Monday, February 3, 2025
বিনোদন প্লাস স্পেশাললাইম-Light

সেলুলয়েডে নটি বিনোদিনী

পরিচালক রাম কমল মুখোপাধ্যায়ের ছবি ‘বিনোদিনী : একটি নটির উপাখ্যান’। বিষয় হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ও অভিনব নিঃসন্দেহে। তাঁর সঙ্গে ছবি প্রসঙ্গে কথোপকথনে অজন্তা সিনহা

কেন বিনোদিনী ?

অনেকদিন ধরেই বিনোদিনীকে নিয়ে ছবি করার কথা ভাবছি। বাংলা নাটকে তাঁর অবদান, নাট্যাচার্য গিরীশচন্দ্র ঘোষের সঙ্গে তাঁর গুরু-শিষ্য সম্পর্ক। স্বয়ং শ্রী শ্রী পরমহংস রামকৃষ্ণদেবের স্নেহ ও আশীর্বাদধন্য ছিলেন বিনোদিনী। এই সবের পাশাপাশি এমন দৃঢ় চরিত্রের একজন নারী–বলা যায় কঠিনে-কোমলে এক অনন্য ব্যক্তিত্ব তিনি। নটি বিনোদিনী একজন মঞ্চ আলো করা অভিনেত্রী শুধু নন, সময়ের এক চালচিত্র গড়ে ওঠে তাঁকে ঘিরে। বিনোদিনীকে নিয়ে একটাই ছবি হয়েছে এ যাবৎ, পরিচালক দীনেন গুপ্ত তৈরি করেছিলেন। যেটা পরিবেশনের ক্ষেত্রে বীণা দাশগুপ্ত অভিনীত জনপ্রিয় যাত্রাটিকেই অনুসরণ করা হয় মূলত। খুব বেশি মৌলিক প্রচেষ্টা মনে হয়নি আমার। আমি চেষ্টা করছি বিষয়ের আর একটু গভীরে গিয়ে কাজটা করার। বিনোদিনী বাংলা থিয়েটার ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তাকে চলচ্চিত্রে রূপায়ণের ক্ষেত্রে দরকার একটি সুনির্দিষ্ট গবেষনা, সেটা নিয়েও ভাবনাচিন্তা রয়েছে আমার।

Img 20220910 Wa0044
সেলুলয়েডে নটি বিনোদিনী 6

ছবির শুরুর কথা বলো।

সত্যি কথা বলতে কী, ভাবনার উন্মেষের পর অনেকটাই সময় লেগে গেল, কাজ শুরু করার ক্ষেত্রে। কলকাতার প্রযোজকরা ভীষনভাবে নিরুৎসাহ করেন আমায়। এখানকার দর্শক নাকি বিনোদিনীর ওপর নির্মিত ছবি দেখতে আগ্রহী হবেন না। তাঁরা নায়ক-বিহীন ছবি দেখতে পছন্দ করেন না। আমার কোনও যুক্তিই এক্ষেত্রে মান্যতা পায়নি। শেষে আমি মুম্বইতে প্রযোজক পেলাম। পরে অবশ্য দেবের সমর্থন পেয়েছি। ও বলেছে, কলকাতা নিয়ে আমার যে অভিমান, সেটা ও কাটিয়ে দিতে চায়। দেব এই ছবিটা প্রেজেন্ট করছে।

রুক্মিণী মৈত্রকে এমন এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে নির্বাচন কী ভেবে ?

রুক্মিণীর অভিনয় ক্ষমতার বহু দিক এখনও অনাবিষ্কৃত, এটা আমার মনে হয়েছে। ওঁর সঙ্গে সুন্দর একটা বোঝাবুঝি আছে অনেকদিনের। এতে কাজটা করতে সুবিধা হয়। শুরু থেকেই ওঁর কথা মাথায় ছিল। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, রুক্মিণী সাইন করার অনেক পর, বিষয়টা দেবের গোচরে আসে এবং ছবি নির্মাণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চায়। তারপরই প্রযোজনা প্রসঙ্গে আমার ক্ষোভের কথা জেনে বলে, “আমি পাশে আছি তোমার।” ওর এই বলাটা যে আক্ষরিক অর্থেই ঘটবে, তাতে আমার কোনও সন্দেহ নেই। দেব কথা দিয়ে কথা না রাখার মানুষ নন।

Img 20220910 Wa0048
সেলুলয়েডে নটি বিনোদিনী 7

দেব যুক্ত হলেন কোন দিকটায় ? দেব ছাড়াই বা কারা আছেন প্রযোজনায় ?

