অব্যর্থ ‘ব্যোমকেশ দেব’ প্যাকেজ
নতুন ছবির মুক্তি হোক বা নির্মাণ। পোস্টার, ট্রেলার রিলিজ। ছবি হিট এবং ফ্লপ। তারকাদের জীবনের ওঠাপড়া। বাংলা ও হিন্দি মিলিয়ে সিনেমার দুনিয়ায় প্রতি মুহূর্তে ঘটে চলেছে নানা বৈচিত্রপূর্ণ ঘটনা। সেইসবই এই বিভাগে, প্রতি সপ্তাহে। দুর্গ রহস্য ভেদ করে ফেলবেন দেব ‘ব্যোমকেশ’, বিশ্বাস করেন তাঁর অগণিত ভক্ত। লিখেছেন অজন্তা সিনহা।
দেব, আর চাঁদের পাহাড় ? লোকজন তো শুনেই…
আমি জানি, দিদি লোকজন কী কী বলছে…!
তোমার খারাপ লাগেনি ?
নাহ। বিশ্বাস করুন, লাগেনি। প্রশংসা আমাকে অনুপ্রাণিত করে। আর সমালোচনা মোটিভেট ! কেউ যখন বলে, দেব এই কাজটা করতে পারবে না, আমার তখন জেদ চেপে যায়…!
এই হলেন শ্রীমান দীপক অধিকারী ওরফে বাংলার এক বিরাট অংশের জনতার হার্টথ্রব দেব। পাঠক বুঝতেই পারছেন, উপরের কথোপকথনটুকু বেশ কয়েক বছর আগের। উপলক্ষ ‘চাঁদের পাহাড়’। এতগুলি বছর পার হয়ে গিয়েছে তারপর। দেব ক্রমে আরও পরিণতমনস্ক, টলিউডের মাপে আরও নিপুণ ও কুশলী প্রতিপন্ন করেছেন নিজেকে।
আজ অভিনেতা, প্রযোজক, সাংসদ সব ভূমিকাতেই ‘সুপারস্টার’ তিনি। একজন সিনেমা তারকা হয়ে একবার ফ্লুকে সাংসদ হয়ে যাওয়া নয়, রীতিমতো মানুষের জন্য কাজ করে নিজের রাজনৈতিক ভাবমূর্তিকেও উজ্জ্বল রেখেছেন দেব। ‘ভাবমূর্তি’ ! এটাই দেবের সাফল্যের চাবিকাঠি। পর্দায় তাঁর অভিনয়ের খামতিগুলি তিনি ঢেকে দেন পর্দার বাইরের ‘ভাবমূর্তি’ দিয়ে।
হঠাৎ দেবকে নিয়ে এত কথা কেন ? কেন না, আবার তিনি নতুন করে সমালোচনার মুখে। এবার প্রসঙ্গ ব্যোমকেশ ! পুজোয় তাঁর প্রযোজনা ও অভিনয়ে মুক্তি পাচ্ছে ‘বাঘাযতীন’। তাই নিয়ে তত বেশি নিন্দার ঝড় নেই। কিন্তু ‘ব্যোমকেশ’ ? উত্তমকুমার, রজিত কাপুর, আবীর চট্টোপাধ্যায়, যীশু সেনগুপ্ত, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, সুজয় ঘোষ, অনির্বাণ ভট্টাচার্য ও সুশান্ত সিং রাজপুতের পর দেব ?
