Monday, February 3, 2025
বিনোদন প্লাস স্পেশাললাইম-Light

রহস্যঘন হত্যাপুরী

নতুন ফেলুদা টিম পর্দায় আসছে বড়দিনেই। লিখেছেন সোমনাথ লাহা

পাঁচ বছর পর বড়পর্দায় ফিরেছেন সন্দীপ রায়। ফলত,   তাঁর পরিচালিত ফেলুদা সিরিজের ‘হত্যাপুরী’ নিয়ে এই মুহূর্তে আগ্রহ, উত্তেজনা তুঙ্গে। মোটামুটি সকলেই জানেন, সত্যজিতের লেখা এই ফেলুকাহিনির প্রেক্ষাপট সমুদ্রশহর পুরী। জুনের তাপ ও কলকাতার আর্দ্র আবহাওয়ায় বিরক্ত হয়ে ফেলুদা, তোপসে ও লালমোহনবাবুকে সঙ্গে নিয়ে র‌ওনা দেন পুরীতে, অবকাশ যাপনের উদ্দেশ্যে। সেখানে তার সঙ্গে পরিচয় হয় দুর্গাগতি সেন তথা ডি জি সেনের, যিনি একজন পুঁথি সংগ্রাহক। দুর্গাগতি পুঁথির একজন প্রকৃত সমঝদার। অসাধু লোকজন, যারা ক্রেতার মুখোশ পরে আসে, তাদের লোভনীয় প্রস্তাব দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেন তিনি। 

এই প্রেক্ষিতেই শুরু হয় নানা ঘটনাক্রম। একদল লোক দুর্গাগতির সংগ্রহ থেকে সবচেয়ে মূল্যবান পাণ্ডুলিপি চুরির পরিকল্পনা করে। ঘটনা জটিল পরিস্থিতির দিকে মোড় নেয়, যখন সি-বিচে রূপচাঁদ সিং নামে এক সন্দেহভাজনের মৃতদেহ পাওয়া যায়। কিভাবে এই রহস্যের উদঘাটন করে ফেলুদা, তাই নিয়েই এগিয়েছে এই ছবির কাহিনি। এবারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে কথা। সকলেই স্বীকার করেন, ফেলুদা এমন একটি ক্ল্যাসিক চরিত্র যেটি করা যে কোন‌ও অভিনেতার কাছেই স্বপ্নপূরণের মতো। সত্যজিতের ছোঁয়ায় ফেলুদা হিসেবে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় আইকন হয়ে গিয়েছেন বড়পর্দায়। এক‌ইভাবে জটায়ু চরিত্রে সন্তোষ দত্ত। সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায়ের তোপসেও দর্শকের মনে স্থায়ী জায়গা করে নেয়।

সন্দীপ রায় তাঁর ফেলুদা সিরিজে প্রথমবার ফেলুদার চরিত্রে আনেন সব্যসাচী চক্রবর্তীকে। সঙ্গে জটায়ু হিসেবে বিভু ভট্টাচার্য এবং তোপসে রূপে যথাক্রমে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় (‘বোম্বাইয়ের বোম্বেটে’ ও ‘টিনটোরেটোর যীশু’) ও সাহেব ভট্টাচার্য (‘গোরস্থানে সাবধান’, ‘রয়েল বেঙ্গল রহস্য’, ‘ডাবল ফেলুদা’)। এর মাঝে একবার ফেলুদার জুতোয় পা গলিয়েছেন আবির চট্টোপাধ্যায়, ‘বাদশাহী আংটি’-তে। সেই ছবিতে তোপসে হিসেবে দেখা যায় সৌরভ দাসকে। ‘হত্যাপুরী’-তে নতুন ফেলুদা টিম। এ প্রসঙ্গে সন্দীপ রায় আগেই জানান, ফেলুকাহিনি ‘হত্যাপুরী’ তৈরি হবে একেবারে নতুন টিম নিয়ে। 

ছবির শুরুতে ছবির প্রযোজনার দায়িত্বে ছিল এসভিএফ। ফেলুদার চরিত্রে সন্দীপের পছন্দ ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত। সেখানেই আপত্তি জানানো হয় প্রযোজনা সংস্থা এসভিএফ-এর পক্ষ থেকে। সন্দীপ অবশ্য স্পষ্টভাবেই জানিয়ে দেন, ফেলুদা হিসেবে তিনি ইন্দ্রনীলকেই চান। আর জটায়ুর চরিত্রে তাঁর পছন্দ অভিজিৎ গুহ। এখানেই তৈরি হয় সমস্যা। এসভিএফের পক্ষ থেকে জানানো হয়, কিছু ক্ষেত্রে মতের অমিল হওয়ার কারণে তাঁরা ছবিটি করতে পারছেন না। ফলে প্রযোজনা সংস্থার হাতবদল ঘটে। ঘোষাল মিডিয়া অ্যান্ড এন্টারটেনমেন্ট এবং শ্যাডো ফিল্মসের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত হচ্ছে ‘হত্যাপুরী’।

