অন্দরের পর্দায় প্রেম ও প্যাশনের ভরপুর বিনোদন
আকারে ছোট হলেও বিনোদন ক্ষেত্রে টেলিভিশনের গুরুত্ব আজ অসীম। মেগা থেকে রিয়ালিটি, গেম শো থেকে ম্যাগাজিন–টিভি শোয়ের চাহিদা ছিল, আছে, থাকবে। এই বিভাগে তারই খবর প্রতি সপ্তাহে। একতা কাপুরের ‘বরসাতে–মৌসম পেয়ার কা’ নিয়ে লিখেছেন অজন্তা সিনহা।
হিন্দি ধারাবাহিক নির্মাতারা সামান্য হলেও পরিবারতন্ত্রের বাইরে বের হয়ে কিছুটা অন্যধারার গল্প বলার চেষ্টা করছে, এটা সুলক্ষণ। এমনই অন্যধারার এক প্রেমকাহিনি দেখান হচ্ছে সোনি এন্টারটেনমেন্ট টেলিভিশনে। দর্শকমহলে ইতিমধ্যেই সাড়া জাগিয়েছে ‘বরসাতে–মৌসম পেয়ার কা’, টানটান গল্পের গুণে। প্রেম দানা বাঁধতে পারে যে কোনও পরিবেশ পরিস্থিতিতেই। এক্ষেত্রেও আমরা দেখি এক মিডিয়া হাউসের নিউজরুম–সেখানকারই দুটি মানুষের মধ্যে পল্লবিত হচ্ছে ভালোবাসা।
রিয়াংশ ও অনুরাধা–দুজনে একে অপরের প্রতি তীব্র আকর্ষণ অনুভব করে। আকর্ষণ থেকে অবধারিত ভালোবাসা। যদিও সেই ভালোবাসার গতি-প্রকৃতি বা পরিণতি কোনওটাই সরলপথে এগোতে পারে না। এর জন্য মুখ্যত দায়ী দুজনের স্বভাব-চরিত্র। দুজনেই নিজেদের ভাবনা ও কাজকর্মে একরোখা ও জেদি। দুজনেই তারুণ্যের জোশে টগবগে ও আপন সিদ্ধান্তে অটল ! এত কিছু সত্বেও প্রেম বাঁধ মানে না। কে যে কার প্রতি বেশি অনুরক্ত হয়ে পড়ে, তা অবশ্য কয়েকটি পর্ব এগোবার পরেই দর্শক বুঝতে পারে।
মোটামুটি যেটা ঘটে, এক মন্দিরে বিয়ে করছে পূজা ও বিক্রম। পূজা অনুরাধার ও বিক্রম রিয়াংশের বেস্ট ফ্রেন্ড। বিয়ের পর্ব চলছে। সুন্দর সাজে সজ্জিত আরাধনাকে দেখে চোখের পলক পড়ে না রিয়াংশের। সে মুগ্ধতার আবেশে ডুব দেয়। রিয়াংশ এটাও জানতে পারে, অনুরাধার জীবনে এই মুহূর্তে অন্য কেউ নেই। এটা জেনে আর একটু উৎসাহী হয়ে পড়ে রিয়াংশ। ঠিক তখনই আরাধনা ও পূজার খোঁজে, পূজার বাবা মন্দিরে পৌঁছন এবং ঘটনাক্রম নাটকীয় মোড় নেয়।
আরাধনা পূজাকে নিয়ে গোপনে পালিয়ে এসে বিক্রমের সঙ্গে তার বিয়েতে সাহায্য করেছে, এটা জানার পর বেজায় চটে যান পূজার মা-বাবা। তাঁরা রীতিমতো তীব্র ভাষায় আক্রমণ করে বসেন তাকে। অনুরাধার মূল্যবোধের শিক্ষা হয়নি, তার মা-বাবা তাকে সঠিকভাবে পালন করেননি–এই জাতীয় অভিযোগের তির ছুটে আসে অনুরাধার প্রতি। এসব যখন ঘটছে, রিয়াংশ তখনও অনুরাধার প্রতি প্রেমের ঘোরে। বলা যায়, বিপুলভাবে প্রেমে পতন ঘটেছে তার।
