কৃষ্ণসঙ্গিণী রুক্মিণী|সুচেতনা সেন কুমার|প্রজ্ঞা পাবলিকেশন। পাঠ প্রতিক্রিয়া।
লিখলেন – আঁখিকাঞ্চন ভট্টাচার্য
উপন্যাস : কৃষ্ণসঙ্গিণী রুক্মিণী।
লেখক : সুচেতনা সেন কুমার।
প্রকাশক : প্রজ্ঞা পাবলিকেশন
মুদ্রিত মূল্য : ৩৮০/- টাকা
বাঁধাই – হার্ড বাউন্ড
★★★★★★★★
মুঠোফোনে লিখতে অভ্যস্ত না হওয়ার জন্য বানান ভুল হতে পারে তাই প্রথমেই ক্ষমা চাইছি। মহাভারত এবং রামায়ন নিয়ে একটু অন্যরকম লেখার প্রতি আগ্রহ ছোটোবেলা থেকেই। সেই আগ্রহ থেকেই লেখিকার লেখা প্রথম বই সৌবল শকুনী পড়েছিলাম এক নিশ্বাসে। ওঁর লেখার প্রতি আগ্রহী হলেও মন বলতো যে গবেষণা ধর্মী লেখার থেকেও বিভিন্ন পৌরাণিক এবং মহাকাব্যিক ঘটনা গুলি গল্পের ছলে সুন্দর করে বুনতে পারে ওনার কলম। নমঃ শিবায় পড়ে অবাক হয়েছিলাম..বইটির প্রতিটি বাক্যে ধরা পড়েছিল লেখিকার নিজস্ব অধ্যাবসায়,যেটি প্রায় গবেষণার সামিল। তার লেখা কৃষ্ণসঙ্গিণী রুক্মিণী পড়ে মুগ্ধ হলাম।লেখিকা যদিও ফিরেছেন তার পুরোনো কলমের স্বাচ্ছন্দ্যে..কিন্তু এবারে অবাক করেননি..বরং কেমন যেন আচ্ছন্ন করেছেন এক অদ্ভুত মনখারাপের আবহাওয়ায়।রুক্মিণী. বিদর্ভের প্রিয় রাজকুমারী,শ্রীকৃষ্ণের প্রিয়তমা প্রথমা স্ত্রী এই কাহিনীর প্রাণ..কাহিনীর প্রেক্ষাপট প্র|ক্ কুরুক্ষেত্র যেখানে পঞ্চপাণ্ডব এবং কুন্তী বয়সে নবীন,তখনও যজ্ঞ থেকে উঠে আসেননি কোনো “যাজ্ঞসেনী”। তিনি তখন কেবলই রুক্মিণী সখী “কৃষ্ণা”..সেই রুক্মিণী যিনি শিশুপাল এর কদর্য দৃষ্টিলেহন সহ্য করতে না পেরে নিজেই অনুরোধ জানিয়েছিলেন দ্বারকাধীশ কৃষ্ণ কে তাকে হরণ করবার জন্য।নিজের বিদর্ভ কে রক্ষা করে ভারতবর্ষের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ দিক পরিবর্তন করলেও এরপর এই বদনাম তিনি বয়ে বেড়িয়েছেন আজীবন।নিজের প্রিয় বিদর্ভ ছেড়েছেন স্বেচ্ছায়,প্রিয়জনের বিশ্বাসঘাতকতায় তার সদ্যোজাত পুত্র হারানোর হাহাকার শুনেছে দ্বারকা,প্রাণাধিক প্রিয় শ্রীকৃষ্ণের পরবর্তী একাধিক বিবাহের আয়োজন স্বহস্তে সুসম্পন্ন করেছেন বুকে পাথর চেপে,না চাইতেও আপন করেছেন একাধিক সপত্নী কে,কৃষ্ণের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে গড়েছেন দ্বারকা,রক্ষা করেছেন সেই নগরী। বই তে লেখিকা অনেকগুলি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এনেছেন।সেগুলি ঠিক না ভুল সেটি ঠিক করার দায়িত্ব ছেড়েছেন পাঠকদের হাতে..তবে এতে বইটির গতি একদমই রুদ্ধ হয়না। বড় মন ছুঁয়ে যায় প্রতিটি শব্দচয়ন।পড়তে পড়তে মনে হয়,আচ্ছা ..এই যে কৃষ্ণের একাধিক বিবাহ যার বেশিরভাগটাই রাজনৈতিক,যদি উল্টোটা হতো?? কৃষ্ণ কি মানতে পারতেন?? রুক্মিণী কে বড় নিজের মনে হয়..সারাজীবন নিজের সবটুকু দিয়েও কি পেলেন তিনি?
তবে কৃষ্ণসঙ্গিণী রুক্মিণী বইটি পড়তে পড়তে তাল কেটেছে বেশ কয়েকবার, একটি অনুচ্ছেদ থেকে আরেকটি অনুচ্ছেদ শুরু হবার সময়। এছাড়াও চরিত্রের ঘনঘটায় মাঝে মাঝেই আগের পাতা উল্টে দেখতে হয়েছে , বিশেষ করে মাতৃকা সম্প্রদায়ের বিবরন এর জায়গাটি। যদিও কলমের বাঁধনে সুর মিলেছে আবার। মুদ্রণ প্রমাদ সেভাবে চোখে পড়েনি কিন্তু এই কাহিনীর শেষ টা.. নাহ..লেখিকা নিজেও মুখবন্ধে স্বীকার করেছেন তিনি হয়তো সত্যিই শেষ করতে পারেননি এই উপাখ্যান..তাই “শেষ হইয়াও হইল না শেষ”..উপন্যাসের শেষ টি যেন আমার মনে হয়েছে একটু তাড়াতাড়ি ই করে দেওয়া হয়েছে।আরও একটু যত্ন নেওয়া যেতো কি??
তবে সব মিলিয়ে বইটি একাধিক বার পড়া যায়। পড়া শেষ হয়ে যেতে কিছুটা আনমনেই হাত বুলিয়ে ফেলেছিলাম বইটির অসাধারণ প্রচ্ছদের ওপর। কিছু মানুষ আছেন যাদের নামের আগে কোনও বিশেষণ না থাকা সত্ত্বেও তারা সংসারের জন্য, নিজের পরিবারের জন্য বিলিয়ে দেন নিজের সবটুকু। তারা পারেন না এমন কোনো কাজ নেই। কিন্তু সময়ে অসময়ে তারাও একটু যত্ন খোঁজেন।একটু শান্তির আশ্রয়। বড় অভিমানী হন মাঝে মাঝে..মনের আবেগ আশা হতাশা কে কর্তব্যপালনের আপাত কঠিন বর্মে ঢাকতে ঢাকতে ক্লান্ত হয়ে চলে যান সব ছেড়ে দিয়ে..হয়তো কিছুটা রুক্মিণীর ই মতো।
★★★★★★★★
প্রাপ্তিস্থানঃ
- প্রজ্ঞা পাবলিকেশনের নিজস্ব বিপণী। বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিট, প্যারামাউন্টের ঠিক বিপরীতে।
- ঘরে বসেই বইটি হাতে পাওয়ার জন্য WhatsApp করুন 9147364898 – এই নম্বরে।
অন্যান্য প্রাপ্তিস্থান –
- দে বুক স্টোর (দীপুদা)
- জানকী বুক ডিপো (সুখরঞ্জন দা)
- বইবন্ধু