তিন পাহাড়ের চূড়ার মাঝে তিনচুলে
দিন যাপনের একঘেয়েমি আর ক্লান্তি দূর করতে পর্যটনের বিকল্প নেই। চার দেওয়ালের গন্ডি ছাড়িয়ে তল্পিতল্পা গুটিয়ে ঝোলা কাঁধে সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়েন যাঁরা, তাঁদের জন্যই এই কলম। লিখেছেন অজন্তা সিনহা।
দূরপাল্লার বাসস্ট্যান্ড মানেই সেখানে নানা ধরনের মানুষের ভিড়। বেশিরভাগই ট্যুরিস্ট। সবাই ব্যস্ত। একসঙ্গে কথা বলছে সকলেই। আর সবারই খুব তাড়া ! অলসভাবে সেইসবই দেখছিল অরণ্য। তার যেন কোনও তাড়া নেই। নেই কোনও লক্ষ্য। যে কোনও একটি গাড়িতে ইচ্ছে হলেই উঠে পড়বে সে। তারপর সে গাড়ি যেখানে পৌঁছয়, সেখানেই ঘাঁটি বেঁধে নেওয়া। এটা অবশ্য নিতান্তই তার একান্ত মনের ভাব। আদতে এবারে তার যাত্রাপথ নির্দিষ্ট। তবু, বেড়াতে বেরিয়ে এই আলস্য উপভোগ করে অরণ্য। লোকজনের তাড়াহুড়ো মজা করে দেখে। কিন্তু নিজে তাতে নাম লেখায় না। চমক ভাঙে নারীকণ্ঠে, “এক্সকিউজ মি, দার্জিলিংয়ের গাড়ি কোথা থেকে ছাড়ে বলবেন প্লিজ !” অরণ্য কিছুটা দূরের সারি সারি দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িগুলির দিকে আঙ্গুল তুলে দেখায়। তরুণী ‘থ্যাংকস’ ব’লে অরণ্যর নির্দেশিত দিকে চলে যায়।
এদিক-ওদিক দেখতে দেখতে অনেকটা সময় পার হয়ে যায়। এরমধ্যে বার কয়েক চা-ওয়ালার কাছ থেকে চা খেয়েছে অরণ্য। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে নামার পরেই পেটপুরে ব্রেকফাস্ট করে নিয়েছিল সে। অতএব খিদে নেই। জনবহুল জায়গাটির বেশ ক’টি স্ন্যাপ নেওয়া হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই। এবার মনে হচ্ছে দার্জিলিং যাওয়ার শেষ গাড়িটাও ছেড়ে দেবে ! দ্রুত গাড়িটার সামনে যায় অরণ্য। ভাগ্যক্রমে পিছনের দিকে একটা সিটও পেয়ে যায় সে। গাড়ি ছেড়ে দেয়। শহরের সীমানা ছাড়াতেই বদলে যায় দৃশ্যপট। এখন পথের দু’ধারে শুধুই মুগ্ধতা।
গাড়ির যাত্রা শেষ দার্জিলিংয়ে। অরণ্য অবশ্য তার আগেই নামবে। এখন আর গাড়িতে কোনও ট্যুরিস্ট নেই। সকলেই এলাকাবাসী। ফলে কিছুটা ঢিলেঢালা গতিতে চলছে গাড়ি। আর এভাবেই জোড়বাংলো পৌঁছে যায় অরণ্য। সেখানে কথামতো গুরুং কটেজের গাড়ি আগে থেকেই অপেক্ষা করছিল। যখন তিনচুলে পৌঁছয় অরণ্য, সূর্য ততক্ষণে মাথার উপরে। পায়ে পায়ে অরণ্য এগিয়ে যায় হোমস্টে-র দিকে। পৌঁছেই চমকে ওঠে সে। আরে, এটা সেই শিলিগুড়ি বাসস্ট্যান্ডের মেয়েটি না ? বারান্দায় বেতের চেয়ারে বসে, হাতে একটা ম্যাগাজিন, তবে, চোখ সামনের পাহাড়ের দিকে। সেখানে তখন ঝলমলে রোদ্দুর। অরণ্যকে লক্ষ্য করে না সে। অরণ্যও কিছু না বলে ভিতরে চলে যায়। মৃত্তিকা, মানে অরণ্যর এইমাত্র দেখা মেয়েটির কথা আমরা পরে জানবো। এখন তিনচুলের বিত্তান্ত।
বিত্তান্তই বটে। ইতিহাসও বলতে পারেন। আজ উত্তরবঙ্গের প্রায় সর্বত্র, শহর থেকে গ্রাম, হোমস্টে ব্যাবসার রমরমা। সেদিনটা কিন্তু এমন ছিল না। পাহাড়ের গ্রামগুলিতে তখন থাকা মানে কতিপয় সহৃদয় অতিথিবৎসল অঞ্চলবাসীর বাড়িতে পেয়িং গেস্ট হওয়ার সুযোগ। সেটা ১৯৯৫ সাল। ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফেডারেশনের একটি প্রোজেক্ট চলছিল তখন ওই অঞ্চলে, ওরা পরিবেশ নিয়ে কাজ করছিল। প্রোজেক্ট শেষ হয়ে যাওয়ার পরও ওরা চাইলো কাজটা অন্য কোনও রূপে চালু থাক। সেই সূত্রেই শুরু হলো হোমস্টে মুভমেন্ট। যাত্রা শুরু করলো দেশের প্রথম হোমস্টে, গুরুং হোমস্টে।
তিনচুলের গুরুং পরিবারের সঙ্গে যৌথভাবে এই ঐতিহাসিক কাজটি সম্পন্ন করলো শিলিগুড়ির হেল্প ট্যুরিজম। প্রসঙ্গত, পরিবেশ সংরক্ষণের সঙ্গে এলাকার মানুষের জীবন ও জীবিকার বিষয়টিকে একসূত্রে বাঁধার ভাবনাকে ব্রত করেই এই পর্যটন সংস্থার যাবতীয় কর্মকাণ্ড। রুরাল ট্যুরিজম ও হোমস্টে মুভমেন্টকে পাহাড়ের এক বিস্তৃত অঞ্চলে ছড়িয়ে দিয়েছে হেল্প ট্যুরিজম। তিনচুলেতে তাদের গুরুং হোমস্টে প্রতিষ্ঠার ইতিহাসকে স্বীকৃতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারও। ২০০৯ সালে হেল্প ট্যুরিজম পুরস্কৃত হয় দেশের প্রথম হোমস্টে-র প্রতিষ্ঠাতা রূপে। এখন তিনচুলের চারটি হোমস্টে-র অন্যতম গুরুং কটেজ।
পৌঁছনোর পর ব্যাগ আনপ্যাক ইত্যাদি নিয়মমাফিক কাজকর্মগুলি করে একেবারে স্নান-খাওয়া সেরে নেয় অরণ্য। দুপুরে ঘুমের প্রশ্নই নেই। কটেজের চারপাশের ঘন সবুজের আয়োজন। প্রকৃতি বিছিয়ে দিয়েছে মায়ার আঁচল। ঘর থেকে বেরিয়ে তারই কিছু ক্যামেরাবন্দি করে অরণ্য। তারপর অনির্দিষ্টভাবে গ্রামের পথে ঘুরতে ঘুরতেই হঠাৎ মৃত্তিকার মুখোমুখি হয়ে যায় সে । আশপাশে নির্জন প্রকৃতি। দূরে কোথাও একটা পাখি ডাকে। আকাশ পরিষ্কার। রোদ্দুরের তাপ কমছে একটু একটু করে। দুজনেই দাঁড়িয়ে পড়ে। প্রথম কথা বলে মৃত্তিকাই। সে বলে, “সকালে তাড়াহুড়োয় চলে এলাম। কথা হয়নি। আপনাকে তখন একবার দেখলাম। ডাকবো ভেবেও…! আমি মৃত্তিকা । কলকাতা থেকে আসছি।” অরণ্য হেসে, “আমিও কলকাতার।” আলাপচারিতায় আর একটু সময় যায় । ওরা এগিয়ে চলে জঙ্গলের পথে। চলুন আমরাও যেতে যেতে আর একটু জেনে নিই তিনচুলে সম্পর্কে।
