শরীর তো নয়, গ্রীক ভাস্কর্যের অপরূপ বিস্ময়
এই কলমে থাকছে বলিউড ও টলিউড তারকাদের ফিটনেস মন্ত্র। লিখছেন মণিদীপা কর। প্রতিমাসে পনের দিন অন্তর প্রকাশিত হচ্ছে এই কলম।
একই মানব অঙ্গে শিল্প ও ভাস্কর্যের মেলবন্ধন খুব কমই হয়। সেই অল্প কজনের অন্যতম যে হৃত্বিক রোশন, তা নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই। তাঁর শরীরের প্রতিটি পেশির ভাঁজে যেন গ্রীক ভাস্কর্য। আর দেহ বিভঙ্গে কখনও ঢেউয়ের উজান বেয়ে চলা, তো, কখনও হাওয়ায় হিল্লোলিত কচি ধানের শীষ। সব মিলিয়ে দেহপটসনে শিল্প-সৃষ্টি হৃত্বিকের সহজাত প্রতিভা। আর সেই শিল্পকে প্রতিষ্ঠা করতে শরীর জুড়ে যেন অজন্তা-ইলোরার গুহা-চিত্র। দেখতে বা ভাবতে যতটা চোখের আরাম ও মনের তৃপ্তি, গড়াটা কিন্তু তত সহজ নয়। ৪২ বছর বয়সেও ‘ফাইটার’-এর মতো অ্যাকশন নির্ভর ছবিতে নিজেকে অপরিহার্য প্রমাণ করতে প্রতিটি দিন সমান যত্নশীল থাকেন হৃত্বিক।
আর পাঁচজন সচেতন তারকার মতো শরীরচর্চা ও ডায়েটচার্টই হৃত্বিকের ফিটনেস সিক্রেট। কিন্তু লকারের ভিতর যেমন গুপ্ত লকার থাকে, তেমন তাঁর ফিটনেস সিক্রেটেও রয়েছে আরেক পরত সিক্রেট। হ্যাঁ, ব্যায়াম হোক বা ডায়েট, সপ্তাহের ভিন্ন ভিন্ন দিনে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন রুটিন। বলা ভাল, প্রতিদিনের আলাদা শরীরচর্চার রুটিনের সঙ্গে তাল মিলিয়েই তৈরি হয় হৃত্বিকের সাপ্তাহিক পৃথক ডায়েট চার্ট।
◆ স্থাপত্যের সাপ্তাহিক মেহনত
সপ্তাহের প্রথম দিন পিঠ, বুক ও পায়ের কাফ মাসলের গঠনে যত্নবান হন হৃত্বিক। এর জন্য ডাম্বেল তোলা-নামানো, বারবেল তোলা, পিছনের দিকে এক্সটেনশন, বলে পায়ের কাফ মাসলের ব্যায়াম, হাতের নিচ দিয়ে তার টেনে তোলার মতো কসরত করেন।
দ্বিতীয়দিনে পায়ের পেশির যত্ন নেন। নাচের সময় তাঁর দু’পায়ের সঞ্চালন কার্যত ‘যাদু’তে পরিণত হয়। সেই পায়ের রক্ষণাবেক্ষণে তিনি কী করেন, তা জানতে তাঁর নাচের অনুরাগীদের আগ্রহের শেষ নেই। লেগ প্রেস, সিটেড লেগ টাকস, লাইং লেগ কার্লস, লেগ এক্সটেনশনস, হ্যাক স্কোয়াট–হৃত্বিকের পদচারণার গোপন কথা। এগুলোও একবার-দুবার নয়, অভ্যাস করেন বারবার।
তিন নম্বর দিন তাঁর শরীরচর্চার ছুটি। এদিনটা শরীরের পেশিগুলোকে বিশ্রাম দিতে পছন্দ করেন রাকেশ রোশন-পুত্র।
চতুর্থদিনে কাঁধ, পেট ও পায়ের কাফ মাসলের চর্চা করার পালা। এর জন্যও বারবেল নিয়ে নানা রকম কসরত করার পাশাপাশি বসে ও দাঁড়িয়ে পায়ের পেশির সঞ্চারণ, ভার নিয়ে ওঠ-বোস ও নানারকম অভ্যাস চলতে থাকে।
পঞ্চমদিনে হাতের পেশি সুস্থ ও সুঠাম রাখতে ডামবেল নিয়ে নানা রকম অভ্যাসের পাশাপাশি বাইসেপ ও ট্রাইসেপ এক্সটেনশনে কেবল রোপ নিয়ে একাধিক অভ্যাস করেন।
ষষ্ঠদিনে আবার তাঁর শরীরচর্চার ছুটি। এই রকম রুটিনের পিছনে কারণ হিসাবে হৃত্বিকের ফিটনেস ট্রেনার জানিয়েছেন, প্রতি দু’দিন শরীরচর্চার পর একদিন বিশ্রাম দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, রোজ রোজ একই ব্যায়াম করতে যাতে শরীরের পেশিগুলোর একঘেয়ে না লাগে, তাই, একেক দিন একেক রকম রুটিন মেনে চলা।
◆ শরীরচর্চার রুটিন মেনেই ডায়েট
এক এক দিনের শরীরচর্চার রকমফেরে পেশি কোষের খাবারের চাহিদাও এক এক রকম হয়। সেই চাহিদার কথা মাথায় রেখে ডায়েট চার্টও বদলানো হয়। তবে মূলত তিন রকমের পুষ্টি উপাদানের উপর গুরুত্ব দেন হৃত্বিক। প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ও ফাইবার ফুড তাঁর পাতে থাকে। একই সঙ্গে দিনে চারবার খাওয়ার বদলে কিছুক্ষণ অন্তর অল্প করে খেতে পছন্দ করেন ‘কৃশ’। তাঁর দাবি, এতে দেহের বিপাক হার ভাল থাকে।
◆ পুষ্টির উৎস
প্রোটিন, পাউডার, মুরগীর মাংস, টার্কি, মাছ ও ডিমের সাদা অংশ দিয়ে প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করেন হৃত্বিক। বাদামি চালের ভাত, ওটমিল, আলু থেকে মেটান কার্বোহাইড্রেটের চাহিদা। এছাড়াও ডায়েটরি ফাইবার ও মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের চাহিদা পূরণ করতে খাবার পাতে থাকে টাটকা সবজি, অঙ্কুরিত দানা শস্য, ব্রকোলি, পালং শাক, স্যালাড প্রভৃতি।
◆ জলপান ও ঘুম
শরীরচর্চার সঙ্গে সঙ্গে ঘুম ও শরীরে জলের ভারসাম্য বজায় রাখার উপরও সমান গুরুত্ব দেন হৃত্বিক। তাই পর্যাপ্ত জলপানের পাশাপাশি ‘আর্লি টু বেড’ মন্ত্রকে অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলেন তিনি। রাত নটা বাজলেই ঘুমোতে চলে যান। তাই যে কোনও মিটিং দুপুরের মধ্যেই সেরে নেন। কঠোর এই নিয়মানুবর্তিতা মেনেই ২০০০-এর ‘কহো না পেয়ার হ্যায়’ থেকে ২০২৪-এর ‘ফাইটার’-এর দীর্ঘ পথ সুগম হয়েছে বিশ্বের হ্যান্ডসাম হাঙ্কদের অন্যতম হৃত্বিক রোশনের পক্ষে।
***ছবি ও তথ্যসূত্র : ইন্টারনেট