Monday, February 3, 2025
ঠিকানা দিকশূন্যিপুর

স্মৃতিতে সমুদ্র

দিন যাপনের একঘেয়েমি আর ক্লান্তি দূর করতে পর্যটনের বিকল্প নেই। চার দেওয়ালের গন্ডি ছাড়িয়ে তল্পিতল্পা গুটিয়ে ঝোলা কাঁধে সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়েন যাঁরা, তাঁদের জন্যই এই কলম। লিখেছেন অজন্তা সিনহা

ঢেউ ভাঙ্গছে। ঢেউ ফুঁসে উঠছে। জলদানবের সেই উত্তাল খেলায় এতটুকু ভীত নয় বেলাভূমির বালুকারাশি, নুড়ি পাথরের দল। তারাও যে যুগ যুগ ধরে সেই খেলার মাতনে চঞ্চল, উচ্ছল, বাঁধনহারা। প্রকৃতির এইসব কাণ্ডের সঙ্গে দিব্যি তাল মিলিয়েছে সমুদ্রতীরে হুটোপুটিরত দুরন্ত বালকের দল। ওরাও যেন এই বিশাল ক্যানভাসের অংশ। এখনও অনেকটা দূরে, আকারে বেশ ছোট এক টুকরো কমলা রঙের গোলা আকাশে। এই গোলাটা একটু পরেই সমস্ত আকাশ ছেয়ে যাবে। গোধূলির অপরূপ মায়াবী সৌন্দর্যে সেজে উঠবে চরাচর। আকাশ আর তার নিচের এই অসীম অনন্ত জলরাশি লাল-কমলা আবেশে মাখামাখি হয়ে যাবে। সকলেই জানেন, পাহাড়ই আমার বেশি প্রিয়। তারপরই জঙ্গল। তবে, পুরীর সমুদ্রতটে বসে সূর্যাস্ত দেখে মোহমুগ্ধ হব না, এতটাও বেরসিক নই আমি। 

আজ সকালেই পৌঁছেছি বাঙালি পর্যটনের চিরন্তন আকর্ষণ পুরীতে। বলা যায়, যে বাঙালি কোথাও কখনও বেড়াতে যায়নি, সেও অন্তত একবার পুরী বেড়াতে গিয়েছে। আর একাধিকবার পুরী গিয়েও বিরক্ত নয়, এমন বাঙালির সংখ্যা অগণিত। আমি প্রথম যেবার পুরী আসি, সেটা ছিল পরিবারের সঙ্গে। সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে বিস্তারে তেমন কিছু বলার নেই। বড়ই গতানুগতিক এক পর্ব। স্বর্গদ্বার বা পুরীর জগন্নাথ মন্দির এবং ছুটোছুটি করে নন্দনকানন, কোনারক বা চিল্কা দর্শন আমায় তৃপ্ত তো করেইনি। বরং বিরক্তি সীমা ছাড়িয়ে গেছিল। তার মধ্যে আরও বিরক্তি–সঙ্গে আর একটি পরিবার ছিল। দুই পরিবারের দুই প্রবল প্রতাপান্বিত পুরুষ পুরীতে মাছ সস্তা, সেই অজুহাতে কিলো কিলো মাছ কিনে হাজির করছিলেন আর আমার বেশিরভাগ সময়টা রান্নায় কাটছিল। আমি আমার বিরক্তিটুকু বললাম। কারণ, আমি রন্ধনবিলাসী নই। আর অপর গৃহিণী যিনি, তিনি রন্ধনেই সুখ পান। মোদ্দা কথা, আমার প্রথমবার পুরী দর্শনের অভিজ্ঞতা সুখকর হয়নি। তখনই প্রতিজ্ঞা করি, পরে আবার আসবো এবং একেবারে একা আসবো।

