হোমস্টে মার্ডারস, জমাট রহস্য ঘনীভূত পাহাড়ে
হাতে হাতে স্মার্টফোন। তরুণ প্রজন্মের চোখ ইদানীং নিত্যনতুন ওয়েব সিরিজে। সারা বিশ্বের স্ট্রিমিং বিনোদন এখন হাতের মুঠোয়। সেইসব সিরিজ নিয়েই নানাকথা এই বিভাগে। পাহাড়ের হিমশীতল আবহে রহস্যের ঘনঘটা।’হোমস্টে মার্ডারস’ নিয়ে লিখেছেন সোমনাথ লাহা।
ওটিটি প্ল্যাটফর্মে বরাবরই থ্রিলার কাহিনির ছড়াছড়ি। পাহাড়ের প্রেক্ষাপটে সেই থ্রিলার যে আরও একটু রহস্যঘন হবে, তাতে আর সন্দেহ কী ! এমনই এক টানটান রহস্যের ওয়েব সিরিজ নিয়ে আসছে হইচই। আজ থেকেই শুরু পরিচালক সায়ন্তন ঘোষালের ওয়েব সিরিজ ‘হোমস্টে মার্ডারস’। পাহাড় এমনিতে শান্ত, সংহত। কিন্তু সেখানেই যদি ঘটে যায় একের পর এক খুনের মতো ঘটনা। তাহলে, শিরদাঁড়া দিয়ে হিমশীতল চোরাস্রোত তো বইবেই। ‘হোমস্টে মার্ডারস’-এ সেই অনুভূতির সাক্ষী হতে চলেছেন বাংলার ওয়েব দর্শক।
একটি পাহাড়ি হোমস্টে। সেখানে আলাদা আলাদা করে বেড়াতে গিয়েছেন কিছু মানুষ। পরস্পরের কাছে অচেনা সেই মানুষগুলো এক রাতে নিজেদের অজান্তেই জড়িয়ে পড়ে এক অদ্ভুত রহস্যময় ঘটনা প্রবাহে। ঘটে যায় খুনের মতো ভয়ঙ্কর ঘটনা। শেষ পর্যন্ত তারা কী বেরিয়ে আসতে পারে সেখান থেকে ? উত্তর মিলবে সিরিজের পর্বে পর্বে। রীতিমতো মাল্টিস্টারার এই ওয়েব সিরিজে মুখ্য চরিত্রে রয়েছেন সৌরভ দাস, অর্জুন চক্রবর্তী, সোহিনী সরকার, পার্নো মিত্র, দেবচন্দ্রিমা সিংহ রায়, সবুজ বর্ধন, অপরাজিতা ঘোষ ও যুধাজিৎ সরকার। প্রসঙ্গত, এই ওয়েব সিরিজের হাত ধরেই প্রথমবার ওটিটি আঙিনায় পা রাখছেন দেবচন্দ্রিমা। ছোটপর্দার জনপ্রিয় এই অভিনেত্রীকে ইতিমধ্যেই দেখা গিয়েছে ‘কাজললতা’, ‘সাঁঝের বাতি’, ‘সাহেবের চিঠি’-র মতো জনপ্রিয় মেগা ধারাবাহিকে। গতবছর মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘কিশমিশ’-এর হাত ধরে বড়পর্দায়ও পা রেখেছেন তিনি।
অপরদিকে টলিপাড়ায় ইতিমধ্যেই সম্ভবনাময় পরিচালক হিসেবে নিজের একটা ছাপ রেখেছেন সায়ন্তন ঘোষাল। ‘যকের ধন’, ‘আলিনগরের গোলকধাঁধা’, ‘সাগরদ্বীপে যকের ধন’, ‘স্বস্তিক সংকেত’-এর মতো অ্যাডভেঞ্চার থ্রিলার ছবি দর্শকদের উপহার দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি ওটিটি-তে ‘গোরা’, ‘ইন্দু’, ‘সম্পূর্ণা’-র মতো ওয়েব সিরিজও পরিচালনা করেছেন। তাই তাঁর কাছ থেকেও রয়েছে অনেকটা প্রত্যাশা। ‘হোমস্টে মার্ডারস’-এর চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছেন পদ্মনাভ দাশগুপ্ত। প্রযোজনায় ফলো ফোকাস ফিল্মস।
ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে এসেছে এই ওয়েব সিরিজের ট্রেলার। সিরিজের ট্রেলার থেকে কাহিনির যে আভাসটুকু পাওয়া গিয়েছে তা অনেকটা এরকম। পাহাড়স্থিত একটি সুন্দর হোমস্টে ‘অনন্যা’। এই হোমস্টে চালায় মিতা (অপরাজিতা ঘোষ) নামের এক তরুণী। হোমস্টে-তে আসা অতিথিদের স্বাগত জানায় সে। অতিথিদের মধ্যে আছে অনিমেষ সেন (অর্জুন চক্রবর্তী), যে একজন রহস্য কাহিনি লেখক। অনিমেষের সঙ্গে আসে কিঞ্জল দাস (সৌরভ দাস)। কিঞ্জল আবার পেশায় পুলিশ। সে বর্ধমানে পুলিশের উচ্চপদে কাজ করে। হোমস্টে-তে এছাড়াও অতিথি হিসেবে আসে কুহেলি মিত্র (পার্নো মিত্র)। গল্পে ধীরে ধীরে, নানা চরিত্রে, দর্শকের পরিচয় হয় সোহিনী সরকার, সবুজ বর্ধন, দেবচন্দ্রিমা সিংহ রায়ের সঙ্গে। এরা সকলেই পাহাড়ে বেড়াতে এসেছে। পাইনের জঙ্গল ঘেরা ‘অনন্যা’ হোমস্টে-তে সকলেই ছুটির মুডে এলেও, ক্রমে তা পরিণত হয় আতঙ্কে।
হোমস্টে-র সকলের অনুরোধে অনিমেষ নিজের লেখা একটি গল্প শোনায় সকলকে। সেই গল্প শোনার মাঝেই ঘটে যায় অঘটন। সবাইকে অবাক করে লেখকের বলা গল্প বাস্তবে পরিণত হতে থাকে, যেটির সূত্রপাত হয় অনন্যা হোমস্টে-র মালিক মিতাকে দিয়ে। তারপর একটার পর একটা খুন হতে থাকে সেখানে। সকলের মনে চেপে বসে আতঙ্ক। এরপর কে ? সকলেই মনে করে, এই খুনের পিছনে হাত রয়েছে অনিমেষের। কারণ, তার বলা গল্পই বাস্তবে পরিণত হচ্ছে। সত্যিই কী তাই ? উত্তর মেলে না। অনিমেষকে গল্প শেষ করতে বলা হলে, অনিমেষের জবাব, “আগে দেখি শেষ পর্যন্ত কতজন বেঁচে থাকে গল্প শোনার জন্য!” এই মারণ খেলার শেষ পরিণতি কোথায়–সেই উত্তর মিলবে ওয়েব সিরিজেই।
সম্প্রতি এই সিরিজের ট্রেলার লঞ্চ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পরিচালক ও কলাকুশলীরা। সিরিজটি প্রসঙ্গে সোহিনী জানান, “আমি এর আগে সায়ন্তন ঘোষালের সঙ্গে ‘সম্পূর্ণা’ ওয়েব সিরিজে কাজ করেছি। তার পরেই এমন একটা রহস্য গল্পে অভিনয় করা দারুণ অভিজ্ঞতা। হইচই-তে এই কাজটা করে ভীষণ ভাল লেগেছে। আশা করি দর্শক এই গল্পটা ভালবাসবেন।” সিরিজে নিজের অভিনীত চরিত্র সম্পর্কে সৌরভের অভিমত, “কিঞ্জল গোটা সিরিজেই একটা দারুণ আকর্ষণীয় চরিত্র। রহস্যময়ও বটে। আমি এর আগে এমন চরিত্রে অভিনয় করিনি। একটা ছুটি কাটাতে গিয়ে খুনের ঘটনায় জড়িয়ে পড়া আর তারপরে গল্পের মোড়ে মোড়ে চমক–এমন একটা ওয়েব সিরিজ আশা করি দর্শকদের মনে ধরবে।”
নিজের চরিত্র নিয়ে অর্জুন বলেছেন, “এই সিরিজে কাজ করার পুরো অভিজ্ঞতাটাই আকর্ষণীয়। সিরিজটা এমন যে একেবারে প্রথম এপিসোড থেকেই টানটান উত্তেজনা থাকবে। গোটা টিমটাই দারুণ কাজ করেছে। হইচই-এর সঙ্গে কাজ করাটা একেবারে ঘরের মানুষের সঙ্গে কাজ করার মতোই।” পরিচালক সায়ন্তন ঘোষালের কথায়, ” এই ধরনের কাজ করা যেমন একদিকে আনন্দের, অন্যদিকে বেশ চ্যালেঞ্জের। আমাদের লক্ষ্যই হল দর্শকদের একেবারে টান টান একটি থ্রিলার উপহার দেওয়া, যেটা শেষ পর্যন্ত না দেখে দর্শকরা শান্তি পাবেন না। আর পাহাড়ে শুটিং করা সবসময়ই একটা দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা।”