Monday, February 3, 2025
ওয়েব-Wave

ওটিটির টিকটিকি

হাতে হাতে স্মার্টফোন। তরুণ প্রজন্মের চোখ ইদানীং নিত্যনতুন ওয়েব সিরিজে। সারা বিশ্বের স্ট্রিমিং বিনোদন এখন হাতের মুঠোয়। সেইসব সিরিজ নিয়েই নানাকথা এই বিভাগে। লিখছেন মৃণালিনী ঠাকুর

বিবাহবিচ্ছেদ-কালে স্ত্রীকে তার প্রাপ্য খোরপোশ না দেবার এক জটিল প্লট বানায় এক ধনী প্রবীণ। এ ব্যাপারে সে স্ত্রীর প্রেমিকের সঙ্গে মিলে এক ‘খেলা’ সাজায়। পরিকল্পনায় থাকে এমন এক অপরাধ, যা আদতে আপাত সরল হলেও, তার মধ্যে রয়েছে জটিল মনস্তাত্বিক সাদা-কালো-ধূসরের জাল। এন্থনি শেফারের বহু চর্চিত বিশ্ব বিখ্যাত নাটক ‘স্লিউথ’-এর বঙ্গীকরণ ‘টিকটিকি’ বাংলার মঞ্চে স্মরণীয় হয়ে আছে কিংবদন্তি অভিনেতা প্রয়াত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয়ে। ‘টিকটিকি’র মঞ্চায়ন ঘটে বাংলার প্রখ্যাত অভিনেতা ও থিয়েটার ব্যাক্তিত্ব কৌশিক সেনের নাট্যদল স্বপ্নসন্ধানীর প্রযোজনায়। অসাধারণ এই স্যাটায়ার ভোলেনি বাংলার থিয়েটারপ্রেমী দর্শক। বস্তুত,ওয়েব সিরিজ ‘টিকটিকি’ তাই প্রস্তাবনা পর্ব থেকেই ব্যাপক আলোচনায়।

ওয়েব সিরিজে মুখোমুখি কৌশিক গাঙ্গুলি আর অনির্বাণ ভট্টাচার্য। থিয়েটার আর ওটিটি–সম্পূর্ণ পৃথক দুই মাধ্যমে পরিবেশন ভঙ্গিও যে ভিন্নমাত্রার হবে, সেটা বোঝাই যায়। এরই পাশাপাশি বাংলা বিনোদন জগতের এই দুই তীব্র ক্ষমতাশালী অভিনেতা একই সঙ্গে কাজ করলে, পর্দায় কী ঘটতে পারে, সেটাও উপলব্ধ ! একজন অভিজ্ঞ, অপরজন তরুণ তুর্কি। দুজনেই প্রতিভাবান, দক্ষ, শিক্ষিত, মেধাবী এবং নিবেদিত-প্রাণ অভিনেতা। দুজনেই দর্শকের প্রবল শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা অর্জনে সক্ষম হয়েছেন। ‘টিকটিকি’-তে কৌশিকের সঙ্গে অভিনয় প্রসঙ্গে অনির্বাণের বক্তব্য তাই বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। তাঁর কথায়, “মিলন বসাকের মতো একটা শক্তিশালী চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েই শুধুমাত্র খুশি নই আমি। বলতে পারি, আমি দারুন আনন্দিত কৌশিক গাঙ্গুলির মতো একজন অসাধারণ অভিনেতার সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করতে পেরে।”

