Monday, February 3, 2025
কৃষ্টি-Culture

স্টপ অ্যাসিড অ্যাটাকস

“কয়েকবছর আগে আমার পরিবারে বধূ হয়ে আসে সঙ্গীতা। ও একজন অ্যাসিড অ্যাটাক সারভাইভার। সঙ্গীতার সঙ্গে কথা হবার পর থেকেই আমার মনে হয়েছিল, যদি ওদের কথা মানুষকে শোনানো যায় ! ওদের জন্য যদি কিছু করা যায়!” বলছিলেন পরমা দাশগুপ্ত। প্রসঙ্গত, পরমা বহু বছর রোটারির সঙ্গে যুক্ত। এ বছর তিনি রোটারি ক্লাব অফ সাউথ সারকেলের প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত হয়েছেন। অ্যাসিড অ্যাটাক সারভাইভারদের নিয়ে কিছু করার ইচ্ছে থাকলেও অতিমারী পরিস্থিতির কারণে তখনকার মতো বিষয়টা ভাবনার স্তরেই থেকে যায় তাঁর। অতিমারী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর অ্যাসিড অ্যাটাক সারভাইভারদের নিয়ে নিজের ভাবনা ক্লাব মেম্বারদের জানান পরমা। সবাই সমর্থন জানান এবং ঠিক হয় পুজোর পর এই সংক্রান্ত বিষয়ে একটি আলোচনাচক্র আয়োজন করা হবে। শিরোনাম থাকবে–Awareness cum empowerment program for acid attack survivors.

“সঙ্গীতার মাধ্যমেই বেশ কিছু মেয়ের সঙ্গে আমি  আলাপ, তারপর দেখা করি। তাঁরাও আসবেন বলে, কথা দেন। আমরা সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে কিছু বিশিষ্ট মানুষের সঙ্গেও যোগাযোগ করি, আমাদের অনুষ্ঠানে যোগ দেবার জন্য। রাজি হন তাঁরাও। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল যত বেশি রোটারিয়ান ওদের কথা শুনতে পাবে তত ভালো”–আবেগাপ্লুত পরমা জানান। পরিকল্পনা মতোই এরপর শুরু হয় বিভিন্ন রোটারি ক্লাবের  রোটারিয়ানদের আমন্ত্রণ করা। তারপর আসে সেই দিনটি। গত ১১ অক্টোবর রোটারি সদনে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্টপ অ্যাসিড অ্যাটাকস’ শিরোনামে আলোচনা সভা। আয়োজক রোটারি ক্লাব অফ ক্যালকাটা সাউথ সার্কেল। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লীনা গঙ্গোপাধ্যায় (চেয়ার পারসন ওয়েস্ট বেঙ্গল কমিশন ফর উওমেন)। ছিলেন রোটারিয়ান অজয় কুমার ল (ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর)। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিজ্ঞান গবেষক ডঃ তানিয়া দাস, যশোধরা রায়চৌধুরী (প্রিন্সিপাল অ্যাকাউন্টেন্ট জেনারেল, গভঃ অফ ইন্ডিয়া), ডঃ মৌ সেন (জয়েন্ট ডিরেক্টর, MSME & T, গভঃ অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল), মিঃ জয়ন্ত নারায়ণ চ্যাটার্জি (অ্যাডভোকেট, হাইকোর্ট), কাকলি ঘোষ কুন্ডু (ইন্সপেক্টর ইন চার্জ, উইমেন পুলিশ স্টেশন বারুইপুর)। 

Img 20221019 Wa0004
স্টপ অ্যাসিড অ্যাটাকস 3

এই সভায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা আট জন অ্যাসিড অ্যাটাক সারভাইভারের। পরমা জানান, “এঁদের আনবার ব্যাপারে প্রভূত সাহায্য করেন বারুইপুর মহিলা থানার আই সি। সাহায্য করেন অপরাজিতা গাঙ্গুলি নামের আর এক দিদি, যিনি অ্যাসিড অ্যাটাক সারভাইভারদের সংগঠিত করে, এঁদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করছেন। এই আলোচনাসভায় প্রত্যেকে নিজের কথা তুলে ধরেন। প্রত্যেকের পৃথক কাহিনি। শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল, ওঁদের পৃথক পৃথক দুঃখ, কষ্ট, অপমান, যুদ্ধ কোথাও গিয়ে যেন এক হয়ে গেছে।”

সভায় বিশিষ্ট অতিথিরা তাদের সুচিন্তিত মতামত তুলে ধরেন। আক্ষেপের ফাঁকে ফাঁকেই আশার কিরণও দেখা দেয়। অনুষ্ঠানে পৌরোহিত্য করেন অজয় কুমার ল। তিনি এবং বিভিন্ন সিনিয়র রোটারিয়ান কথা দেন, আগামী দিনে রোটারি অ্যাসিড অ্যাটাক সারভাইভারদের পাশে থাকবে। “এটা ঠিক, সমস্যা অনেক। যখন অ্যাসিড অ্যাটাক সারভাইভারদের কেউ কেউ বলেন, যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও, ওঁদের অ্যাসিড পোড়া চেহারার জন্য কেউ চাকরি দিতে চায় না, তখন নিজেদের ভাবনার গতিও থেমে যেতে চায়। এক মা বলেন, তাঁর বাচ্চা তাঁকে দেখে ভয় পায়, কাছে আসতে চায় না। আমরা মাথা নিচু করে ওঁদের কথা শুনি। যেন চাবুকের মতো এক একটা কথা ! তবু, আমরা ক্লাব থেকে ওদের sustainable livelyhood-এর জন্য চিন্তা-ভাবনা শুরু করেছি”–জানালেন পরমা। আমাদের প্রত্যাশা, এই অনন্য উদ্যোগ ফলপ্রসূ হবে। পরমাদের সংবেদনশীল ভাবনা অ্যাসিড অ্যাটাক সারভাইভারদের জীবনে নতুন আশার আলো নিয়ে আসবে।