বং ওয়েব দর্শকের প্রিয় গোয়েন্দা একেনবাবু
হাতে হাতে স্মার্টফোন। তরুণ প্রজন্মের চোখ ইদানীং নিত্যনতুন ওয়েব সিরিজে। সারা বিশ্বের স্ট্রিমিং বিনোদন এখন হাতের মুঠোয়। সেইসব সিরিজ নিয়েই নানাকথা এই বিভাগে। একেন্দ্র সেন থুড়ি গোয়েন্দা একেনবাবুর কথা এবার এই বিভাগে। লিখেছেন অজন্তা সিনহা।
মাঝে বেশ কিছুদিন ব্যাক্তিগত কারণে পেশাদারী কাজকর্মের বাইরে ছিলাম। তারই সঙ্গে কলকাতা থেকে উত্তরবঙ্গের এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকা। সব মিলিয়ে বিনোদন জগতের সঙ্গে বেশ কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়, যা একটা সময় আমার পেশার মুখ্য অঙ্গ ছিল। তারপর আবার নতুন করে কাজকর্ম শুরু করলাম বিনোদনকে কেন্দ্র করেই। এখন তো সেটা জোরকদমে চলছে। এবারের লেখার ভূমিকায় এই সামান্য ব্যাক্তিগত কথনের জন্য ক্ষমাপ্রার্থী পাঠকের কাছে। আসলে, যাঁদের নিয়ে বিনোদন জগত, বিশেষ করে অভিনেতা-অভিনেত্রী, তাঁদের সঙ্গে যোগসূত্র, তাঁদের কাজকর্মের খবর রাখা–এটা আমাদের কাজের অঙ্গ বিশেষ। কাজের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হলে, এই খবর রাখাটা হয়ে ওঠে না স্বভাবতই।
এই সূত্রেই বলার, হইচই-এর ‘একেনবাবু’ সিরিজ আর তাকে কেন্দ্র করে অনির্বাণ চক্রবর্তী সম্পর্কে জানাটা আমার ক্ষেত্রে তাই কিছুটা দেরিতেই ঘটে। অনির্বাণ অবশ্য ‘একেনবাবু’ ছাড়াও আরও কাজ করেছেন। তবে, ‘একেনবাবু’ যে তাঁকে সর্বাধিক জনপ্রিয়তা দিয়েছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। এটাও বলার, অনির্বাণ এই চরিত্রটিকে আক্ষরিক অর্থেই স্ববৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল করে তুলেছেন। প্রসঙ্গত,’একেনবাবু’ ছবিতেও অভিনয় করেছেন তিনি। তবে, আমাদের আলোচনা মুখ্যত ওয়েব সিরিজ নিয়ে। আমি অনির্বাণকে প্রথম খুব ভালো করে লক্ষ্য করি সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ফেলুদা কাহিনির ওয়েব সিরিজ ‘ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি’-তে, জটায়ুর ভূমিকায়। বলতে দ্বিধা করবো না, বেশ ভালো লেগেছিল ওঁর অভিনয়। প্রসঙ্গত, ফেলুদা কাহিনির তিনমূর্তির অন্যতম লালমোহন গাঙ্গুলি ওরফে জটায়ুর চরিত্রে সন্তোষ দত্ত এমন এক ট্রেন্ড তৈরি করে দিয়ে যান, যার জন্য আজও পর্যন্ত বিরাট এক চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হচ্ছে, ওঁর চলে যাওয়ার পর থেকে যাঁরাই এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন, তাঁদের। অনির্বাণ ব্যতিক্রম নন। বলতেই হবে, সেই চ্যালেঞ্জ ভালোই উৎরেছেন তিনি।
