Monday, February 3, 2025
বিনোদন প্লাস স্পেশাললাইম-Light

লতা মঙ্গেশকর

জন্ম :  ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯২৯

মৃত্যু : ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২

◆ মারাঠি ও কোঙ্কনি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতশিল্পী ও থিয়েটার অভিনেতা দীননাথ মঙ্গেশকর এবং তাঁর স্ত্রী শেবন্তীর জ্যেষ্ঠা কন্যা লতা মঙ্গেশকর

730

◆ জন্মস্থান : ইন্দোর (বর্তমান মধ্যপ্রদেশ)

◆ জন্মের সময় লতার নাম রাখা হয়েছিল ‘হেমা’। বাবা-মা পরবর্তীতে তাঁর বাবার একটি নাটকে নারী চরিত্র লতিকার নামানুসারে নাম পরিবর্তন করে ‘লতা’ রাখেন।

◆ লতা ছিলেন পরিবারের বড় সন্তান। মীনা, আশা, ঊষা এবং হৃদয়নাথ, জন্মক্রম অনুসারে, তাঁর ভাইবোন। সকলেই সুদক্ষ শিল্পী এবং সঙ্গীতজ্ঞ।

◆ বাবার কাছ থেকে প্রথম সঙ্গীতের প্রশিক্ষণ নেন লতাজি। পাঁচ বছর বয়সে তিনি তাঁর বাবার সঙ্গীত নাটকে অভিনেত্রী হিসেবে কাজ শুরু করেন।

◆ ১৯৪২ সালে, লতাজির বাবা হৃদরোগে মারা যান। তখন তাঁর বয়স মাত্র ১৩। মাস্টার বিনায়ক (বিনায়ক দামোদর কর্ণাটকি), নবযুগ চিত্রপট সিনেমা কোম্পানির মালিক এবং মঙ্গেশকর পরিবারের ঘনিষ্ঠ বন্ধু তাঁদের দেখাশোনা করতেন। তিনিই লতাজিকে একজন গায়ক এবং অভিনেত্রী হিসেবে কেরিয়ার শুরু করতে সাহায্য করেছিলেন।

◆ তিনি ‘নাচু ইয়া গেল, কাহেলু শাড়ি মানি ঘর ভরি’ গানটি গেয়েছিলেন। যেটি বসন্ত জোগলেকারের মারাঠি সিনেমা কিতি হাসাল (১৯৪২)-এর জন্য সদাশিবরাও নেভরেকার দ্বারা রচিত হয়েছিল। কিন্তু গানটি চূড়ান্ত কাট থেকে বাদ দেওয়া হয়।

◆ মারাঠি ছবি গাজভাউ (১৯৪৩)-এর জন্য লতাজির প্রথম হিন্দি গান ছিল ‘মাতা এক সপুত কি দুনিয়া বাদল দে তু’।

◆ লতাজি ১৯৪৫ সালে মুম্বইতে চলে আসেন। কারণ,  মাস্টার বিনায়কের কোম্পানি সেখানে তার সদর দপ্তর সরিয়ে নেন। সেই সময় তিনি ওস্তাদ আমান আলী খানের কাছ থেকে হিন্দুস্তানি সঙ্গীতের পাঠ নিতে শুরু করেন।

◆ তিনি বসন্ত জোগলেকারের হিন্দি ছবি ‘আপ কি সেবা মে’ (১৯৪৬)-এর জন্য ‘পা লাগুন কার জোরি’ গানটি গেয়েছিলেন, যেটির সুর করেছিলেন দত্ত দাভজেকর।

