হার না মানা এক মানুষের কথা
সুনীতা হাজরার এভারেস্ট জয়ের কাহিনি নিয়ে তৈরি ‘মিশন এভারেস্ট’ মুক্তি পাচ্ছে আজই। লিখেছেন সোমনাথ লাহা।
২০১৬-তে সামনে এসেছিল হার না মানা এক পর্বতারোহীর গল্প। পর্বতারোহী সুনীতা হাজরার এভারেস্ট জয়ের কাহিনি। এভারেস্ট জয় করে ফেরার পথে সাক্ষাৎ মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছিলেন তিনি। সারা দেহে ফ্রস্টবাইট। সঙ্গীদের কেউ বেঁচে নেই। সুনীতা পেরেছিলেন। তাঁকে যে পারতেই হতো। কারণ, ঘরে অপেক্ষা করছিল তাঁর ছোট্ট ছেলে আর্যবীর। সে এক হার না মানার গল্প। ২০১৬-য় চার বাঙালি অভিযাত্রীর সেই এভারেস্ট অভিযানের গল্প নিয়েই পরিচালক দেবাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি ‘মিশন এভারেস্ট’, মুক্তি পাচ্ছে আজ।
এভারেস্ট জয় করে ফেরার সময় মৃত্যুকে ছুঁয়ে ফেলা সুনীতা হাজরার সঙ্গীদের কেউ বাঁচেননি। সুনীতাকে বাঁচিয়েছিলেন এক ব্রিটিশ পর্বতারোহী, যিনি নিজের এভারেস্ট জয়ের চেয়ে অপরের প্রাণ বাঁচানোই বেশি জরুরি বলে মনে করেছিলেন। এই ঘটনাটি রীতিমতো আলোড়ন ফেলেছিল সংবাদ মাধ্যমে। দেবাদিত্যর ছবির মূল উপজীব্য এই বিষয়টি। ছবির যাবতীয় গবেষণাধর্মী কাজটি করেছেন পৃথ্বীরাজ দে। প্রসঙ্গত, এভারেস্ট এক্সপিডিশন নিয়ে ইতিপূর্বে বাংলায় কোনও ছবি তৈরি হয়নি। সেদিক থেকে দেখলে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন পরিচালক। ছবিতে সুনীতা হাজরার বদলে চরিত্রের নাম রাখা হয়েছে সুছন্দা হাজরা।
পরিচালক জানিয়েছেন, ছবির প্রয়োজনে তাঁরা কিছু ঘটনা নিজেদের মতো করে সাজিয়েছেন। উল্লেখ্য, ইতিমধ্যেই ছবির প্রযোজনা সংস্থার তরফ থেকে পর্বতারোহী সুনীতা হাজরার এভারেস্ট এক্সপিডিশন এবং সেখান থেকে বেঁচে ফিরে আসার ৫৬ সেকেন্ডের রিয়েল ফুটেজ ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে তাঁর এভারেস্ট অভিযান ও বেঁচে ফেরার দৃশ্যগুলি রীতিমতো শিহরিত করেছে দর্শকদের। রূপা দত্ত নিবেদিত ছবিটির প্রযোজনার দায়িত্বে রয়েছে ক্যামেলিয়া প্রোডাকশনস এবং ক্রিয়েটিভ লিবার্টি প্রোডাকশন। ‘মিশন এভারেস্ট’-এ সুছন্দা হাজরার চরিত্রে অভিনয় করেছেন চান্দ্রেয়ী ঘোষ। অন্যান্য চরিত্রে রয়েছেন শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়, কৃষ্ণকিশোর মুখোপাধ্যায়, মেঘা চৌধুরী প্রমুখ। আট-ন’বার এভারেস্ট সামিট করেছেন, এমন শেরপারাও এই ছবিতে কাজ করেছেন। ছবির কাহিনি লিখেছেন অম্লান মজুমদার ও পরিচালক স্বয়ং। চিত্রনাট্য লিখেছেন পদ্মনাভ দাশগুপ্ত। সংগীত পরিচালনা বিজয় বর্মা। গীতরচনা রানা মজুমদার ও প্রসেন।
সুছন্দার চরিত্রে অভিনয়ের জন্য কঠোর ট্রেনিংয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে চান্দ্রেয়ীকে। নিয়মিত ব্যায়াম ও ডায়েট মেনে করতে হয়েছে খাওয়াদাওয়া। মাইনাস ৩০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় লাহুল, কাজা, স্পিতি, লাদাখের বিভিন্ন অঞ্চলে শীতকালে এই ছবির শুটিং করেছেন দেবাদিত্য। এই ছবি নিয়ে এতটাই প্যাশনেট ছিলেন তিনি, যে সব কষ্ট সহ্য করে কাজটা করে গিয়েছেন। আর অন্য ধরনের চরিত্র পেয়ে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন চান্দ্রেয়ী ঘোষও। অভিনেত্রীর কথায়, “মাইনাস ২০-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় শুটিং করা প্রচণ্ড কঠিন ছিল। আমাদের সকলের শরীর খারাপ হয়েছিল। কিন্তু, তারপরও কাজ চালিয়ে গেছি। ওখান থেকে ফিরে আসা যায় না। এই ছবির অভিজ্ঞতা আমার সারা জীবনের সঞ্চয়।”
দেবাদিত্যর কথায়, “রীতিমতো চ্যালেঞ্জ নিয়ে ছবিটা তৈরি করেছি। অনেকেই যখন শুনেছিল, আমি এই ধরণের বিষয় নিয়ে বাংলায় ছবি করতে চলেছি, তাঁরা বলেছিল তুই পাগল হয়েছিস–এই রকম ছবি তাও আবার বাংলায়! আমি সেটা করে দেখিয়েছি। সকলকে অনুরোধ করব, এই ছবিটা সিনেমা হলে দেখতে আসুন। ছবির প্রতিটা মুহূর্ত, প্রতিটা দৃশ্য আপনারা উপভোগ করতে পারবেন এবং একইসঙ্গে এভারেস্ট এক্সপিডিশনের অনুভূতিটা নিজেরাও পাবেন।” ‘মিশন এভারেস্ট’ দেখে এতটাই মুগ্ধ হয়েছেন প্রযোজনা সংস্থার কর্তারা, যে, তাঁদের মনে হয়েছে এই ছবির পাশে দাঁড়ানো উচিত। সেখান থেকেই সরাসরি এই ছবির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন তাঁরা। এবার পুজোয় মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিগুলির মধ্যে ‘মিশন এভারেস্ট’ যে আলাদা মাত্রা যোগ করতে চলেছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই।