Monday, February 3, 2025
সম্পাদকীয়

বিনোদন সাংবাদিকতা মানেই অশ্লীলতা নয়

বিনোদন সাংবাদিকতা মানে কিছু অশ্লীল শব্দ ও ছবি এবং সেলিব্রিটিদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে নাড়াচাড়া নয়। ইদানীং বেশ কিছু ডিজিটাল ম্যাগাজিন বা পত্রপত্রিকার ডিজিটাল সংখ্যা দেখে এমনটাই উপলব্ধ হয়। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে সেখানে বেশ কিছু প্রথম সারির নামও আছে। অর্থহীন খবর, প্রচার সর্বস্ব প্রচেষ্টা, সস্তায় বাজিমাত করার এই প্রবণতা বিনোদন ও সংবাদ মাধ্যম–একই সঙ্গে দুটি ইন্ডাস্ট্রিরই ক্ষতি করছে। বৃহৎ এই বিনোদন শিল্প ও বাণিজ্য বহু মানুষের অবদানে এগিয়ে চলেছে। গুণী ও প্রতিভাবানদের পাশাপাশি আছেন স্বপ্ন দেখা নতুন শিল্পীরা। আছেন অগণিত টেকনিশিয়ান। প্রত্যেকে দিবারাত্র পরিশ্রম করছেন। সেখানে এই ধরণের নিম্নরুচি দ্বারা দ্রুত পাঠকসংখ্যা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা মোটেই মানা যায় না।

সিনেমা ও অন্যান্য বিনোদন মাধ্যমের কাজ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ একটি পেশা। সফল হলে ভালো। নাহলে এক লহমায় হারিয়ে যাওয়া। তারকাদের যে রঙিন জীবন আমরা পর্দায় দেখি, তার পিছনে কতখানি মেহনত থাকে, সেটা আমাদের কল্পনার বাইরে। তাঁদের সম্পর্কে চটপটা, মশলাদার খবর ছাপা হবে, সেটা অস্বাভাবিক নয়। ওঁরা নিজেরাও এই বিষয়ে অবগত। এক্ষেত্রে, অন্তত এটুকু ভাবা প্রয়োজন, খবরটি যেন প্রতিবেদকের কষ্টকল্পনা না হয়। আর সীমার বাইরে ব্যক্তিগত টানাহ্যাঁচড়া করার দিকটাও বর্জন জরুরি। মনে রাখা দরকার ওঁরাও রক্তমাংসের মানুষ। দেখা যায়, বহুক্ষেত্রেই হলুদ সাংবাদিকতা চূড়ান্ত অমানবিক কাণ্ডে পরিণত হয়।

একইভাবে এই জাতীয় খবর লেখা ও প্রকাশের ধারা সংবাদ মাধ্যমের সামগ্রিক মানটাই নিম্নগামী করছে। ব্যাকরণের মাথামুন্ডু নেই, অশুদ্ধ বানান, প্রকাশভঙ্গি অপরিষ্কার–এমন লেখা যাঁরা পড়ছেন, তাঁরাও ওই নিম্নমানের মানসিকতার অনুগামী হচ্ছেন। আমাদের শৈশবে ভাষাশিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম ছিল সংবাদপত্র। আজকের শিশু-কিশোরদের হাতে হাতে স্মার্ট ফোন। বিনোদন সংবাদের প্রতি সকলেরই আগ্রহ সহজাত। সেখানে তাদের চোখের সামনে একটি অশ্লীল ছবি ও হেডিং ঝুলিয়ে প্রথমে তাদের আকর্ষিত করা হচ্ছে। তারপর বানানো ও সাজানো খবর, ভুল গদ্যে বাকি সর্বনাশটুকু ঘটে যাচ্ছে।

এরপর তারুণ্যে পৌঁছে তাদের পক্ষে হিতাহিত জ্ঞান ও বোধ প্রয়োগ করে উৎকৃষ্ট ও তথ্য সমন্বিত লেখা পড়বার অভ্যাস আর গড়ে তোলা সম্ভব কি ? আক্ষেপ, এসব নিয়ে উল্লেখ্য সংবাদ মাধ্যমের কর্তাব্যক্তিরা নিতান্তই উদাসীন। বিনিয়োগ আর মুনাফার বাইরে আর কিছু দেখেন না তাঁরা। মুনাফা দেখাটা দোষের নয়। কিন্তু কিসের বিনিময়ে, সেটা ভাবতে হবে না ? একদিকে অহেতুক, অকারণ অশ্লীল ছবি ও শব্দের প্রয়োগ, অন্যদিকে ভাষার অশুদ্ধতা–সুদূরপ্রসারী এর কুফল নিয়ে সামাজিক দায়ের প্রেক্ষিতেই ভাবাটা অত্যন্ত জরুরি। ইতিমধ্যেই দেরি হয়ে গেছে। এখনও না ভাবলে, সর্বনাশের শাখাপ্রশাখা একদিন সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে যাবে।