◆ ১৯৪৮ সালে বিনায়কের মৃত্যুর পর, সঙ্গীত পরিচালক গোলাম হায়দার তাঁকে পরামর্শ দেন গায়িকা হিসেবে কেরিয়ার শুরু করার। তিনি লতাজিকে প্রযোজক শশধর মুখার্জির সাথে পরিচয় করিয়ে দেন, যিনি তখন শহীদ (১৯৪৮) ছবিটি নিয়ে কাজ করছিলেন। কিন্তু শশধর মুখার্জি লতার কণ্ঠকে ‘খুব পাতলা’ বলে ফিরিয়ে দেন। হায়দার প্রতিক্রিয়া স্বরূপ জানিয়েছিলেন যে আগামী বছরগুলিতে, প্রযোজক এবং পরিচালকরা ‘লতার পায়ে পড়ে যাবেন এবং তাঁদের চলচ্চিত্রে গান গাওয়ার জন্য ভিক্ষা করবেন’। হায়দার লতাকে মজবুর (১৯৪৮) চলচ্চিত্রে ‘দিল মেরা তোড়া, মুঝে কাহিন কা না ছোড়া’ (নাজিম পানিপতির কথা) গানের মাধ্যমে প্রথম ব্রেক দেন। যেটি লতাজিকে প্রথম বড় সাফল্যে দেয়।

◆ তার প্রথমদিকের হিটগুলির মধ্যে আরেকটি হল ‘আয়েগা আনাওয়ালা’– মহল (১৯৪৯) ছবির একটি গান, যা সঙ্গীত পরিচালক খেমচাঁদ প্রকাশ দ্বারা রচিত। গানটি ছিল মধুবালার লিপে।

◆ পাঁচের দশক থেকে শুরু হয়ে গেল জয়যাত্রা। পরপর গাইলেন তারানা ( ১৯৫১) এবং হীর (১৯৫৬) ছবিতে।  তারপর বড়ি বহেন (১৯৪৯), মীনা বাজার (১৯৫০), আধি রাত (১৯৫০), ছোট ভাবী (১৯৫০), আফসানা (১৯৫১), আনুশ (১৯৫৩), এবং আদল-ই-জাহাঙ্গীর (১৯৫৫),সাজা (১৯৫১), হাউস নং 44 (১৯৫৫) এবং দেবদাস (১৯৫৫) ছবিতে।

◆ যে সমস্ত কম্পোজারের সুরে গেয়েছেন তিনি, তাঁরা হলেন অনিল বিশ্বাস, শংকর জয়কিশান, নওশাদ আলী, এস. ডি. বর্মন, সার্দুল সিং কোয়াত্রা, অমরনাথ, হুসানলাল, ভগতরাম, সি. রামচন্দ্র, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সলিল চৌধুরী, দত্ত নায়েক, খৈয়াম, রবি, সাজ্জাদ হুসেন, রোশন, কল্যাণজি-আনন্দজি, বসন্ত দেশাই, সুধীর ফড়কে, হংসরাজ বহল, মদন মোহন, উষা খান্না, এ আর রহমান প্রমুখ।

◆ তিনি ১৯৫৬ সালে ‘ভানারধাম ‘(উরান খোটালা তামিল ভাষায় ডাব করা) দিয়ে তামিল প্লেব্যাক গানে আত্মপ্রকাশ করেন নওশাদ দ্বারা রচিত ডাব সংস্করণে নিম্মির জন্য তামিল গান ‘এনথান কান্নালান’ দিয়ে।

◆ লতা মঙ্গেশকর ১৯৫৫ সালে মারাঠি সিনেমা রাম রাম পাভনে-র জন্য প্রথমবার সঙ্গীত রচনা করেন।

◆ তিনি বাংলায় ১৮৫টি গান গেয়েছেন। ১৯৫৬ সালে সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের সুর করা হিট গান ‘আকাশ প্রদীপ জ্বলে’ দিয়ে আত্মপ্রকাশ করেন। পরবর্তীকালে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সুরেও বেশ কিছু হিট গান উপহার দেন তিনি।

◆ লতা মঙ্গেশকর ‘মধুমতি’ (১৯৫৮) ছবির (সলিল চৌধুরীর রচনা) ‘আজা রে পরদেশী’-র জন্য শ্রেষ্ঠ মহিলা প্লেব্যাক গায়কের ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পান।

