প্রিয় চিনার পাতা…
সিনেমা ওঁদের প্যাশন। প্রতিভা, মেধা, দক্ষতা আর নতুন নতুন ভাবনার আলিঙ্গনে বিচিত্র পথগামী ওঁরা। কেউ পূর্ণদৈর্ঘের ছবি নির্মাণে ব্যস্ত, কেউ তথ্যচিত্র বা ছোট ছবি। কখনও স্বাধীনভাবে, কখনও সামান্য বিনিয়োগ―স্বপ্নের কারিগররা ব্যস্ত তাঁদের নিজের ভুবনে। এইসব সিনেমা পরিচালক ও তাঁদের কাজ নিয়েই এই বিভাগ। আজ কুমার চৌধুরী। ধারাবাহিক রচনার দ্বিতীয় পর্ব আজ। তৃতীয় পর্ব আগামী ২৫ মার্চ। সাক্ষাৎকার অজন্তা সিনহা
সার্বিকভাবে পরিচালকদের নিজের প্রস্তুতি পর্বটা কিরকম?
◆ এক একজন পরিচালকের প্রস্তুতিপর্ব এক একরকম। অনেক পরিচালকই Film School থেকে পড়াশুনো করে আসেন। আবার অনেকের film school-এ যাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি। তাতে কোনও অসুবিধে নেই। যেমন গৌতম ঘোষ Film School থেকে পড়াশোনা করেছেন। কিন্ত বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত Film School-এ পড়েননি। কিন্ত দুজনেই Master Filmmaker. দুজনেই কিছু অসাধারণ সিনেমা আমাদের উপহার দিয়েছেন। আমার ক্ষেত্রে বলতে পারি আমি Film school-এ যাইনি। কাউকে assist-ও করিনি। কিন্ত আমি প্রচুর সিনেমা দেখেছি এবং দেখি।
সারা বিশ্বের সিনেমা দেখি নিয়ম করে। চিত্রনাট্য লিখেছি–ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছি–আবার লিখেছি। আর সিনেমা সংক্রান্ত প্রচুর বই, লেখাপড়াও আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। আর আমি প্রতিদিন শিখছি। Master filmmaker-দের সিনেমার পাশাপাশি যে কোনও নতুন পরিচালকের প্রথম short film-ও আমি দেখি। প্রত্যেক পরিচালকের একটা নিজস্ব vision থাকা উচিত। ওটাই আসল। ওটার ওপর বেস করেই একজন পরিচালকের identity তৈরি হয়।
Independent ছবি নির্মাণের ক্ষেত্রে কারা তোমার আদর্শ, দেশে ও বিদেশে ?
◆ না, এভাবে ঠিক ভাবিনি। বিশেষ কোনও আদর্শ কেউ নেই। তবে আমার অনেক প্রিয় পরিচালক আছেন, যাঁদের ছবি আমি নিয়মিত দেখি। Tarkovsky, Bergman, Bunuel, Satyajit, Ritwick, Godard, De Sica, Wajda, Antonioni, Kurosawa, Angelopoulous, Kieslowski, Almodover ইত্যাদি আরও অনেকের সিনেমা। আবার কোনও পরিচালক হয়ত প্রথম ছবি বানিয়েছেন, যাঁর ছবি দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে গেছি। ভারতে ইদানিং যাঁদের ছবি দেখে আমি মুগ্ধ তাঁরা হলেন Sashidharan Sanal, Pushpendra Singh, Arun Kartick, Achal Mishra, Chaitanya Tamhane, Vijay Jayapal, Prateek Vats. Aditya Vikram Sengupta, Pradipta Bhattacharyya, Akshay Indikar…আরও আছেন। বিদেশের ছবির মধ্যে গত কুড়ি বছরে সবথেকে বেশি দেখেছি ইরানের ছবি। তাই স্বভাবতই Kierostami, Panahi, Asghar Farhadi, Manijeh Hekmat, Samir Makhmalbaf, Majidi আমার খুবই প্রিয়। এর বাইরে Tsai Ming Liang, Pen Ek RatanRuang, Lav Diaz, Kim Ki Duk, Hao – Hsiao- Hsien, Nani Moretti, Ken Loach, Nuri Bilge Cylan , Emir Kusturica, Roya Sadat ইত্যাদিরা আছেন।
ছবির প্রমোশনের ক্ষেত্রে মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার সমর্থন কতটা মেলে ?