তিনচুলে অর্থাৎ তিনটি উনুন। গ্রামটিকে ঘিরে রয়েছে উত্তুঙ্গ পর্বতশ্রেণী আর সেখানে তিন-তিনটি বিখ্যাত শৃঙ্গ। দূর থেকে দেখতে যেন ঠিক উনুনের মতো। আর এই থেকেই গ্রামবাসীরা নাম দিল তিনচুলে। আদতে তিনটি সুনির্দিষ্ট পর্বতমালা এসে মিশেছে এখানে। একটি এসেছে তাগদার দিক থেকে। দ্বিতীয়টি বড় ও ছোট মাঙ্গোয়া থেকে। তৃতীয়টি লোপচু/লামাহাটার দিক থেকে এসে মিলেছে। পাহাড় ঘেরা উপত্যকা আর সেই উপত্যকার কোলে সবুজের সমারোহ। ভিড়ের দার্জিলিং থেকে বেশ আলাদা এই জায়গাটার সঙ্গে তাল মিলিয়েই যেন তৈরি এই গুরুং কটেজ। একদিকে উঁচু উঁচু গাছের সারি। তার মাঝে পাহাড়ী ফুল, অর্কিড–রঙের বাহার চোখ টানে অরণ্যের। আর ধরা দেয় তার ক্যামেরায়। এসময় সন্ধ্যা নামে দ্রুত। অতএব হোমস্টে-তে ফিরে এসে স্ন্যাকস সহযোগে কফি পান। ততক্ষণে হাড় কাঁপিয়ে ঠান্ডা পড়ছে। ডিনার শেষে যে যার ঘরে এবং সোজা বিছানায়। চরাচর একেবারে শান্ত। ঘড়ির কাঁটা ন’টায় পৌঁছনোর আগেই ঘুমের দেশে পৌঁছে যায় অরণ্য, মৃত্তিকা আর গেস্ট হাউসের বাকি অতিথিরা।
সূর্য মুখ দেখায়নি তখনও, ক্যামেরার ব্যাগ কাঁধে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে অরণ্য। সঙ্গী মৃত্তিকা। যাবে সানরাইজ পয়েন্টে। এই স্পট থেকে সূর্য ওঠার ছবি তোলা অরণ্যের বহুদিনের স্বপ্ন। এই প্রথমবার তিনচুলে এসেছে দুজনেই। এসেই চূড়ান্ত প্রেমে পড়ে গেছে। আসুন, অরণ্যের ক্যামেরার লেন্সে চোখ রেখেই দেখেনি আমরা অপূর্ব এই পাহাড়ী গ্রামকে। দার্জিলিং জেলার অন্তর্গত এই গ্রামটি, জনবহুল দার্জিলিং শহর থেকে মাত্র ৩২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। উচ্চতা ৫৬০০ থেকে ৬২০০ ফুট। শান্ত, মনোরম এই ইকো-আরবান গ্রামটি একদা ঘন জঙ্গলে সন্নিবিষ্ট ছিল। ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ ফেডারেশনের সহায়তা, হেল্প ট্যুরিজমের উদ্যোগ ও গ্রামের মানুষের ঐকান্তিক আগ্রহে তিনচুলে এখন এক স্বনির্ভর, পরিবেশবন্ধু গ্রাম। অপরূপ প্রাকৃতিক ক্যানভাসে আকর্ষণীয় গ্রামটি আজ পর্যটকদের আগ্রহের কেন্দ্রে। ফ্লোরিকালচার, ফরেস্ট নার্সারি জাতীয় নানা প্রোজেক্ট একাধারে প্রকৃতি ও জনজীবনের সুরক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি এর ফলে পর্যটন শিল্পও বিশেষভাবে উজ্জীবিত হয়েছে বলা যায়।
আজ তাগদা যাচ্ছে অরণ্যরা। মৃত্তিকা ইতিহাসের অধ্যাপক। তার কিছুটা বাড়তি আগ্রহ তাই। তিনটি পর্বতশ্রেণীর মিলনস্থল থেকে ব্ল্যাক বিয়ার কেভ, যার অবস্থান ঠিক রোয়াক ফরেস্টের ওপরে, তিনচুলের দৃশ্যপট বিস্তৃত এখান থেকেই। এর খুব কাছেই তাগদা। জায়গাটার ঐতিহাসিক গুরুত্ব অসীম। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় এখানেই ছিল ব্রিটিশ সেনা ছাউনি। তাগদা ফরেস্ট থেকে জোরবাংলো, মাঝের এলাকাটি পরিষ্কার করে নিজেদের বসবাস ও কাজের স্থান হিসেবে চিহ্নিত করেছিল ব্রিটিশরা। সেইসব দিনের নিদর্শন আজও দাঁড়িয়ে এখানে। তাগদা ক্যান্টনমেন্ট তার হেরিটেজ বাংলো, ক্লাব ইত্যাদি নিয়ে পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রে বরাবর রয়েছে।
গতকাল তাগদায় প্রচুর ফটোশুট হয়েছে। আজ তিনচুলে মনাস্ট্রি দেখতে যাবে ওরা। অরণ্য খুব খুশি মনে মনে। মৃত্তিকার আগ্রহের বিষয়গুলি একেবারে তার মনের মতো। পেশায় চিত্র সাংবাদিক এই তরুণের ক্যামেরায় প্রকৃতিও যেন লিখছে নতুন গাথাকাব্য। ওরা ওদের পথে চলুক। সেই অবকাশে তিনচুলে নিয়ে আরও কিছু তথ্য পাঠকের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া যাক। কাছাকাছি রয়েছে অনেকগুলো শর্ট ট্রেকিং রুট–দুরপিন দারা, তিস্তা ও রঙ্গিত নদী এবং গুমবা দারা ভিউ পয়েন্ট। আর একটু দূরের ট্রেকিংয়ে অবশ্যই দেখতে হবে গুমবা দারা। ব্রিটিশ আমলে তৈরি পাহাড়ের গায়ে খোদাই করা ভারতীয় শিল্পকীর্তির অপূর্ব বেশ কিছু নিদর্শন রয়েছে এখানে। শান্ত, সবুজ প্রকৃতি। জঙ্গলে নানাজাতের পাখি। একদিকে তিস্তা ও রঙ্গীতের মিলনস্থল, মুগ্ধ হয়ে দেখার মতো। অন্যদিকে বরফে ঢাকা সাদা তিন পর্বতশৃঙ্গ। তিনচুলে যেন প্রকৃতি ও ইতিহাসের মেলবন্ধনের গীতিকাব্য লিখেছে যুগের পর যুগ ধরে।
কয়েকটা দিন যেন স্বপ্নের মতো কেটে যায়। অরণ্য আর মৃত্তিকা খুব ভালো বন্ধু হয়ে গেছে। আপাতত ওরা শিলিগুড়ির পথে। যেতে যেতে দুজনেই মনে মনে বলে, ‘আবার আসবো’। তিনচুলের স্মৃতি আরও কতদূর নিয়ে যায় ওদের, সে তো সময়ই বলবে। আমরা আসি আমাদের কথায়। প্রতিবেদন শেষ করার আগে জরুরি কিছু তথ্য। বর্ষা বাদ দিয়ে বছরের যে কোনও সময় আসতে পারেন তিনচুলে। শীতে বেশ ঠান্ডা পড়ে। তাই যথেষ্ট শীত-পোশাক সঙ্গে রাখুন। কোথায় কোথায় সাইট সিয়িং-এ যাবেন, সে তো আগেই বলেছি। এরই সঙ্গে যোগ করতে পারেন দার্জিলিং ও কার্শিয়ং শহর। অজস্র দ্রষ্টব্য রয়েছে। আর যাঁরা শুধুই নির্জনতা চান, তাঁদের জন্য তিনচুলে জুড়ে প্রকৃতির অনির্বচনীয় রূপসুধার আয়োজন তো আছেই।
