বাজারে পথভ্রষ্ট অনুধাবন
জীবনমরণের সীমানা ছাড়িয়ে ওঁরা আজ বহু আলোকবর্ষ দূরের এক জগতে। তবু আছেন ওঁরা আমাদের মাঝে। থাকবেন চিরদিন। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি-সিনেমা জগতের সেইসব মানুষ, যাঁদের অবদান ছাড়া অসম্পূর্ণ আমরা, তাঁদের নিয়েই এই বিশেষ কলম। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিবস পালন উপলক্ষে প্রকাশিত হচ্ছে ‘তবু অনন্ত জাগে’-র বিশেষ পর্ব। বিষয় ‘রবীন্দ্রসঙ্গীত : অনুধাবন ও পরিবেশন’। এই বিষয়ে এই সময়ের প্রখ্যাত শিল্পীদের ভাবনাসমৃদ্ধ প্রতিবেদন ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। আজ ডঃ আবীর চট্টোপাধ্যায়। অনুলিখনঃ সাংবাদিক অজন্তা সিনহা।
তিন দশক ধরে রবীন্দ্রগান নানা মঞ্চে পরিবেশন এবং কিছু বিষয় লেখালিখির অভিজ্ঞতা থেকে কয়েকটি কথা বলি। গান একার নয়, একথা সঠিকভাবেই বলা হয়েছে। রবীন্দ্রগান তো একার নয়ই। গান সবারই অনুধাবনের, পরিবেশনার, এমনকি বহুদিন ধরেই কেনা-বেচারও।
এমন একটি বিষয়ে শিল্পী-শ্রোতা নির্বিশেষে যাঁর যেমন অভিজ্ঞতা আছে তেমন যে কোনও মানুষই কিছু কথা বলে দিতে পারেন এবং নানা পরিসরে সচরাচর মন্তব্য করেও থাকেন। কীভাবে বলে দিতে পারেন?
প্রথমত, ভাল-লাগা মন্দ-লাগা থেকে বলতে পারেন।
দ্বিতীয়ত, কোনও না কোনও সংগঠন/প্রতিষ্ঠানে জড়িত থাকার সুবাদে বা অধিকারে বলতে পারেন।
তৃতীয়ত, শিল্পী বা পারফর্মার হিসেবে বলতে পারেন।
চতুর্থত, সংবাদমাধ্যমের ফ্রি-লান্স সমালোচক হিসেবে বলতে পারেন।
পঞ্চমত, কোনও ক্যাসেট-সিডি-ওটিটি প্ল্যাটফর্ম কোম্পানির লোক হিসেবে বলতে পারেন।
ষষ্ঠত, বাজার, ইউটিউব বা সামাজিক মাধ্যমে কোনটা বা কার গান বেশি চলছে, সেই নিরিখে কেউ বলতে পারেন।
সপ্তমত, ক্ষমতার কাছাকাছি থাকার সুবাদে নিতান্ত পারিবারিক মানুষও অনেক কিছু বোঝার এবং বলার অধিকারবোধ থেকে সামাজিক মাধ্যমে বলে থাকেন।
অষ্টমত, দলমত নির্বিশেষে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বা রাজনৈতিক সঙ্গের মানুষ রবীন্দ্রগানের সমকালীন পরিস্থিতি নিয়ে বলতে পারেন।
সবশেষে গানের গলা থাকলেই ন্যূনতম প্রশিক্ষণ ছাড়া যাঁরা শিল্পী হতে ক্ষমতার দ্বারস্থ হয়েছিলেন, বর্তমানে গানের চর্চা থেকে বেশ দূরে, তাঁরাও বেশ খানিকটা বলতে পারেন।