আমার উল্টো প্রশ্ন, কেন নয় ? দেবের পক্ষ হয়ে কথাটা বলছি ভাববেন না ! একদম প্রথমে উত্তমকুমারকে এই আলোচনার বাইরেই রাখছি! সেটাই উচিত কর্তব্য ! আচ্ছা, রজিত কাপুর, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, আবীর চট্টোপাধ্যায়কেও নাহয় এই তুলনার বাইরেই রাখলাম। কিন্তু যীশু ও পরমব্রত বা সুশান্ত সিং রাজপুত পারলে, দেবও পারবেন। তিনি তাঁর মতো করেই পারবেন। যীশু, পরমব্রত বা সুশান্ত সিং রাজপুত অভিনয়ে দেবের থেকে এগিয়ে থাকলেও, পর্দায় দেবের দাপুটে উপস্থিতি তাঁর অনেক ত্রুটি ভুলিয়ে দেবে। সুজয় একজন দক্ষ পরিচালক, তিনি কোনও দিক থেকেই অভিনেতা নন। সুতরাং ওঁর কথা তো মোটেই আসে না আলোচনায়।
দেবের যেই গুণটা সব বয়সের, সব শ্রেণীর দর্শককে টানে, সেটা হলো পর্দায় ও পর্দার বাইরে তাঁর সততা ও সারল্য। নিজের অক্ষমতা ঢাকার চেষ্টা করেন না তিনি। এই সূত্রেই বলা যায়, পর্দায় নিজের জন্য নিজেই এক অব্যর্থ ‘প্যাকেজ’ বানিয়েছেন দেব। চরম পেশাদারিত্ব ছাড়া এটা সম্ভব নয়। সিনেমা বাণিজ্যের অন্ধিসন্ধিও খুব ভালোই রপ্ত করে ফেলেছেন তিনি। একের পর এক চ্যালেঞ্জ নিচ্ছেন নিজের প্রযোজনায়, নিজের সুপারস্টার তকমা ধরে রাখতে এবং সফল হচ্ছেন
দিনটি বাঙালির অতি আবেগের, ২৫শে বৈশাখ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিবস। তাঁর প্রথম ব্যোমকেশ ভেঞ্চার ‘ব্যোমকেশ ও দুর্গ রহস্য’ নিয়ে সেইদিনই দেব জানান, “রবীন্দ্রজয়ন্তীর শুভ দিনে সামনে আনলাম আমাদের ভালোবাসার অজিত ও ব্যোমকেশের ছবি। যদি সব পরিকল্পনা মতো চলে, তাহলে, আশা করি, এই বছরের ১১ই আগস্ট বড়পর্দায় মুক্তি পাবে ‘ব্যোমকেশ ও দুর্গ রহস্য’।” সংবাদ মাধ্যম সূত্রে সকলেই জানেন, দেব এন্টারটেনমেন্ট ভেঞ্চার্স ও শ্যাডো ফিল্মস-এর যৌথ প্রযোজনায় তৈরি হচ্ছে এই ছবি। পরিচালক বিরসা দাশগুপ্ত। ছবির শুটিং শুরু হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই।
ব্যোমকেশের প্রিয় বন্ধু, তাঁর সত্যান্বেষণের কাহিনি লেখক অজিতের ভূমিকায় অভিনয় করছেন অম্বরীশ ভট্টাচার্য। অম্বরীশ এই সময়ের অন্যতম সেরা চরিত্রাভিনেতাদের একজন। তাঁর অভিনয়ে অজিত নিশ্চয়ই পর্দায় জীবন্ত হয়ে উঠবে। সম্প্রতি ব্যোমকেশ ও অজিতের একটি ছবি প্রকাশ্যে এসেছে। সেখানে আমরা দেখি, দুজনেরই চোখে চশমা। অজিতের পরনে পাঞ্জাবী ও জহরকোট, কাঁধে ঝোলানো কাপড়ের ব্যাগ।
সত্যবতীর চরিত্রে কে অভিনয় করবেন, তা মহরতের দিনই প্রকাশ্যে আনেন দেব। এই নিয়ে প্রচুর জল্পনা থাকলেও, সব কানাঘুষোকে উড়িয়ে দিয়ে ব্যোমকেশ দেবের সত্যবতী হয়েছেন রুক্মিণী মৈত্র। রুক্মিণী যে দেবের লাকি চার্ম, একথা মানতেই হবে। তাঁদের অফ স্ক্রিন রসায়ন দেবের জীবনে সাফল্যের জোয়ার এনেছে। আর পর্দায় সত্যবতীর যতটুকু ভূমিকা, সেটাতেও রুক্মিণীর পাশ না করার কোনও কারণ নেই।
যে কথা শুরুতে বলেছি, দেব জানেন তাঁর নিজের পারা না পারার খবর ! আর এই জানাটাই তাঁর সাফল্যের চাবিকাঠি। এই চাবিতেই দুর্গ রহস্যের তালাও খুলে ফেলবেন তিনি, এই বিশ্বাস রাখেন দেবের অগণিত ভক্ত। আর বিশ্বাস রাখেন দেব স্বয়ং ! এই বিশ্বাসের ভরাডুবি হোক, এমনটা তাঁর চরম শত্রুও চাইবেন না।