নিরালা বাবার ‘আশ্রম’-এর বড় চমক ববি দেওল
হাতে হাতে স্মার্টফোন। তরুণ প্রজন্মের চোখ ইদানীং নিত্যনতুন ওয়েব সিরিজে। সারা বিশ্বের স্ট্রিমিং বিনোদন এখন হাতের মুঠোয়। সেইসব সিরিজ নিয়েই নানাকথা এই বিভাগে। লিখছেন মৃণালিনী ঠাকুর।
প্রকাশ ঝা কিছু নির্মাণ করবেন, আর সেটা প্রতিষ্ঠান বিরোধী হবে না, এমনটা হতেই পারে না। আর প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা মানেই তো অশান্তি, বিতর্ক ! ইদানীং এ দেশে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার ফলে শুধু প্রাতিষ্ঠানিক কর্তা ব্যক্তিরাই যে চটেন, তা নয়, তাদের পিছনে দাঁড়ানো অবোধ জনতার একাংশও বেজায় নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখাতে শুরু করে। প্রকাশ পরিচালিত প্রথম ওয়েব সিরিজ ‘আশ্রম’ শুরু হয় ২০২০-র আগস্টে এম এক্স প্লেয়ারে। সেই বছরেরই নভেম্বরে প্রদর্শন এর দু নম্বর সিজনের। সিজন দুইয়ের শিরোনাম ছিল ‘আশ্রম চ্যাপ্টার টু : দ্য ডার্ক সাইড’। নতুন সিজন শুরুর আগে ট্রেলার। বাবা নিরালার কান্ডকারখানা আর একটু প্রকটিত হওয়ার ইঙ্গিত ছিল সেই ট্রেলারে। তো সেটা দেখেই ক্ষেপে ওঠে বজরং দল। হিন্দুত্ববাদকে অপমান করছে এই সিরিজ, সেই অভিযোগে প্রকাশকে নানাভাবে আক্রমণ করে হিন্দুত্বের ধ্বজাধারী দলটি। সম্প্রতি শুরু হয়েছে ”আশ্রম’ চ্যাপ্টার থ্রি। পরিবেশ আপাতত শান্ত। প্রকাশের সঙ্গে এমনটা অবশ্য নতুন নয়। আশা করা যায়, বাধাবিপত্তি সত্বেও এগিয়ে চলবে এই সিরিজ।
ধর্মের নামে এক ভয়ঙ্কর অপরাধচক্র এ দেশে দিনের আলোয় রমরম করে চলে। ‘আশ্রম’ তাই নিছক এক পলিটিকাল ক্রাইম থ্রিলার সিরিজ নয়। ভন্ড বাবাদের মানুষ ঠকানোর কাহিনি বহুবার সংবাদ মাধ্যমে উঠে এসেছে। মানুষকে কিছু পাইয়ে দেওয়ার মিথ্যে প্রতিশ্রুতি জনিত আর্থিক কেলেঙ্কারি থেকে খুন, নারীঘটিত নোংরামি–কিছুই বাকি রাখে না এরা। ‘আশ্রম’ সিরিজের বাবা নিরালাও (ওরফে মন্টি সিং) এমনই এক ব্যাক্তি। সব দিক থেকে পিছিয়ে থাকা মানুষের অন্ধ বিশ্বাসকে হাতিয়ার করেই যাবতীয় অনাচার চালিয়ে যাচ্ছে সে। আদতে এই ‘বাবা’ সেজে বসা গুরুদের আমরা সকলেই চিনি। এ এক দুরন্ত ব্যবসা। এই ব্যবসায় কোনও লগ্নি নেই, ক্ষতিরও সম্ভাবনা নেই। আছে শুধু লাভ। টার্গেট সেইসব অসহায় সাধারণ মানুষ, যারা সমাজের যাবতীয় প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। সবচেয়ে