Sunday, May 19, 2024
টলিউডলাইম-Light

প্রসূনের প্রথম প্রযোজনা ‘কৈফিয়ত’

নতুন ছবির মুক্তি হোক বা নির্মাণ। পোস্টার, ট্রেলার রিলিজ। ছবি হিট এবং ফ্লপ। তারকাদের জীবনের ওঠাপড়া। বাংলা ও হিন্দি মিলিয়ে সিনেমার দুনিয়ায় প্রতি মুহূর্তে ঘটে চলেছে নানা বৈচিত্রপূর্ণ ঘটনা। সেইসবই এই বিভাগে, প্রতি সপ্তাহে। অনুরাগ পতির ছবি ‘কৈফিয়ত’ নিয়ে লিখেছেন সোমনাথ লাহা

সামাজিক পরিস্থিতি অনেক সময়ই আমাদের কাছে বেশ কিছু বিষয়ে কৈফিয়ত তলব করলেও, আমরা তা দিই না। আবার, দু’জন স্বাধীনচেতা মানুষের ব্যক্তিগত জীবনের মাঝে যখন কৈফিয়ত দেওয়া-নেওয়ার ব্যাপারটা চলে আসে, তখনও দেখা যায় সমস্যা। সাধারণ মানুষের প্রেম, জীবনসংগ্রাম নিয়েই পরিচালক অনুরাগ পতির স্বল্প দৈর্ঘ্যের বড় ছবি ‘কৈফিয়ত’। যিনি ইতিপূর্বে ‘প্রাপ্তি’-র মতো ছবি উপহার দিয়েছেন দর্শকদের। প্রসঙ্গত, ‘কৈফিয়ত’-এর হাত ধরেই ছবি প্রযোজনায় এলেন অভিনেতা প্রসূন গাইন। এ ছবিতে অভিনয়ও করেছেন তিনি। টলিউডে বড়পর্দা ও ছোটপর্দার ক্ষেত্রে যথেষ্ট পরিচিত মুখ প্রসূন। তাঁর নিজস্ব সংস্থা প্রসূন গাইন ইনিশিয়েটিভের ব্যানারে নির্মিত হয়েছে এই ছবি। ইতিপূর্বে নিজের প্রযোজনায় বেশ কয়েকটি মিউজিক্যাল শর্টস তৈরি করেছেন প্রসূন। এবার লার্জ শর্ট ফিল্ম নিয়ে আসছেন তিনি। স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি হলেও ভাবনা বৃহৎ। বড় ক্যানভাসের যাবতীয় উপাদান রয়েছে ছবির মধ্যে। ছবির ‘খোয়াব’ গানটির চিত্রায়ণে সেটাই স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।

ছবির কাহিনি আবর্তিত হয়েছে হিন্দু পরিবারের ছেলে শুভঙ্করকে (প্রসূন) কেন্দ্র করে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চ ডিগ্রি নিয়ে পাস করলেও, পরিস্থিতির চাপে সে স্কুলে শিক্ষকতার পরিবর্তে এক অফিস কেরানির জীবন বেছে নিতে বাধ্য হয়। এরপর শুভঙ্কর প্রেমে পড়ে মুসলিম পরিবারের মেয়ে মেহেজুবিনের (পূজারিণী)। শুভঙ্কর পারত মেহেজুবিনের বাবার সাহায্যে বড় অফিসে মোটা বেতনের চাকরি করতে। কিন্তু সে করেনি। তবে জীবন তো শুধুমাত্র  ভালোবাসায় ভর করে চলে না। শুভঙ্কর-মেহেজুবিনের সম্পর্কে আঘাত হানে সামাজিক মানদন্ড, যা যুগ যুগ ধরে ভালোবাসার বিপরীত পথেই হাঁটতে বাধ্য করে মানুষকে। কিন্তু, আদৌ কি ভালোবাসা সামাজিক মানদন্ডের উপর নির্ভরশীল! নাকি নিজের শর্তে চলে?  উত্তর‌ লুকিয়ে রয়েছে ছবিতে।

সম্প্রতি পাটুলির একটি ক্যাফেতে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ্যে এলো ‘কৈফিয়ত’-এর পোস্টার সহ ছবির ‘খোয়াব’ গানটি, গেয়েছেন দুর্নিবার সাহা। প্রসূন-পূজারিনী ছাড়াও ‘কৈফিয়ত’-এর আর এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রয়েছেন অরুণ মুখোপাধ্যায়। পঁয়ষট্টি বছর বয়সী এই অভিনেতার এটিই প্রথম ছবি। ছবিতে অন্যান্য চরিত্রে রয়েছেন নিমাই ঘোষ, সত্যম মজুমদার, রাজু মজুমদার, মনীশ চক্রবর্তী, কমল মুখোপাধ্যায়, আশুতোষ হালদার, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। পাশাপাশি ছবিতে রয়েছেন বাংলার সিঞ্চন থিয়েটার গ্রুপের শিল্পীরা। ছবির শুটিং হয়েছে হালিশহরে। ছবির কাহিনি লিখেছেন অরুণ মুখোপাধ্যায়। চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছেন পরিচালক স্বয়ং।

