বিতর্কই প্রচারে রাখছে ‘পাঠান’-কে
নতুন ছবির মুক্তি হোক বা নির্মাণ। পোস্টার, ট্রেলার রিলিজ। ছবি হিট এবং ফ্লপ। তারকাদের জীবনের ওঠাপড়া। বাংলা ও হিন্দি মিলিয়ে সিনেমার দুনিয়ায় প্রতি মুহূর্তে ঘটে চলেছে নানা বৈচিত্রপূর্ণ ঘটনা। সেইসবই এই বিভাগে, প্রতি সপ্তাহে। অপপ্রচারও একরকম প্রচার–বলিউড বাদশা ভালোই জানেন সেটা। প্রচার, বিতর্ক, আলোচনার মধ্যেই আগামী ২৫ জানুয়ারি মুক্তি পাচ্ছে ‘পাঠান’। লিখেছেন অজন্তা সিনহা।
বেশরম রঙ নিয়ে লোকজনের সমস্যাটা কোথায় ? দীপিকা গেরুয়া রঙের বিকিনি পরেছেন বলে ? মজার ব্যাপার হলো, শাহরুখের ছবিতে ‘গেরুয়া’ রঙটি ঘুরেফিরেই আসে। শাহরুখের লিপে বাম্পার হিট অরিজিতের গাওয়া ‘রঙ দে তু মোহে গেরুয়া’…! ‘দিলওয়ালে’ ছবিতে গানটিকে অবশ্য নির্ভেজাল প্রেমের চিত্রকল্প হিসেবেই দেখানো হয়েছে। দুই বিরহী প্রাণের মিলন ঘটছে প্রীতমের দুর্দান্ত সুরে। তেমনই মরমি কথায় সম্পৃক্ত অমিতাভ ভট্টাচার্যের রচনা।
ভারতীয় সংস্কৃতিতে গেরুয়া হলো ত্যাগ ও সাহসিকতার প্রতীক। সে তো সাদাও সত্য আর শান্তির প্রতীক। তো, লোকজন কী সবসময় এসব প্রতীক মেনে কাজ করে ? গেরুয়া পরা সন্ন্যাসীদের (!!) কুকীর্তি বহুবার সংবাদ মাধ্যমে উঠে এসেছে। রাজনৈতিক নেতারা মুখ্যত সাদা পোশাকই বেশি পরেন এদেশে। কজন আর সত্য বা শান্তির পথে চলেন ? আসল কথা হলো ভাবনার রঙ ! সেখানে আপনার অবস্থান কোথায়, গুরুত্বপূর্ণ সেটাই। ‘পাঠান’-এর ‘বেশরম রঙ’-এ নিছক কস্টিউম ডিজাইনারের সৃজন ভাবনা ছাড়া যে আর কোনও রঙই নেই, তা ওই বিতর্ক সৃষ্টিকারীরাও জানে। জেনেও বাজারে অ্যান্টি ‘পাঠান’ থুড়ি অ্যান্টি শাহরুখ হাওয়া বইয়ে দিতে যেসব পদক্ষেপ তারা নিচ্ছে, সবই পরোক্ষে ছবির প্রচারেই কাজে লাগছে।


শাহরুখ খান, দীপিকা পাডুকোন, জন আব্রাহাম অভিনীত ‘পাঠান’-এর ‘বেশরম রঙ’ মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই বিতর্ক তুঙ্গে। অশ্লীলতার অভিযোগ উঠেছে দীপিকার গেরুয়া বিকিনি সহ কিছু দৃশ্যের বিরুদ্ধে। শোনা যাচ্ছে, ছবি এবং গানকে ঘিরে ওঠা বিতর্কের কথা মাথায় রেখেই নাকি এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রযোজনা সংস্থা যশরাজ ফিল্মস। খবরে প্রকাশ, তারা ‘পাঠান’ ছবির দুটি আলাদা আলাদা সংস্করণ প্রকাশ করবে। পার্থক্য ঘটানো হবে রাজ্য ভিত্তিতে। যেসব রাজ্যে ‘বেশরম রঙ’ নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন চলছে, সেখানে ছবিটির এডিটেড ভার্সান মুক্তি পাবে। অর্থাৎ সেখানে ছবিতে ‘বেশরম রঙ’ থাকবে না।
দেশ জুড়ে বলিউড, বিশেষত, শাহরুখ-সলমন প্রমুখকে ঘিরে যে বয়কট সংস্কৃতির প্রসার ঘটেছে, সেখানে দাঁড়িয়ে ‘বেশরম রঙ’ যে নিছক একটা অজুহাত, সেকথা বলে দেবার দরকার পড়ে না। প্রসঙ্গ যদি অশ্লীলতার হয়, তার সঙ্গে গেরুয়া রঙের কী সম্পর্ক ? লাল-সাদা-কালো বা অন্য যে কোনও রঙের বিকিনি বা স্বল্পবাস পরে নায়িকাদের পর্দায় উন্মুক্ত হওয়া কী বলিউডে আজই ঘটছে ? এই ধারাও নতুন নয়। বিতর্কও নতুন নয়। কিন্তু কিছুই কী বন্ধ হয়েছে ? আর কেনই বা বন্ধ হবে ? দিনের শেষে পয়সার ঝনঝনানি কানে শোনাটাই আসল। আর সেই পয়সা দর্শকই তুলে দেন প্রযোজকের ঘরে। কারা বয়কট করেন, আর কারা পয়সা খরচ করে হলে গিয়ে এক একটি ছবিকে শতকোটির ঘর পার করে দেয়, সেই হিসেব কে রাখে ?

