছোট পর্দায় অনিন্দিতা বোসকে দেখা যায় মাঝে মাঝে, বড়ো পর্দায় আরও কম। কিন্তু তাঁর কুশলী অভিনয়ের প্রমাণ আমরা পেয়েছি অল্প কটি ছবিতেই। অতনু জানালেন, “অনিন্দিতা লন্ডনের রাস্তায় পাঁচ’ছ  জন তরুণের সঙ্গে যে আবেগ ও ফোর্স নিয়ে অভিনয় করেছেন, দেখলে তাক লেগে যাবে!” আর ক্যামেরার সামনে কৌশিক গাঙ্গুলির (শ্রীকান্ত) দাপট নিয়ে এখন আর কোনও কিছু বলার দরকার হয় না। অরিত্রর চরিত্রে রয়েছেন এখনও স্ট্রাগল করে চলা তরুণ সাহেব ভট্টাচার্য। তাঁর কাছে অতনুর এই ছবি এক ধরনের চ্যালেঞ্জ বলেছেন সাহেব। ভাবতে অবাক লাগে,বাংলা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি এখনও তাঁকে কেন সিরিয়াসলি নিচ্ছে না !!

এই ছবির আরও একটা পজিটিভ দিক হলো, পরিচালক অতনু ঘোষও যেন এখানে এক পরীক্ষার মুখোমুখি। তিনি তাঁর গল্প বলার ধারা থেকে বাইরে এসে কাজ করছেন। তবে, তাঁর ছবিতে যে সাহিত্যগুণের মিশেল থাকে, ফিল্মি ভাষার যে ব্যাকরণ থাকে, ভিজুয়ালসের যে দেখন সৌন্দর্য থাকে–আশা করি, সেই নান্দনিক অনুভূতি থেকে দর্শক বঞ্চিত হবে না। অতনুর নিজস্ব বেঞ্চমার্ক তো সেটাই ! সিনেমা তাঁর কাছে যতটা প্রকাশের মাধ্যম, ততটাই দর্শককে সুস্থ চিন্তা, সৎ জীবনভাবনায় উত্তরণ ঘটিয়ে দেবার জন্য। ‘আরো এক পৃথিবী’ নিশ্চয়ই প্রমাণ করবে অতনুও সিনেমায় এক নতুন পৃথিবীর খোঁজ পেয়েছেন। আর তাঁকে এই খোঁজে সাহায্য করার জন্য এসকে মুভিজের অশোক ধানুকা ও হিমাংশু ধানুকাকে অবশ্যই সাধুবাদ না জানিয়ে উপায় নেই।