ওয়েব সিরিজে কাহিনি এভাবে বিন্যস্ত। এক প্রাসাদোপম বাড়িতে সৌমেন্দ্রকৃষ্ণ দেবের একাকী বসবাস। স্ত্রী মিমির প্রেমিক মিলন বসাকের মুখোমুখি বসতে চায় সৌমেন্দ্রকৃষ্ণ বিশেষ কারণে। মিলনকে নেমন্তন্ন করে সৌমেন্দ্রকৃষ্ণ এবং জানায়, সে তার স্ত্রী মিমির সঙ্গে সুখী নয়। মিলন যদি মিমিকে বিয়ে করে, সৌমেন্দ্রকৃষ্ণের তাতে কোনও আপত্তি নেই। একটাই শর্ত, এই বিয়েতে সৌমেন্দ্রকৃষ্ণ মিমিকে একটি নেকলেস উপহার দেবে, যার দাম ৫০ লক্ষ টাকা। কিন্তু সৌমেন্দ্রকৃষ্ণ সেটা কিনবে না। মিলনকে সেটা চুরি করতে হবে। এখান থেকেই শুরু মস্তিষ্কের জটিল খেলা! আদতে অপরাধের এক মারকাটারি পরিকল্পনা করে সৌমিত্রকৃষ্ণ আর তার ইচ্ছে সেই পরিকল্পনা রূপায়িত করে মিলন। মিলন কী করবে ? চুরিটা সফলভাবে করতে পারবে কি সে ? নাকি আরও বড় অপরাধের জালে জড়িয়ে পড়বে ? হইচই চ্যানেলে এমনই জমাট রহস্যের আঙ্গিকে চলছে ‘টিকটিকি’।

পরিচালক ধ্রুব ব্যানার্জির ওটিটি প্ল্যাটফর্মে প্রথম কাজ। ‘টিকটিকি’ সিরিজ দর্শক বেশ পছন্দ করেছে ইতিমধ্যেই। এই বছর মার্চে শুরু হয় এই ৬ পর্বের সিরিজ। এসবিএফ এন্টারটেনমেন্ট-এর ব্যানারে তৈরি ‘টিকটিকি’ নির্মাণ প্রসঙ্গে পরিচালক বলেছেন, “দারুণ অভিজ্ঞতা এমন এক টিম নিয়ে কাজ করা। যেমন অভিনেতা, তেমনই ক্রু ! আশা করছি দর্শকের এই ভিন্নস্বাদের রহস্য কাহিনি পছন্দ হবে।” পরিচালকের প্রত্যাশা পূর্ণ হয়েছে। দুর্দান্ত এই মাইন্ড গেম ব্যতিক্রমী মাত্রায় ভাবাচ্ছে বাংলার ওয়েব দর্শককে। প্রসঙ্গত, কৌশিক গাঙ্গুলি মনে করেন, ক্লাসিক থিয়েটার অনুসৃত হলেও ওয়েব সিরিজের গল্প বিন্যস্ত ২০২২-এর পটভূমিতে। দাম্পত্যের পাশাপাশি আজ পরকীয়ার সংজ্ঞাও বদলে গেছে। সৌমেন্দ্রকৃষ্ণ সুস্থ মানুষ নয়। লোকটার মধ্যে একটা পাগলামি আছে। যে মানসিক ভাবে সুস্থ নয়, তার কোনও আচরণই যুক্তির পথ ধরে চলে না। সেইদিক থেকেই তিনি চরিত্রটিকে দেখেছেন।

চিত্রনাট্য লিখেছেন পদ্মনাভ দাশগুপ্ত। পরিচালক ধ্রুব ব্যানার্জি বিজ্ঞাপন জগতের একজন সৃজনশীল মানুষ। দীর্ঘ অভিজ্ঞতা তাঁর এ বাবদ। সেট নির্মাণে ওঁর সেই অভিজ্ঞতার পরিচয় মেলে। পুরো বাড়িটা যেন একটা খেলাঘর, যেটা দর্শকের খুবই আকর্ষণীয় মনে হবে। দর্শক নিজেদেরও ওই মাইন্ড গেমের অংশ মনে করবে। একটা বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। স্বপ্নসন্ধানী যখন ‘টিকটিকি’ মঞ্চস্থ করে, তখন ধ্রুবও স্বপ্নসন্ধানীতে ছিলেন। পর্দার পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় বেশ কয়েক বছর কেটেছে তাঁর এই নাটকের সঙ্গে। ‘টিকটিকি’ তাঁর ওটিটি অভিষেক হলেও এর সঙ্গে সম্পর্ক পুরোনো। সেই সংযুক্তির ছোঁয়া দর্শকও পাচ্ছেন পর্বে পর্বে।