Tuesday, May 13, 2025
টলিউডলাইম-Light

পার্টি রাজনীতি নিয়ে ছবি করার উৎসাহ পাই না

নতুন ছবির মুক্তি হোক বা নির্মাণ। পোস্টার, ট্রেলার রিলিজ। ছবি হিট এবং ফ্লপ। তারকাদের জীবনের ওঠাপড়া। বাংলা ও হিন্দি মিলিয়ে সিনেমার দুনিয়ায় প্রতি মুহূর্তে ঘটে চলেছে নানা বৈচিত্রপূর্ণ ঘটনা। সেইসবই এই বিভাগে, প্রতি সপ্তাহে। বাংলা ছবির অত্যন্ত মেধাবী ও প্রতিভাশালী একজন পরিচালক অতনু ঘোষ। তাঁর ভাবনা ও অনুভব বরাবর এক ব্যতিক্রমী চোখে জীবনকে দেখে ও ক্যানভাসে না ভোলা এক একটি ছবি রচনা করে। বিশেষ সাক্ষাৎকারে নির্মল ধরকে জানিয়েছেন তিনি আপন সৃজনকথা।

আপনার প্রায় সব ছবিতে নারী-পুরুষ বা বলতে পারি, বিভিন্ন চরিত্রের পারস্পরিক সম্পর্কের অভিঘাত ও সংঘাত বিশেষ জায়গা নেয়। এটা কেন?

সম্পর্কের অভিঘাত, সংঘাত তো জীবনের অঙ্গ। সেটা তো কমবেশি সব সিনেমার মূল আধার। মানে, যে ছবিগুলি মানুষের গল্প বলে। কিন্তু আমার ধারণা, আমার মূল আগ্রহের জায়গা আজকের দিনে নানান ব্যক্তিগত পরিস্থিতির চাপ বা ক্রাইসিসের প্রভাবে মানুষের মনের গভীরের কী ধরণের প্রতিক্রিয়া ঘটে, তার অন্বেষণ। বিদেশে থাকা ভাঙাচোরা জীবনে জর্জরিত ছেলে কিভাবে স্মৃতি হারানো বাবার নির্দেশে ৩০ বছরের পুরানো অতীতকে আঁকড়ে ধরতে যায় (ময়ূরাক্ষী), অতীতের প্রেমকে কেন দুটো মানুষ এক ধরনের সমঝোতার deal-এ রূপান্তরিত করতে চায় (রবিবার) বা কেন দুজন মানুষ নাগরিক নিঃসঙ্গতার চাপে নিজেদের তৈরি করা গল্পের দুনিয়ায় মধ্যে বাঁচতে চায় (বিনিসুতোয়)…! এগুলো আজকের মানুষের মনের প্রতিক্রিয়া, অনুরনণ। আর দ্বিতীয় কথা, এই দৃষ্টিকোণ থেকে মনের জটিলতা নিয়ে বেশি ছবি হয় না। যেহেতু এগুলোয় কোনো গতানুগতিক ফর্মূলা নেই। এগুলো যথার্থই অন্য রাস্তায় হাঁটা।

সিনেমা আপনার কাছে কতটা সাহিত্য নির্ভর, কতটা শুদ্ধ সিনেমা ? এবং কেন ?

সাহিত্য থেকে সিনেমা অনেক কিছু নিয়েছে। যেমন প্লট, চরিত্র ইত্যাদি। কিন্তু সিনেমার নিজস্ব দান মুভি ক্যামেরা ও শটের সম্পাদনা। আমার কাছে এই দুটোই সিনেমার সব থেকে বড় স্তম্ভ।

‘অংশুমানের ছবি’ থেকে ‘বিনিসুতোয়’ পর্যন্ত সব ক’টি ছবিতেই ভিস্যুয়ালের ওপর জোর যেমন দিয়েছেন, তেমনই সংলাপও বিশেষ জায়গা নিয়েছে। সেটাই বা কেন? শুধু ভিস্যুয়াল দিয়ে কি সব কথা প্রকাশ করা যায় না !?

নিশ্চয়ই যায়। কিন্তু আমার আগ্রহের জায়গা মানুষের জীবন, মানুষের মন। সেখানে কথা আছে, শব্দ আছে, কবিতা আছে, সুর আছে। শুধুই ভিস্যুয়াল নির্ভর ছবি, সেখানে বাস্তবকে অস্বীকার করে সিনেমাকে শুধুমাত্র arty representation-এর মাধ্যম করে তোলা। সেটা আমার কাছে pretentious বা প্রক্ষিপ্ত মনে হয়, শুধুমাত্র আমার point of focus-এর নিরিখে।

Atanu
পার্টি রাজনীতি নিয়ে ছবি করার উৎসাহ পাই না 11

সিনেমা আপনার কাছে কি শুধুই নিজের অব্যক্ত ভাব প্রকাশের মাধ্যম নাকি সামাজিক কোনও দায়ও অনুভব করেন ?