অনেক বছর পর হলেও সেই প্রতিজ্ঞা রাখা হলো। এই এখন, এই যে চারপাশে ঢেউয়ের আছড়ে পড়া ছাড়া আর কোনও শব্দ নেই। তটভূমির কোলাহল থেকে অনেকটা দূরে আমি আমার এক নির্জন কোণ বেছে নিয়েছি, এটা জীবনের পথে একা চলা শুরু না করলে কখনওই সম্ভব হতো না। একটু আগেই অস্ত গেছেন দিনমণি। সে এক অনির্বচনীয় দৃশ্য। ভাষায় প্রকাশ অসম্ভব। যে রিকশাওয়ালা ভাই আমাকে এই জায়গাটায় পৌঁছে দিয়েছে, তার প্রতি মনে মনে কৃতজ্ঞ হলাম। সে বলে গেছে, আমি যেন নিশ্চিন্ত থাকি। সময়মতো এসে সে আমায় হলিডে হোমে পৌঁছে দেবে। একটু আগে এক লেবু চা-ওয়ালা চা খাইয়ে গেছে। অন্ধকার গাঢ় হয়নি এখনও। সামনে অতল জলের আহ্বান। কত যে কথা জমে আছে সেই অতলের গহ্বরে ! জোয়ারের সময় ঘনাল বোধহয়। ঢেউয়ের রাশি হঠাৎ একটু বেশি উত্তাল। পিছনে কেউ এসে দাঁড়ায়। আমার আজকের রিকশাওয়ালা ভাই। তার সঙ্গে কিছুটা পথ হেঁটে মেন রোডে উঠলাম। ভিড়ের মাঝে হর্ন বাজিয়ে ধীরে ধীরে চললো রিকশা। চলুক ধীরে। আমার কোনও তাড়া নেই। পরশু কোনারক যাব। সেখানকার ইতিহাসের আকর্ষণ, অতুলনীয় স্থাপত্য দেখতেই হবে। এছাড়া এবারের এজেন্ডায় আর কিচ্ছু নেই। দুচোখ ভরে শুধু সমুদ্র দেখব আর ঢেউ গুনব।

আমার এই দ্বিতীয়বার পুরী আসাটাও বেশ কয়েকবছর আগের কথা। প্রথমবারের পুরী ঘুরে যাওয়া আর দ্বিতীয়বার আসার মধ্যে অনেক কিছু ঘটে গেছে। আমি সংসার থেকে স্বেচ্ছা স্বাধীনতা গ্রহণ করেছি। সেই বাবদ যাবতীয় যুদ্ধ এবং উত্তর তিরিশে পৌঁছে জীবন টিকিয়ে রাখার জন্য সাংবাদিকতার মতো এক জটিল ও কঠিন পেশায় নিমজ্জিত হয়ে পড়ার মধ্যে কেটে গেছে অনেকগুলি বছর। এরই মাঝে শুরু করে দিয়েছি আমার একলা ভ্রমণ। জীবিকার তাগিদে যে শহরে বাস, তার বাইরে গেলেই নিজেকে পাখির মতো হালকা মনে হয়। তেমন এক সময়েই আমার এই দ্বিতীয়বার পুরীতে আসা। সেই সময় আমি যে সংবাদপত্রে কাজ করতাম, তাদেরই একটি হলিডে হোম ছিল পুরীতে। একেবারে বীচের ওপরেই বাড়িটি। ম্যানেজার তরুণটি বেশ সহযোগী মনোভাবের ছিলেন। ফলে, আমার যাবতীয় ঘোরাফেরা আমার নিজের হিসেবেই হতে পেরেছিল।

হলিডে হোম-এ খাবারের ব্যবস্থা দুরকম। এক ঘরের লাগোয়া কিচেনে রান্না নিজে করে নাও। সেখানে বাসনপত্র সব আছে। নাহলে পাশেই কোনও এক প্রতিষ্ঠানের আশ্রম আছে, সেখানে টিকিট কেটে খাবার ব্যবস্থা আছে। রান্নার প্রশ্নই ওঠে না। তবে, পাশের খাবার জায়গাটিতে শুধু শুধু লাঞ্চ আর ডিনার। ব্রেকফাস্ট, চা-কফি, স্ন্যাকস ইত্যাদি বাইরে থেকে কিনে আনার ব্যবস্থা আছে। হলিডে হোমে একটি অল্প বয়েসী ছেলে অন্যান্য খুচরো কাজের পাশাপাশি অতিথিদের ফাই ফরমাস খাটে। সামান্য টাকার বিনিময়ে ম্যানেজারের চেনা দোকান থেকে আমার জন্য খাবার আনার কাজটিও সেই করেছিল। পুরীর যারা হোটেল বা রেস্তোরাঁয় কাজ করে, তারা প্রায় সব সকলেই বাংলা ভাষা বোঝে ও বলতে পারে। ম্যানেজার তরুণ তো কলকাতারই। তার সহযোগিতার কথা আগেই বলেছি। খুচরো কাজের কিশোরটিও বেশ চটপটে আর মিষ্টিভাষী। সব মিলিয়ে এই বাবদ আমার অভিজ্ঞতা বেশ ভালোই ছিল।

