Monday, February 3, 2025
ওয়েব-Wave

স্ট্রিমিং শুরু ‘দ্য নন্দিনী মার্ডার কেস’-এর

হাতে হাতে স্মার্টফোন। তরুণ প্রজন্মের চোখ ইদানীং নিত্যনতুন ওয়েব সিরিজে। সারা বিশ্বের স্ট্রিমিং বিনোদন এখন হাতের মুঠোয়। সেইসব সিরিজ নিয়েই নানাকথা এই বিভাগে। নন্দিনীর খুনি কে ? একজন না প্রত্যেকেই ! রহস্য জমাট রূপসী প্রকৃতির বুকে। লিখেছেন মৃণালিনী ঠাকুর

পটভূমি উত্তরবঙ্গের নান্দনিক প্রকৃতি। সেখানেই একটি ছবির শুটিংয়ে এসে খুন হলো ছবির নায়িকা নন্দিনী। নন্দিনীর খুনের রহস্যের জট খুলতে খুলতেই একটু একটু করে আবরণ উন্মোচিত হয়ে বেরিয়ে আসে তার নিজের ভাবনা, জীবনদর্শন ও তাকে কেন্দ্র করে ঘূর্ণায়মান বাকি মানুষগুলির যাপন। নন্দিনী ও এই মানুষগুলির পারস্পরিক সম্পর্কের যে রসায়ন, সেখানে যে সাদা-কালো-ধূসরতা, তাই নিয়েই এগিয়ে চলে ওয়েব সিরিজ ‘দ্য নন্দিনী মার্ডার কেস’! অকুস্থলে উপস্থিত ছিল নন্দিনীর গুণগ্রাহী, পরে তার দ্বারা প্রতারিত ও অপমানিত সহ অভিনেতা আবীর, স্বামী কাঞ্চন, ছবির নায়ক ও নন্দিনীর একদা প্রেমিক রোহিত, ছবির পরিচালক সমর এবং নন্দিনীর কলেজ জীবনের বন্ধু ও রুমমেট পলি। শুটিং চলাকালীন এদের চোখের সামনেই খুন হয় নন্দিনী। কাকতালীয় ভাবে, দৃশ্যটিও খুনেরই ছিল।

Img 20230823 Wa00232
স্ট্রিমিং শুরু 'দ্য নন্দিনী মার্ডার কেস'-এর 7

তদন্তে নেমেছেন এসিপি রঞ্জন সরকার। প্রথমে তো পুলিশের এই আধিকারিক বিস্মিত হন এটা ভেবে যে কেমন করে সকলের উপস্থিতিতে এই কাণ্ডটি ঘটা সম্ভব ! তারপর অবশ্য শক্ত হাতে হাল ধরেন তিনি। তবে, হালে পানি পান না কিছুতেই। তার কারণ ভিকটিম নিজেই এক মূর্তিমান রহস্য ! তার জীবনের প্রতিটি মোড়ে কত যে প্যাঁচালো জট ! উচ্চাকাঙ্খী এই নারী নিজেই যে নিজের কবর খুঁড়েছেন জীবনের পদে পদে, সেটা বুঝতে অসুবিধা হয় না। দুর্নিবার উচ্চাকাঙ্খার সিঁড়ি বরাবর পিচ্ছিলই হয়। নন্দিনী সেই পিছল চড়াইয়ে উঠতে উঠতে একদিকে নিজে সমীকরণ তৈরি করে। অন্যদিকে সেই সমীকরণকে ঘিরেই আশপাশের বাকি লোকেরাও নতুন সমীকরণ তৈরি করে। নিজের অজান্তেই এক বিরাট অপরাধচক্রের মধ্যে পড়ে যায় নন্দিনী। এই চক্রের হোতা নন্দিনীর বাবা ও তার ছবির প্রযোজক।

Img 20230823 Wa00242
স্ট্রিমিং শুরু 'দ্য নন্দিনী মার্ডার কেস'-এর 8

এসিপি রঞ্জন সরকারের রাডারে এই মুহূর্তে সকলেই।  তার প্রতি বারবার বিশ্বাসভঙ্গের যাবতীয় কাহিনি জানা সত্বেও নন্দিনীর স্বামী কাঞ্চন নন্দিনীকে ছেড়ে দেয়নি। কেন ? সমর যে কোনও মূল্যে ছবিটি শেষ করতে চায়। সেই মূল্য কাকে দিতে হবে ? নন্দিনীকে? আবীর কী প্রতিশোধ নেবার উদ্দেশ্যেই ছবিতে অভিনয়ের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল পলির কাছে। পলি আসলে কে ? নিছক নন্দিনীর প্রিয় বন্ধু? নাকি নন্দিনীর জীবনে তার ভূমিকা বন্ধুত্বের চেয়েও বেশি কিছু ? রোহিতও তো নন্দিনীর ওপর প্রবলভাবে চটে আছে ! তার মনেও তো প্রতিহিংসার আগুন জ্বলছে !

