সস্তায় বাজিমাত
ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম এসে যাওয়ার পর বিনোদন সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে অনেককিছুই বদলেছে। সেটাই স্বাভাবিক। কথা হলো, প্রযুক্তির আশীর্বাদপুষ্ট এই বদল কতটা ইতিবাচক দিকে আমরা নিয়ে যেতে পারছি ! প্রিন্ট থেকে টেলিভিশন হয়ে ওটিটি। সংবাদপত্রের জমানায় পুরো ২৪ ঘন্টা পার হয়ে যেত,পাঠকের দরবারে পৌঁছতে। ম্যাগাজিনের ক্ষেত্রে এক সপ্তাহ, কখনও কখনও এক মাস। টিভি আসার পর এই পৌঁছে যাওয়াটা তুলনায় দ্রুত, সহজ ও সরাসরি হলো। আর ডিজিটাল মিডিয়া ? কত তাড়াতাড়ি, কত সরাসরি উপভোক্তার কাছে পৌঁছে যাচ্ছে আজকের এই ম্যাজিকাল সংবাদ মাধ্যম। আর এই জায়গা থেকেই শুরু হয়ে যাচ্ছে সস্তায় বাজিমাত করার একটা সংস্কৃতি। না-খবরকে খবর বানানো যার প্রধান অঙ্গ।
কয়েকটি হেডিং/ক্যাপশন শুধু লিখছি আগে–’দেখুন তো এঁকে চিনতে পারেন কিনা ! পরে বলা হলো, এটা অমুক তারকার ছোটবেলার ছবি! দেখা গেল, তথাকথিত সেই তারকা কে ? না আলিয়া ভাট, রণবীর সিং, টুইঙ্কেল খান্না, সোনাক্ষী সিনহা, জাহ্নবী কাপুর, কৃতি স্যানন প্রমুখ। এরা তারকা। কিন্তু উত্তমকুমার, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সুচিত্রা সেন, নার্গিস, মীনা কুমারী, মধুবালা বা অমিতাভ বচ্চন তো নন। যাঁদের ছোটবেলার কথা বা ছবি, সত্যিই জানার মতো ! এরপর হলো, এই তারকারা সারাদিন ধরে কী খান, কোথায় যান, কার সঙ্গে ডেট করেন ইত্যাদি। এ ছাড়াও সইফ-করিনার ছেলে তৈমুর, শাহরুখের কন্যা সুহানা, সলমনের সৎ মা হেলেন (যেন এটাই তাঁর পরিচয়), অভিষেকের বোন শ্বেতা বচ্চন নন্দা–এরা কে কীসে ব্যস্ত, সব খবর হাতের মুঠোয়।
এর সঙ্গে ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম থেকে তারকাদের পোস্ট করা ভিডিও/স্টিল শেয়ার করা। কী বিকিনি পরেছে আর কে ছোট প্যান্ট–তাই নিয়ে চর্চা। কাকে মানিয়েছে, কাকে মানায়নি, তাও বলে দেয় এইসব মিডিয়া। কবে অমিতাভ বচ্চন সেট থেকে রেখাকে চড় মেরে বের করে দেন। কবে জিতেন্দ্র শ্রীদেবীকে প্রেম নিবেদন করেন– এইসব নাকি খবর ! এবার এদের বক্তব্য, এইসবই লোকে খায় ! কে কী খায় আর কে কী খাওয়ায় এই অঙ্কটা খুব জটিল দেখানো হলেও, আসলে বিষয়টা ওই সস্তায় বাজিমাত। নায়িকার একটি খুল্লাম খুল্লা ব্লোআপ ছবি দিয়ে যদি কার্যসিদ্ধি হয়ে যায়, তবে, একটি গভীর বিশ্লেষণমূলক লেখা কে কষ্ট করে লেখে ? ফলে, পাঠকও ওই সস্তা খাবারে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে। আগামী দিনে পরিশ্রম করে গভীর ও অনুসন্ধিৎসু সাংবাদিকতার সংস্কৃতি বোধহয় এরপর জাদুঘরেই চলে যাবে !