তাই কি হয়? সমাজের মধ্যেই তো আমার চরিত্রদের বাস। সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতির চাপেই তো সময়ের সঙ্গে আমাদের চারপাশের প্রেক্ষিত পাল্টাচ্ছে, ভাঙছে, গড়ছে। ‘এক ফালি রোদ’-এ তো এই মানুষই কেন বিপদে পড়া অপরিচিত কারুর সাহায্যে এগিয়ে আসেন না, তাই নিয়ে গবেষনা করতে সমাজবিজ্ঞানী রাস্তায় mock crisis ঘটান। বা ‘রূপকথা নয়’-এর ৬ বছরের বাচ্চা ছেলের মা তার সাংবাদিক স্বামীর মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে যায়। ‘ময়ূরাক্ষী’-তে cheat fund scheme-এর সব হারানো agent বলে–আমাদের যারা লোভ দেখালো তারা জেলে, আর আমরা রাস্তার ভিখারি! পরবর্তী দৃশ্যে সেই লোকটিই দিকবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে নিজের মেয়েকে এক মধ্যবয়সী পুরুষের হাতে তুলে দিতে চায়। এগুলো তো সবই reflection of the present society.

এখনকার সময়ে প্রায় সব বাংলা ছবিই সময়ের দাবিকে পাশ কাটিয়ে রোমান্স, থ্রিলার, এডভেঞ্চার নিয়ে কাজ করছে। আপনি কিঞ্চিৎ ব্যতিক্রমী হয়েও সময়কে তেমনভাবে ধরতে চাইছেন না–এমনটাই মনে হয়! আপনার কোনো মন্তব্য?

বর্তমান সময় আমার ছবি, বিষয়, চরিত্রের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিকভাবে যুক্ত, যেহেতু আমি বাস্তব জীবন ঘিরেই কাজ করি। তবে আপনি বোধহয় বর্তমান সময়ের প্রতিচ্ছবি বলতে পার্টি পলিটিক্সের কথা বলছেন। না, আমার ছবিতে সমাজের রাজনীতি, শহরের রাজনীতি আছে, থাকবে চিরকাল। কিন্তু পার্টি রাজনীতি নিয়ে ছবি করার উৎসাহ পাই না।

Img 20220729 Wa0078
পার্টি রাজনীতি নিয়ে ছবি করার উৎসাহ পাই না 12

ফিরছি, আপনার নতুন দুটি ছবির কথায় ‘আরো এক পৃথিবী’ নাকি migrated উদ্বাস্তুদের কথা বলছে লন্ডন শহরের ব্যাকগ্রাউন্ডে। কলকাতায় না করে, লন্ডন কেন?

এতকাল তো কলকাতা ভিত্তিক এতগুলো কাজ করলাম। এবার চাইছিলাম মোড় ঘুরতে। অন্য পরিপার্শ্বিকে গল্প খুঁজতে। আর বিদেশের মাটিতে অনাবাসী মানুষদের সমস্যার ধরন খুব আলাদা। বেশ কিছুদিন ধরে বই পড়ছি, মানুষের কাছ থেকে সত্যি ঘটনা শুনছি। এবার এগুলোকে নিয়ে একটা অন্য স্বাদের গল্প বলতে ইচ্ছে করলো। তাছাড়া ‘আরো এক পৃথিবী’-র আঙ্গিক আমার অন্য সব ছবির থেকে আলাদা। এটা mystery, drama, noir–এমন combination genre-এ আগে কাজ করিনি। এছাড়া এটায় স্বপ্ন-বাস্তবের magic realism ইত্যাদি নানান উপাদান আছে, সঙ্গে ফ্যানটাসি, ক্রাইম, গান, সবমিলিয়ে অদ্ভুত সংমিশ্রণ!

আর ‘শেষ পাতা’ সম্বন্ধে আপনি প্রায় নীরবতা পালন করছেন। কেন ? সেই নীরবতা ভেঙে ওই ছবি সম্পর্কে যদি কিছু বলেন।

শেষ পাতা আসছে পয়লা বৈশাখে। কাজেই আর মাত্র কয়েকটা দিন পরেই অনেক কথা বলবো। আপাতত নীরবতা বজায় থাকুক! ‘আরো এক পৃথিবী’ চারজন মানুষের ভীষণ engaging একটা journey–আমার নিজের ছবিটা তৈরি করতে খুব ভালো লেগেছে। আশাকরি ছবিটা দেখলে দর্শক সেই ভালোলাগার আমেজ অনুভব করতে পারবেন।