ফিরছেন বর্তিকা, গৌরী আছেন: ওটিটি প্ল্যাটফর্মেও অপরিহার্য শেফালি
লিখেছেন মৃণালিনী ঠাকুর
টেলিভিশন থেকে বড় পর্দা। বড় পর্দা থেকে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম–নিজের বৃত্ত সম্পূর্ণ করলেন তিনি, এমনটা বলা যেতেই পারে। তবে, শেফালি শাহ এমন মাত্রার একজন অভিনেত্রী, যাঁর জন্য কোনও সীমারেখা নির্ধারিত করা এক অসম্ভব কাজ। মনে পড়ছে জি টিভির মেগা ‘হসরতেঁ’ ধারাবাহিকের কথা। চরিত্রটি এমন এক নারীর, যে বিবাহিত এক পুরুষকে ভালোবাসে। তাদের মধ্যে সম্পর্কের সামাজিক বৈধতা না থাকা সত্বেও এই সম্পর্ককে অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে পালন করে চলে সে।
শেফালির প্রাক্তন স্বামী হর্ষ ছায়া ছিলেন তাঁর বিপরীতে। দর্শক শেফালি-হর্ষ ছায়ার অসাধারণ অন স্ক্রিন কেমিস্ট্রি দেখেছে এই ধারাবাহিকের পর্বে পর্বে। হর্ষ ছায়ার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর শেফালি বলিউডের বিখ্যাত প্রয়োজক বিপুল শা-কে বিয়ে করেন। বড় পর্দায় শেফালি প্রথম দারুণভাবে নজর কাড়েন রামগোপাল বর্মার ‘সত্য’ ছবিতে। তারপরই ‘ওয়াক্ত : দ্য রেস এগেনস্ট টাইম’–এ ছবিতে অমিতাভ বচ্চনের বিপরীতে দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেন শেফালি। এরপরও বহু মনে রাখা কাজ করেছেন তিনি। জোয়া আখতারের ‘দিল ধড়কনে দো’ ছবিতে অনিল কাপুর, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, অনুষ্কা শর্মা, ফারহান আখতার, রণবীর সিং প্রমুখকে ছাপিয়ে যায় শেফালির পারফরম্যান্স। এতকিছুর পরও যে ধরনের সুযোগ তাঁর পাওয়ার কথা, সেটা কিছুতেই ঘটছিল না।
যদি বলি শেফালিকে সেই জায়গা দিল ওয়েব সিরিজ ‘দিল্লি ক্রাইম’, তাহলে একটুও বাড়িয়ে বলা হবে না। ওটিটি প্ল্যাটফর্ম নিঃসন্দেহে বলিউডের বহু অভিনেতার পুনর্মূল্যায়ন করেছে। সাম্প্রতিককালে চাঙ্কি পান্ডে এর এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ। ফিরে আসি শেফালির কথায়। দর্শক ডিসিপি বর্তিকা চতুর্বেদীকে দেখা মাত্র পছন্দ করে ফেলে। নেটফ্লিক্স-এ এ ‘দিল্লি ক্রাইম’ স্ট্রিমিং ওটিটি প্ল্যাটফর্মের আর পাঁচটা ক্রাইম বেসড স্টোরি প্রদর্শনের তুলনায় শুরু থেকেই পৃথক ছিল। নিছক এক ফিকশন নয়। ২০১২-র দিল্লির কুখ্যাত এবং বহু আলোচিত গ্যাং-রেপের ঘটনা প্রেক্ষাপটে রেখে এই কাহিনী লেখেন রিচি মেহতা। রিচিই এই ৭ পর্বের টানটান রুদ্ধশ্বাস সিরিজের পরিচালক।