◆ এবারের Kolkata International Film Festival-এ Asian Select Netpac Award category-র competitive section-এ আমার সিনেমা ‘প্রিয় চিনার পাতা, ইতি সেগুন…’ অফিসিয়ালি সিলেক্টেড ছিল। কলকাতার প্রায় সমস্ত মেইনস্ট্রিম মিডিয়াই সেটা খুব যত্নের সঙ্গে খবর করেছিল। আশা করি ছবি মুক্তির সময়ও তাঁরা আমার ছবির খবর পাঠকদের দেবেন।
তবে print media-র মতো যদি visual media-ও ছবির প্রমোশনের ক্ষেত্রে Independent ফিল্মগুলোকে আর একটু space দেয় তাহলে সুবিধা হয়।
এই জাতীয় সিনেমার প্রমোশনের ক্ষেত্রে social media-ই বা কতটা কার্যকর ভূমিকা নিতে পারে ?
◆ Social media- র ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। Social media-র মাধ্যমে নিমেষে বহু মানুষের কাছে খবর পৌঁছে যায়। ‘সহজপাঠের গপ্পো’, ‘ বিনিসুতোয়’ সিনেমাগুলোর ক্ষেত্রে তাই হয়েছে। Facebook, Twitter, Instagram পাবলিসিটি এই মুহূর্তে হোর্ডিং-এর থেকে জোরাল।
জীবনবোধসম্পন্ন, গবেষণালব্ধ, ব্যতিক্রমী ও প্রাসঙ্গিক বিষয়ে নির্মিত বাহুল্যহীন স্বল্প বাজেটের ছবি দেখার জন্য এখানকার দর্শক কতটা প্রস্তুত বলে মনে হয়?
◆ ভাল ছবি দেখার দর্শক অবশ্যই বেড়েছে। তবে, প্রতিমুহূর্তে যেখানে সমস্ত কিছুতে অবক্ষয় চলছে, সেখানে দর্শকও যখন সেই সমাজেরই অংশ–তাই, সব দর্শকই যে প্রস্তুত হয়ে হলে ঢুকবেন এমনটা আশা না করাই ভাল। আর সেটা জরুরিও নয়। সিনেমা ভাল হলে দর্শক অবশ্যই দেখবেন বলে আমার বিশ্বাস।
স্বল্প বাজেটের ছবিতে অনেক সময়ই তথাকথিত দর্শক মনোরঞ্জনের চাহিদামত মশলা দেওয়া সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ভাবে এই ছবির ভবিষ্যত কি ?
◆ Independent filmmaker-রা সাধারণত মশলা দেওয়া ছবি বানান না। যদি দর্শকের কথা ভেবে মশলাই দেবেন তাহলে আর Independent film বানানোর জন্য পড়াশোনা করে এত তৈরি হবার কি প্রয়োজন ? তার চেয়ে বড় কোনও হাউসে গিয়ে মশলাদার mainstream film বানানোর জন্য তেলের বাটি উপড়ে দিলেই তো হয়! তবে, independent, mainstream, parallel–যে ছবিই বানান না কেন, আপনাকে film বানানোর grammar টা জানতেই হবে। আর ছবি ভাল বানালে দর্শক দেখবেন। বাণিজ্যিকভাবে একটা ছবিকে সফল হতে হলে অনেক গুলো factor কাজ করে। ছবি ভাল হলেই হয় না। Release করার জন্য প্রয়োজনীয় হল চাই। বড় হাউসের ছবি release করবে বলে একটা ভাল running Independent film-কে গলা টিপে হত্যা করলে চলবে না। তাই হল মালিক, distributor, বড় হাউস, দর্শক–সকলের সহযোগিতা ছাড়া একটা ছবির বাণিজ্যিক ভাবে সফল হওয়া মুশকিল।