ক্যানভাসে নান্দনিক প্রকৃতি ! আর তার পরতে পরতে জড়ানো এইসব প্রশ্নের চাপানউতোর। প্ল্যাটফর্ম ৮ অরিজিনাল সিরিজ ‘দ্য নন্দিনী মার্ডার কেস’ দর্শককে টানটান আগ্রহে ধরে রাখবে পরিবেশনা গুণে। যেমন তার ধারালো কনটেন্ট, তেমনই স্মার্ট দৃশ্যায়ন। চোখা ও মেদমুক্ত সংলাপ রহস্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এর জন্য নিশ্চয়ই কৃতিত্ব পাবেন লেখক ও পরিচালক অভিনন্দন দত্ত। প্রযোজনা রোল ক্যামেরা অ্যাকশন। সিরিজ নির্মাণে খরচায় এতটুকু কার্পণ্য করা হয়নি, একথা স্বীকার করতেই হবে। লোকেশন হিসেবে উত্তরবঙ্গকে বড় সুন্দর ব্যবহার করেছেন পরিচালক। সপ্তর্ষি ঘোষের ক্যামেরা সেই লোকেশনের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করেছে। তীর্থঙ্কর মজুমদারের সাউন্ড ডিজাইন রহস্যময় পরিবেশ সৃষ্টিতে নিখুঁত ভূমিকা নেয়। আনিস আহমেদের মিউজিক যথাযথ। সম্পাদনায় যত্নশীল স্বর্ণাভ চক্রবর্তী। ক্রু মেম্বারদের কথা প্রথমেই বললাম, তার কারণ, ক্রাইম থ্রিলারের কাঠামো যথার্থ সৃজন ওঁদের সহযোগ ছাড়া সম্ভব নয়।

Img 20230823 Wa00292
স্ট্রিমিং শুরু 'দ্য নন্দিনী মার্ডার কেস'-এর 9

অভিনয়ে নন্দিনীর ভূমিকায় ঈশানী সেনগুপ্ত আগাগোড়া রক্তমাংসের এক নারী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন। এই নারীর মন কেউ জানে না। এমনকী তার খুনের আগে পর্যন্তও কেউ বুঝতে পারে না তাকে। যে নারী আকন্ঠ পঙ্কে নিমজ্জিত হয়েও চেষ্টা করে নারী পাচারের মতো এক ভয়াবহ ও বিস্তৃত চক্রকে আটকাতে। ঔদ্ধত্য, অহঙ্কার, যে কোনও মূল্যে ওপরে উঠতে চাওয়া একরোখা এক নারী। অথচ কোথাও তার মধ্যে এক হাহাকার ! এমনকী পলিও, যাকে সে সবচেয়ে বিশ্বাস করে, সেও নন্দিনীর শুভাকাঙ্খী নয় ! এই পুরো বিষয়টি ঈশানীর অভিনয়ে প্রাণ পায়। সমান্তরালে স্মার্ট ও টানটান অভিব্যক্ত পলির ভূমিকায় শ্রেয়া ভট্টাচার্য। সত্যম ভট্টাচার্যের রোহিত ও দেবরাজ ভট্টাচার্যের কাঞ্চন চরিত্র অনুযায়ী নিখুঁত। এসিপি রঞ্জন সরকারের চরিত্রে লোকনাথ দে দাপুটে, যা চরিত্রকে যথাযথ প্রতিষ্ঠা করে। আবীরের ভূমিকায় সাবলীল আরিয়ুন ঘোষ। সবশেষে সিরিজের পরিচালক অভিনন্দন দত্ত–তিনি নিজেই পরিচালক সমরের ভূমিকায়, যা এককথায় দুরন্ত ! একজন মেরুদন্ডহীন মানুষের দুর্বলতাগুলিকে নিখুঁত ফুটিয়ে তোলেন তিনি।