কবিতাকে ভালোবেসে
বিশিষ্ট বাচিকশিল্পী সৌমিত্র ঘোষ বাংলা সংস্কৃতির আঙিনায় এক অতি পরিচিত নাম। যদিও বাচিকশিল্পী শব্দে তাঁর আপত্তি ৷ তাঁর কাছে গান করা, খবর পড়া ইত্যাদি কাজগুলোও বাচিক শিল্পের অন্তর্ভুক্ত। তিনি নিজেকে আবৃত্তির একজন কর্মী বলতেই স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। ২০২২ সালে তাঁর আবৃত্তিচর্চার ২০ বছর পূর্ণ হলো। দীর্ঘ দুই দশকের চর্চা এবং কবিতা নিয়ে বহু কাজ করেছেন সৌমিত্র। কলকাতা দূরদর্শনের আমন্ত্রণে ইছামতি নদীর তীরে ‘মা দুর্গা প্রতিমা’র নিরঞ্জন’ টেলি-প্রোগ্রামটি সঞ্চালনা করেন ২০০৮-এ। ডিডি বাংলা’র ‘কবিতা যখন আবৃত্তি’ অনুষ্ঠানেও ছিলেন তিনি৷
তাঁর আবৃত্তি রেকর্ড করা হয় কয়েকটি অডিও সিডি এবং ইউটিউব চ্যানেলের জন্য। এই কাজগুলিতে তিনি জগন্নাথ বসু, উর্মিমালা বসু, ব্রততী বন্দোপাধ্যায় এবং কবি সুবোধ সরকারের মতো গুণী শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করেন। ২০১২-তে ঢাকায় জাতীয় কবিতা উৎসবে আবৃত্তি করেন সৌমিত্র ৷ প্রয়াত প্রণব মুখোপাধ্যায় রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সুযোগ ঘটে তাঁর। ২০১১-তে বেঙ্গল সেন্ট্রুম ফাউ এবং সুনীল পরিষদের আমন্ত্রণে জার্মানির বার্লিনে আবৃত্তি পরিবেশন করেন। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রয়াত কিংবদন্তী কবি ও সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় স্বয়ং।
সৌমিত্র সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘কৃত্তিবাস’ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত বহুদিন যাবৎ। কবি শ্রীজাত’র সঙ্গেও বহু কাজ করেছেন৷ ২০১৪ সালে টাকি পৌরসভার সহযোগিতায় সুখৈশি আর্ট অ্যান্ড ক্রাফ্ট আয়োজন করেছিল সৌমিত্র ঘোষের একক আবৃত্তি সন্ধ্যা। ‘স্বপ্নভঙ্গ ও নতুন স্বপ্ন’ এবং ‘নতুন কিছু’ নামে দুটি আবৃত্তির অডিও সিডি রয়েছে তাঁর৷
২০১৭-র ২৬শে জুন কলকাতার কলামন্দিরে তাঁর আবৃত্তি জীবনের ১৫ বছর উদযাপন করা হয় ‘তিন ভুবনরে তারে’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ৷ এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী শ্রীকান্ত আচার্য এবং কবি শ্রীজাত। গত ৮ই নভেম্বর শিশির মঞ্চে তাঁর আবৃত্তিচর্চার ২০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ব্রুবাণ কলকাতা নিবেদন করে ‘অদম্য ২০’ শিরোনামে সৌমিত্রর একক আবৃত্তির আসর। সেখানে সম্মানীয় অতিথিরা ছিলেন বিজয়লক্ষ্মী বর্মণ, প্রণতি ঠাকুর, সুমন্ত্র সেনগুপ্ত, দেবশঙ্কর হালদার, ব্রততী বন্দোপাধ্যায়, সৌমিত্র মিত্র, সতীনাথ মুখোপাধ্যায়, কাজল সুর, ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়, অমিতাভ রায়চৌধুরী।
বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় সৌমিত্র ঘোষ আবৃত্তি পরিবেশন করছেন৷ এছাড়া বিদেশের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠের আমন্ত্রণও পান তিনি। সময়ের সঙ্গে বাংলা ভাষার বদল হলেও, বাংলা ভাষা স্বমহিমায় বেঁচে থাকবে বলে তিনি মনে করেন এবং কবিতাকে যতটা সম্ভব কবিতার মত করে মানুষের কাছে পৌঁছতে চান তিনি। সৌমিত্র বিশ্বাস করেন, সময়, নিরন্তর চর্চা এবং মন থেকে ভালোবেসে কাজ করার ইচ্ছেই পারে একজন মানুষকে যে কোন শিল্পের উৎকর্ষতায় নিয়ে যেতে৷