রূপনারাণের তীরে
দিন যাপনের একঘেয়েমি আর ক্লান্তি দূর করতে পর্যটনের বিকল্প নেই। চার দেওয়ালের গন্ডি ছাড়িয়ে তল্পিতল্পা গুটিয়ে ঝোলা কাঁধে সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়েন যাঁরা, তাঁদের জন্যই এই কলম। লিখেছেন অজন্তা সিনহা।
সকালে দ্রুত হাতে সেদিনের পাতা বানিয়েছি। প্রেসে সেই পাতা পাঠিয়েই দে ছুট। অফিস থেকে ধর্মতলা বাসস্ট্যান্ড এতটাই কাছে যে ট্যাক্সি পাওয়া মুশকিল। এদিকে হেঁটে গিয়ে টিকিট কেটে বাস ধরতে গেলেও দেরি। যাই হোক, একটা ট্যাক্সিকেই দাঁড় করিয়ে, বাবা-বাছা করে, বেশি ভাড়ার লোভ দেখিয়ে পৌঁছই বাসস্ট্যান্ডে। তাড়াতাড়ি টিকিট কেটে নিই, কিছু শুকনো খাবার আর জলের বোতলও কিনে নিই সঙ্গে। নির্ধারিত সময়ে ধর্মতলা দূরপাল্লার বাসস্ট্যান্ড থেকে ছাড়ে গাদিয়ারার বাস।
গাদিয়ারা অর্থাৎ রূপনারায়ণের তীর। সময়টা ঘোর বর্ষা। বর্ষায় নদীর পাড় উপচানো রূপ দর্শন আর রুপোলি ইলিশের সদ্ব্যবহার–এই দুইই রয়েছে আমার এবারের উইকএন্ড ট্রিপের এজেন্ডায়। ঋতু বর্ষা হলেও এখনও পর্যন্ত আকাশ বেশ পরিষ্কার। হাইওয়েতে পড়ার পর থেকেই বাসের গতি দ্রুত হয়েছে। কলকাতা ছাড়িয়ে অনেকটা চলে এসেছি। লোকজনের ওঠানামা চলছে। দূরপাল্লার বাসে হকারদের থাকাটা বিধিবদ্ধ। ফলত, বিকিকিনিও চলছে। দুপাশে শহরতলি, গ্রাম, ফসলের ক্ষেত, বাজার হাট পেরিয়ে চলেছি আমরা। সূর্যদেব ব্যস্ত পৃথিবীর অপর পিঠে যাওয়ার জন্য। তাকে এবার সেখানে আলো ফেলতে হবে। এই মুহূর্তে এপারে আকাশ গোধূলির আলোয় লালে লাল।
সন্ধ্যাই বাস থামে একটি গঞ্জ এলাকায়। ব্যস্ত লোকজন, তাদের হাঁকডাক। একে একে জ্বলে উঠছে রাস্তার আলো। কাছেই কোনও বাড়ি থেকে ভেসে আসে শঙ্খধ্বনি। কেউ সন্ধ্যারতি করছে। বাংলার চিরন্তন এই ছবি, এই অনুভব বড় আপন এক যাপনে আপ্লুত করে । এরই মধ্যে ঠান্ডা হাওয়ার ঝাপট। সচকিত সকলেই। কখন যেন ধূসর মেঘে ঢেকে গেছে আকাশ। এই রে, পৌঁছনোর আগেই বৃষ্টি ?