অন্যদিকে অনুরাধাও প্রেমে পড়ে এই হ্যান্ডসাম তরুণের। তবে, রিয়াংশ যে বড্ড মুডি! তার প্রেমের প্রকাশ কখনও কখনও খুবই আবেগহীন। একগুঁয়ে স্বভাবের রিয়াংশ অপরের মনের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া বোঝে না অধিকাংশ সময়েই। সে প্রচন্ড উচ্চাকাঙ্খীও বটে ! অনুরাধার পক্ষে এই সম্পর্ক ক্রমশ এক লড়াইয়ের আকার ধারণ করে। এরই পাশাপাশি রয়েছে তাদের পেশার প্রতি নিষ্ঠা, কাজের কঠিনতা ও নিত্য নতুন চ্যালেঞ্জ। আছে পারিবারিক নানা জটিলতা। কাহিনিতে প্রচুর টুইস্ট নিয়ে পর্বে পর্বে এগিয়ে চলেছে ‘বরসাতে–মৌসম পেয়ার কা’।
রিয়াংশের ভূমিকায় কুশল টেন্ডন। হিন্দি টিভির দারুণ জনপ্রিয় এই তারকার অভিনয়ে রিয়াংশ এককথায় খুবই মানানসই হয়ে উঠেছে। দর্শক তাঁর ইনটেন্স অভিনয় দেখেছেন ‘বেহদ’-এ, জেনিফার উইংগেটের বিপরীতে। এখানেও সেই রকমই প্যাশনেট তিনি অনুরাধার ভূমিকায় শিবাঙ্গী যোশীর সঙ্গে। কুশলের ব্যতিক্রমী অভিনয়ের ঝলক আমরা দেখি একতা কাপুরের ‘বেকাবী’ ধারাবাহিকেও। শিবাঙ্গীর কেরিয়ার শুরু ‘খেলতে হ্যায় জিন্দেগি আঁখ মিচোলি’ ধারাবাহিকে। এরপর ‘ইয়ে রিস্তা কেয়া কহলতা হ্যায়’–এই ধারাবাহিক শিভাঙ্গীর কেরিয়ারগ্রাফকে অনেকটাই উঁচুতে তুলে দেয়। পুরস্কার, সাফল্য সবই ঝুলিতে পুরে নেন তিনি। এরপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি শিবাঙ্গীকে। ‘বেইন্তেহা’ বা ‘বেগুসরাই’ ধারাবাহিকেও এই মেয়ের তুখোড় অভিনয়ের ঝলক দেখেছে দর্শক।
ওঁরা ছাড়াও ‘বরসাতে–মৌসম পেয়ার কা’-য় অভিনয় করেছেন আরশি ভারতী শান্ডিল্য, সমীর মালহোত্রা, সাই রানাডে, প্রীত কাউর নায়েক, মিশিকা মিশ্র প্রমুখ। বালাজি টেলিফিল্মস-এর ব্যানারে এই ধারাবাহিক প্রযোজনা করেছেন একতা কাপুর ও শোভা কাপুর। পরিচালক আতিফ খান। ভরপুর নাটকীয় প্রেমের এই কাহিনি লিখেছেন জয়া মিশ্র। চিত্রনাট্য রিতু ভাটিয়া। সিনেমাটোগ্রাফার নিধিন ভালান্দে। টিভি দর্শক জানেন, একতা কাপুরের প্রযোজনা মানেই গল্পের গতিপ্রকৃতি তাঁরই নিয়ন্ত্রণে। দর্শকের চাহিদা চূড়ান্ত পর্যায়ে বোঝেন বলেই আজ তিনি টেলিকুইন। বলা বাহুল্য, ‘বরসাতে–মৌসম পেয়ার কা’-ও এর ব্যতিক্রম নয়। গল্প জমিয়ে দিয়েছেন একতা।