◆ মুঘল-ই-আজম (১৯৬০)-এ মধুবালার লিপে মঙ্গেশকরের ‘প্যার কিয়া তো ডরনা কেয়া’ গানটি, নওশাদের লেখা, যা অলটাইম হিট।

◆ ১৯৬১ সালে, লতাজির কণ্ঠে জয়দেবের সুরে দুটি জনপ্রিয় ভজন, ‘আল্লাহ তেরো নাম’ এবং ‘প্রভু তেরো নাম’ প্রকাশিত হয়। যা ওঁর কণ্ঠে সর্বকালের সেরা গানগুলির অন্যতম।

◆ ২৭ জানুয়ারি ১৯৬৩ সালে, চীন-ভারত যুদ্ধের পটভূমিতে, তিনি তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর উপস্থিতিতে ‘অ্যায় মেরে ওয়াতন কে লোগো’ দেশাত্মবোধক গানটি গেয়েছিলেন, যা শুনে নেহরুজি কেঁদে ফেলেন।

◆ তিনি ১৯৬৭ সালে সঙ্গীত পরিচালক লক্ষ্মণ বেরলেকারের জন্য দুটি গান রেকর্ড করে ক্রান্তিবীর সাঙ্গোল্লি রায়ান্না চলচ্চিত্রের জন্য তার কন্নড় প্লেব্যাকের অভিষেক করেন।

◆ ১৯৬৯-এ পদ্মভূষণ পান লতা মঙ্গেশকর।

Emhhrdwvuaaewst 1

◆ ১৯৭৩ সালে, তিনি আর ডি বর্মনের সুরে গুলজারের লেখা ‘পরিচয়’ চলচ্চিত্রের ‘বিতি না বিতাই’ গানের জন্য শ্রেষ্ঠ মহিলা প্লেব্যাক গায়কের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।

◆ বিদেশে তার প্রথম কনসার্ট হয় ১৯৭৪ সালে, লন্ডনের রয়্যাল অ্যালবার্ট হলে।

◆ ১৯৭৪ সালে, গিনেস বুক অফ রেকর্ডস লতা মঙ্গেশকরকে ইতিহাসের সবচেয়ে রেকর্ডকৃত শিল্পী হিসাবে তালিকাভুক্ত করে।

◆ ১৯৭৫ সালে, তিনি আবার জাতীয় পুরস্কার পান, এবার কল্যাণজি আনন্দজির সুর করা ‘কোরা কাগজ’ চলচ্চিত্রের ‘রুঠে রুঠে পিয়া’ গানটির জন্য।

◆ মধ্যপ্রদেশ রাজ্য সরকার তাঁর সম্মানে ‘লতা মঙ্গেশকর পুরস্কার’ চালু করে ১৯৮৪ সালে।

3D8B5D384Bf694115815E8A8C3575C0Ed58D7

◆ ১৯৮৫ সালের জুন মাসে, ইউনাইটেড ওয়ে অফ গ্রেটার টরন্টো তাকে ম্যাপেল লিফ গার্ডেনে পারফর্ম করার জন্য আমন্ত্রণ জানায়। অ্যান মারের অনুরোধে, লতাজি তাঁর গান গেয়েছিলেন ‘You Needed Me’.

◆ দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার পান ১৯৮৯ সালে।

◆ ১৯৯০ সালে তিনি হিন্দি সিনেমার জন্য লতাজি তাঁর প্রোডাকশন হাউস শুরু করেন যা গুলজার পরিচালিত সিনেমা বিখ্যাত ছবি ‘লেকিন’ প্রযোজনা করে। এ ছবির সংগীত পরিচালনা করেন লতাজির ভাই হৃদয়নাথ মঙ্গেশকর। ছবির ‘ইয়ারা সিলি সিলি’ গানটির জন্য সেরা মহিলা প্লেব্যাক গায়কের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (তৃতীয় বার) পান।