বাসও থামে আর ঝাঁপিয়ে বৃষ্টি আসে। দৌড়াদৌড়ি করে হোটেলের গেটে। ভাগ্য ভালো, হোটেলটা বাসস্ট্যান্ডের গায়েই। আর পা বাড়ালেই রূপনারায়ণ। সঙ্গের ব্যাগ ইত্যাদি নিয়ে ছুটোছুটির মধ্যেই একবার সেদিকে চোখ যায়। গাঢ় অন্ধকার নদীর বুকে। তারই মধ্যে এদিক-ওদিক জ্বলছে জেলে নৌকার মিটমিটে আলো। হোটেল কর্মীরা এগিয়ে এসে ব্যাগপত্তরের দায়িত্ব নেয়। কিছুটা ভিজে গেছি সকলেই। ম্যানেজার বলেন, এন্ট্রি ইত্যাদি কাল করলেই হবে। অতএব আমরা আমাদের নির্ধারিত ঘরে।
এবার একটু আমাদের টিমের কথা। পাক্কা মহিলা ব্রিগেড, যাকে বলে। মোট চারজন–দু’জন অফিস কলিগ, একজন পারিবারিক চেনা। প্রত্যেকেই এই প্রথম পরিবারের কর্তৃত্বের বাইরে গিয়ে বেড়াতে বেরিয়েছে। বলা বাহুল্য, আমিই আপাতত তাদের গার্ডিয়ান। এটাও বলার, গার্ডিয়ান বেচারা হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে বাঁধনছাড়া তিনকন্যাকে সামলাতে। বৃষ্টিভেজা রাতেই তারা রূপনারায়ন দর্শনে যাবার জন্য ব্যাকুল। অতি কষ্টে তাদের আটকাই।
চারজন একসঙ্গে থাকবো। সেই হিসেবেই বেশ বড় একটা ঘর নির্দিষ্ট ছিল আমাদের জন্য। ঘরে ঢোকার দরজার ঠিক মুখোমুখি আর একটি ছোট দরজা। যার লাগোয়া একটি বারান্দা। ওই দিকেই নদী। সবাই দ্রুত ফ্রেশ হয়ে ঠেলাঠেলি করে বারান্দায় যাই। আহ, নদীর ভেজা গন্ধ। ঠান্ডা কোমল বাতাস আদরের হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু দর্শনের সুযোগ নেই। আমরা যতটুকু পাই, তাই চেটেপুটে নিই। এর মধ্যে অর্ডার মতো হাজির চা আর চিকেন পকোড়া। বেশ সুস্বাদু। বৃষ্টিভেজা আমেজ ঘিরে রেখেছে আমাদের। স্পেশাল আদা চা আর পকোড়া সহযোগে জমে যায় নদীপাড়ের সান্ধ্য আড্ডা।
মেয়েদের কত যে না বলা কথা, কত যে গভীর ব্যাথা ! এই সন্ধ্যায় সেই সব কথারা উড়ে উড়ে, ঘুরে ঘুরে চলে যায় রূপনারায়ণের কাছে। সে অবশ্য নদ, অর্থাৎ পুরুষ। আমাদের ভাষা সে বুঝলো কিনা জানিনা। তবে আমরা পরস্পরের সুখদুঃখ ভাগাভাগি করে নিলাম। সুখের ভাগে সুখ বাড়ে, দুঃখ কমে দুখের ভাগে। আড্ডার সঙ্গে গান, আবৃত্তি। চার দেওয়ালের মাঝে আমরা। একটু দূরে রূপনারায়ণ। বৃষ্টি থেমেছে অনেকক্ষণ। বৃষ্টির জল পেয়ে চঞ্চলা নদী। তার উচ্ছ্বসিত গুঞ্জন ভেসে আসছে । সন্ধ্যাটা দ্রুত কাটে। এবার ডিনারের অপেক্ষা। ডিনার অর্থাৎ ইলিশ !!
ডাল-আলু ভাজা, গন্ধ লেবু, ইলিশ ভাজা, ইলিশ ভাপা। মহিলা ব্রিগেডের খুশি দেখে কে ? এমন নয় যে বাড়িতে আমরা ইলিশ খাইনা। তবু,এখানে, এই নদীর শরীর ছুঁয়ে ইলিশ ভোজ, সত্যি এক না ভোলা অভিজ্ঞতা হয়ে থাকে। আর রূপনারায়ণের ইলিশ তো বাঙালির খাদ্যরুচিতে চিরকাল ব্র্যান্ডেড। ডিনারের পরই ঘুম নয়, আগেই ঠিক হয়ে গেছে। এবার তাহলে গানের লড়াই। চারজন দুদলে ভাগ হয়ে কিছুক্ষণ এই নিয়ে হুল্লোড় চলে। রাত বাড়ে, চরাচর শান্ত হয়, ক্লান্তি নামে চোখে।
