আজই আসছে বিসমিল্লা
জন্মাষ্টমীর দিন এ ছবির মুক্তি যেন অনেক না বলা কথার বাঙ্ময় হয়ে ওঠা ! লিখেছেন প্রিয়রঞ্জন কাঁড়ার।
সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে টলিউড-বলিউডে দীর্ঘদিন ধরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত। তাঁর ভার্সেটাইল ঘরানা সব ধরনের ছবিতেই খাপ খেয়ে যায়। খাদ, বাস্তুশাপ, বিজয়ার মতো ধ্রুপদী ঘরানার ছবি থেকে কেলোর কীর্তি, হরিপদ ব্যান্ডওয়ালা জাতীয় মুচমুচে বাণিজ্যিক রোম্যান্টিক কমেডি আছে তালিকায়। আবার কাকাবাবুর প্রত্যাবর্তন, ইয়েতি অভিযান, মিশর রহস্যের মতো থ্রিলারও আছে ইন্দ্রদীপের ঝুলিতে। ২০১৭-তে বেগমজানের মধ্যে দিয়ে সর্বভারতীয় পরিচিতি অর্জন করেন ইন্দ্রদীপ।
পূর্ণাঙ্গ পরিচালক হিসেবে ২০১৯ -এ প্রথম ছবি ‘কেদারা’-তেই জাতীয় পুরস্কার পেয়ে প্রমাণ করেছিলেন, শুধু সংগীত নয়, চলচ্চিত্র নির্মাণের সব দিকই তাঁর করায়ত্ত। এবার জন্মাষ্টমীতে পূর্ণাঙ্গ পরিচালক হিসেবে তাঁর উপহার ‘বিসমিল্লা’। ক্যালাইডোস্কোপ এন্টারটেনমেন্ট প্রযোজিত তারকা-খচিত এই ছবিতে অগুনতি পরীক্ষা-নিরীক্ষার অবকাশ তৈরি করা হয়েছে। এই ছবির বিষয় কিন্তু সংগীতই। একটি সাংগীতিক পরিবারের ঐতিহ্য এবং এক তরুণ সানাই বাদকের সাধনার যাত্রাপথ।
গ্লোবালাইজেশন আমাদের সমগ্র পৃথিবীকে একটি গ্লোবাল ভিলেজে পরিণত করেছে। সেই পরিবেশে আন্তর্জাতিক সাংগীতিক প্রভাবের অনুপ্রবেশ ও চাপ কীভাবে একটা পারিবারিক সাংগীতিক ঘরানাকে আক্রমণ করে, এই ছবি তার মাপজোখ করবে। একজন সংগীত সাধক শুধুমাত্র তাঁর গানবাজনা নিয়েই পথ হাঁটেন না। পারিপার্শ্বিক পরিবেশও তাঁর সামগ্রিক সত্তার বিকাশকে প্রভাবিত করে। সেই সামগ্রিক বিকাশই তাঁর গানবাজনারও গতি-প্রকৃতি নির্ধারণ করে দেয়–অনেক সময় ঘরানার মৌলিক চরিত্রেরও বদল ঘটিয়ে ফেলে। একজন দ্বিধাগ্রস্ত শিল্পীর আবেগ ও ঐতিহ্যের সকরুণ গাথা এই ছবি। ঐতিহ্যের ভার বহন করতে গিয়ে ক্ষতবিক্ষত শিল্পীসত্তার প্রস্থচ্ছেদ দেখতে পাওয়া যাবে এই ছবিতে। সেই সঙ্গে চরিত্রগুলির ব্যক্তিগত জীবনের নানা রহস্যময় ঘটনা-প্রবাহে আবর্তিত হবে ছবির গল্প। রহস্যের সমাধানে চরিত্রগুলির দৃঢ় সংকল্পের পরিচয় থাকবে।
