রহস্যের চেনা গলিতেই দাঁড়িয়ে ‘কুমুদিনী ভবন’
হাতে হাতে স্মার্টফোন। তরুণ প্রজন্মের চোখ ইদানীং নিত্যনতুন ওয়েব সিরিজে। সারা বিশ্বের স্ট্রিমিং বিনোদন এখন হাতের মুঠোয়। সেইসব সিরিজ নিয়েই নানাকথা এই বিভাগে। রহস্যে জমজমাট ‘কুমুদিনী ভবন’। লিখেছেন সোমনাথ লাহা।
যদি বলি, থ্রিলারের জনপ্রিয়তাকে হাতিয়ার করেই ওয়েব দুনিয়ার বাণিজ্যরথ তরতর করে এগিয়ে চলেছে, বাড়িয়ে বলা হবে না। সম্প্রতি হইচই চ্যানেলে শুরু হয়েছে মার্ডার মিস্ট্রি ‘কুমুদিনী ভবন’। সাত পর্বের এই ওয়েব সিরিজের প্রতি পর্বের গড় সময়কাল ২০ মিনিট। পরিচালক অর্কদীপ মল্লিক নাথ ডেবিউ করেছেন এই ওয়েব সিরিজকে ঘিরে এবং স্ট্রিমিংয়ের শুরুতেই জমিয়ে দিয়েছেন ঘন রহস্য। আমরা পর্দায় দেখি, পর পর তিনটি খুন হচ্ছে আর রহস্যের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে একটি গার্লস হোস্টেল, যার নাম কুমুদিনী ভবন।
কুমুদিনী ভবনের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন স্বাতীলেখা দেবী। এই হোস্টেলে বসবাস করে ন’জন মেয়ে। হোস্টেলের বাসিন্দা দূর্বা ভালোবেসে ফেলে স্বাতীলেখা দেবীর নাতি ঋককে। ঋক একজন মানসিক প্রতিবন্ধী। এই কারণে দূর্বাকে হোস্টেলের অন্য এক বাসিন্দা হুমকি দেয় ও শেষ পর্যন্ত রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয় দূর্বার। খুনের তদন্ত করতে আসে পুলিস অফিসার হোচি সরকার। একদম অন্যরকমের পুলিশ অফিসার সে। সাধারণত পর্দায় অ্যাংরি ইয়ংম্যান, সাহসী বা দুর্নীতিগ্রস্ত–ঠিক যে ধরনের পুলিশ অফিসার দেখতে অভ্যস্ত আমরা, হোচি একেবারেই তা নয়।
হোচির বাবা ও মা ভিয়েতনামে হানিমুন করে ফেরার পর তার জন্ম হওয়ার কারণে, তার নাম রাখা হয় হোচি। সে পুলিস হতে চায়নি। এই পেশায় আসার পর থেকে সারাক্ষণ টেনশনে থাকে হোচি। মৃতদেহ দেখলে সংখ্যা গুনতে শুরু করে সে। মাঝে মাঝে নিজেকে যমদূত বলে মনে হয় হোচির। পুলিশ দফতরে কেউই তাকে পাত্তা দেয় না। এমতাবস্থায় তার সহকারী হিসেবে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজে সাহায্য করে হোস্টেলেরই নতুন বোর্ডার অনুশ্রী। সদ্য হোস্টেলে বোর্ডার হয়ে এসেছে সে। অনুশ্রীর সহায়তায় হোচি তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু এর মাঝে আবার খুন হয়। হোস্টেলের সামনের চায়ের দোকানের মহিলা খুন হন। তারপর কি হয়? শেষ পর্যন্ত কি রহস্য উদঘাটন করতে সফল হয় হোচি এবং অনুশ্রী, সেই উত্তর মিলবে সিরিজের পর্বগুলিতে।
সিরিজে হোচি সরকারের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন অম্বরীশ ভট্টাচার্য। বাংলা বিনোদনে অম্বরীশ এখন নিজেকে অপরিহার্য প্রতিপন্ন করেছেন। এখানেও তিনি বেশ আত্মবিশ্বাসী। অনুশ্রীর চরিত্রে রয়েছেন ঊষসী রায়। স্বাতীলেখা দেবীর চরিত্রে রয়েছেন অনসূয়া মজুমদার। এছাড়াও অন্যান্য চরিত্রে রয়েছেন ঋষভ বসু (ঋক), অরুণিমা হালদার (দূর্বা), ঐন্দ্রিলা বসু, নীলাঞ্জন দত্ত প্রমুখ। সিরিজের কাহিনি লিখেছেন শিবাজি পাঁজা। চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছেন পরিচালক স্বয়ং।