এতগুলো দৃষ্টিকোণ থেকে রবীন্দ্রনাথের গান অনুধাবন ও পরিবেশন সম্পর্কে বলা হয়ে চলেছে প্রতিদিন। কাউকে যদি আপনি কম, বেশি তুলনামূলক কিছু ভাবেন, সামাজিক মাধ্যমে এখন দক্ষযজ্ঞ বেধে যেতে পারে। এর মাঝখানে যদি ভাবা যায়, শিল্পীর অবস্থা সবচেয়ে করুণ, তাহলে অনেকটাই ঠিক বলা হল। যদিও এতসব শিল্পীর মধ্যে থেকেই কিছু শিল্পী বাজারে, নানা মাধ্যমে হঠাৎ প্রিয় হয়ে ওঠেন। আপনি যদি বলেন যে ভাল গায়, তাই প্রিয় বাজারের কাছে প্রিয় হয়েছে–তাহলে হয়তো পুরো সঠিক বলা হল না। কারণ বাজারের নির্বাচন এবং নির্বাচিত হওয়া কোনওটাই সামাজিকভাবে স্বাভাবিক কোনও প্রক্রিয়া নয়। তা ছাড়া এই বিষয়ের মধ্যে আর একটা বিষয় আছে–তা হল অনুধাবন, যার সঙ্গে বাজারের প্রায় কোনও সম্পর্ক না থাকলেও গানের বিপণনে যত্রতত্র ব্যবহৃত হয়। তা বলে বাজারের প্রিয়পাত্র সব শিল্পীর রবীন্দ্রনাথের গান সম্পর্কে কোনও অনুধাবনই নেই, তাও বলা যায় না। সবই যদি ঠিক, তাহলে, আসল কথাটা কী ? বা আসল কথা বলে কি কিছু আছে?
আসলে, রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে বিভিন্ন শহর-গঞ্জ এলাকায় প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান থেকে আজকের ‘বড়’বাজারে রূপান্তরের মধ্যে দিয়ে গত সত্তর-আশি বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। তার মধ্যে কপিরাইট থাকা পর্যন্ত অর্থাৎ ২০০১ সাল পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথের গানের ক্ষেত্রে যাঁরা বিশ্বভারতী মিউজিক বোর্ডের সদস্য, তাঁদের কথাই শেষ কথা বলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কী সে কথা? রবীন্দ্রগান অনুধাবনের কথা? না, বাজারে স্বরলিপি অনুযায়ী ‘শুদ্ধ’ রবীন্দ্রনাথের গান পরিবেশিত হওয়া ? অর্থাৎ, অনুধাবন নামক বিমূর্ত একটি কথা বাদ দিয়ে শুধু ‘শুদ্ধ’ গানের প্রসঙ্গই সামনে এসে গেল। তার মধ্যে কে কোন বড় শিক্ষক বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী, তার মধ্যেও কিছু বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্তির ভিত্তিতেই বাজারের দরজা বা গণমাধ্যমে সুযোগের দ্বার খুলে যেতে লাগলো। বাকিরা নেহাতই এলেবেলে, কেন সুযোগ পাবে? অর্থাৎ রবাহুত-দের পাত বাজারে পড়ল না।
রবীন্দ্রনাথ নিজে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে প্রকাশ্য বিবাদে বারবার এই প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন–শিক্ষা, প্রশিক্ষণ সবার হোক। কিন্তু বাজারে সবাই সুযোগ পাক?–এ প্রশ্নটি আজ বড় হয়ে গেছে, কিন্তু উত্তর নেই। ফলে যে কেউ শিখতে পারে। কিন্তু বাজার অবধি পৌঁছবে না। কেন পৌঁছবে না? আপনি বলবেন, যোগ্যতা নেই–তাই। বিষয়টি কি এতই সহজ? ছোটোখাটো অনুষ্ঠান ছাড়া সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের সামনের সারিতে আসার সুযোগ কমই আসে। এখানে অনুধাবনের বিষয়টি নেহাতই ব্যক্তিগত, যদিও বাজারে অনুধাবন, উপলব্ধি এই জাতীয় বিষয়গুলি যথেষ্ট আলোচিত হয়েছে ক্ষমতার ‘কোড’ হিসেবে।