তিনচুলে যেতে চাইলে পেশক দিয়ে লোপচু হয়ে অথবা তিস্তা ভ্যালি-তিস্তা চা বাগানের রাস্তা হয়ে, দু’ভাবেই যাওয়া যায়। শিলিগুড়ি/নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে তিনচুলে গাড়ি রিজার্ভ করে গেলে ভাড়া ৩০০০ থেকে ৪০০০ টাকা। এছাড়া শেয়ারেও যেতে পারেন। শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং যাওয়ার শেয়ার গাড়িতে জোড়বাংলো নামুন। সেখান থেকে তিনচুলে যেতে হবে গুরুং কটেজের পাঠানো রিজার্ভ গাড়িতে। একটি তথ্য এখানে দেওয়া জরুরি। শুরুর গুরুং হোমস্টে আজ কার্যকারণে এক বৃহৎ রিসর্টে পরিণত। হেল্প ট্যুরিজম নতুন করে গুরুং পরিবারের সঙ্গে যৌথভাবে পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রতিষ্ঠা করেছে গুরুং কটেজ। মোট ৮টা ঘর রয়েছে এখানে। ঘরগুলি সুসজ্জিত, আরামদায়ক ও পরিচ্ছন্ন। খাওয়াদাওয়া সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যকর। সবই গুরুং পরিবারের চাষবাসের ফসল। অর্থাৎ তাজা শাকসবজি খাওয়ার অনুপম অভিজ্ঞতা অতিথিদের বাড়তি পাওনা।
◾বুকিং ও যাবতীয় তথ্যের জন্য
যোগাযোগ : হেল্প ট্যুরিজম
ফোন 97330 00447
টোল ফ্রি নম্বর 1800-123-0156
Email: siliguri@helptourism.com, info@helptourism.com
★★ যখনই বেড়াতে যাবেন (নিয়মিত বিভাগ)
🌈 প্যাকিং ফান্ডা
🔺কি কি নিয়ে যাবেন তার একটা লিস্ট বানিয়ে ফেলুন চটপট। এটা বেশ কয়েকদিন আগেই করুন। এতে জরুরি ও প্রয়োজনীয় জিনিস ভুলে যাওয়ার ভয় থাকবে না।
🔺ব্যক্তিগত জরুরি জিনিস, টাকাপয়সা, ট্রেন বা ফ্লাইটের টিকিট, হোটেলের বুকিং স্লিপ ইত্যাদি এমন জায়গায় রাখুন যা হাতের কাছে থাকবে অথচ বিশেষ যত্ন-খেয়ালও রাখা যাবে। ক্যামেরা, ল্যাপটপ ব্যাগের ক্ষেত্রেও একথা প্রযোজ্য।
🔺 ফার্স্ট এড বক্স, সাধারণ জরুরি ওষুধ এবং আপনি নিয়মিত যে ওষুধ খান তা যথাযথ পরিমানে সঙ্গে রাখুন।
🔺 টর্চ-মোম-দেশলাই অবশ্যই রাখতে হবে।
🔺সানগ্লাস, ছাতা ও বর্ষাতি রাখতে পারলে ভালো।
🔺ভাঁজ নয় জামাকাপড় ফোল্ড করে প্যাক করলে কম জায়গায় বেশি পোশাক আঁটবে। আর জামাকাপড়ের ভাঁজও নষ্ট হবে না।
🔺জামাকাপড়-জুতো ও অন্যান্য সরঞ্জাম নিন কোথায় যাচ্ছেন, সেই অনুসারে। যেমন, পাহাড়-জঙ্গল-সি বিচ যেখানে, সেখানে হিলতোলা জুতো নয়, স্পোর্টস শু জাতীয় হলে ভালো। আর পোশাকও প্রয়োজনের অতিরিক্ত নয়। প্রসাধনী ও রূপচর্চার উপকরণও যেটা না হলে নয়, ততটুকুই। মনে রাখুন, বোঝা বাড়ালে পথে চলাফেরায় কষ্ট। শীতের জায়গায় যথেষ্ট শীতপোশাক রাখুন সঙ্গে।
🔺গ্রাম বা প্রত্যন্ত অঞ্চলে গেলে সঙ্গে রাখুন কিছু শুকনো খাবার, টি ব্যাগ, কফি পাউডার, গরমজল করার ইলেকট্রিক কেটলি, কাগজের কাপ ও প্লেট, টিস্যু পেপার।
🌈 যাওয়ার আগে কি কি করবেন