পরদিন এক ঝকঝকে সকাল। খুব দ্রুত ব্রেকফাস্ট সেরে নিই আমরা, আলু পরোটা আর আচার সহযোগে। তারও আগে চা। সারা রাতের নিরবচ্ছিন্ন ঘুমের পর বেশ কড়া লিকারের দুধ চা খেয়ে তরতাজা হয়ে পড়ি সকলেই। এবার আক্ষরিক অর্থেই এক ছুটে নদীর কাছে। রবিবারের সকাল। ইতিমধ্যেই ভিড় জমেছে রূপনারায়ণের তীরে। গাদিয়ারা কলকাতার খুব কাছে হাওড়া জেলার এক গ্রাম। নদীই এর আকর্ষণের কেন্দ্রে। সকালে এসে বিকালে ফিরে যাওয়া যায়। তেমন উইকএন্ড ট্যুরিস্টদের বেশ কয়েকটি দল ইতস্তত ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমরা ভিড় এড়িয়ে এগিয়ে যাই।
গাড়ির রাস্তা সোজা গিয়ে শেষ হয়েছে নদীর পাড়ে। নদীর দিকে মুখ করে দাঁড়ালে ডানদিক, বাঁদিকে নদীর পাড় ধরে মাটি আর সুড়কির রাস্তা চলে গেছে। কাঁচা রাস্তা, তবে, কাদা নেই। গাদিয়ারায় হুগলী, দামোদর আর রূপনারায়ণের সঙ্গম ঘটেছে। যার ফলে নদী এখানে অনেকটা চওড়া। এপার ওপার দেখা যায় না। ডানদিকের রাস্তা ওই সঙ্গমমুখী। ফলে এদিকটায় নদী সব থেকে বেশি চওড়া।
বাঁদিকে কোলাহল। ওদিকটায় সারি সারি হোটেল। পিকনিক স্পটগুলিও ওইদিকেই। পিকনিকের সিজন অর্থাৎ শীতে এলে এখানকার চেহারাই আলাদা। প্রচুর পিকনিক পার্টি। তখন মানুষের হইচই, উচ্চগ্রামে বাজা মিউজিক সিস্টেমের অত্যাচারে ব্যতিব্যস্ত নদী ও তীরবর্তী গ্রামগুলি। তবে, এটাও ঠিক এলাকার দরিদ্র মানুষের কিছু বাড়তি রোজগারের সুযোগ ঘটে তখনই। এখন এই ভরা বর্ষায় তত ভিড় না থাকলেও, লোকজন হোটেলগুলিকে ঘিরেই ওঠাবসা করে। তাই ওদিকেই ঘনীভূত জনতা। আমরা স্বাভাবিক ভাবেই উল্টোদিকে চলি। এদিকটায় পথ বেশ আদুরে ছায়াময়। দুষ্টু ছেলের দল জলে হুটোপুটি করছে। মাছ ধরা জাল নিয়ে ব্যস্ত জেলেরা। মাঝে মাঝে পাড়ে এসে লাগছে ব্যাপারী নৌকো। নদী পাড়ের অমল জীবন ছবি। রোদের তীব্রতা বাড়তেই হোটেলে ফিরি আমরা।
লাঞ্চেও ইলিশ। এবার মাছের ডিম আর তেল, সঙ্গে বেশ হৃষ্টপুষ্ট একটি করে কাঁচালঙ্কা। আর কালজিরে কাঁচালঙ্কার পাতলা ঝোল। আজ দুপুরে ইলিশ ছাড়া আর কিছু নয়, বলাই ছিল। লাঞ্চের পর এক ছোট্ট ভাতঘুম। নিছক ঘুম অবশ্য নয়, হালকা আড্ডাও ছিল। একপ্রকার পিএনপিসি। চারজন মেয়ে এক জায়গায় হবো আর একটু লোকের নিন্দে করবো না, তা হয় ? আসলে সবারই জীবনে নানা অপ্রাপ্তি, নানা অভিযোগ। কোনও না কোনও ভাবে আমরা সকলেই কর্মক্ষেত্রে বা ব্যক্তি জীবনে প্রতিকূল পরিস্থিতির শিকার হই। আর এইসবের পিছনে সব সময় কিছু প্রভাবশালী মুখোশধারী থাকে। এদের বিরুদ্ধে কিছু করার অক্ষমতার গ্লানি থেকেই কিছু না-বলা কথা আসে বেরিয়ে, যা নিছক নিন্দেমন্দ নয়।
