Sunday, May 19, 2024
ওয়েব-Wave

সমকালীন গল্পে দাঁড়িয়ে ‘গভীর জলের মাছ’

হাতে হাতে স্মার্টফোন। তরুণ প্রজন্মের চোখ ইদানীং নিত্যনতুন ওয়েব সিরিজে। সারা বিশ্বের স্ট্রিমিং বিনোদন এখন হাতের মুঠোয়। সেইসব সিরিজ নিয়েই নানাকথা এই বিভাগে। হইচই-এ সদ্য শুরু হয়েছে ‘গভীর জলের মাছ’। স্রষ্টা সাহানা দত্ত। এই সপ্তাহে এই সিরিজ নিয়েই কলম ধরেছেন মৃণালিনী ঠাকুর

আমাজন প্রাইমে চার মহিলার গোপন রহস্যে টানটান ‘হাশ হাশ’ দেখার পরই বাংলায় মহিলাকুলের ‘গভীর জলের মাছ’ হয়ে ওঠা দেখে দুটো কথা মনে হলো। এক, আমরাও বেশ সময়ের তালে পা ফেলে চলেছি। দুই, একটি প্রশ্ন, বাংলায় মৌলিক কাহিনির কী অভাব পড়িয়াছে ? দুটি সিরিজের পরিবেশনগত মিল ছাড়া, কিছু ব্যতিক্রম অবশ্য আছে। কিছুটা মন্দের ভালো সেটাই। হইচই চ্যানেলে ইতিমধ্যেই স্ট্রিমিং শুরু হয়েছে চার মহিলার বিচিত্র কাহিনি ‘গভীর জলের মাছ’। স্রষ্টা সাহানা দত্ত। সাহানার কাজ সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নেই। বাংলা বিনোদনে বহু সফল প্রযোজনা উপহার দিয়েছেন তিনি আমাদের। এই সিরিজেও নতুন কিছু পাব আমরা, প্রত্যাশা করা যেতেই পারে।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের পারিবারিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট বদলে গেছে। বদলে গেছে সম্পর্কের রসায়ন। এক্ষেত্রে দাম্পত্যের স্থিতিশীলতা সম্ভবত সবচেয়ে বড় প্রশ্নের মুখে। সাহানা এই বিষয়টিকে নিয়ে এসেছেন এক গভীর রহস্যের মোড়কে। এই সিরিজ ‘গভীর জলের মাছ’ চার মহিলার গল্প শুধু নয়, তাদের ভাবনা ও আচরণকে ঘিরে যে জটিল অপরাধের পটভূমি তৈরি হয়, সেটাও হাজির করেছে দর্শক দরবারে। একে নারীকেন্দ্রিক প্রযোজনা বলা উচিত কিনা জানি না। নারীর সংকট তো শুধু তার একার নয়! বিষয়টা সামাজিক প্রেক্ষিত বিচারেই অবলোকিত হওয়া জরুরি। তবে, এটা ঠিক নারীর চোখ দিয়েই এখানে সম্পূর্ণ বিষয়টিকে উপস্থাপিত করেছেন সাহানা।

আপাত দৃষ্টিতে পারিবারিক যাপনে সুখী এই মহিলাদের জীবন আসলে কীভাবে কাটে ? আরত্রিকা, বিশাখা, চন্দ্রিমা এবং দিতি–এই চারজনের বন্ধুত্বও কতটা সত্য, নাকি, সেখানেও চলছে ছলনার আশ্রয় নেওয়া ? মোদ্দা কথা, এই চার মহিলার পারস্পরিক সম্পর্কই হোক, তাদের ঘিরে আবর্তিত বাকি মানুষদের সঙ্গে চলমান রসায়ন–সর্বত্র রয়েছে ঈর্ষা, বিশ্বাসঘাতকতা, প্রতারণা এবং অন্যান্য কলুষ ও নিম্নস্তরের গোপনতা ! বিষয়টা শুরু হয় চন্দ্রিমাকে ঘিরে। একদিন সে বাকি বন্ধুদের জানায়, তার স্বামী তীর্থ অন্য এক নারীর প্রতি আসক্ত ও সম্পর্কযুক্ত। তার কথায়, বাকিদের স্বামীরাও বিশ্বাস ভঙ্গ করছে কিনা, সেটা ভাবার অবকাশ রয়েছে। এরপরই স্বামীরা বৈবাহিক জীবনে কতটা সৎ ও বিশ্বস্ত, এটা পরীক্ষা করার জন্য চার মহিলা এক ভয়ংকর খেলায় মাতে! একে অপরের স্বামীকে সিডিউস করার মাধ্যমে নিজেদের প্রতি সেই মানুষগুলিকে আকর্ষিত করে তারা। এর ফলে কী ঘটে, পতিদেবতাগণ কী পরীক্ষায় পাস করে? পাস-ফেল যেটাই হোক, তার অনুষঙ্গে কী ঘটে এই চার বন্ধুর জীবনে ?

এসব তো আপনারা পর্বে পর্বে দেখবেন। আপাতত ‘গভীর জলের মাছ’ সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য জানাই। অভিনয়ে স্বস্তিকা দত্ত (আরত্রিকা), উষসী রায় (বিশাখা), অনন্যা সেন (চন্দ্রিমা), তৃণা সাহা (দিতি) চার বন্ধুর ভূমিকায়। এছাড়াও আছেন যুধাজিত সরকার, রাজদীপ গুপ্ত, প্রান্তিক ব্যানার্জি ও সৌম্য ব্যানার্জি। এঁরা প্রত্যেকেই ওটিটি প্ল্যাটফর্ম সহ বিভিন্ন বিনোদন মাধ্যমে নিজেদের অভিনয় দক্ষতার ব্যাপ্তি প্রতিষ্ঠা করেছেন। ‘গভীর জলের মাছ’-এ আরও একবার বাংলার দর্শক তাঁদের স্মার্ট উপস্থিতির ঝলক পাবেন। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক দাঁড়িয়ে থাকে ভালোবাসা, বিশ্বাস ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার ওপরে। এর কোনও একটির অভাব ঘটলে, কী হয়, তা চারপাশে অহরহ দেখছি আমরা। বিশ্বাস আর সন্দেহ এমন এক সমান্তরাল অবস্থান, যাকে কখনও মেলানো যায় না। সন্দেহ নিরসনে চার মহিলা যে পথ অবলম্বন করে, সেখানেও কী স্বস্তি বা আস্থা প্রাপ্তির কোনও সম্ভাবনা আছে ? নিছক বিনোদন প্রাপ্তিযোগ নয়, এই সিরিজ এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের মুখেও  দাঁড় করাবে দর্শককে।