‘বিনোদিনী : একটি নটির উপাখ্যান’ নিবেদনে রয়েছে দেব এন্টারটেনমেন্ট ভেঞ্চারস প্রাইভেট লিমিটেড। প্রযোজনা করছে এস এস ওয়ান এন্টারটেনমেন্ট, পি কে এন্টারটেনমেন্ট এবং প্রমোদ ফিল্মস। সহ প্রযোজনা অ্যাসর্টেড মোশন পিকচার্স। প্রযোজকরা হলেন– শৈলেন্দ্র কুমার, সুরজ শর্মা, প্রতীক চক্রবর্তী এবং দেব অধিকারী।

এই মুহূর্তে কি স্তরে কাজটা রয়েছে ?

পুজোর পর মূল পর্ব শুরু হবে। এখনও প্রাথমিক অনেক কাজ বাকি।

কোথায় শুটিং করবে ?

কলকাতা এবং বেনারস।

বাংলা রঙ্গমঞ্চের ব্যবহার নিশ্চয়ই থাকবে।

মঞ্চের দৃশ্যে সেট তৈরি করা হবে না কোনও বিখ্যাত থিয়েটার স্টেজকে কাজে লাগাবো, এইসবই এখনও ভাবনার স্তরে রয়েছে। এসব বিষয়ে আর্ট ডিরেক্টরের সঙ্গে বসবো। দেখি, কি হয় ? বাজেট মাথায় রেখে পরিকল্পনা করতে হবে।

Img 20220910 Wa0043
সেলুলয়েডে নটি বিনোদিনী 8

স্টেজ ছাড়াও সাধারণভাবে ছবির সেট, কস্টিউম, মেকআপসবক্ষেত্রেই তো সময়কে ধরার একটা ব্যাপার থাকবে। সেটা নিয়ে কী ধরণের পরিকল্পনা করেছ ?

এই বিষয়গুলি নিয়ে আমিও খুবই ভাবনাচিন্তা করছি। প্ল্যানিং চলছে। এমন কিছু করতে চাই, যেটা বাঙালি দর্শক আগে দেখেনি। নতুন কিছু উপহার দিতে চাই। যদিও, সবটাই শেষমেশ বাজেট-নির্ভর।

রুক্মিণী ছাড়া অন্য কোন কোন অভিনেতা আছেন এই ছবিতে ?

আপাতত, গিরিশ ঘোষ আর রামকৃষ্ণ চরিত্রের জন্য অভিনেতার খোঁজ চলছে। দেখা যাক, শেষ অবধি কে কে ফাইনাল হয় !

মিউজিক নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছবির। সঙ্গীত পরিচালক কে ?

হ্যাঁ! মোশন পোস্টারের জন্যে নীলায়ন চ্যাটার্জি মিউজিক করেছে। খুব ভালো হয়েছে কাজটা ।  কলকাতায় গিয়ে আর একবার ওর সঙ্গে বসতে চাই। এখনও এই বিষয়ে অনেক সংযোজন পর্ব রয়েছে।

Img 20220910 Wa0047
সেলুলয়েডে নটি বিনোদিনী 9

বাকি মুখ্য কাজগুলির ক্ষেত্রে কারা আছেন তোমার টিমে?

আমি নতুনদের সঙ্গে কাজ করতে ভালবাসি। কাহিনি, চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছেন প্রিয়াঙ্কা পোদ্দার। সিনেমাটোগ্রাফার মধুরা পালিত। গবেষণায় আছেন অভ্র চক্রবর্তী।

বিনোদিনী : একটি নটির উপাখ্যানঘিরে বাংলার দর্শকের নিশ্চয়ই যথেষ্ট প্রত্যাশা থাকবে ? এই প্রত্যাশার চাপ কতটা ?

দর্শকের জন্যই তো ছবি। তাঁদের ভেবেই তো এমন এক বিষয়ের গভীরে ডুব দেওয়া, কালকে অতিক্রম করা এক যাত্রার সাক্ষী হওয়া। নিশ্চয়ই চেষ্টা করবো তাঁদের প্রত্যাশা পূরণের। তবে, কাজ তো সবে শুরু করলাম। এখনও অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে।