অনবদ্য হুমা
লিখেছেন মন্দিরা পান্ডা
শিক্ষক-ছাত্রের সম্পর্ক নিয়ে সিনেমা এর আগেও তৈরি হয়েছে। তবু এমন জটিল মনস্তাত্বিক প্রেক্ষিতে নয়। যদিও আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে বিষয়টির বাস্তবতা অস্বীকার করা যায় না। জ্বলন্ত একটি বিষয়কে এভাবেই, একেবারে কঠিন কাটাছেঁড়ার জায়গা থেকেই ওটিটি সিরিজে নিয়ে এসেছেন পরিচালক রোহন সিপ্পি। বলিউডে সিপ্পি পরিবারের রাজত্ব বহু পুরোনো। প্রখ্যাত জি পি সিপ্পির পর তাঁর ছেলে রমেশ সিপ্পি হয়ে ব্যাটন এসেছে ছেলে রোহনের হাতে। ওয়েব সিরিজ ‘মিথ্যা’ দেখার পর আপনাকে মেনে নিতেই হবে রোহন উত্তরাধিকার সূত্রেই পেয়েছেন তাঁর কুশলতা। ২০১৯-এ প্রদর্শিত ব্রিটিশ শো ‘চিট’-এর ছায়ায় এই সিরিজ হলেও রোহন এর যথাযথ ভারতীয় রূপটি তুলে ধরেছেন। কোথাও কোনও অসংগতি তৈরি হয়নি, এতটাই নিখুঁত এর চিত্রনাট্য।
অন্যদিকে এই সিরিজে রোহন সমসাময়িক বিষয়কে ধরেছেন অত্যন্ত নিপুণ হাতে। শুধু তাই নয়, অভিনেতা নির্বাচনেও যে বিবেচক তিনি, সেটা উপলব্ধ হয় হুমা কুরেশি, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, সমীর সোনি, রজিত কাপুর, ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত, বিশাখা থাপা, কে সি শঙ্কর প্রমুখ এবং অবন্তিকা দাসানির অভিনয়ে। দার্জিলিংয়ের এক কলেজ ক্যাম্পাসে পল্লবিত ‘মিথ্যা’-র কাহিনী। গল্প শুরু এইভাবে–হিন্দি সাহিত্যের অধ্যাপক ও পন্ডিত জুহি অধিকার ছাত্রী রিয়া রাজগুরুকে ‘চিটার’ অপবাদ দেয়। অভিযোগ রিয়া জুহির লেখা প্রবন্ধ চুরি করে নিজের বলে চালিয়েছে। রিয়া কলেজের অন্যতম এক ট্রাস্টির মেয়ে। স্বভাবতই সে কেন ছেড়ে দেবে ? প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য চরম বিষাক্ত ও হিংস্র এক পথ বেছে নেয় সে।
জুহি রক্ষণশীল, কিছুটা কট্টরপন্থী, আদর্শবাদী এবং পারিবারিক ঐতিহ্যে বিশ্বাসী। বাবা বিখ্যাত ইংরেজির অধ্যাপক–সেই সূত্রেই জুহি মেনে চলার চেষ্টা করে রীতি-রেওয়াজ ইত্যাদি। রিয়া শর্টকাটে বিশ্বাসী। সে যেনতেন প্রকারেন কাজ হাসিল করতে চায়। এদিকে আবার জুহির দাম্পত্য সম্পর্কও এক নড়বড়ে অবস্থানে। স্বামী নীলের সঙ্গে বোঝাবুঝি নেই তার। জুহি বুদ্ধিমতী, সে অনেক কিছু বুঝেও রুচির বাইরে যেতে অপারগ। রিয়া চতুর। লোকজনকে পটিয়ে নিজের দিকে টেনে নিতে সিদ্ধহস্ত। চিন্তাভাবনায় দ্বিধাহীন রিয়া নীলকেও সিডিউস করতে ছাড়ে না। জুহি আর রিয়ার মধ্যেকার ধূসর টানাপোড়েন ঘিরে আবর্তিত হয় আরও নানা চরিত্র। এই চরিত্রগুলিও সাদা-কালো নয়। সব মিলিয়ে রহস্য-রোমাঞ্চে জমে ওঠে পর্দার নাটক, জিফাইভে, পর্বে পর্বে। গতমাসেই শুরু হয়েছে এই সিরিজ। আর শুরু থেকেই টানটান উত্তেজনায় বেঁধে ফেলেছে দর্শককে।
হুমা কুরেশি (জুহি) এই মুহূর্তে বলিউডের ক্ষমতাশালী অভিনেতাদের অন্যতম। বেশ কিছু ছবিতে তাঁর নজরকাড়া অভিনয় দর্শকের স্মৃতিতে আছে। ওয়েব সিরিজে তাঁর অভিষেক ২০১৯-এর বহু আলোচিত নেটফ্লিক্স সিরিজ ‘লায়লা’-র মধ্য দিয়ে। নাম ভূমিকায় নিজের পূর্ণ ক্ষমতা দেখিয়েছেন হুমা এখানে। ‘মিথ্যা’-য় আরও ইনটেন্স এবং পরিণত তিনি। জুহির ভিতরের টানাপোড়েন নিপুণ এঁকেছেন অভিব্যক্তিতে। এই সিরিজেও নিজের অপরিহার্যতা প্রমাণ করেছেন তিনি। পরমব্রত (নীল) এবং বাকিরা মাত্রাবোধ বজায় রেখে সহজ ও স্বাভাবিক। অভিজ্ঞ রজিত কাপুর বেশ কিছুটা বাড়তি প্রাপ্তি যোগ করেছেন সিরিজে। আর চমকে দেবার মতো ভালো হলেন অবন্তিকা (রিয়া)।
থ্রিলারের ক্ষেত্রে ঠিক যেমন ডিজাইন দেখতে অভ্যস্ত এখন আমরা–দৃশ্য নির্মাণ থেকে ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর, আলোর সীমিত ব্যবহার, রিয়েল লাইফ লোকেশন–সবই রোহন সামলেছেন পেশাদারী দক্ষতায়। অন্যদিকে লেখায় টানটান কাঠামো তৈরি করেছেন পূর্বা নরেশ। মিউজিক রিপুল শর্মা, জর্জ জোসেফ। নির্মাণ গ্যাবি হাল। আপাতত ৬টি পর্বে প্রথম সিজন দেখানো হয়েছে। বলা বাহুল্য, এখন থেকেই পরের সিজনের অপেক্ষায় ওটিটি দর্শক।