রোদের তাপ একটু কমতেই আবার সকলে নদীমুখী। তিন নদীর সঙ্গম যেখানে, তার কাছাকাছি পৌঁছতেই মুগ্ধ বিস্ময়ে স্তব্ধ আমরা। পুরো আকাশ লালে লাল। গনগনে আগুনের গোলাটা যেন এক্ষুনি ঝাঁপিয়ে পড়বে ঠিক ওইখানে, যেখানে তিনটি নদীর জল মিলে মিশে একাকার। বাকরোধ করা অবস্থাটা কাটতেই তরুণীকুলের ফটোসেশন শুরু হয়ে যায়। সেলফি ও একে অপরের ছবি তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে ওরা। আমি অস্তরাগে ভেসে যাই। নদীকে একটু কাছ থেকে দেখি। অস্তগামী সূর্যকে পটভূমিতে রেখে চলেছে পালতোলা নৌকার সারি। যত দূরে যায়, তত ছোট হতে থাকে তারা। তারপর এক সময় দৃষ্টিসীমার বাইরে। পুরোটা মিলে এক অনির্বচনীয় ছবি আঁকা হয় পৃথিবীর বুকে।
আদতে তিনটি নদনদী মিলেছে এখানে। রূপনারায়ণ ও দামোদর হলো নদ। হুগলি হলো নদী। তিন নদনদীর মিলনস্থলটি বড়ই চমৎকার। জলের পৃথক পৃথক রং পরিষ্কার দৃশ্যমান। তবে, এখান থেকে সেটা বোঝা সম্ভব নয়। যদিও, এটা অনুভূত হয়, এখানে তিন জলধারার মিলন ঘটেছে। যতদূর চোখ যায়, শুধু জল আর জল। এই বর্ষায় তা বেড়ে বহুগুণ। বেশ উঁচু বাঁধানো পাড়ে জলরাশি ধাক্কা খেয়ে খেয়ে ফিরে যাচ্ছে নদীর গভীরে। এই যাতায়াতের ফলে বেশ একটা আন্দোলন তৈরি হয়েছে। তার ওপর দিয়ে যখন নৌকাগুলি যাচ্ছে, তারাও দুলছে ওই দোলায়। সব মিলিয়ে প্রকৃতির এক প্রাণচঞ্চল ছবি, যার রেশ আমাদেরও ছুঁয়ে যায়।
কন্যাদের ফটোসেশন শেষ। নদীর সঙ্গে একাত্ম হয়ে পড়ি সকলেই। কে বলে, এখানে একবেলার বেশি থাকা যায় না। রূপনারায়ণ দু’হাত ভরে দিয়েছে আমাদের। সকাল, সন্ধ্যা ভিন্ন ভিন্ন রূপ তার। আমরা দু’চোখ ভরে সেই রূপসুধা পান করেছি। দেখেছি নদীপারের মানুষের জীবন। তাদের দিনযাপনও এই নদীকে ঘিরেই আবর্তিত। সন্ধ্যা নামে একটু একটু করে। জল ছলাৎ ছলাৎ করে আছড়ে পড়ে পাড় ভাঙে। শান্ত হয় কোলাহল। ট্যুরিস্টদের বেশিরভাগই ফেরার পথে। আমরা আজ রাত্তিরটা থাকবো। তাই তাড়াহুড়ো নেই। অন্ধকার গাঢ় হতে হোটেলে ফিরি।
সন্ধ্যায় হোটেলের বাগানে বসে কফি আর বিস্কুট খেতে খেতে আমাদের এবারের যাত্রার পর্যালোচনা শুরু হয়ে যায়। আমার তো পায়ের তলায় সর্ষে। এই গাদিয়ারাতেও আগে এসেছি। ওদের প্রথমবার। স্বাভাবিকভাবেই আপ্লুত। এরই মধ্যে হঠাৎ মেঘের গুরুগুরু। তারারা পড়েছে ঢাকা। কোনও এক অপ্রতিরোধ্য আকর্ষণে আমরা সকলেই যাই নদীর পাড়ে। কল্পনায় দেখি, দূর থেকে মেঘের দল বৃষ্টি হয়ে আসছে ছুটে। নদীর সে কি আনন্দ ! উথালপাথাল হয়ে ওঠে সে। আকাশ বুঝি এক্ষুণি নেমে আসবে তার বুকে। বড় বড় জলের ফোটা ভিজিয়ে দেয় আমাদের। অগত্যা ফিরতেই হয় হোটেলের ঘরে। ডিনারে আজ চাইনিজ। একটু মুখ বদলের ইচ্ছে সবারই। খেয়েদেয়ে চটজলদি বিছানায়। কাল সকালে উঠেই ফেরা।