আশ্রমটির নাম আজ আর মনে নেই। তবে, ওঁদের নিয়ম-শৃঙ্খলাযুক্ত ব্যবস্থাদি দেখে মুগ্ধ হয়ে গেছিলাম। দিন ও রাতের একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে খাবার ব্যবস্থা এবং আগে থেকে তার জন্য টিকিট কিনে রাখতে হবে, এটাই নিয়ম। নিরামিষ রান্না দেওঘরের এক আবাসিক আশ্রমে থাকাকালীন খেয়েছিলাম, যার স্বাদ আজও ভুলিনি। পুরীর এই আশ্রমটির রান্নাও ছিল চমৎকার। তেমনই ছিমছাম ও পরিচ্ছন্ন আয়োজন। এঁদের এখানেও থাকার ব্যবস্থা আছে। ঘরগুলি পরিচ্ছন্ন ও সুসজ্জিত। যাকে বলে লোভ জাগানো। পরে কখনও গিয়ে একবার এই আশ্রমেই থাকব, এই ইচ্ছে অবশ্য আর পূরণ করা সম্ভব হয়নি। তবে, স্মৃতিতে বিষয়টি উজ্জ্বল রূপে থেকে গেছে।

আমার পুরী বাসের দ্বিতীয় দিনটা মূলত সমুদ্র সৈকতে আর কিছুটা আশপাশ ঘুরে কেটে যায়। আমার সেই একদিনের চেনা রিকশাতেই যাবতীয় পরিক্রমা। বেশ মনে পড়ছে, তার প্রবল পীড়াপীড়িতে জগন্নাথ মন্দিরের সামনে পর্যন্ত গিয়ে মন্দিরের ভিতরে না যাওয়ায়, বেচারা যুগপৎ বিস্মিত ও ব্যথিত হয়েছিল। মন্দির নয়, দেবতাকে আমি মানুষের মধ্যেই খুঁজি, সেকথা বোঝানো কঠিন ছিল। তাঁর রিকশায় এদিক সেদিক উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরে, তুলনামূলক ভাবে সৈকতের অধিক নির্জন অঞ্চলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা একা বসে, আর একবার অপরূপ সূর্যাস্ত দেখে যে তৃপ্তি আমি পেয়েছিলাম, তা মন্দিরের অভ্যন্তরে প্রতিষ্ঠিত মূর্তি আমায় দিতে পারত না। হলিডে হোমে ফেরার পথে সেটাই তাকে বোঝাবার চেষ্টা করছিলাম। সে একটা কথাই সবশেষে বলেছিল, পুরী শহরে বহু বছর রিকশা চালাচ্ছে সে। আমার মতো আজিব ট্যুরিস্ট এই প্রথম দেখলো বেচারা । বিষয়টা কমপ্লিমেন্ট হিসেবেই নিয়েছিলাম আমি। আমি যে আজিব, সেটা অন্তত সামনাসামনি কেউ তো বললো !