আদতে, রবীন্দ্রনাথের গান অনুধাবন করে পরিবেশন বিষয়টি যথেষ্ট দুরূহ। অধিকাংশ গানের ক্ষেত্রেই শিল্পীর পক্ষে তা করে ওঠা সম্ভব নয়। যদি এ কথা শুনে আপনি খুব অসন্তুষ্ট হন, তাহলে বলি ‘ফাগুনের কুসুম ফোটা হবে ফাঁকি / আমার এই একটি কুঁড়ি রইলে বাকি’–এই গানের লাইনটির মধ্যে কবি-র আমি-র সঙ্গে তুমি-র যে বিবাদ, সেই বিবাদ অনুধাবন করে ক’জন শিল্পী গানটি গেয়েছেন ? নাকি এই গান বারবার গাইতে গাইতে, পড়তে পড়তে, তবেই কখনও সে অর্থ মগজে ঢুকেছে অর্থাৎ অনুধাবন করা গেছে। নিঃসন্দেহে বলা যায় দ্বিতীয় ঘটনাটাই বাস্তবসম্মত। আবার ধরুন ‘তোমার এই মাধুরী ছাপিয়ে আকাশ ঝরবে / আমার মধ্যে নইলে সে কি কোথাও ধরবে?’ –এই ‘জিজ্ঞাসা’ গান গেয়ে কতজন বোঝাতে পেরেছেন? বা আদৌ বোঝানো গেছে? আবার ধরুন, ‘আমার খেলা যখন ছিল তোমার সনে’ গানটির সঞ্চারী অংশে ‘ওগো সেদিন তুমি গাইতে যেসব গান/কোনো অর্থ তাহার কে জানত / শুধু সঙ্গে তারই গাইত আমার প্রাণ / সদা নাচত হৃদয় অশান্ত’। অথবা রক্তকরবীর ‘তোমায় গান শোনাব’ –এই গানে যক্ষপুরের কথায় অন্তরাতে যখন বলছেন–’এল আঁধার ঘিরে / পাখী এল নীড়ে / তরী এল তীরে / শুধু আমার হিয়া বিরাম পায়নাকো’–এর প্রত্যেকটি শব্দের গুরুত্ব, তার মধ্যে শ্রমের বেদনা মনের মধ্যে নিয়ে ক’জন গায়ক-গায়িকা গেয়েছেন? নাকি এতসব ভেবে গাইবার সময় তাঁদের আছে?
একইভাবে, এর বিপরীতে যে শ্রোতা সমাজ, তাঁরাও কি এতসব ভেবেছেন? যদি ‘না’ বললে পাঠকের রাগ হয়, তবে হ্যাঁ বলতে পারি। অবশ্য এরই মধ্যে হাতেগোণা অল্প কয়েকজন বিশিষ্ট মনের মানুষ অনুধাবনের এমন সহজ অথচ গভীরে পৌঁছতে চেয়েছেন। ফলে শেষ পর্যন্ত যা দাঁড়িয়েছে এ যাবৎকাল তা হলো, এমনি কোনও শিল্পী হলে, গানটি শুনতে শুধু ‘ভালো’ লেগেছে আর ‘পছন্দের’ শিল্পী হলে একটু ‘বেশি’ মধুর লেগেছে। আর এই ভালো লাগার অসম্ভব পক্ষপাতিত্বে শ্রোতারা দেবব্রত বিশ্বাস এবং হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গানের মধ্যেও ভাবের বা অনুধাবনের তফাৎ খুঁজে পেয়ে যান। এটা অভিযোগ নয়, বরং শ্রোতার অধিকার।
