Monday, February 3, 2025
কৃষ্টি-Culture

কসবা অর্ঘ্যের নিবেদন ইচ্ছেবাড়ির প্রাঙ্গনে

অতিমারীর রেশ কাটেনি এখনও। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই একটু একটু করে সংস্কৃতিমনস্ক মানুষজন মিলিত হচ্ছেন উৎসবের সামিয়ানার নিচে। নাটককে ভালোবেসে শিলিগুড়ির নাট্যপ্রেমী দর্শক গত ১১ ডিসেম্বর এভাবেই মিলিত ও আপ্লুত হলেন শিলিগুড়ির ইচ্ছেবাড়ি প্রাঙ্গনে। এই সন্ধ্যায় কলকাতার বিখ্যাত নাট্যদল কসবা অর্ঘ্য নিবেদন করলো তাদের দুটি নাটক ‘নারী ও নাগিনী’ এবং  ‘ম্যাকবেথ বাদ্য’। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘নারী ও নাগিনী’ গল্পের আধারে নির্মিত নাটকে একক অভিনয় করলেন তাপস চ্যাটার্জি। কথকথার আঙ্গিকে একটি প্রদীপ জ্বেলে ছোট এক চৌকির উপরে বসে গল্পের শব্দ, সুর, ধ্বনি, রং ব্যেপে নির্মাণ করলেন এক অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত পরিসরের ঘননাট্য। বড় মঞ্চ বা সেট নেই। নেই আলোর চোখ ধাঁধানো খেলা। কেবল জীবন্ত মানুষের হৃদস্পন্দন অনুরণিত হচ্ছে একটি অত্যন্ত নিবিড় স্পেসে। আবিষ্ট হচ্ছেন দর্শক। জড়িয়ে পড়ছেন খোঁড়া নামক সাপের ওঝার সঙ্গে এক কিশোরী উদয়নাগের পিরিতির গাঢ় রঙে। জীবন আর ভালোবাসার নিরারম্বর এই উদযাপনে দর্শকও সম্পৃক্ত হয়ে যাচ্ছেন অনায়াসে।

নাটক শেষ হতেই শিলিগুড়ি শহরের প্রাজ্ঞ নাট্যব্যক্তিত্ব পার্থ চৌধুরী তাঁর উচ্ছ্বসিত আবেগ প্রকাশ করলেন উচ্চস্বরে–অভূতপূর্ব, অসামান্য, অদৃষ্টপূর্ব ইত্যাদি বিশেষণে সন্মানিত করলেন অভিনেতা তাপসকে । সকল দর্শকই তখন আপ্লুত ।

Img 20211214 Wa0033

‘ম্যাকবেথ বাদ্য’ মণীশ মিত্র’র একটি মৌলিক কাজ । শেক্সপিয়ারের বহু চর্চিত ম্যাকবেথ নাটকের ভিত্তিপ্রস্তরের উপর নির্মিত এক মৌলিক সৃজন। ম্যাকবেথের ট্র্যাজিক দ্বন্দগুলি, ভারতীয় শরীরীভাষে, সঙ্গীতের তানে-তালে, এক ঘন গভীর কাব্যিক উদযাপনে গঠিত হয় এই নাট্যর আত্মা। কলাবিভাগের

প্রথম বর্ষের ছাত্র ঐশিক রায় চৌধুরী এই নাটকের অভিনেতা। হিংসা, ক্রোধ, হত্যা, রক্তপাত, ক্ষমতার লোভ, অনুতাপ, প্রেম-অপ্রেম, লালসা, যৌনতার অনুরণন ঘটান ঐশিক তাঁর শরীরের প্রতিটি তন্ত্রে, শিরা-উপশিরায়, পেশী ও ধমনীতে। এই যাবতীয় অভিব্যক্তি প্রতিধ্বনিত হয়ে এক আশ্চর্য্য কাব্যিক স্ফুরণ ঘটায়, দর্শকের মনে-প্রাণে। দর্শক দু হাত তুলে আশীর্বাদ করেন এই সদ্য যৌবন প্রাপ্ত অভিনেতাকে ।

ইচ্ছেবাড়িতে মণীশ মিত্র নিজে উপস্থিত। সেক্ষেত্রে শিলিগুড়ির দর্শকমন্ডলী স্বাভাবিকভাবেই আবদার করলেন তাঁর কালজয়ী নাটক ‘উরুভঙ্গম’-এর সারারাত ব্যাপী অভিনয় শিলিগুড়িতে করার জন্য। সেই উৎসাহের আগুনে ঘি ঢাললেন ইচ্ছেবাড়ির কর্ণধার অভয়া বসু স্বয়ং। শিলিগুড়িবাসীর টানটান অপেক্ষায় থাকার পালা শুরু হলো। মণীশ মিত্র খুব খোলা মনে ব্যক্ত করলেন ভারতীয় সংস্কৃতির শিকড়ে যুক্ত হয়ে থিয়েটারকে প্রসেনিয়ামের ঘেরাটপের বাইরে নিয়ে আসার নানা স্বপ্নের কথা। এরই পাশাপাশি অনেক প্রকল্প অনেক ভবিষ্যত কর্মকাণ্ডের ভাবনা সূচিত হলো ইচ্ছেবাড়িতে, এই সুফলা সন্ধ্যায়।