নাম ভূমিকায় ঋদ্ধি সেন। সানাই ও বাঁশি এই ছবির দুটি স্তম্ভ। মুসলিম বংশীবাদক বিসমিল্লা মাঝে-মধ্যেই দৃশ্যমান হবে কৃষ্ণের বেশে। অসমবয়সী শুভশ্রীর সঙ্গে রোম্যান্টিক মুহূর্তগুলোকে রাধা-কৃষ্ণের পৌরাণিক প্রেমগাথার সঙ্গে সমাপতিত করা হবে। এক বিধবা বৈষ্ণবীর চরিত্রে সুরঙ্গনা ব্যানার্জির কিছু খণ্ডদৃশ্যের অবতারণা থাকছে, যা নাকি অপাপবিদ্ধ শৈশবের নির্মল বন্ধুত্বের দ্যোতক। এক বর্ষীয়ান সানাই ওস্তাদের চরিত্রে কৌশিক গাঙ্গুলির উপস্থিতি গল্পে নতুন মাত্রা সংযোজন করবে বলেই আশা করা যায়।
পরিচালক ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, ‘নগর কীর্তন’-এর মতোই এই ছবিও তাঁর হৃদয়ের খুব কাছের। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটি অতি প্রয়োজনীয় বার্তাও থাকছে ছবিতে। প্রসঙ্গত, অফ-ক্যামেরা রোম্যান্টিক জুটি ঋদ্ধি-সুরঙ্গনার ক্যামেরার সামনে জুটি হিসেবে এটি তৃতীয় আবির্ভাব। এর আগে ছিল ‘ওপেন টি বায়োস্কোপ’ এবং ‘সমান্তরাল’। কৌশিক গাঙ্গুলির পরিচালক-সত্তার সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরেই পরিচিত ঋদ্ধি। এবার ক্যামেরার সামনে তাঁর সহ-অভিনেতা হিসেবেও প্রাপ্তিযোগ ঘটেছে ঋদ্ধির। শুভশ্রী মূলত বাণিজ্যিক ছবির সফল নায়িকা। ঋদ্ধি সম্পূর্ণ বিপরীত ঘরানার। তাছাড়া তাঁদের বয়সেরও অসামঞ্জস্য আছে। এরকম পরিস্থিতিতে এই জুটির রসায়ন কেমন কাজ করে, সেটা দেখার তুমুল আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
সাংগীতিক আবহে অ্যাকশন ড্রামা এবং থ্রিলারের স্বাদ কেমন হবে, তা জানতে উৎসুক আমজনতা। পরিচালনার পাশাপাশি এই ছবির সংগীত ও গল্প ইন্দ্রদীপেরই। চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছেন পদ্মনাভ দাশগুপ্ত। গীতিকার শ্রীজাত। সিনেমাটোগ্রাফি ও এডিটিংয়ের দায়িত্বে যথাক্রমে শুভঙ্কর ভড় ও সুজয় দত্তরায়। সাউন্ড ডিজাইনিং ও মিক্সিংয়ে শুভদীপ মৈত্র। রণজিৎ ঘড়াইয়ের শিল্প-নির্দেশনা। কোরিওগ্রাফি সুদর্শন চক্রবর্তীর। অভিষেক রায়ের পোশাক পরিকল্পনায় মেক-আপের দায়িত্ব সামলেছেন সোমনাথ কুণ্ডু। টাইটেল ট্র্যাকটির শিল্পী অরিজিৎ সিং। শ্রেয়া ঘোষাল ও সৌম্যদীপ মুর্শিদাবাদির দ্বৈত কণ্ঠে শোনা যাবে ‘কেন যে তোমাকে দেখি’ গানটি। অমৃতা সিং মজুমদার গেয়েছেন ‘তোমাকে দেখিনি মেনেছি’ গানটি। এই ছবি নির্মাণের প্রতিটি ক্ষেত্রকে ঘিরেই বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি থেকে আম দর্শক–আগ্রহ তুঙ্গে।