শোনা যায়, ৪০০ পাতার স্ক্রিপ্ট নিয়ে ২০১৮-র জানুয়ারিতে এর শুটিং শুরু করে মাত্র ৬২ দিনের মধ্যে পুরো কাজ শেষ করে ফেলা হয়। প্রথম দুটি পর্ব প্রিমিয়ার হয় ২০১৯-এ Sundance Film Festival-এর ইন্ডি এপিসোডিক বিভাগে। ২০১৯-এর ২২ মার্চ নেটফ্লিক্স দেখানো শুরু করে ‘দিল্লি ক্রাইম’। স্ক্রিপ্ট ও অভিনয় তুমুল প্রশংসা পায়। সর্বস্তরের দর্শকের প্রশংসা শুধু নয়। আউটস্ট্যান্ডিং ড্রামা সিরিজের জন্য ‘দিল্লি ক্রাইম’ ইন্টারন্যাশনাল এমি এওয়ার্ড পায় ২০২০-র সেপ্টেম্বরে। কোনও ভারতীয় সিরিজের এহেন পুরস্কারপ্রাপ্তি এই প্রথম।
এই কৃতিত্বের মুখ্য ভাগীদার নিঃসন্দেহে শেফালি। তিনি ছাড়া বর্তিকা পর্দায় জীবন্ত হয়ে উঠতে পারতো না। শেফালির সঙ্গে সমান তালে অভিনয় করেছেন, রসিকা দুগল, আদিল হোসেন, রাজেশ টাইলং প্রমুখ। এখনও পর্যন্ত একটি মাত্র সিজন এই সিরিজের। আসামীদের গ্রেফতার হওয়ার ঘটনা পর্যন্ত রয়েছে প্রথম সিজনে। এই কেসের দীর্ঘসূত্রী বিচার প্রক্রিয়ার কথা সকলেরই জানা। যথেষ্ট বিতর্কও দানা বাধে বিচার ব্যবস্থাকে ঘিরে। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ ওঠে বারবার। পরের সিজনে সেই লেবু চটকানো তিক্ততা নয়। নতুন গল্প দেখাবেন নির্মাতারা–ঘোষণা হয়ে গেছে। দিল্লি শহরকে ঘিরেই নতুন কোনও অপরাধের গল্প বুনন! শোনা যাচ্ছে, নিঠারি সিরিয়াল মার্ডার কেসের উপর হবে পরের সিজন। অপরাধের স্বর্গ দিল্লি শহরে গল্পের অভাব নেই। গল্প যা-ই হোক, বর্তিকা থাকছেন। অর্থাৎ শেফালির থাকা অবশ্যম্ভাবী। তীব্র অপেক্ষায় শেফালি ভক্তরা, বলাই বাহুল্য।
তবে, এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে শেফালির পরের ওয়েব-যাত্রা। জয়যাত্রাও বলা যায়। কীর্তি কুলহারির সঙ্গে জুটি বেঁধে ডিজনি হটস্টার-এ তিনি অভিনয় করছেন ‘হিউম্যান’ শিরোনামের ব্যতিক্রমী ভাবনার এক সিরিজে। এটি একটি মেডিকেল থ্রিলার। একজন ডাক্তারের চরিত্রে অভিনয় করছেন শেফালি। দিল্লি ক্রাইম-এর দাপুটে বর্তিকা এখানে অনুভবী ডাক্তার গৌরী। ওয়েব সিরিজ মানেই দুর্দান্ত রাইটিং। ‘হিউম্যান’-এর স্ক্রিপ্ট নিয়েও উচ্ছ্বসিত শেফালি।
চরিত্রের সাদা-কালো-ধূসর দিকগুলিই অভিনেতা হিসেবে তাঁকে চালিত করে, জানিয়েছেন তিনি। গৌরীর মধ্যেও তেমন অজস্র উপকরণ রয়েছে, যা তাঁর অভিনয়ের ক্ষেত্রে যাকে বলে ড্রাইভিং ফোর্স। দর্শকের ভাবনার রসদ থাকে, এমন কাহিনীই টানে শেফালিকে। ‘হিউম্যান’ তেমনই এক চমকপ্রদ কাহিনী নিয়ে পল্লবিত। কীর্তির সঙ্গে একটি চুম্বনদৃশ্যও আছে তাঁর, যা নিয়ে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে ভালোই ঝড় উঠেছে। কিন্তু নিছক একটি দৃশ্যে সাহসী হয়ে ওঠা নয়। শেফালির কাছে গুরুত্বপূর্ণ পুরো প্রেক্ষিত এবং সেই প্রেক্ষিতে বিচরণগামী চরিত্রটি। গৌরী সেইদিক থেকেই আকর্ষিত করেছে তাঁকে। সিরিজের পর্বে পর্বে দর্শক-উচ্ছ্বাস বলে দিচ্ছে বর্তিকার মতোই গৌরীও ওটিটি দর্শকের কাছে স্পেশাল হয়ে উঠতে চলেছে খুব শিগগিরই।