এই কারণেই নিজেকে দিব্যি টেনশন মুক্ত রেখেছেন শাহরুখ। এমনি এমনি তিনি বাদশা খেতাব অর্জন করেননি। ‘পাঠান’-কে ঘিরে শুরু থেকেই ‘ট্রোল্ড’ তিনি। আর শুরু থেকেই ‘কুল’ও। কেন না, ব্যকরণটা জানেন তিনি। হিসেবটাও জানেন। যত বদনাম, যত বিতর্ক, তত ছবি হিট–এসব দেখেশুনে, অভিজ্ঞতা পকেটে পুরে, বাড়ি ফিরে নিশ্চিন্তে নিদ্রা যাচ্ছেন তিনি বহুবছর। ‘পাঠান ডিজাস্টার অলরেডি, রিটায়ারমেন্ট লেলো’–ইত্যকার ট্রোলে এতটুকু বিচলিত নন তিনি। ‘হোয়াট ইজ দ্য পারপাস অফ ওয়াচিং পাঠান মুভি’–এহেন ট্রোলের জবাবে তিনি অবলীলায় যেটা বলেন, সেটা এইরকম–”ওহ, এই মানুষগুলো সত্যি খুব গভীর চিন্তাভাবনা করে ! আরে জীবনেরই বা উদ্দেশ্য (purpose) কী ? কোনও কিছুরই কী কোনও উদ্দেশ্য আছে ? (What is the purpose of anything..?) দুঃখিত, আমি অত গভীর চিন্তাভাবনার লোক নই!”
একদিকে এইসব চলছে। অন্যদিকে ভক্তরা অধীর অপেক্ষায়। তাঁরা সোস্যাল মিডিয়ায় নানাভাবে ‘পাঠান’ প্রসঙ্গে নিজেদের আগ্রহ, উৎসাহ প্রদর্শন করছেন। ছবির অফিসিয়াল ট্রেলার লঞ্চের আগে, তাঁরাই এর ভিডিও ক্লিপিংস যোগাড় করে ভাইরাল করে দিচ্ছেন বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়ায়। কাউন্টডাউন, পোস্টার, ফ্যানকুলের তৈরি ভিডিও বা কোনও সূত্রে সংগৃহীত ‘পাঠান’ সংক্রান্ত বিষয় এভাবেই ছড়িয়ে পড়েছে ইন্টারনেটে ! অর্থাৎ, এত বিরোধিতা সত্বেও পরোক্ষে ছবির প্রচার হয়েই চলেছে। প্রসঙ্গত, ছবির পোস্টার মুক্তির সময়েই ‘পাঠান’-এর ট্রেলার লঞ্চের তারিখ ঘোষণা করা হয়। সেই অনুসারেই গত ১০ জানুয়ারি মুক্তি পায় ‘পাঠান’-এর ট্রেলার।

সংবাদ মাধ্যম সূত্রে সকলেই জানেন ‘পাঠান’ মুক্তি পাচ্ছে আগামী ২৫ জানুয়ারি। এবার জেনে নিন তার এডভ্যান্স বক্স অফিস আপডেট। ভারতীয় বাজারে যাবতীয় অপপ্রচার ও বিতর্ক চলা এবং ছবির অনিশ্চিত বাণিজ্যিক ভবিষ্যতের গণনা ইত্যাদির মধ্যেই আন্তর্জাতিক পটভূমিতে কামাল করে ফেলেছে এই ছবি। জার্মানির থিয়েটার হলগুলিতে ইতিমধ্যেই এডভ্যান্স টিকিট বিক্রির রেকর্ড ভেঙেছে ‘পাঠান’। অন্যান্য দেশেও বাণিজ্যিকভাবে উজ্জ্বল এ ছবির ভবিষ্যত, এমনই খবর। বাজার বিশেষজ্ঞদের আলোচনায় ২০২৩-এর সফলতম ছবিগুলির মধ্যে বারবার উঠে আসছে ‘পাঠান’-এর নাম।
২০১৮-তে সুপার ফ্লপ ‘জিরো’ মুক্তির পর ধুমধাম করে ২০২৩-এ পুনরাগমন বাদশার। এবারটা ফসকালে বিপদ আছে, জানেন শাহরুখ নিজেও। দীপিকা তাঁর লাকি চার্ম। যশরাজ ফিল্মসের ব্যানারে শাহরুখের বেশিরভাগ ছবিই হিট। পরিচালক সিদ্ধার্থ আনন্দ হিট ফ্লপ মিলিয়ে বলিউডে নিজের কেরিয়ার গড়েছেন। তিনি একজন স্ক্রিনপ্লে রাইটারও বটে ! শ্রীধর রাঘবন ও আব্বাস টায়ারওয়ালাকে নিয়ে ‘পাঠান-এর গল্পও লিখেছেন তিনি। শাহরুখকে নিয়ে এই প্রথম কাজ সিদ্ধার্থর। বলিউড বাদশার কামব্যাক কতটা ধামাকাদার করেছেন তিনি, সে তো এ মাসের শেষেই পরিষ্কার হয়ে যাবে। হিন্দি ছাড়াও তামিল ও তেলেগু ভাষায় মুক্তি পাচ্ছে এ ছবি। শাহরুখ ভক্তদের বিরাট আশা আদ্যন্ত একশন ছবি ‘পাঠান’-কে ঘিরে। সেক্ষেত্রে পর্দায় কে কতটা বেশরম হয়েছেন, সবাই ভুলে যাবে। আসলে যেটা চাই, সেটা তো সাফল্যের রঙ !