আমি লাউড অভিনয়ের পক্ষপাতী নই
আকারে ছোট হলেও বিনোদন ক্ষেত্রে টেলিভিশনের গুরুত্ব আজ অসীম। মেগা থেকে রিয়ালিটি, গেম শো থেকে ম্যাগাজিন–টিভি শোয়ের চাহিদা ছিল, আছে, থাকবে। এই বিভাগে তারই খবর প্রতি সপ্তাহে।
মহম্মদ ইকবাল খানকে নিশ্চয়ই ভোলেননি হিন্দি ধারাবাহিক দর্শক। একতা কাপুরের ‘ক্যায়সা ইয়ে প্যার হ্যায়’ থেকে তাঁর উত্থান শুরু। এর বাইরে বড় পর্দায় উল্লেখযোগ্য ছিলেন তিনি ‘ফান্টুশ’-এ। এখন ওয়েব সিরিজেও কাজ করছেন। এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে অজন্তা সিনহাকে জানিয়েছেন তাঁর কাজ নিয়ে নানা কথা। দুটি পর্বে প্রকাশিতব্য সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্ব আজ।
আপনার কেরিয়ার শুরু মিউজিক ভিডিও ও সিনেমা দিয়ে। তবে, জনপ্রিয়তা প্রথম আসে সম্ভবত হিন্দি ধারাবাহিক ‘ক্যায়সা ইয়ে প্যার হ্যায়’ থেকে। কেমন লাগে সেই সময়ের স্মৃতি মনে পড়লে ?
◾ আমি আজও খুব ভালো মনে করতে পারি সেই দিনগুলো। ‘ক্যায়সা ইয়ে প্যার হ্যায়’ তো বটেই, আমার অভিনীত ছবি ‘ফান্টুশ’-ও যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়। তবে, এটাও ঠিক, ‘ক্যায়সা ইয়ে প্যার হ্যায়’ এতটাই পছন্দ করেছিলেন দর্শক, যে, তার একটা গভীর প্রভাব আমাদের সবার ওপরেই পড়েছিল। আমি জানি, খ্যাতি আচমকাই ‘ক্যায়সা ইয়ে প্যার হ্যায়’ টিমের সবার জীবনে এলেও, সেটা ধীরে ধীরে সকলের জীবনের অঙ্গ হয়ে যায়। আমিও তাঁদের একজন। কিন্তু, আমরা তখন এতটাই শুটিংয়ে ব্যস্ত থাকতাম যে, সেটা উপভোগ করার সময়ও থাকত না।
তারপর একে একে যে হিট ধারাবাহিকে আপনি নিজেকে মেলে ধরলেন, সেগুলি হলো–করম আপনা আপনা, কাব্যাঞ্জলি, কহি তো হোগা। সবগুলিই ‘ক’ দিয়ে শুরু। ‘ক’ নিয়ে একতা কাপুরের দুর্বলতা বা কুসংস্কার যেটাই বলি, তিনি মনে করতেন ‘ক’ তাঁর জন্য লাকি ! আপনি কী এই জাতীয় কোনও ভাবনায় বিশ্বাস রাখেন ?
◾ এটা ঠিক একতা কাপুরের ‘ক’-এর প্রতি দুর্বলতা নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। এর পাশাপাশি ওঁর কঠোর পরিশ্রমের দিকটাও কিন্তু স্বীকার করতে হবে। আজও একই রকম পরিশ্রমী তিনি। কিন্তু, সেই সময় বিষয়টা আরও অনেক কঠিন ও তীব্র ছিল। বেলা ১১-১২ টায় কাজ শুরু করতেন একতা, শেষ করতেন তার পরের দিন সকাল ৫-৬টায়। এতটাই প্যাশনেট তিনি নিজের কাজের বিষয়ে। তখন পুরোটাই ছিল টেলিভিশনকে ঘিরে। আমি মনে করি, বাকি সব বাদ দিয়ে এগুলোই সত্যিকারের উল্লেখযোগ্য। আমি নিজেও এই দর্শনেই বিশ্বাস করি।
আপনি একজন সাবলীল অভিনেতা। আপনার অভিনয়ের স্টাইল স্বাভাবিক, উপভোগ্য, আবেগপূর্ণ এবং জীবনমুখী ? অভিনয়ের কোনও প্রশিক্ষণ কী নিয়েছেন আপনি ?
◾ প্রথমে তো ধন্যবাদ আপনাকে, এত সুন্দরভাবে আমার অভিনয়ের মূল্যায়ন করার জন্য। সত্যি কথা বলতে কী, আমার সেই অর্থে কোনও প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ হয়নি। কাজ করতে করতেই যতটুকু শিখেছি। এক্ষেত্রে বলতেই হবে, আমি টিভিতেই সবচেয়ে বেশি কাজ করেছি। আর যাঁরা বলেন, টিভিতে খুব লাউড অভিনয় করতে হয়, আমি তাঁদের সঙ্গে মোটেই একমত নই। আমি লাউড অভিনয়ের পক্ষপাতী নই। এটা মনে করি না, দর্শক স্বাভাবিক ও যথাযথ অভিনয় পছন্দ করেন না। আমি তাই বরাবর স্বাভাবিক অভিনয়ের ধারা বজায় রাখার চেষ্টা করে গেছি। মনে হয়, সেটাই আমার অভিনয়কে ক্রমশ আরও ভালো করেছে। আর অতি অভিনয়ের ব্যাপারটাও আমার ভালো লাগে না। চরিত্র ও সিকোয়েন্স অনুযায়ী যতটা স্বাভাবিক থাকা যায়, সেটাই আমি অভিনয়ের ক্ষেত্রে আমার লক্ষ্যে রাখি।
এই পেশায় অনেকগুলো বছর হয়ে গেল আপনার। বিনোদন জগতে কী কী উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন লক্ষ্য করলেন ?
◾ সবচেয়ে বেশি কাছ থেকে দেখেছি টিভি ইন্ডাস্ট্রিকেই। এখানে খুব বেশি পরিবর্তন যে হয়েছে, তা নয়। আগে বাজেট অনেক বেশি ছিল, এখন সেটা কমেছে। অন্যদিকে শিল্পীদের পারিশ্রমিক বেড়েছে। সিনেমার ক্ষেত্রে বাজারটা অনেক বিস্তৃত হয়েছে। সেই সময় এত স্টুডিও ছিল না। এখন সেটাও বেড়েছে অনেক। আমি যখন কেরিয়ার শুরু করি, তখন, যে কেউ, টাকা থাকলেই সিনেমা বানাতে পারতেন। এখন বিষয়টা শুধু টাকা লগ্নি করার ওপর নির্ভর করে না। তার সঙ্গে আরও অনেক কিছু জড়িয়ে গেছে–ভালো হলে ও সঠিক সময়ে ছবি মুক্তি তার মধ্যে অন্যতম। ওয়েব মাধ্যম আসার পর গত কয়েক বছরে তো বেশ দ্রুত বদলে গেছে বিনোদন মানচিত্র। আমি নিজেও এখন এর অংশীদার। এটা খুব ইতিবাচক একটা দিক যে, বহু মানুষ–অভিনেতা, পরিচালক, লেখক অথবা টেকনিশিয়ান–সকলেই নিজেদের সৃজন প্রতিভাকে প্রকাশ করার সুযোগ পাচ্ছেন। (চলবে)