◆ মহারাষ্ট্র রাজ্য সরকার ১৯৯২ সালে ‘লতা মঙ্গেশকর পুরস্কার’ চালু করে।

◆ ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত হয় ‘শ্রদ্ধাঞ্জলি’ অমর শিল্পীদেরদের প্রতি লতাজির শ্রদ্ধাঞ্জলি। এই অ্যালবামে লতাজি তাঁর নিজের কণ্ঠে এই শিল্পীদের কয়েকটি গান পরিবেশন ক’রে সেই সময়ের অমর গায়কদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

◆ মহারাষ্ট্র ভূষণ পুরস্কার ১৯৯৭ সালে।

◆ ১৯৯৯ সালে, Lata Eau de Parfum, তাঁর নামে একটি সুগন্ধি ব্র্যান্ড চালু করা হয়েছিল।

◆ এই বছরেই তিনি পদ্মবিভূষণ, এনটিআর জাতীয় পুরস্কার এবং লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্টের জন্য জি সিনে পুরস্কারে ভূষিত হন এবং একই সময় তিনি রাজ্যসভার সদস্য হিসাবে মনোনীত হন।

◆ ২০০১ সালে, মঙ্গেশকরকে ভারতের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ভারতরত্ন দেওয়া হয়। একই বছরে, তিনি পুনেতে মাস্টার দীনানাথ মঙ্গেশকর হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন, যা লতা মঙ্গেশকর মেডিকেল ফাউন্ডেশন দ্বারা পরিচালিত হয় (অক্টোবর ১৯৮৯ সালে মঙ্গেশকর পরিবার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত)।

◆ ২০০৫ সালে, তিনি স্বরাঞ্জলি নামে একটি গহনা সংগ্রহের নকশা করেছিলেন, যা একটি ভারতীয় হীরা রপ্তানি সংস্থা অ্যাডোরা দ্বারা তৈরি করা হয়েছিল।

◆ ২১ জুন ২০০৭-এ, লতাজির কণ্ঠে জাভেদ আখতারের লেখা এবং ময়ূরেশ পাই রচিত আটটি গজলধর্মী গান সমন্বিত করে ‘সাদগি’ অ্যালবাম প্রকাশিত হয়।

◆ এই বছরই তিনি ‘লিজিয়ন অফ অনার’ সম্মানে ভূষিতা হন। 

 ◆ আককিনেনি নাগেশ্বর রাও জাতীয় পুরস্কার পান ২০০৯ সালে।

Article 2021925010511939079000

◆ ১২ এপ্রিল ২০১১-য় লতাজির কণ্ঠে ‘সরহাদিন : মিউজিক বিয়ন্ড বাউন্ডারিজ’ অ্যালবাম প্রকাশিত হয়। এছাড়াও আরও অনেক শিল্পী ছিলেন এই এলবামে।

◆ ২৮ নভেম্বর ২০১২-তে লতাজি ময়ূরেশ পাই দ্বারা রচিত স্বামী সমর্থ মহামন্ত্র, ভজনের একটি অ্যালবাম সহ তার নিজস্ব সঙ্গীত লেবেল, এলএম মিউজিক চালু করেন। অ্যালবামে তিনি ছোট বোন উষা মঙ্গেশকরের সঙ্গে গান গেয়েছেন।

◆ ২০১৪ সালে, লতাজির বাংলা গানের অ্যালবাম, ‘সুরধ্বনি’ প্রকাশ পায়, যার মধ্যে সলিল চৌধুরীর কবিতাও ছিল, যেটির সুরকার ময়ূরেশ পাই।

◆ ৩০ মার্চ ২০১৯-এ, লতাজির কণ্ঠে ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং জাতির প্রতি শ্রদ্ধা হিসেবে ময়ূরেশ পাই দ্বারা রচিত ‘সৌগন্ধ মুঝে ইস মিত্তি কি’ গানটি মুক্তি পায়।

                                 ★ তথ্য সংগ্রহ মন্দিরা পান্ডা

  • ছবি সংগৃহীত