ঘুম ভাঙ্গে পাখির কিচিরমিচির শব্দে। দ্রুত উঠে পড়ি। তৈরি হয়ে,প্যাকিং সেরে আর একবার রূপনারায়ণের কাছে। আবার কবে দেখবো তাকে কে জানে ? মন খারাপ সকলেরই। নদীও আজ শান্ত। তারও মন আকুল আমাদের জন্য হয়তো! হোটেলে ফিরে স্যান্ডউইচ ও কফি খেয়ে বাসস্ট্যান্ড। বাসে উঠে যে যার নির্ধারিত সিটে। আপনাতে আপনি মগ্ন সবাই। বাস ছেড়ে দেয়। ফেরার যাত্রা শুরু। পথ আমাদের নিয়ে যাবে কাজের শহরে, রুটিনের জীবনে।
থাকার প্রাইভেট হোটেলগুলির মধ্যে মোটামুটি সকলেরই ওয়েবসাইট আছে। সেখানে যাবতীয় তথ্য মিলবে। রূপনারায়ন ট্যুরিস্ট লজ নামে রাজ্য সরকারের পর্যটন বিভাগের অতিথিনিবাস আছে। রাত্রিবাস করতে চাইলে আগাম বুকিং করে যাওয়াই ভালো। ইলিশ চাইলে বর্ষায়। এছাড়া শীতেও যেতে পারেন। শীতে পিকনিক পার্টির তান্ডব কিছু বেশি। এছাড়া আবহাওয়া ও পরিবেশ মনোরম। নিজের গাড়িতে বা গাড়ি ভাড়া করে যেতে পারেন। এছাড়া ধর্মতলা থেকে গাদিয়ারার বাসও ছাড়ে, দিনে কয়েকটি ট্রিপ। সময় লাগে আড়াই থেকে তিন ঘন্টা।
★★ যখনই বেড়াতে যাবেন (নিয়মিত বিভাগ)
🌈 প্যাকিং ফান্ডা
🔺কি কি নিয়ে যাবেন তার একটা লিস্ট বানিয়ে ফেলুন চটপট। এটা বেশ কয়েকদিন আগেই করুন। এতে জরুরি ও প্রয়োজনীয় জিনিস ভুলে যাওয়ার ভয় থাকবে না।
🔺ব্যক্তিগত জরুরি জিনিস, টাকাপয়সা, ট্রেন বা ফ্লাইটের টিকিট, হোটেলের বুকিং স্লিপ ইত্যাদি এমন জায়গায় রাখুন যা হাতের কাছে থাকবে অথচ বিশেষ যত্ন-খেয়ালও রাখা যাবে। ক্যামেরা, ল্যাপটপ ব্যাগের ক্ষেত্রেও একথা প্রযোজ্য।
🔺 ফার্স্ট এড বক্স, সাধারণ জরুরি ওষুধ এবং আপনি নিয়মিত যে ওষুধ খান তা যথাযথ পরিমানে সঙ্গে রাখুন।
🔺 টর্চ-মোম-দেশলাই অবশ্যই রাখতে হবে।
🔺সানগ্লাস, ছাতা ও বর্ষাতি রাখতে পারলে ভালো।
🔺ভাঁজ নয় জামাকাপড় ফোল্ড করে প্যাক করলে কম জায়গায় বেশি পোশাক আঁটবে। আর জামাকাপড়ের ভাঁজও নষ্ট হবে না।
🔺জামাকাপড়-জুতো ও অন্যান্য সরঞ্জাম নিন কোথায় যাচ্ছেন, সেই অনুসারে। যেমন, পাহাড়-জঙ্গল-সি বিচ যেখানে, সেখানে হিলতোলা জুতো নয়, স্পোর্টস শু জাতীয় হলে ভালো। আর পোশাকও প্রয়োজনের অতিরিক্ত নয়। প্রসাধনী ও রূপচর্চার উপকরণও যেটা না হলে নয়, ততটুকুই। মনে রাখুন, বোঝা বাড়ালে পথে চলাফেরায় কষ্ট। শীতের জায়গায় যথেষ্ট শীতপোশাক রাখুন সঙ্গে।
🔺গ্রাম বা প্রত্যন্ত অঞ্চলে গেলে সঙ্গে রাখুন কিছু শুকনো খাবার, টি ব্যাগ, কফি পাউডার, গরমজল করার ইলেকট্রিক কেটলি, কাগজের কাপ ও প্লেট, টিস্যু পেপার।
🌈 যাওয়ার আগে কি কি করবেন