পরদিন একেবারে কাকভোরে বেরিয়ে পড়া কোনারকের উদ্দেশ্যে। পুরী থেকে কোনারক যাওয়ার রাস্তা এতটাই ভালো যে, তরুণ ম্যানেজার আমায় বললেন, ফালতু একা যাওয়ার জন্য শুধু শুধু একগাদা টাকা খরচ করে গাড়ি রিজার্ভ করার দরকার নেই। আমি আপনাকে আমার চেনা অটো ঠিক করে দিচ্ছি। আপনি নিশ্চিন্তে চলে যান। তাই হলো। সেই যাওয়াটা ছিল সব অর্থেই পুরী ভ্রমণের অন্যতম না ভোলা পর্ব। প্রথমেই সূর্যোদয় ! রাস্তায় যেতে যেতে হঠাৎই পূব আকাশে চোখ চলে গেল। আমার উৎসাহ দেখে ড্রাইভার ভাই অটো থামালেন। ক্ষণিক মুগ্ধ বিরতি। তারপর আবার চলা শুরু। পিচ ঢালা ঝকঝকে রাস্তা। কোথাও কোনও ঝাকুনি নেই। গাড়িঘোড়াও নেই তেমন যে ধুলো ময়লায় বিব্রত হব। অটো ড্রাইভার ভাইয়ের সঙ্গে গল্প করতে করতে দিব্যি চলে গেলাম। সে ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পটনায়কের একজন অনুরাগী ভক্ত। বলল, আগামী কয়েক যুগ, যতদিন উনি কর্মক্ষম থাকবেন, আমরা আর কাউকে ওই আসনে চাই না। ড্রাইভার ভাইয়ের কথায়, শিল্প-বাণিজ্য ক্ষেত্রে তো বটেই শিক্ষার বিস্তারেও নবীনজি যা করেছেন, তা তুলনাহীন। সে তার  নিজের ছেলেদের উচ্চশিক্ষা দিতে পেরেছে ওদের রাজ্যে লেখাপড়ার খরচ তুলনমূলকভাবে কম বলেই। শুনে মন ভালো হয়ে গেল।

সকালের সূর্য এখন তুলনায় কিছুটা তপ্ত। একটি বড় বাঁকের পাশে পরিচ্ছন্ন এক খাবার হোটেল। আমাদের আজকের ব্রেকফাস্ট এখানেই। দুর্দান্ত স্বাদের পুরি-সবজি ও গরম গরম চা খেয়ে আবার যাত্রা শুরু। কিছুদূর যাওয়ার পর আচমকাই যেন আকাশনীল রঙের ঘোর টেনে নিল আমার বিস্ময়মুগ্ধ চোখের দৃষ্টি। এটা চন্দ্রভাগা বীচ। পুরো বীচের সামান্য কিছুটাই দৃশ্যমান এখানে। তাতে কী ! সমুদ্রের জলের এমন রঙ কিছুটা অনেক পরে গোপালপুরে পেয়েছিলাম। কিন্তু এমন অনির্বচনীয় নয় ! জায়গাটা মোহনার একেবারে কাছে। তাই তার এমন স্বর্গীয় ও সম্মোহনী রূপ তার। কিছুক্ষণ বীচের বাঁধানো তটে দাঁড়িয়ে সমুদ্রের রূপসুধা আকন্ঠ পান করে আবার চললাম নির্দিষ্ট পথে। এবার যাব গন্তব্যের শেষে।

কোনারক পৌঁছেই প্রথম যে অনুভূতি হলো, যেন বহু যুগ পিছিয়ে গেছে সময়। বিশাল এক চত্বর জুড়ে বাগান, গাছপালা। আর তারই মাঝখানে কলিঙ্গ স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন সূর্যমন্দির। কথিত আছে একদা এই মন্দিরের উচ্চতা ছিল ২০০ ফুট। অনেকাংশ ধ্বংস হয়ে যাবার পর, কিছুটা মাটির নিচে তলিয়ে যাবার পর, এখন এর উচ্চতা ১০০ ফুটে দাঁড়িয়েছে। মেরামতির কাজ চলছে। ওড়িশা সরকার নিয়মিত এর রক্ষণাবেক্ষণ করে শুনলাম। ধ্বংসের মুখে পড়ার পরেও সূর্য মন্দিরের আকর্ষণ এতটুকু কমেনি। পাথরে তৈরি ঘোড়ায় টানা রথ সূর্যের দীপ্ত প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে কত যুগ ধরে। কী অপূর্ব তার শিল্পকর্ম !