কপিরাইট থাকা বা না থাকা যাই হোক না কেন, ক্রমবিকাশমান ‘সংস্কৃতি বাজার’ ঠিক এই জায়গাটিকেই ধরেছে। শ্রোতার অধিকার, শ্রোতার খাওয়াতে (পাবলিক খাওয়া) পরিণত হয়েছে। নয়ের দশক থেকেই বাজার আগে শিল্পীকে ‘পছন্দের’ করেছে, তারপর তাঁর গানের ঢালাও প্রচার বেড়েছে। অনুধাবন অনুযায়ী ক’জন শিল্পীর ক’টা গান জনপ্রিয় হয়েছে? যদিও বা কোনও ক্ষেত্রে নিভৃতে হয়েও থাকে, সেটা বাজারের বিষয় নয়–একথা তো যে কেউ বলে দিতে পারে। কাজেই ভালো গেয়ে বাজারে প্রবেশ এবং প্রতিষ্ঠা নয়, ভালো শিক্ষক-প্রতিষ্ঠান-প্রমোটার-কোম্পানির পছন্দের হলেই বাজারে ‘পছন্দের’ হিসেবে প্রবেশ করতে পারেন। ফলে এদের বিচারে যাঁরা সবসময় ‘উপযুক্ত’ তাঁরাই সুযোগ পাবেন। এখানে ‘ভালো’র যেমন কোনও বিশেষ পংক্তি নেই, তেমনি গান অনুধাবনের কোনও বিশেষ স্থান আছে, এটা ভেবে নেওয়ার কোনো মানে হয় না।
কিন্তু দশকের পর দশক ধরে এই প্রতিষ্ঠান-প্রমোটার-কোম্পানি সবসময়ই কীভাবে, কোন রহস্যে যেন সব সঠিক এবং শুদ্ধ গায়ন নির্বাচন করেই এসেছেন। কোনও ভুলই হয় নি। যা এঁরা করেছেন, সবসময় সঠিক হয়েছে। এই অসম্ভবের নামই ‘বাজার’। অথচ রবীন্দ্রনাথ যখন গানে গানে বলেন, ‘ফিরি আমি উদাস প্রাণে/তাকাই সবার মুখের পানে’–তারপর সব ফেলে দিয়ে বলছেন, ‘তোমার মত এমন টানে কেউ তো টানে না’। এটা অনুধাবন। আশা করব কেউ একে বাজার বলে ভুল করবেন না। বা ধরুন যখন বলছেন ‘সবাই তোমায় সভার বেশে / প্রণাম করে গেল এসে / মলিন বাসে লুকিয়ে বেড়াই / মান রহে না’– তখন এ কথা মনে হয় না, আজও এই বাজারসর্বস্ব, ক্ষমতাসর্বস্ব এলাকায় এমন লোকও থাকতে পারে, যে এই অভিযোগ করছে? তবু যদি কেউ এইস্তরের অনুধাবন করেন, মনে রাখবেন এঁদের যোগ্যতা আছে, আক্ষেপও আছে। সভার বেশ অর্থাৎ আজকের বাজারের উপযুক্ত বেশে সবাই আসেনি (এখানে বেশ বলতে শুধু পোশাক ভেবে ফেলবেন না)। কিছুজন এমনিই এসে পড়েছেন। গত তিনদশকের বাজার এবং ক্ষমতার যোগসাজস এঁদের গণ্য করেনি, বরং তাচ্ছিল্য করেছে।
ফলে অনুধাবন, পরিবেশন এবং শোনা–এই তিন স্তরেই আজ সময়ের বড় অভাব। একখানা গান গোটা গাওয়ার সময়ও দেওয়া যাচ্ছে না। চারটে পাঁচটা গানের ‘ম্যাশড’ পরিবেশনা রবীন্দ্রগানের কপালে জুটেছে–সেখানে অনুধাবনের প্রশ্ন আসে না। তাছাড়া সংস্কৃতি বাজারে নামী শিল্পীর ‘আমি তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ’ রক্তদান শিবির বা দুর্গাপুজোর চতুর্থীর সকালে বড় পুজো উদ্যোক্তার মাইক বাজানোর সূচনা হিসেবে চলতেই পারে। এ সম্পর্কে আমার-আপনার কীই বা বলার থাকতে পারে ?