এবার আসি হইচই-এর ‘একেনবাবু’ সিরিজ প্রসঙ্গে। ২০১৮ সালে শুরু হয় এই সিরিজ। নাম ভূমিকায় অনির্বাণ। ব্যাপারটা সহজ ছিল না। গোয়েন্দা হিসেবে একেন্দ্র সেন থুড়ি ‘একেনবাবু’কে অভিনয়ের বৈশিষ্ট্যে স্বতন্ত্র করে তোলার চ্যালেঞ্জটা ওঁর জন্য তৈরিই ছিল। জনপ্রিয় দুই বাঙালি–ডিটেকটিভ ফেলুদা এবং সত্যান্বেষী ব্যোমকেশ বক্সীর ম্যাজিক বাঙালি দর্শকের নয়নে, শ্রবণে, মননে আঁকা হয়ে গিয়েছে বহুকাল আগেই। এমন এক চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়েও অনির্বাণ ‘একেনবাবু’কে জনপ্রিয় করে তোলেন। ওয়েব দর্শক দারুণ পছন্দ করেছেন অনির্বাণের ‘একেনবাবু’কে।
এক্ষেত্রে উল্লেখ করতে হবে, ‘একেনবাবু’র স্রষ্টা সুজন দাশগুপ্তের কথাও। কমেডির মোড়কে একটি গোয়েন্দা গল্পের সিরিজকে ধারাবাহিক নৈপুণ্যে হাজির করা বেশ অভিনব অভিজ্ঞতা হয় দর্শকের কাছেও। অবশ্যই কৃতিত্বের অধিকারী হবেন চিত্রনাট্য লেখক পদ্মনাভ দাশগুপ্তও। যার সঙ্গে যোগ্য সহযোগ দেয় ময়ূখ মৈনাকের থিম মিউজিক এবং ডিওপি টুবানের ক্যামেরা। একজন নিপাট, গোলগাল, নধর চেহারার ছাপোষা বাঙালি একেনবাবু। তাঁকে দেখে আর যাই হোক, ফেলুদার মতো স্মার্ট, বুদ্ধিদীপ্ত বা ব্যোমকেশের মতো শিক্ষিত, অভিজাত ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মনে হয় না। তাঁর চেহারা দেখে কেউ বলবে না, স্বীয় বুদ্ধিবলে একের পর এক অপরাধের দুরন্ত সমাধান সূত্র বের করে ফেলছেন তিনি ! বলা বাহুল্য, এমন এক চরিত্রে অনির্বাণকে নির্বাচিত করাটাই ছিল এই সিরিজের সবচেয়ে ম্যাজিকাল পয়েন্ট। পর্দায় সেই ম্যাজিক ঘটিয়ে সিরিজকে শুরু থেকেই আকর্ষণের কেন্দ্রে পৌঁছে দিয়েছেন অনির্বাণ।
আইওয়াশ প্রোডাকশনের ব্যানারে ‘একেনবাবু’র প্রথম সিজন হইচই-এর পর্দায় আসে ২০১৮-র মার্চে। ৬ পর্বের প্রথম সিজন পরিচালনা করেন অনির্বাণ মল্লিক। ওই বছরই নভেম্বরে প্রকাশ পায় এর দ্বিতীয় সিজন। এই সিজন পরিচালনা করেন অনুপম হারি। পরবর্তী পরিচালকরা হলেন জয়দীপ মুখার্জি, সুরজিৎ চ্যাটার্জি, অভিজিৎ চৌধুরী। শুরুর পর আর ফিরে তাকায়নি ‘একেনবাবু’। পরপর পাঁচটি সফল সিজনের পর সম্প্রতি আসে এর ষষ্ঠ সিজন। এবারে কাহিনির কেন্দ্রবিন্দু শহর কলকাতা। এক সিরিয়াল কিলারের তাণ্ডবে বিপর্যস্ত জনজীবন। কেমন করে একেনবাবু সেই খুন রহস্যের আবরণ উন্মোচন করেন, তাই নিয়েই এবারের এক একটি রুদ্ধশ্বাস পর্ব। পরিচালনা জয়দীপ মুখার্জি। পটভূমি হিসেবে কসমোপলিটান কলকাতাকে দারুণ ব্যবহার করেছেন পরিচালক।
অভিনয়ে বিভিন্ন সিজনে অনির্বাণের সঙ্গে আছেন সৌম্য ব্যানার্জি, দেবপ্রিয় বাগচি, সুহোত্র মুখোপাধ্যায়, সোমক ঘোষ, শ্রেয়া সিনহা, যশ রোশন, শাহদুল আলম সাচ্চু, জিয়াউল হাসান, শিমূল খান, কাজী নশাবা আহমেদ, অনুরাধা মুখার্জি, কৌশিক চ্যাটার্জি, কৌশিকী গুহ, দেবপ্রিয় মুখার্জি, চিত্রভানু বসু, কিঞ্জল কুমার নন্দ, সোহিনী ব্যানার্জি প্রমুখ। প্রত্যেকেই চরিত্রের মাপে নিখুঁত। স্মার্ট প্রেজেন্টেশন ও দ্রুতগতির চলন এই সিরিজকে সহজেই আকর্ষনীয় করেছে জেন ওয়াইয়ের কাছে।