মেঘ না ময়ূরী, শেষ পর্যন্ত কে থাকবে নীলের জীবনে ?
আকারে ছোট হলেও বিনোদন ক্ষেত্রে টেলিভিশনের গুরুত্ব আজ অসীম। মেগা থেকে রিয়ালিটি, গেম শো থেকে ম্যাগাজিন–টিভি শোয়ের চাহিদা ছিল, আছে, থাকবে। এই বিভাগে তারই খবর প্রতি সপ্তাহে। আগামী দিনে মেঘের ভাগ্যে কী আছে, জানতে উদগ্রীব বাংলা টিভির দর্শক। লিখেছেন মৃণালিনী ঠাকুর।
শুরু থেকেই কিছুটা হলেও ব্যতিক্রমী পথে হাঁটার চেষ্টা করেছে মেঘ, ময়ূরী আর সৌরনীল অর্থাৎ নীলের ত্রিকোণ প্রেমের কাহিনি। মানুষের মন অনেক ক্ষেত্রেই নিজের বশে থাকে না। ময়ূরীর অবস্থা হলো ঠিক সেইরকম। মেঘকে পছন্দ করে তার কলেজের অধ্যাপক নীল। মেঘের জন্মদিনে তাকে নীল উইশ করতে এলে, প্রথম দেখাতেই তার প্রেমে পড়ে যায় ময়ূরী। সেদিন থেকেই দুই বোন, তাদের ও নীলের পরিবারের লোকজনের সম্পর্কের রসায়ন টালমাটাল হয়ে দাঁড়ায়।
জি বাংলার জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘ইচ্ছে পুতুল’। বলতে দ্বিধা নেই, কাহিনির গুরুত্বে মেঘ ও ময়ূরী সমান হলেও নেগেটিভ চরিত্রের ময়ূরীকেই মনে হচ্ছে মেগার গতি-প্রকৃতির নিয়ন্ত্রক। সবটাই অবশ্য ধারাবাহিক লেখকের কলম উৎসারিত। একথা অনস্বীকার্য মেঘ তার নরম, সুললিত, রুচিসম্পন্ন স্বভাবের গুণে আমাদের হৃদয়ের খুব কাছের হয়ে উঠেছে। তার প্রতি হয়ে চলা অন্যায় ও অবিচারের কারণে দর্শক তার প্রতি সহমর্মী। মেঘের চরিত্রে প্রতি পর্বে তিতিক্ষা রায়ের সংযত ও সুনিয়ন্ত্রিত অভিনয় মন ছুঁয়ে যায়। কিন্তু, এরই পাশাপাশি দর্শক ময়ূরীর দিক থেকেও কিছুতেই চোখ সরাতে পারছে না। এরজন্য নিঃসন্দেহে প্রশংসা পাবেন অভিনেত্রী শ্বেতা মিশ্র, সে যতই সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লোকজনের ট্রোলের শিকার হন না কেন ? ময়ূরীর চরিত্রের নেগেটিভ দিকগুলি জীবন্ত হয়ে ওঠে শ্বেতার অভিনয়ে।
দর্শক ইতিমধ্যেই জেনে গেছেন, রক্তের অসুখে ভুগছে ময়ূরী। দিদি তার প্রতি যত অন্যায়ই করুক, মেঘ তাঁর রক্ত দিয়ে দিদি ময়ূরীর জীবনকে বাঁচিয়ে রাখে। এর ফলে মাঝে মাঝেই সে নিজেও অসুস্থ হয়ে পড়ে। যদিও, শরীর খারাপের কথা গোপন রাখারই চেষ্টা করে যায় মেঘ। কার্যকারণে এই তথ্য জানার পরই আপ্লুত নীল মেঘের কথায় ময়ূরীকে বিয়ে করতে রাজি হলেও, বিয়ের আসরে সে মেঘের সিঁথিতে সিঁদুর পরায়। ছোট বোনের প্রতি শুরু থেকেই কিছুটা ঈর্ষাকাতর ছিল ময়ূরী। এই ঘটনা সেই আগুনে ঘৃতাহুতি দেয়। শুরু হয় নীলকে নিয়ে তার মানসিক টানাপোড়েন।