তাই শেষ পর্যন্ত একজন শিল্পী হিসেবে কিছু বলে শেষ করি। অনুধাবন করে গাইলে বাজার কতটা নেবে, কোম্পানি কতটা চাইবে এ নিয়ে ঘোর সন্দেহ আছে। তার চেয়ে পরিবেশনের সময় অনুধাবনের নামে কোনও বিশেষ শব্দে হঠাৎ ঝোঁক দিয়ে, হঠাৎ বিশেষ জোর দিয়ে বা যন্ত্রসংগীতে একটু ফিউশন জাতীয় করতে পারলে বাজারে বেশি গ্রহণযোগ্য হতে পারে। বাকিটা বাজার পাইয়ে দেবে উপযুক্ত প্রচার করে। একে যদি অনুধাবন কেউ বলেন, তাহলে কিছু বলার নেই। তবে তখন অতীতের সবকিছুই অপাংক্তেয় হয়ে যেতে পারে। তা না করে, ওটা আগেকার, এখন গাইতে গেলে এমন করেই গাইতে হবে–এমনটা বলে দিলেও বাজার আর তার প্রিয়পাত্রদের ঠেকাচ্ছে কে? আসলে এটাই বলা হয়ে চলেছে।
এর পাশাপাশি অন্যান্য বাজারী প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ টিভি চ্যানেল এবং ‘অমুক এন্টারটেনমেন্ট’ নামক প্রযোজক সংস্থাগুলি কিছু নাম প্রিয়পাত্র করেই রেখেছে। আর বাকিরা হয়ে গেছে কুশীলব। কীভাবে, কোন ক্ষমতার অংকে গত তিনদশক ধরে এ জিনিস চলছে, সে তো তদন্তসাপেক্ষ বা গবেষণাসাপেক্ষ। কেন এ কথা বলা? কারণ, সবার গান নয়, কিছু জনের গাদাগাদা গান–এই নীতিতে বাজার চলেছে। প্রিয়পাত্র বলবেন, “যাঁরা এসব বলছেন, তাঁরা এসে গেয়ে দেখান” আর নয়ত, “এঁরা সুযোগ পায়নি বলে এসব বলছেন”–এ যুক্তিও হাস্যকর। মনে রাখবেন, বাজারে সুযোগের বিকল্পেও একটা চাহিদা থাকতে পারে। তা হলো, বাজারের এই রাক্ষুসেপনা না থাকা। তাহলে সবটা না হলেও অনেকটা ঠিক হয়ে যাবে।
রিয়েলিটি শো-এর মঞ্চের নেপথ্যে গ্রুমিং-এর নামে যে প্যারালাল প্রতিষ্ঠান চলছে, তা শিক্ষা, অনুধাবন এসব শব্দকে অপাংক্তেয় করে শুধু পরিবেশনকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এভাবে সংগীতশিল্পীকে পণ্যে পরিণত না করে, তাঁরা সামাজিকভাবে যা গান শিখেছেন বা নাচ শিখেছেন তার ভিত্তিতে প্রতিযোগিতা হওয়াই তো ভাল। বাজারের আগে তো সেটাই ছিল–তাতে কি ভালো শিল্পী গড়ে ওঠে নি? প্রশ্নটা তো সুরে, তালে আর সবচেয়ে বড় কথা অনুধাবন করে গাওয়া। ওটা এমনিই হতে পারতো। যে কোনও সংগীতে হতে পারতো। না হলে, এ দেশে এত গুণী জন্মাতই না। আসলে সার্বিকভাবে একটা ‘ক্ষমতা’ চলতে থাকে, যেখানে বাজারের আগে যেমন কোন প্রতিষ্ঠান বেশি ‘অথেন্টিক’ তার প্রতিযোগিতা চলতো। আর গণমাধ্যম-বাজার এসে গিয়ে কোনটা বেশি বাজারী তার প্রতিযোগিতা চলছে। এখানে অনুধাবন বলে কিছু থাকার কোনও প্রয়োজনই নেই। আর শ্রোতা? জীবনে লড়াইয়ের চাপে তার তো পরিবর্তন হবেই। সে আরও বেশি বাজার নির্ভর হয়ে পড়ছে, পড়বে।