◾যথাসম্ভব জায়গাটা সম্পর্কে আগাম খোঁজখবর নিয়ে নিন। স্পটে গিয়ে কি কি দেখবেন, কিভাবে সময় কাটাবেন, তার একটা ধারণা থাকলে সুবিধা হবে আপনার। বাজেট করা ও প্যাকিংয়ের ক্ষেত্রেও এটা জরুরি।
◾জেনে নিন, কাছাকাছি এটিএম, প্রয়োজনে ডাক্তারের ব্যবস্থা আছে কিনা। না থাকলে সেই অনুসারে আপনাকে প্রস্তুত থাকতে হবে।
◾চেষ্টা করবেন থাকা-খাওয়া-যাতায়াত-সাইট সিয়িং-শপিং ইত্যাদি খরচাপাতির জন্য একটা নির্দিষ্ট বাজেট করে নেওয়ার।
◾বেড়াতে গিয়ে যাতে অসুস্থ না হয়ে পড়েন, তার জন্য আগে থাকতেই প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।
🌈 আগাম বুকিং এবং
এটা একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও বিতর্কিত দিক। যাঁরা হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়েন, দল বেঁধে বা একা এবং বুকিংয়ের তোয়াক্কা করেন না, তাঁদের জন্য এই বিভাগ নয়। যাঁরা কিছুটা নির্ঝঞ্ঝাট বেড়ানো পছন্দ করেন, পরিবার পরিজন নিয়ে ভ্রমণ করেন, তাঁরা সচরাচর এডভান্স বুকিং না করে যান না। আমি নিজেও সেভাবেই সারা জীবন ঘুরেছি। এই বুকিংয়ের ক্ষেত্রে অনেকসময়ই এজেন্ট, পাহাড়ের ক্ষেত্রে হোমস্টে মালিক এবং সংশ্লিষ্ট লোকজনের সঙ্গে পর্যটকদের নানা বিষয়ে অশান্তির কথা শোনা যায়। এক্ষেত্রে যে সাবধানতা গুলি অবলম্বন করা যেতে পারে—
■ এজেন্ট সম্পর্কে ভালো করে আগে খোঁজ নিন
■পাহাড়ের হোমস্টে মালিকরা এমনিতে সৎ। কিন্তু ততটা পেশাদার এখনও নয়। কথাবার্তা, আদানপ্রদানের ক্ষেত্রেও ওদের কিছুটা সমস্যা আছে। ওদের ক্ষেত্রে বার বার জিজ্ঞেস করে, ভাষার কোনও সমস্যা থাকলে, সেটা কাটিয়ে উঠে, নিজের চাহিদা পূরণের ব্যাপারটা আগে থেকে বুঝে নিন।
■ কোনও কারণে বেড়াতে যাওয়া ক্যান্সেল হলে এডভান্স বুকিংয়ের টাকা ফেরত দেওয়া হয় না, এটাই নিয়ম। একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আপনার টাকা গচ্ছিত থাকবে ওই এজেন্ট, হোমস্টে মালিকের কাছে এডভান্স হিসেবেই। সেই সময়ের মধ্যে আপনি যেতে পারবেন সেখানে। এই বিষয়টিও বুকিংয়ের সময় পরিষ্কার করে নেওয়া ভালো।
🌈 কি করবেন
◾মানিয়ে চলার চেষ্টা করুন। যেখানে গেছেন, সেখানকার পরিবেশের সঙ্গে যত বেশি মানিয়ে চলবেন, তত মজা-খুশি-আনন্দ অনন্য প্রাপ্তি হয়ে ধরা দেবে আপনার অভিজ্ঞতায়।
◾যথাসম্ভব পায়ে হেঁটে ঘুরুন। এতে জায়গাটির সত্যিকারের এসেন্সটা পাবেন।
◾জেনে নিন এলাকার মানুষের জীবন, তাদের শিল্প-সংস্কৃতি, প্রকৃতি ও ইতিহাস।
🌈 কি করবেন না
◾যত্রতত্র প্লাস্টিক, আবর্জনা ইত্যাদি ফেলে পরিবেশ নষ্ট করবেন না।
◾লক্ষ্য রাখুন আপনার আনন্দ-উল্লাস যেন অপরের বিরক্তির কারণ না হয়ে দাঁড়ায়।