ছোটপর্দার বড় তারা
আকারে ছোট হলেও বিনোদন ক্ষেত্রে টেলিভিশনের গুরুত্ব আজ অসীম। মেগা থেকে রিয়ালিটি, গেম শো থেকে ম্যাগাজিন–টিভি শোয়ের চাহিদা ছিল, আছে, থাকবে। এই বিভাগে তারই খবর প্রতি সপ্তাহে। ছোটপর্দার এক উজ্জ্বল তারকা তিনি। কাজ করেছেন অন্যান্য মাধ্যমেও। তৃণা সাহাকে নিয়ে লিখেছেন সোমনাথ লাহা।
ছোটপর্দার অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী তৃণা সাহা। স্টার জলসার মেগা ধারাবাহিক ‘খোকাবাবু’-র হাত ধরে অভিনয়ের দুনিয়ায় পা রেখেছিলেন তিনি। প্রথম ধারাবাহিকেই তাঁর অভিনীত ‘তরী’ চরিত্রটি মন জয় করে নেয় দর্শকদের। জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে দেয় তাঁকে। গতবছর আগষ্ট মাসে শেষবারের মতো তাঁকে দেখা গিয়েছিল মেগা ধারাবাহিক ‘খড়কুটো’-তে। সেখানে তাঁর অভিনীত ‘গুনগুন’ চরিত্রটিও জনপ্রিয়তা পায় দর্শকমহলে।
ছোটপর্দার পাশাপাশি বড়পর্দাতেও ধীরে ধীরে যাতায়াত শুরু করেছেন তৃণা। শুরুটা অবশ্য ক্যামেরার সামনে নয়, পিছনেই ছিল। অপর্ণা সেন পরিচালিত ‘আরশিনগর’-এ অবজার্ভার হিসেবে কাজ করেন তিনি। এরপর ২০১৯-এ ‘থাই কারি’ ছবির হাত ধরে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ ঘটে তৃণার। যদিও বক্স অফিসে সেই ছবি বিশেষ কিছু করতে পারেনি। সুযোগ আসে তারপরেও। পরপর অভিনয় করেন কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের ‘পাসওয়ার্ড’ ও অর্জুন দত্তর ‘শ্রীমতী’-তে। দুটি ছবিতেই পার্শ্ব চরিত্রে।

তবে, টেলিভিশনে কখনওই জনপ্রিয়তায় ভাঁটা পড়েনি তৃণার। সম্প্রতি স্টার জলসায় শেষ হওয়া রিয়ালিটি শো ‘ডান্স ডান্স জুনিয়র সিজন থ্রি’-র সুবাদে অন্যরকম পরিচিতি পেয়েছেন অভিনেত্রী। ফিকশন থেকে প্রথমবার নন ফিকশন শোয়ে পা রেখেই একেবারে ক্যাপ্টেনের ভূমিকায় দেখা গিয়েছে তাঁকে। এর মাঝে ওয়েব অঙ্গনেও দেখা গিয়েছে তৃণাকে। হইচই-তে অঞ্জন দত্ত পরিচালিত ‘মার্ডার বাই দ্য সি’-র পাশাপাশি ‘কামিনী’-র মতো হরর-কমেডি সিরিজেও অভিনয় করছেন তৃণা। নতুন বছরে তাঁর ঝুলি কাজে পরিপূর্ণ। এবছর অরিন্দম শীলের নতুন ছবি ‘ইস্কাবনের বিবি’-তে দেখা যাবে তৃণাকে। সূত্রের খবর, সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘লহ গৌরাঙ্গের নাম রে’ ছবিতেও কাজ করতে চলেছেন তিনি। পাশাপাশি তাঁর ঝুলিতে রয়েছে ওয়েব সিরিজও। শুধু তাই নয়। লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের পরবর্তী মেগা ধারাবাহিক ‘বালিঝড়’-এ ‘জোরা’ চরিত্রটির হাত ধরে মেগায় ফিরছেন তৃণা।