◾যথাসম্ভব জায়গাটা সম্পর্কে আগাম খোঁজখবর নিয়ে নিন। স্পটে গিয়ে কি কি দেখবেন, কিভাবে সময় কাটাবেন, তার একটা ধারণা থাকলে সুবিধা হবে আপনার। বাজেট করা ও প্যাকিংয়ের ক্ষেত্রেও এটা জরুরি।
◾জেনে নিন, কাছাকাছি এটিএম, প্রয়োজনে ডাক্তারের ব্যবস্থা আছে কিনা। না থাকলে সেই অনুসারে আপনাকে প্রস্তুত থাকতে হবে।
◾চেষ্টা করবেন থাকা-খাওয়া-যাতায়াত-সাইট সিয়িং-শপিং ইত্যাদি খরচাপাতির জন্য একটা নির্দিষ্ট বাজেট করে নেওয়ার।
◾বেড়াতে গিয়ে যাতে অসুস্থ না হয়ে পড়েন, তার জন্য আগে থাকতেই প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।
🌈 আগাম বুকিং এবং
এটা একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও বিতর্কিত দিক। যাঁরা হঠাৎ করে বেরিয়ে পড়েন, দল বেঁধে বা একা এবং বুকিংয়ের তোয়াক্কা করেন না, তাঁদের জন্য এই বিভাগ নয়। যাঁরা কিছুটা নির্ঝঞ্ঝাট বেড়ানো পছন্দ করেন, পরিবার পরিজন নিয়ে ভ্রমণ করেন, তাঁরা সচরাচর এডভান্স বুকিং না করে যান না। আমি নিজেও সেভাবেই সারা জীবন ঘুরেছি। এই বুকিংয়ের ক্ষেত্রে অনেকসময়ই এজেন্ট, পাহাড়ের ক্ষেত্রে হোমস্টে মালিক এবং সংশ্লিষ্ট লোকজনের সঙ্গে পর্যটকদের নানা বিষয়ে অশান্তির কথা শোনা যায়। এক্ষেত্রে যে সাবধানতা গুলি অবলম্বন করা যেতে পারে—
■ এজেন্ট সম্পর্কে ভালো করে আগে খোঁজ নিন
■পাহাড়ের হোমস্টে মালিকরা এমনিতে সৎ। কিন্তু ততটা পেশাদার এখনও নয়। কথাবার্তা, আদানপ্রদানের ক্ষেত্রেও ওদের কিছুটা সমস্যা আছে। ওদের ক্ষেত্রে বার বার জিজ্ঞেস করে, ভাষার কোনও সমস্যা থাকলে, সেটা কাটিয়ে উঠে, নিজের চাহিদা পূরণের ব্যাপারটা আগে থেকে বুঝে নিন।
■ কোনও কারণে বেড়াতে যাওয়া ক্যান্সেল হলে এডভান্স বুকিংয়ের টাকা ফেরত দেওয়া হয় না, এটাই নিয়ম। একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আপনার টাকা গচ্ছিত থাকবে ওই এজেন্ট, হোমস্টে মালিকের কাছে এডভান্স হিসেবেই। সেই সময়ের মধ্যে আপনি যেতে পারবেন সেখানে। এই বিষয়টিও বুকিংয়ের সময় পরিষ্কার করে নেওয়া ভালো।
🌈 কি করবেন
◾মানিয়ে চলার চেষ্টা করুন। যেখানে গেছেন, সেখানকার পরিবেশের সঙ্গে যত বেশি মানিয়ে চলবেন, তত মজা-খুশি-আনন্দ অনন্য প্রাপ্তি হয়ে ধরা দেবে আপনার অভিজ্ঞতায়।
◾যথাসম্ভব পায়ে হেঁটে ঘুরুন। এতে জায়গাটির সত্যিকারের এসেন্সটা পাবেন।
◾জেনে নিন এলাকার মানুষের জীবন, তাদের শিল্প-সংস্কৃতি, প্রকৃতি ও ইতিহাস।
🌈 কি করবেন না
◾যত্রতত্র প্লাস্টিক, আবর্জনা ইত্যাদি ফেলে পরিবেশ নষ্ট করবেন না।
◾লক্ষ্য রাখুন আপনার আনন্দ-উল্লাস যেন অপরের বিরক্তির কারণ না হয়ে দাঁড়ায়।