এছাড়াও বাড়িতে মায়ের যুক্তিহীন প্রশ্রয়। মেঘের প্রতি তার মায়ের বিরাগ ও বিতৃষ্ণা এবং ময়ূরীর প্রতি পক্ষপাতিত্ব সবটাই ইন্ধন যোগায় ময়ূরীর একের পর এক ষড়যন্ত্রে। অসহায় মেঘের পাশে মাত্র দুটি মানুষ। এক মেঘ-ময়ূরীর বাবা, আর একজন নীলের ঠাকুমা। নীলের বাবা, ভাই কিছুটা দ্বিধাবিভক্ত হলেও নীলের মা প্রবলভাবে ময়ূরীর পক্ষে। মেঘ তার একেবারেই না পসন্দ। আর নীল ? সে কী নিজেই জানে, কী চায় তার মন ? একজন শিরদাঁড়াবিহীন মানুষ নীল। অধ্যাপক হয়েও উদারতা নেই তার চরিত্রে। সবচেয়ে বড় সমস্যা, মনের মধ্যে এক অহেতুক নিরাপত্তা বোধের অভাব কুরে কুরে খায় তাকে। আর এরই সুযোগ নিয়ে চলে ময়ূরী। নীলের মানসিক অন্তর্দ্বন্দ্বের জায়গাটি দারুণভাবে প্রতিভাত মৈনাক ব্যানার্জির অভিনয়ে।
মেঘের সঙ্গে নীলের ডিভোর্স একসময় অপরিহার্য হয়ে পড়ে। তবু জটিলতা কমে না। নীলের অন্তর্দ্বন্দ্বই এর কারণ। সে যেন ছেড়েও ছাড়তে পারে না মেঘকে। এই বিষয়টা বোঝার পর আবার ময়ূরীর মধ্যে জন্ম নেয় নিরাপত্তা বোধহীনতা। শুরু হয় মেঘের বিরুদ্ধে তার নতুন চক্রান্ত। ধারাবাহিকে ইতিমধ্যেই আমরা দেখে ফেলেছি একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিমুখ বদল। মেঘের গায়িকা হবার স্বপ্ন ক্রমশ অঙ্কুর থেকে চারাগাছ হয়ে, বেড়ে ওঠার পথে। এই পর্যায়ে তার পাশে আমরা পাই গায়ক বিষ্ণুকে। বিষ্ণু মেঘকে ভালোবাসলেও নিজের মনের অনুভূতি অব্যক্তই রেখে দেয়। মেঘ যে আজও নীলকেই ভালোবাসে। এই বিষ্ণুকে নিয়েই নতুনভাবে মেঘের বিরুদ্ধে হাতিয়ার শানায় ময়ূরী।
আমরা দেখলাম মেঘের অনেক চেষ্টা সত্বেও নীলের বোন গিনির সঙ্গে রূপের বিয়েটা হয়েই যায়। লম্পট, অসৎ চরিত্রের রূপের স্বভাবের পরিচয় পাওয়ার পর কী করবে গিনি? একটু একটু আভাস তো ইতিমধ্যেই পেয়েছে সে। অন্যদিকে, নীল কী প্রতিশ্রুতি মতো ময়ূরীকে সত্যিই বিয়ে করবে ? আর মেঘের গায়িকা হওয়ার স্বপ্ন আদৌ সফল হবে কী ? নাকি ময়ূরীর বিষ-নিঃশ্বাস সেখানেও তাড়া করবে তাকে ? মেঘের বাবা রক্ষা করতে পারবেন ময়ূরীর যাবতীয় কুচক্র ও নীলের সন্দেহবাতিক থেকে তাঁর আদরের মেঘকে, যাতে সে ভবিষ্যতে শান্তিতে নিজের গান নিয়ে থাকতে পারে? এইসব প্রশ্নের জবাব রয়েছে ‘ইচ্ছে পুতুল’এর আগামী পর্বগুলিতে। দেখছেন সোম থেকে শুক্র, রাত ১০টায়, জি বাংলায় ।