‘খোয়াব’ গানটির গীতিকার ঋতম সেন। সংগীত পরিচালনায় আছেন শ্রাবণ ভট্টাচার্য। ছবির সিনেমাটোগ্রাফার সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্পাদনায় পবিত্র জানা। নিবেদনে মণিকা গাইন। ছবির পোস্টার ও মিউজিক লঞ্চ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন  পরিচালক, সংগীত পরিচালক, গায়ক সহ ছবির সমস্ত কলাকুশলী। অনুষ্ঠানে ‘খোয়াব’ লাইভ গেয়ে শোনান দুর্নিবার। গানটি প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “সম্প্রতি যে ক’টি গান আমি গেয়েছি, তার মধ্যে ‘খোয়াব’ আমার সবচেয়ে পছন্দের গান। শ্রাবণ আর ঋতমের এই জুটির সৃষ্টি আমার ক্ষেত্রে দারুণভাবে ক্লিক করে গিয়েছে। গানটার জন্য বিশেষ ধরনের texture প্রয়োজন ছিল। সেজন্য গানটা মুম্বাইয়ে রেকর্ড করেছি। আশাকরি গানটা শ্রোতাদের হৃদয় ছুঁয়ে যাবে।”  

ছবিতে অভিনয়-প্রযোজনার চাপ প্রসঙ্গে প্রসূনের অভিমত, “প্রযোজনার চাপ থাকলেও, সেটা অনেকটাই সহজ হয়েছে অনুরাগের মতো পরিচালককে পাওয়ায়। ও প্রযোজনাতেও খুব সাহায্য করেছে। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে প্রযোজনা করার জন্য সাহসিকতার প্রয়োজন।” পাশাপাশি স্বল্প দৈর্ঘ্যের বড় ছবি নিয়ে অভিনেতার মত, “আমি এই ছবি নিয়ে অনেক জায়গায় ঘোরাঘুরি করেছি। সকলেই বলেছেন এখানে Large short film-এর কোন‌ও জায়গা নেই। অথচ মুম্বাইয়ে বিষয়টি আমি প্রথম দেখেছিলাম। তখনই আমার মাথায় আইডিয়াটা এসেছিল। সেটাই চেষ্টা করেছি। অনেক রকম অভিজ্ঞতা হয়েছে। ছবিতে মফস্বলের ফ্লেভারটাকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।” 

পূজারিণী প্রসঙ্গে প্রসূন বলেন, “অসম্ভব ভালো সহ-অভিনেত্রী। শেখার আগ্রহ রয়েছে। এত production friendly অভিনেত্রী খুব কম আছে।” পূজারিণীর কথায়, “আমার চরিত্র মেহেজুবিন মাটির কাছাকাছি একটি মেয়ে। ছবির সংলাপগুলো এতটাই জানা যে অভিনয় করতে হয়নি, বিহেভ করেছি। ছবির মধ্যে অসম্ভব সুন্দর কিছু মুহূর্ত রয়েছে। শর্ট ফিল্ম হলেও এর মধ্যে অনেক বড় বক্তব্য রয়েছে।”  প্রসূনের সঙ্গে কাজ নিয়ে অভিনেত্রী বলেন, “প্রসূনদার সঙ্গে এটা আমার প্রথম কাজ হলেও ওকে অনেকদিন থেকেই চিনতাম। খুব আত্মবিশ্বাসী একজন অভিনেতা। কাজের প্রতি অসম্ভব প্যাশনেট।”

ছবির অন্যতম অভিনেতা সত্যম মজুমদারের কথায়, “এই কাজটা আমি প্রফেশনালিজমের জায়গা থেকে করিনি। একজন দাদা কাম বন্ধু হিসেবে করেছি।” নিমাই ঘোষের মন্তব্য, “সিনিয়রদের যথাযোগ্য সম্মান করার গুণটা প্রসূনের মধ্যে রয়েছে। ওর ভালোবাসা এবং আন্তরিকতার জন্য‌ই এই কাজটা করতে রাজি হয়েছি। ওর ভবিষ্যত খুবই উজ্জ্বল।” অনুরাগের কথায়, “ছবিতে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়, যেটার কৈফিয়ত আমরা সমাজের কাছে বারবার চাই, কিন্তু, পাই না। কেউ সাহস করে প্রশ্ন‌ও করতে পারে না। সেখানে দাঁড়িয়ে সেইরকম কিছু প্রশ্ন এবং তার কিছু উত্তর রয়েছে এই ছবির মধ্যে। তার জন্য ‘কৈফিয়ত’ নামটা এবং গল্পে হিন্দু -মুসলিম বিষয়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ।” সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী শীতে কোন‌ও ওটিটি প্ল্যাটফর্ম অথবা প্রসূন গাইন ইনিশিয়েটিভের নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে মুক্তি পাবে এই ছবি।