সম্প্রতি স্টার জলসার অফিসে বসে কথা বলছিলাম তৃণার সঙ্গে। প্রথমবার ‘ডান্স ডান্স জুনিয়র সিজন থ্রি’-র মতো নন-ফিকশন শোয়ে কাজ করে তিনি যে ভীষণ আনন্দিত সেই কথা বলতে দ্বিধা করেননি। প্রতিযোগীদের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে তিনি জানান, “ওদের কাছে অনেক শিখেছি।” স্বভাবতই, আবেগপ্রবণ এই অভিনেত্রী লুকোননি নিজের মন খারাপের কথা। শো শেষ–অর্থাৎ আর দেখা হবে না ওদের সঙ্গে। তাঁর মন্তব্য, “এই সেটে আর আসতে পারব না। প্রতিদিন এই বাচ্চাদের সঙ্গে দেখা হবে না।”
তৃণা জানিয়েছেন, তাঁর যে কোনও কাজে সাপোর্ট সিস্টেম তাঁর স্বামী অভিনেতা নীল ভট্টাচার্য। কিন্তু বাড়িতে পরস্পরের কাজ নিয়ে খুব বেশি আলোচনা করেন না তাঁরা। তৃণার কাছে বাড়ি মানে একটাই বিষয় –স্বামী-স্ত্রী-সংসার। নতুন বছরে তাঁকে কিভাবে দেখবেন দর্শক প্রশ্নের উত্তরে তৃণার জবাব,”অরিন্দম শীলের পরবর্তী ছবি ‘ইস্কাবনের বিবি’-তে অভিনয় করছি। ওই ছবির কাজ এখনও কিছু বাকি রয়েছে। আরও একটা ছবির কথা চলছে। এছাড়াও দু-একটা কাজ রয়েছে। কিছু ওয়েব সিরিজেও কাজ করছি।”

তবে লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের পরবর্তী মেগা ধারাবাহিক ‘বালিঝড়’-এ কাজের কথা সযত্নে এড়িয়ে গিয়েছেন তৃণা। তাঁর কথায়, “আমি এতকিছু জানি না এখনও। জানতে পারলে তোমাদের অবশ্যই জানাব।” স্টার জলসায় অবশ্য ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে এসেছে ‘বালিঝড়’-এর ঝাঁ চকচকে প্রোমো। এক রাজনৈতিক নেতার ভোট-বিজয়, জনতার উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখা, মেয়ে জোরাকে নিজের উত্তরাধিকারী হিসেবে উপস্থিত দলকর্মী, জনতা ও মিডিয়ার কাছে পরিচয় করানো–মোটামুটি প্রোমো দেখে গল্পের গতিপ্রকৃতি এমনটাই মনে হলো। আর একটা টুইস্টও পাওয়া গেল। জোরার জীবনসঙ্গী নির্বাচনে নেতা মহাশয় নিজের সেক্রেটারির কথা বললেন, যাতে যথেষ্ট চমকে উঠতে দেখা গেল জোরাকে। পাশাপাশি আর একজন তরুণকেও আমরা দেখি, যে এই ঘোষণা শুনেই অকুস্থল ত্যাগ করে এবং জোরা ছুটে যায় তার পিছনে।
তাহলে কী ত্রিকোণ প্রেম ? নাকি ক্ষমতা ও উচ্চাশার হিসেবনিকেশ ? প্রোমো দেখে যতটুকু বোঝা গেল, শুরু থেকেই নাটকীয় উপাদানে দর্শক টেনে নেবে ‘বালিঝড়’। আদতে, লীনা গঙ্গোপাধ্যায় মানেই তো চূড়ান্ত নাটক আর সেটাও একেবারে দর্শকের পালস বুঝে ! মেগায় তৃণার বিপরীতে রয়েছেন ইন্দ্রাশিস রায় ও কৌশিক রায়। সিনেমা বা ওয়েব সিরিজের জন্য আমাদের শুভেচ্ছা থাকবে তৃণার জন্য। তবে, ‘বালিঝড়’-এ তিনি অন্যতম মুখ্য ভূমিকায়। লীনার সৃষ্ট চরিত্র মানেই অভিনেতার কাছে দারুণ এক উপহার ! এই মেগা যে তৃণাকে তাঁর টিভি কেরিয়ারের ক্ষেত্রে আর একটি মাইলস্টোন গড়ে নিতে সাহায্য করবে, সেটা আগাম বলে দেওয়া যায়।