পাথরে তৈরি হওয়া সত্বেও এই মন্দিরের বারবার ধ্বংসের প্রকৃত কারণ আজও অজানা। এই নিয়ে বহু বিতর্ক বিদ্যমান। কোথাও উল্লেখ করা হয়েছে সূর্য মন্দির ধ্বংসের কারণ নিছকই প্রাকৃতিক। কালের অঙ্গুলি হেলনেই এটা ঘটেছে। আবার কোথাও কোথাও বলা আছে বারংবার মুসলিম আক্রমণে এই দশা সূর্য মন্দিরের। ১৯৮৪ সালে কোনারকের সূর্য মন্দিরকে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষণা করে। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে এখানে চন্দ্রভাগা মেলা বসে। তখন সারা বিশ্বের হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসী মানুষ এই মন্দির দর্শনে আসেন। এও কথিত আছে, একদা সমুদ্রের অনেক কাছে ছিল সূর্য মন্দির। এখন বেশ খানিকটা দূরে তার অবস্থান। সমুদ্র সরে যাওয়ার ফলে এমনটা ঘটেছে। প্রাকৃতিক রহস্যের থই মেলা ভার। অন্যদিকে ইতিহাস এর শরীর জুড়ে। পুরো অঞ্চলটি শান্ত সমাহিত। অপূর্ব এক তৃপ্তি নিয়ে আর প্রচুর ছবি তুলে অটোতে উঠে বসলাম। ফেরার পথে আর একবার চন্দ্রভাগার সঙ্গে দেখা। আসা-যাওয়ার পথে আর একটি নাম না জানা নদীও দেখেছিলাম মনে পড়ছে।

পুরী শহরে ফেরার পর আমাকে সমুদ্রের তীরে নামিয়ে দিয়ে অটো চলে গেল। কথা হলো এটাতেই কাল সকালে স্টেশনে গিয়ে কলকাতা ফেরার ট্রেন ধরব। রোদ্দুর মেখে নিয়েছে গোটা তটভূমি। বিরাট উঁচু উঁচু ঢেউয়ের মাথায় চিক চিক করছে রোদ্দুর কণা। যতদূর দেখা যায়, পুরো বীচ জুড়ে মানুষের ভিড়। স্নানের আনন্দে মাতোয়ারা জনতা। আমি এ রসে বঞ্চিত। তবে, দূর থেকে দেখতে মন্দ লাগে না। রোদ চড়া হতে হলিডে হোমে ফিরি। সময়টা সম্ভবত মে মাস ছিল। ভালোই গরম সেই সময় পুরীর আবহাওয়া। স্নান করে ফ্রেশ হয়ে লাঞ্চ করতে গেলাম পাশের আশ্রমে। ফিরে বিশ্রাম। তারপর সেই রিকশাওয়ালা ভাই এসে বীচে নিয়ে গেল আমায়। আজ একটু ভিড়েই ঘোরাফেরা। মনিহারি দ্রব্য থেকে চা ওয়ালা, কোথাও দেখলাম মাছ ভাজা বিক্রি হচ্ছে। স্টোভে ভেজে দেওয়া টাটকা মাছ ভাজা খেতে ভিড় করেছে রসিক বাঙালি। মিষ্টি নিয়েও ঘুরছেন দু একজন দোকানি। এক তরুণ তাঁর উট নিয়ে সমুদ্র তীরবর্তী বালির ওপর বিচরণশীল। উটে চড়ছেন উৎসাহী পর্যটকের দল। সব মিলিয়ে বেশ একটা মেলার মেজাজ। সূর্যাস্তের অপার মহিমা আজও দেখি। এরপর সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নামে। অতএব আশ্রয়ে ফেরা। ডিনার এবং বিশ্রাম। ঢেউয়ের গর্জন ভেসে আসে দূর থেকে। চোখে ঘুম নামে সেই আবহে। কাল সকালে ফেরা শতাব্দী এক্সপ্রেসে, স্মৃতিতে সমুদ্রকে নিয়ে।