বড় কথা, শিক্ষার আলো, যেটা থেকে ভালো-মন্দ যাচাই করতে সক্ষম হবে তারা, সেখানেই সম্পূর্ণ অন্ধকার। যেমন হয়, এখানেও বাবা নিরালা়র পাশে রয়েছে অসাধু রাজনৈতিক নেতা হুকুম সিং এবং সুন্দর লাল। ভোটব্যাঙ্কের জন্য এরা বাবার ছত্রছায়ায় থাকার চেষ্টা করে। ‘আশ্রম’-কে ঘিরে কিছু সৎ মানুষের দেখাও পাবেন দর্শক, যারা এই কুচক্র ভেঙে দিতে বধ্যপরিকর।
এই সিরিজ প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গেলে সবথেকে গুরুত্বে উঠে আসবে যে নামটি, তিনি অভিনেতা ববি দেওল। বলিউডের একদা এই স্টার একসময় প্রচুর মশালা ছবিতে কাজ করে যে স্টারডম অর্জন করেন, সেই আবরণ হেলায় খুলে ফেলে আজ তিনি এক শক্তিশালী অভিনেতার তকমায়। নিঃসন্দেহে নিজের এক অনন্য উত্তরণ ঘটিয়েছেন ববি। বাবা নিরালার চরিত্রে তাঁর রিয়ালিস্টিক ও দাপুটে অভিনয় এই সিরিজের অন্যতম সেরা আকর্ষণ। অভিনয়ে এ ছাড়াও আছেন চন্দন রায় সান্যাল, অদিতি পোহানকর, তুষার পান্ডে, অনুপ্রিয়া গোয়েঙ্কা, ত্রিধা চৌধুরী, বিক্রম কোচার, অনিল রাস্তোগি, সচিন শ্রফ, রাজীব সিদ্ধার্থ, জাহাঙ্গীর খান, অধ্যয়ন সুমন, কেশব পণ্ডিত, মালা সিনহা, নবদীপ তোমর, প্রীতি সিং, অয়ন আদিত্য, এষা গুপ্তা ও হেমন্ত চৌধুরী। প্রত্যেকেই স্ববৈশিষ্টে উজ্জ্বল।
প্রকাশ নিজেই এই সিরিজ প্রযোজনা করেছেন। গল্প হাবিব ফয়সল। চিত্রনাট্য লিখেছেন মাধবী ভাট, অবিনাশ কুমার, সঞ্জয় মাসুম, তেজপাল সিং রাওয়াত ও কুলদীপ রুহিল। তিনটি সিজন মিলিয়ে মোট ২৮ টি পর্বে ‘আশ্রম’ দেখবেন দর্শক। সিজন চার দেখানো হবে আগামী বছর। শুরুতেই বলেছি এ সিরিজ বিতর্কের মুখে। ধর্ম নিয়ে ব্যবসা ও সেই ব্যবসার অসাধুতা সামগ্রিকভাবে সমাজের পক্ষে কতটা ক্ষতিকারক আর এই ক্ষতি কতদূর সুদূরপ্রসারী, সেকথা সকলেই জানে। তা সত্ত্বেও প্রশাসনের নাকের ডগাতেই চলে এই চক্র। বিষয়টির গুরুত্ব ও প্রাসঙ্গিকতা বিচারে ‘আশ্রম’ একদিকে যেমন সমালোচকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে। তেমনই কোথাও কোথাও যৌনদৃশ্য প্রদর্শনের বাড়াবাড়ি নিয়েও সমালোচনার ঢেউ উঠেছে। ওটিটি প্ল্যাটফর্ম মানেই কোথাও একটা এই বাড়াবাড়ির অভিযোগ নতুন নয়। এখানেও বিষয়ের পথ ধরেই হয়তো দৃশ্য রচনা। তবু, সব দর্শক একে স্বচ্ছ মনে গ্রহণ না-ও করতে পারেন। এক্ষেত্রে একটাই কথা, এই বিষয়টা বাদ দিলে এই সিরিজকে দশে দশ দেওয়া যেতেই পারে।