Monday, February 3, 2025
ওয়েব-Wave

খনি-শহরে এলিজাবেথ – হোয়েন কলস দ্য হার্ট

মৃণালিনী ঠাকুর

ধনী ও অভিজাত ঘরের কন্যা, বরাবর হাই সোসাইটির জীবনযাপনে অভ্যস্ত তরুণী শিক্ষিকা এলিজাবেথ থ্যাচার (এরিন ক্র্যাকো) তার প্রথম ক্লাসরুম এসাইনমেন্ট পায় এক খনি উপত্যকা অঞ্চলে। আলবার্তা নামের দক্ষিণ কানাডার ছোট্ট এই শহর মূলত কয়লাখনি অধ্যুষিত। এখানকার মানুষের জীবন এমনিতে সরল হলেও অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। একেই কঠিন বাঁচার লড়াই। তারমধ্যে অতি সম্প্রতি খনির ভিতরে বিস্ফোরণ হওয়ায় বহু লোকের প্রাণ গেছে। অনেকেই নিখোঁজ। এমন এক প্রেক্ষাপটে এলিজাবেথের আগমন হয় সেখানে। বলা বাহুল্য, এসেই এক অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়ে সে। ঝাঁ চকচকে শহরের আরাম-বিলাস ছেড়ে আসার জন্য প্রস্তুত ছিল এলিজাবেথ। তবু, এখানকার অতি প্রতিকূল পরিবেশ, শুরুতেই নিজেকে একজন অযাচিত ও বহিরাগত হিসেবে পেয়ে কিছুটা ভীত ও বিমর্ষ হয়ে পড়ে সে।

Images 24

এমনিতেই কয়লাখনিকে কেন্দ্র করে মানুষগুলির বেঁচে থাকার কঠিন লড়াই। বিস্ফোরণ তাকে কঠিনতর করে তোলে। এমতবস্থায় স্কুল, লেখাপড়া বাহুল্য বোধ হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু এমনটা আর যে-ই ভাবুক, বাচ্চাদের মায়েরা ভাবে না। তারা তাদের কষ্টের রোজগার, সংসার খরচের টাকা কুড়িয়ে-বাড়িয়ে স্কুলটা চালু রাখার চেষ্টা করে। এই মায়েদের সামনে যখন এলিজাবেথ এসে দাঁড়ায়, তখন স্বভাবতই তাদের প্রতিক্রিয়া থাকে যথেষ্টই বিরূপ। এই শহুরে, সুখী জীবনে অভ্যস্ত, বড়লোকের ফ্যাশনেবল তরুণী পড়াবে তাদের বাচ্চাদের ! সে কী বাচ্চাদের প্রতি সত্যি মনযোগী হবে ? টিকে থাকতে পারবে এখানকার কঠিন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে ?

সমস্ত জল্পনার অবসান ঘটিয়ে এলিজাবেথ ধীরে ধীরে এলাকার মানুষের আস্থা ও নির্ভরতা অর্জন করতে সক্ষম হয়। খনি অঞ্চলের সকলেই এখন বেশ পছন্দ করে তাকে, একজন ছাড়া। সেই একজন হলো জ্যাক থর্নটন। প্রসঙ্গত, রয়েল নর্থ-ওয়েস্ট মাউন্টেড পুলিশ কনস্টেবল জ্যাক থর্নটনের (ড্যানিয়েল লিসিং) সঙ্গে এলিজাবেথের প্রথম সাক্ষাৎটি ছিল যথেষ্ট নাটকীয়। আলবার্তা আসার দিনটাতেই লুটেরাদের খপ্পরে পড়ে এলিজাবেথ। সঙ্গের মালপত্র, টাকাপয়সা হারিয়ে অসহায় অবস্থায় পথে পড়ে থাকা এলিজাবেথকে উদ্ধার করে খনি শহরে পৌঁছে দেয় জ্যাক। সে তো আইনের রক্ষক হিসেবে সে তার কর্তব্য করেছে। জ্যাকের বিরূপতার কারণটা অন্য। সে মনে করে, আদরে, বিলাসিতায় বেড়ে ওঠা এলিজাবেথের সুরক্ষার জন্যই তার শিপিং ম্যাগনেট বাবা জ্যাকের বদলি করিয়েছে এই ছোট শহরে। তার কেরিয়ার শেষ করে দিয়েছে লোকটা। বেচারা এলিজাবেথ কিছুতেই জ্যাককে বোঝাতে পারে না, যে, সে এসবের মধ্যে নেই।

যেমন চিরকাল সারা বিশ্বে ঘটে থাকে–ক্ষমতাশালী লোকজন মানুষের অসহায়ত্বের সুযোগ নেয়। এই খনি অঞ্চলও তার ব্যতিক্রম নয়। মাইনিং কোম্পানির ম্যানেজারের দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ, খনির ভিতরে কর্মরত কর্মীদের নিরাপত্তার দিকটা যথাযথভাবে না দেখার ফলেই এই বিরাট বিস্ফোরণ ও এতগুলি মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কা। সবচেয়ে খারাপ ব্যাপার হলো, এতকিছুর পরও কোথাও মালিকপক্ষের কোনও সহমর্মিতা নেই। তারা দায়সারা ভাবে বিষয়টি চাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। স্বাভাবিকভাবেই ক্ষোভে ফেটে পড়ে মানুষজন। বিশেষত, মৃতদের পরিবারের লোকজন–তারা একেবারে তীব্র রাগ ও হতাশায় ফুটতে থাকে। আর এইসবেরই প্রভাব পড়ে বাচ্চাদের ক্লাসরুমে। অজান্তেই এলিজাবেথ জড়িয়ে পড়ে স্থানীয় মানুষদের সুখদুঃখের বারমাস্যায়।

Images 23

‘হোয়েন কলস দ্য হার্ট’ নামের আমেরিকান ড্রামা সিরিজ তৈরি হয়েছে এমনই এক আকর্ষণীয় কাহিনির পটভূমিতে। সিরিজটি প্রথমে দেখানো হয় আমেরিকার হলমার্ক চ্যানেলে ২০১৪ সালে। এরিন ক্র্যাকো ও ড্যানিয়েল লিসিং ছাড়াও অভিনয় করেছেন ক্রিস ম্যাকন্যালি, কেভিন ম্যাকগেরি, লরি লফলিন, মার্টিন কিউমিনস, জ্যাক ওয়াগনার, পাস্কাল হাটন, ক্যাভান স্মিথ প্রমুখ। মোট ৯টি সিজনে, ৮৬ পর্বে দেখানো হয় ‘হোয়েন কলস দ্য হার্ট’। জেনেট ওকের কাহিনি ‘হোয়েন কলস দ্য হার্ট’ থেকে এর পর্দা-রূপায়ন করেছেন মাইকেল ল্যান্ডন জুনিয়র।

অসাধারণ লোকেশন, যা পরিবেশ রচনায় বিশেষ সহায়ক হয়। এছাড়াও টানটান স্ক্রিনপ্লে, দুরন্ত ক্যামেরার কাজ, স্মার্ট ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর–সর্বোপরি রিয়ালিস্টিক অভিনয়, এ সিরিজকে টেনে নিয়ে যায়। যাঁরা এখনও দেখেননি, শুরু করে দিন তাড়াতাড়ি। নেটফ্লিক্স-এ প্রদর্শিত হচ্ছে এই সিরিজ।