‘শঙ্খমালা’-র ৩৪ ও মঞ্চে সমকালীন মহাভারত ‘মহাবৈদুর্য্য’
তিন দশকেরও বেশি সময় পথ চলা। আমরা যাঁরা সুস্থ সংস্কৃতির অনুপন্থী, তাঁদের জন্য নিঃসন্দেহে ‘শঙ্খমালা’-র এই গৌরবময় যাত্রাপথ প্রকৃত অনুপ্রেরণা। সামগ্রিকভাবেই বাংলার সংস্কৃতি জগতে এক ইতিবাচক বার্তা বহন করে এই অপূর্ব সৃজনশীল যাত্রা। সম্প্রতি তেত্রিশ বছর পূর্ণ করে চৌতিরিশে পদার্পণ করলো ‘শঙ্খমালা’। আজকের সময়ে সাংগঠনিক শিল্পচর্চা যখন নিতান্তই দুরূহ হয়ে উঠছে, তখন এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে কলকাতার বেলঘরিয়া অঞ্চলের এই বাচিক শিল্পীদল। তাঁদের প্রতিটি কর্মোদ্যোগ প্রাণশক্তিতে ভরপুর ও শৈল্পিক নিষ্ঠা ও নৈপুণ্যে অতুলনীয়।
এখানে বলতেই হয়, দলটির এই সাংগঠনিক ও সৃজনশীল ধারাবাহিক কর্মকাণ্ডের পিছনের সেই উৎসাহী, না থেমে, এগিয়ে যাওয়ায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ মানুষটির কথা। প্রতিভাবান, আবৃত্তি নিবেদিত প্রাণ, একনিষ্ঠ, শ্রদ্ধেয় আবৃত্তিশিল্পী সুমন্ত্র সেনগুপ্ত, যিনি ‘শঙ্খমালা’-র সকল কাজের কাজী। তিনি নিজে যদিও একার কৃতিত্বে বিশ্বাসী নন। আজ ‘শঙ্খমালা’ যেখানে, তার প্রাপ্তি তিনি ভাগ করে নেন দলের সকল সদস্য এবং তাঁর অগণিত ভক্ত শ্রোতার সঙ্গে। এখানেই তিনি মানুষ ও শিল্পী হিসেবে অনুসরণযোগ্য হয়ে ওঠেন। আসলে, শিল্পচর্চার পাশাপাশি সুমন্ত্রর কাছে সাংগঠনিক চর্চা, মেধা, শ্রম, নেতৃত্ব, আনুগত্য ও পারষ্পরিক সম্পর্ক চর্চার ক্ষেত্রটাও তাঁদের দল ‘শঙ্খমালা’। সেই পরম্পরার হাত ধরেই আজ কয়েক দশকের পথ চলা। শিল্পের প্রতি অনুরাগ, মেধা, প্রতিভা, প্রশিক্ষণ ও চর্চার সঙ্গে তাঁরা মেলাতে পেরেছেন শিল্পের প্রকৃত আদর্শকে। অন্তরে জাগ্রত রেখেছেন সামাজিক বোধ, চেতনা ও মননকে। আর এভাবেই ‘শঙ্খমালা’ হয়ে উঠেছে উপমহাদেশের অন্যতম সেরা বাচিকশিল্প চর্চা কেন্দ্র।
বাচিকশিল্পের এক অন্যরকম নিরীক্ষা যা গত ৩৩ বছর ধরে করে আসছে ‘শঙ্খমালা’, সেখানে কিছু নাটকীয় মুহূর্তকে নাটকীয় উপাদান দিয়ে ধরা–আর এই নিরিখেই সৃজিত তাঁদের আগামী প্রযোজনা ‘মহাবৈদুর্য্য’। এখানে শরীর এমন কিছু বলে না, যা বাচিক বলে না। প্রসঙ্গত, আমরা সকলেই অনুভব করছি, আজকের সময়টা বড়ই অসুন্দর ও হতাশাব্যঞ্জক। এখানে সেই সময়কে দেখা এক ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে। মহাভারত ও তার সময়কে নিষ্কাশিত করেই পরিকল্পিত ‘মহাবৈদুর্য্য’। মহাভারতের কাল সমকালীন হয়ে উঠবে ‘শঙ্খমালা’-র এই প্রযোজনায়। রচনা অমিতাভ কাঞ্জিলাল। বাচিক ও দৃশ্য পরিকল্পনায় যথাক্রমে সুমন্ত্র সেনগুপ্ত ও বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গীত পরিচালনা শ্রীজিত ভট্টাচার্য। আবহ শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়। আলো দীপঙ্কর দে। আলো-আবহ-দৃশ্য সমন্বয়ে অসাধারণ ও চূড়ান্ত ব্যতিক্রমী এক প্রযোজনা হয়ে উঠতে চলেছে ‘মহাবৈদুর্য্য’। প্রায় দুবছর পরে শঙ্খমালার এই প্রযোজনা ঘিরে বাংলার সংস্কৃতিপ্রেমী দর্শকের উৎসাহ তুঙ্গে। আগামী ৬ আগস্ট কামারহাটি নজরুল মঞ্চে সন্ধে ৬টায় মঞ্চস্থ হবে ‘মহাবৈদুর্য্য’।