সিরিজের প্রচারপর্বে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা ভাগ করে নিয়েছেন অভিনেতা-অভিনেত্রীরা। অম্বরীশ ভট্টাচার্যর কথায়, “এই চরিত্রটা খুবই অন্যরকম। আমার কমেডি করতে ভালো লাগে। কিন্তু যত সময় গড়াচ্ছে, এখন কমেডির সঙ্গে অন্যকিছুর স্বাদ থাকলে আরও বেশি ভালো লাগছে। এই চরিত্রটা সেইরকমই। এরকম একটা ইন্টারেস্টিং সিরিজের অংশ হতে পেরে আমার নিজেরই ভীষণ ভালো লাগছে।”
তিনি আরও জানান, “চিত্রনাট্য পড়েই আমার ভালো লেগেছিল। গল্পে প্রচুর টুইস্ট অ্যান্ড টার্ন রয়েছে। সেগুলো দর্শকদের সিরিজটার সঙ্গে জুড়ে রাখবে। অর্ক খুব ভালো লেখে। অর্কর লেখার মধ্যে অদ্ভুত একটা মজা আছে। শেষ এপিসোড অবধি দেখতে হবে। সবমিলিয়ে বেশ জমজমাট এই সিরিজ।” ঊষসী জানান, “হোচির সঙ্গে অনুশ্রীর রসায়নটা হাসি-মজায় ভরা। তাদের দু’জনের মধ্যে সারাক্ষণ খুনসুটি চলতেই থাকে। অনুশ্রীর চরিত্রের সঙ্গে দর্শকরা সহজেই রিলেট করতে পারবেন। সে একজন প্রগতিশীল, স্মার্ট প্রাপ্তবয়স্কা তরুণী, যে অপরাধীকে ধরতে বেরিয়েছে।”
“এই সিরিজে অম্বরীশদা ও অনসূয়াদির সঙ্গে কাজের সুবাদে অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। অম্বরীশদা যে কোনও জঁরের ভীষণ ভালো একজন অভিনেতা। ওর জন্যই আমাদের দৃশ্যগুলো এত সুন্দর করে ফুটে উঠেছে। সবমিলিয়ে বলতে পারি দর্শক এই সিরিজ থেকে শুধুমাত্র রহস্যই নয়, হাস্যরসও পাবেন”–যোগ করেন ঊষসী। ঋষভ বলেন, “আমার চরিত্র ঋককে ঘিরেই যাবতীয় রহস্যের সূত্রপাত হয় এখানে। বেশ রহস্যময় একটা চরিত্র। এই গোটা গল্পটাতেই সেটা নতুন চ্যালেঞ্জ ছিল আমার কাছে।” ঐন্দ্রিলার মতে, “এই প্রথমবার এই সিরিজের সুবাদে হোস্টেল জীবন কাটানোর সুযোগ পেলাম। সেই কারণেই এই সিরিজটা আমার কাছে খুব স্পেশাল। আমার চরিত্রের নাম জাহ্নবী, যার বাইরেটা শক্ত, ভিতরটা নরম। সে এক কথায় ফ্রি বার্ড, কেয়ারলেস একজন মেয়ে। নিজের মতো থাকতেই সে ভালোবাসে। এই সিরিজে দর্শকরা জাহ্নবীকে অনেক কুকীর্তি করতে দেখবে।”
পরিচালক অর্কদীপ বলেন, “অনেক আলোচনার পর আমরা এই সিরিজের নাম ‘কুমুদিনী ভবন’ রেখেছি। জায়গাটির একটি নিজস্ব ইতিহাস রয়েছে। আমরা এমন আকর্ষণীয় একটি থ্রিলার তৈরি করেছি, যেটা দর্শক একবার শুরু করলে একদম শেষ পর্যন্ত দেখবেন।” রহস্য গল্পের প্রতি দর্শক সহজেই আকৃষ্ট হন বলেই কি সেই চেনা ফর্মুলায় কাজ করা? সাংবাদিকদের এহেন প্রশ্নে অর্কদীপের সহাস্য উত্তর, “রহস্য কাহিনি দেখার দর্শক আছেন। সেটা অবশ্যই মাথায় ছিল। তাছাড়া এই গল্পটা আমার ভালো লেগেছিল। কিন্তু যদি ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয় জানতে চান, তা হল পলিটিক্যাল ড্রামা।”