Images 23 2
রহস্যঘন হত্যাপুরী 11

প্রসঙ্গত, অভিজিৎ গুহ যিনি টালিগঞ্জে রানা নামে অধিক পরিচিত, তিনি নিজেও একজন পরিচালক‌। সুদেষ্ণা রায়ের সঙ্গে যৌথভাবে বেশ কয়েকটি ছবি তৈরি করেছেন। তোপসের চরিত্রে অভিনয় করছেন আয়ুষ দাস। ছোটপর্দার পরিচিত মুখ আয়ুষের শুরুটা হয়েছিল জনপ্রিয় মেগা ধারাবাহিক ‘মা’-এর হাত ধরে। দুর্গাগতি সেনের ভূমিকায় দেখা যাবে পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। জ্যোতিষী লক্ষ্মণ ভট্টাচার্যের চরিত্রে রয়েছেন শুভাশিস মুখোপাধ্যায়। বিলাস মজুমদার হয়েছেন সাহেব চট্টোপাধ্যায়। অন্যান্য চরিত্রে আছেন ভরত কল, দেবনাথ চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ।

ছবির কাস্টিংয়ের বিষয়টি নিয়ে সন্দীপ রায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানান,” কাস্টিং নিয়ে একটা ক্রিয়েটিভ মতপার্থক্য হয়েছিল। একটা ছবির কাস্টিং সাধারণত পরিচালক‌ই ঠিক করেন। আমি আমার কাস্টিংয়েই স্টিক করে থাকি। এছাড়াও, রেকির সময় যে সব লোকেশন বাছাই করেছিলাম সেখানেই শুটিং করছি। এটা নিয়ে কোন‌ও সমস্যা হয়নি। পুরো বিষয়টি খুব তাড়াতাড়ি এবং স্বাভাবিকভাবে হয়েছে। এমনকি এত তাড়াতাড়ি যে আমি নতুন প্রযোজক পেয়ে যাব সেটাও ভাবতে পারিনি।” 

ইন্দ্রনীলকে ফেলুদা হিসেবে বাছা প্রসঙ্গে সন্দীপ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন,”আমার ভীষণ পছন্দের একজন অভিনেতা ইন্দ্রনীল। নানারকমের চরিত্র খুব ভালোভাবে করেছে। ওঁর মধ্যে অদ্ভুত একটা স্মার্টনেস রয়েছে।” শোনা যায়, সব্যসাচী চক্রবর্তীর ফেলুদা হিসেবে কাজ করার সময়ই বিশপ লেফ্রয় রোডের বাড়িতে গিয়ে সন্দীপ রায়ের সঙ্গে দেখা করে ফেলুদার চরিত্রে কাজ করার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন ইন্দ্রনীল। তাঁর ইচ্ছে পূরণ করেছেন সন্দীপ। ইন্দ্রনীল আদ্যন্ত একজন পরিশ্রমী ও মেধাবী অভিনেতা। এরই পাশাপাশি তাঁর চেহারাও ফেলুদা চরিত্রের উপযোগী, একথা মানতেই হবে।

Img 20220831 Wa0068
রহস্যঘন হত্যাপুরী 14

স্বপ্নপূরণের খুশি লুকোননি ইন্দ্রনীল। পাশাপাশি পূর্বসুরীদের সঙ্গে তুলনা প্রসঙ্গে তিনি সাংবাদিকদের জানান, “আমি আমার মতো করেই ফেলুদাকে পর্দায় ফুটিয়ে তুলব। বেণুদার (সব্যসাচী) করা ফেলুদা, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের চেয়ে অনেকটাই আলাদা। তাই বলে কি তাদের মধ্যে তুলনা টানাটা ঠিক ? আবির অন্যরকম ভাবে ফেলুদাকে পোর্ট্রে করেছে পর্দায়। আমার চেষ্টা হবে বাবুদার (সন্দীপ রায়) কথা শুনে আমার মতো করে ফেলুদাকে ইন্টারপ্রেট করা। আমি সেটাই করেছি। আমার সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। তারপর বাকিটা তো দর্শকরাই বলবেন।” সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উচ্ছ্বসিত আয়ুষের বক্তব্য, “তোপসে করার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু তখন হয়ে ওঠেনি। এতবছর পর বাবুকাকু সেই সুযোগটা দিয়েছেন, ভরসা রেখেছেন। সমস্ত চরিত্রগুলো নতুন ভাবে আসছে। বেশ ভালো লাগছে।” সাংবাদিক সম্মেলনে পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, “বাবু ছবি বানাবে, আর, আমি থাকব না তা হয় নাকি ? বাবুর ঘরে আমার পাকাপাকি বাস।”

Img 20220831 Wa0064 2
রহস্যঘন হত্যাপুরী 15

বলা বাহুল্য, সন্দীপের নতুন টিম ফেলুদাকে নিয়ে কাটাছেঁড়ার কাজটা ইতিমধ্যেই শুরু করে দিয়েছে নেটিজেনদের একাংশ। অনেকেরই এই নতুন ফেলুদা টিমের বাছাই পছন্দ হয়নি। তবে, যে যাই বলুক না কেন, সত্যজিতের এই অমর সৃষ্টির প্রতি সাধারণ মানুষ তথা সিনেপ্রেমীদের ভালোবাসা ও প্রত্যাশার পারদ যে চূড়ান্ত তা প্রতিবারই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। এখন দেখার বিষয় এটাই,  ইন্দ্রনীল-আয়ুষ-অভিজিৎকে সঙ্গে নিয়ে বড়পর্দায় কি ম্যাজিক সৃষ্টি করেন পরিচালক সন্দীপ রায় ! আপাতত অপেক্ষা বড়দিন পর্যন্ত। ইতিমধ্যেই পুরী, ভুবনেশ্বর ও কলকাতা মিলিয়ে শেষ হয়ে গিয়েছে ছবির শুটিং। জোর কদমে চলছে ছবির পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ। সব মিলিয়ে এই বড়দিন ফেলুদার দখলে যেতে চলেছে কিনা, সেটা পরিষ্কার হওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা।