সাংবাদিক চন্দন এখন ‘পঞ্চায়েত’-এর বিকাশ
হাতে হাতে স্মার্টফোন। তরুণ প্রজন্মের চোখ ইদানীং নিত্যনতুন ওয়েব সিরিজে। সারা বিশ্বের স্ট্রিমিং বিনোদন এখন হাতের মুঠোয়। সেইসব সিরিজ নিয়েই নানাকথা এই বিভাগে। লিখছেন মৃণালিনী ঠাকুর।
প্রথম সিজন থেকেই অত্যন্ত দর্শকপ্রিয় হয় আমাজন প্রাইম ভিডিওর ‘পঞ্চায়েত’। রিয়েল লাইফ লোকেশনে পল্লবিত রিয়েল লাইফ স্টোরি। মানুষ নিজেকে খুব সহজেই মেলাতে পারে এই সিরিজের গল্পের সঙ্গে। একইসঙ্গে সকলের মন জিতে নেয় বিকাশ শুক্লা। কে এই বিকাশ ? এতদিনে সবাই চিনে গেছেন ফুলেরা গ্রাম পঞ্চায়েত সচিবের সর্বক্ষণের সঙ্গী ও সহায়ক বিকাশকে। মুখে হাসি লেগেই আছে এই তরুণের। সহজ-সরল স্বভাবের গুণে আশপাশের সকলকে আপন করে নিতে পারে সে সহজেই। ওয়েব সিরিজের দৌলতে প্রচুর নতুন মুখের দক্ষ ও প্রতিভাবান অভিনেতার দেখা পাচ্ছেন ভারতীয় দর্শক। প্রসঙ্গত, এঁদের মধ্যে অধিকাংশই থিয়েটার থেকে উঠে আসা। আজ এমনই এক তরুণের কথা, যিনি বিকাশের ভূমিকায় প্রতি পর্বে জীবন্ত হয়ে উঠেছেন পর্দায়।
চন্দন রায়–বিহারের এই তরুণ বিকাশের ভূমিকায় একেবারে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন বললে একটুও বাড়িয়ে বলা হবে না। নীনা গুপ্তা, রঘুবীর যাদবের মতো প্রবীণ ও অভিজ্ঞ অভিনেতা এবং এই সময়ের প্রচন্ড দক্ষ, প্রতিভাবান ও ক্ষমতাশালী অভিনেতা জিতেন্দ্র কুমারের পাশে স্বচ্ছন্দে জায়গা করে নিয়েছেন চন্দন। নিপুণ অভিনয়ে বিকাশের চরিত্রটিকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলেছেন। বিহারের এক গ্রামে জন্ম ও বেড়ে ওঠা চন্দনের। সেখানকার স্কুলে পড়াকালীন সময়েই বিভিন্ন নাটকে অংশগ্রহণ। ভাগ নেন পাড়া বা অঞ্চলের অনুষ্ঠানগুলিতেও। পরবর্তীকালে পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে মাস কমিউনিকেশন নিয়ে পড়তে এসে আরও বেশি করে জড়িয়ে পড়েন মঞ্চাভিনয়ে। কলেজ ছাড়াও পথনাটকে অংশ নেওয়া–আর এভাবেই নিজেকে গড়েপিটে নেন চন্দন।
পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ মাস কমিউনিকেশনে (আই আই এম সি) পড়তে যান চন্দন। বিষয় ছিল রেডিও ও টেলিভিশন। এখানে স্নাতক স্তর শেষ করে সাংবাদিকতার চাকরি পেলেন দৈনিক জাগরণ পত্রিকায়। পাশাপাশি থিয়েটারের পর্বও চললো। আই আই এম সি-তে পড়ার সময় দিল্লীতে থাকাকালীনই তিনি যোগ একটি থিয়েটার গ্রুপে, যা ছিল জেএনইউ ও এনএসডি-র রেপার্টরি। এহেন এক তরুণকে সাংবাদিকতার চাকরি যে আটকে রাখতে পারবে না, সেটাই স্বাভাবিক। বছর আড়াই কোনওমতে কাটিয়ে একদিন চাকরি-বাকরি ছেড়ে মুম্বই রওনা দিলেন চন্দন। একটা সময় রঘুবীর যাদবের অধীনে থিয়েটার ওয়ার্কশপ করেছিলেন তিনি। বলিউডে কাজ খোঁজার ক্ষেত্রে রঘুবীরই হয়ে উঠলেন চন্দনের পরামর্শদাতা। ঘুরে ঘুরে অডিশন দিতেন সিনেমা, সিরিয়াল বা ওয়েব সিরিজের জন্য। আর এভাবেই ‘পঞ্চায়েত’-এর জন্যও অডিশন। শেষে পরিচালক দীপক কুমার মিশ্রর তাঁকে ‘বিকাশ’ চরিত্রের জন্য বেছে নেওয়া। বাকিটা চন্দনের কেরিয়ারে ইতিহাস।
এই সিরিজের মুখ্য চরিত্র অভিষেক ত্রিপাঠী (অভিনয়ে জিতেন্দ্র কুমার)। উচ্চ শিক্ষিত এই তরুণ তার উপযুক্ত চাকরিবাকরি না পেয়ে পঞ্চায়েত সেক্রেটারির চাকরি নিয়ে উত্তরপ্রদেশের প্রত্যন্ত গ্রাম ফুলেরায় যায়। সেখানেই আমরা তার সহকারী বিকাশকেও পাই। ফুলেরায় পৌঁছে আদর্শবাদী, নব্য ভাবনার প্রতীক অভিষেক নতুন নতুন পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করে। কিছু প্রথাবিরোধী সিদ্ধান্তও নেয় সে। এর ফলে, শত্রুতা দানা বাঁধে তাকে ঘিরে। এইসব কঠিন সময়ে অভিষেকের পাশে দাঁড়ায় বিকাশ। চন্দনের আশৈশবের অভিনয়ের স্বপ্ন, থিয়েটারের অনুপম অভিজ্ঞতা তাঁকে সাহায্য করে রক্তমাংসের বিকাশ হয়ে ওঠায়। গত মে মাসে ‘পঞ্চায়েত’-এর দ্বিতীয় সিজন মুক্তি পেয়েছে। দর্শক গোগ্রাসে গিলেছে তার ৮টি পর্ব। চন্দন তাঁর অপরিহার্যতা প্রমাণ করেছেন। অপেক্ষা তৃতীয় সিজনের। গল্পের গতিপ্রকৃতি যেটাই হোক, সেখানেও অভিষেকের পাশে বিকাশ থাকবেন, এমনটাই প্রত্যাশিত। অর্থাৎ, তৃতীয় সিজনেও চন্দন থাকবেন, ধরেই নেওয়া যায়।