Sunday, May 19, 2024
ওয়েব-Wave

জমে গেছে ‘ইয়ে কালি কালি আঁখে’

অন্ধতা সবক্ষেত্রেই ক্ষতির কারণ হয়। অন্ধ ভালোবাসা তো মারণাত্মক !! যদিও, ফিকশন নির্মাতাদের কাছে এই বিষয়টা চূড়ান্ত লোভনীয়–সে সিনেমা, টিভি সিরিয়াল বা ওয়েব সিরিজ যা-ই হোক ! ‘কি-কি-কি কিরণওয়ালা’ শাহরুখ তো ব্র্যান্ডই হয়ে গেলেন এহেন অবসেশড প্রেমীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে ! এ ছবি তাঁর কেরিয়ারের মাইল স্টোন। বিচিত্র সমাপতন হলো, নেটফ্লিক্স-এর নতুন শো ‘ইয়ে কালি কালি আঁখে’, যা নিয়ে লিখতে গিয়ে এত কথা, সেও শাহরুখের আর এক হিট ছবি ‘বাজিগর’-এর অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি গানের প্রথম লাইন। আদতে ৯০-এর সিনেমার বেশকিছু প্রভাব এই সিরিজে পাবেন দর্শক। নেটফ্লিক্স-এর ‘ইয়ে কালি কালি আঁখে’ অবশ্য অবসেশড প্রেমিক নয়, পূর্বা নামের এক একতরফা প্রেমে পাগল কন্যার কাহিনী।

বিক্রান্ত পূর্বার স্কুল জীবনের বন্ধু। তারুণ্যে পৌঁছে সেই বিক্রান্তের প্রেমেই হাবুডুবু খায় পূর্বা। আদতে তার অবসেশন শুরু সেই স্কুলজীবন থেকেই। কিন্তু বিক্রান্ত তাকে ভালোবাসে না। এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারে না এলাকার বিধায়ক কন্যা পূর্বা। বাবার সৌজন্যে সবকিছু চাইলেই পাওয়া তার অভ্যাস। বাবা আখেরাজও রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহারে সিদ্ধহস্ত। সেই ক্ষমতার বল প্রয়োগ করেই আখেরাজ মেয়ের অন্ধ ভালোবাসার পক্ষে ময়দানে নেমে পড়ে। বিক্রান্তের জীবন অতিষ্ঠ করে তোলে বাবা-মেয়ে। এক ভয়ংকর পরিণতির দিকে ঠেলে দেওয়া হয় বিক্রান্তকে। বিষয়টাকে শুধু থ্রিলিং করে তোলা নয়, বেশ খানিকটা ডার্ক হিউমার-যুক্ত করেছেন ‘ইয়ে কালি কালি আঁখে’-র চিত্রনাট্যকার, পরিচালক ও লেখক টিম। এই সিরিজের ম্যাজিক এখানেই। দর্শক মনোরঞ্জনের সব মশলাই সঠিক অনুপানে হাজির প্রতি পর্বে। বলা যায়, প্রতি পর্বেই নতুন টুইস্ট।

ঈর্ষা, রাগ, ঘৃণার বিষবাষ্প পূর্বার যাবতীয় কর্মকান্ড ঘিরে থাকে। ষড়যন্ত্র, খুন, বিশ্বাসঘাতকতা–সব মিলিয়ে টানটান কাহিনীর ‘ইয়ে কালি কালি আঁখে’ এগিয়ে চলে পর্বে পর্বে। যদিও অনেকেই ৮ পর্বের এই ওয়েব সিরিজে তাপসী পন্নু অভিনীত ‘হাসিন দিলরুবা’-র ছায়া দেখতে পাচ্ছেন। তবে, সেই দেখার ভিত্তিতেও তাঁরা ‘ইয়ে কালি কালি আঁখে’-কে কাহিনী বিন্যাসের ক্ষেত্রে বেশি নম্বর দিয়েছেন। সমালোচকদের মতে ওয়েব সিরিজের রাইটিং অনেক বেশি নিখুঁত ও নিপুণ। পরিচালনাও অনেক বেশি শক্তিশালী। রহস্য ও অবসেশনের অঙ্কটা টানটান গেঁথেছে টিম ‘ইয়ে কালি কালি আঁখে’। ডার্ক হিউমার আর অ্যাকশন থ্রিলারের ব্লেন্ডিং অনেক বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ এখানে।

অসহায় ইঞ্জিনিয়ার, পূর্বার কারণে ভাগ্য বিপর্যয়ের চূড়ান্ত শিকার বিক্রান্তের ভূমিকায় তাহির রাজ ভাসিন এককথায় চমকপ্রদ ! প্রথম পর্ব থেকেই চরিত্রের টানাপোড়েনের রংগুলি অভিব্যক্ত তাঁর গভীর ও ব্যঞ্জনাময় অভিনয়ে। বিক্রান্তের স্ত্রী শিখার ভূমিকাতে শ্বেতা ত্রিপাঠিও নজর কাড়েন। শ্বেতা অবশ্য ইতিমধ্যেই একজন প্রতিষ্ঠিত ও স্বীকৃত ক্ষমতাশালী অভিনেত্রী। বিক্রান্তের প্রতি আস্থা নেই শিখার। স্বামীর পাশে দাঁড়ানো দূর, সে বরং আরও জটিল করে তোলে বিষয়টাকে। অর্থাৎ, পরাক্রমী অসৎ আখেরাজ আর প্রেম নিয়ে মানসিক বিকারগ্রস্ত পূর্বার সঙ্গে বিক্রান্তকে একাই লড়তে হবে। অন্যদিকে বিক্রান্তকে ফাঁসাবার জন্য আখেরাজ যেভাবে জাল বিছায়, অপরাধী না হয়েও আইনের বেড়াজালে আবদ্ধ সে। এই জায়গাগুলোতে তাহির-শ্বেতা অনবদ্য।

অন্যদিকে  আঁচল সিংয়ের পূর্বাকে যত নম্বরই দিন আপনি, কম পড়বে। তাঁর অভিনয় মেলোড্রামাটিক হতেই পারতো। কিন্তু সেটা হয়নি। বরং সেরিব্রাল অভিনয়ে সমৃদ্ধ বলা যায়। পূর্বার বিক্রান্তের প্রতি অবসেশন–অপূর্ণ ইচ্ছার আবেগ প্রতিহত হয়ে ফিরে আসার জ্বালা–সেখান থেকে যে কোনও মূল্যে বিক্রান্তকে পাওয়ার পাগলামি আঁচলের অভিনয়ে চূড়ান্ত বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠে। আর সৌরভ শুক্লা (আখেরাজ), ব্রিজেন্দ্র কালা, অরুনোদয় সিং–এঁদের অভিনয় নিয়ে আর নতুন কী বলা যায়। প্রত্যেকেই হিন্দি বিনোদন দুনিয়ায় অপরিহার্য। বিশেষ করে সৌরভ শুক্লা ছাড়া আখেরাজের জীবন্ত হয়ে ওঠা অসম্ভব ছিল।

নেটফ্লিক্স-এ ‘ইয়ে কালি কালি আঁখে’ স্ট্রিমিং শুরু হয়েছে গত ১৪ জানুয়ারি। ওয়েব ড্রামার ক্রিয়েটর সিদ্ধার্থ সেনগুপ্ত। গল্প অনাহাতা মেনন। সিদ্ধার্থই স্ক্রিনপ্লে লিখেছেন। ডায়ালগ বরুণ বদোলা। এখানে একটা কথা বলা দরকার, বরুণ ইন্ডাস্ট্রির অত্যন্ত ভার্সাটাইল একজন মানুষ। শক্তিশালী অভিনেতা এবং একজন প্রতিভাবান লেখক। ‘ইয়ে কালি কালি আঁখে’-র ডায়ালগ যে এই সিরিজের অন্যতম সেরা প্রাপ্তি, তা স্বীকার করতেই হবে। ওঁর বোধ, সৃজনশীলতা ছাড়া ডার্ক কমেডি আর থ্রিলার এমন নিপুণভাবে মিলতে পারতো না। ইতিমধ্যেই দর্শকধন্য ‘ইয়ে কালি কালি আঁখে’। তারা দ্বিতীয় সিজনের অপেক্ষা এখন থেকে শুরু করে দিয়েছেন।