Monday, February 3, 2025
ওয়েব-Wave

‘শিকারপুর’-এ রহস্য জমজমাট

হাতে হাতে স্মার্টফোন। তরুণ প্রজন্মের চোখ ইদানীং নিত্যনতুন ওয়েব সিরিজে। সারা বিশ্বের স্ট্রিমিং বিনোদন এখন হাতের মুঠোয়। সেইসব সিরিজ নিয়েই নানাকথা এই বিভাগে। আপাতত রহস্যের জালেই ঘেরা ওটিটি প্ল্যাটফর্ম। জিফাইভ-এ দুরন্ত গতিতে চলছে ‘শিকারপুর’। পড়ুন অজন্তা সিনহার কলমে।

বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত সব গোয়েন্দা চরিত্র, যাদের নাম লোকের মুখে মুখে ফেরে, কেষ্ট স্বপ্নে দেখে একদিন তার নামেও এভাবেই ডঙ্কা বাজবে। পেশায় ফটোগ্রাফার কেষ্টর অবশ্য একজন জীবন্ত গুরুও রয়েছে, মানে কেষ্ট তাকেই গুরু মেনেছে। সেই গুরু দিনদয়াল বিশ্বাসই আপাতত কেষ্টর অনুপ্রেরণা। তার মতোই গোয়েন্দা হওয়ার স্বপ্ন দেখে কেষ্ট। উত্তরবঙ্গের এক ঘুমন্ত, নির্জীব শহরে এভাবেই পল্লবিত হয় কেষ্টর গল্প। আমরা দেখি একের পর এক খুনের রহস্য সমাধান করার চেষ্টা করছে কেষ্ট। রটনা, এই সব খুনের পিছনে রয়েছে একটি প্রেতাত্মা। যাঁরা এখনও শিকারপুর দেখেননি জিফাইভ-এ, তাঁরা একেবারে দেরি না করে দেখে ফেলুন এই ৯ পর্বের সিরিজ।

97012766.Cms
'শিকারপুর'-এ রহস্য জমজমাট 6

পর্বে পর্বে শুধু খুন আর কেষ্টর গোয়েন্দা হওয়ার স্বপ্ন নয়। আছে দৃষ্টিনন্দন প্রাকৃতিক পরিবেশে জমাটি প্রেম এবং বাবা দিনদয়াল ও মেয়ে চুমকির মরমি সম্পর্কের রসায়ন। অন্যদিকে চুমকি আর কেষ্টর রোমান্স। সঙ্গে পুলিশ অফিসার বিমান মাঝির সঙ্গে কেষ্টর নিত্য ঝামেলা। দিনদয়াল শিকারপুরে বসবাসকারী প্রাক্তন গোয়েন্দা। অধুনা কেষ্টর উস্তাদ। এরা ছাড়াও রয়েছে আরও অনেক চরিত্র। কেষ্টর ভূমিকায় অঙ্কুশ হাজরা। তাঁর কথায় পরে আসছি। দিনদয়াল হয়েছেন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। কৌশিক এমন একজন অভিনেতা, যাঁকে যেখানে ফেলা হবে, সোনাই ফলবে। অতনু ঘোষের ছবি ‘আরো এক পৃথিবী’ থেকে ওয়েব সিরিজ ‘শিকারপুর’, বাংলা বিনোদনে কৌশিক নিজের অপরিহার্যতার প্রমাণ রেখেই চলেছেন।

Images 2 7
'শিকারপুর'-এ রহস্য জমজমাট 7

আছেন সন্দীপ্তা সেন (চুমকি)। সন্দীপ্তা একজন স্মার্ট ও শিক্ষিত অভিনেত্রী। টেলিভিশনের পর ওটিটি প্ল্যাটফর্মেও কামাল করা একেকটি কাজ করে চলেছেন তিনি। এছাড়াও অভিনয় করেছেন দেবাশিস মণ্ডল (বিমান), কোরক সামন্ত (কেষ্টর সহকারী বল্টু বর্মন), সায়ন ঘোষ (ম্যাজিশিয়ান ডেভিড মায়াজাল), দেবেশ রায়চৌধুরী (রামপ্রকাশ ঘোষ), দোলা চক্রবর্তী (চুমকির মা) ও কৃষ্ণেন্দু দেওয়ানজী (মানিক ঘোষ) প্রমুখ। রহস্যে ঘেরা ‘শিকারপুর’-এ অপরাধ, প্রেম, হালকা মজা–সবই আছে। আর আছে ঘন রহস্যের মেজাজের সঙ্গে খাপ খায়, এমন নিখুঁত আবহ। সবশেষে কাহিনির দুর্দান্ত বিন্যাস ও প্রত্যেক অভিনেতার চরিত্রের সঙ্গে মিশে যাওয়া।

Images 2 8
'শিকারপুর'-এ রহস্য জমজমাট 8

অঙ্কুশ বাংলা ছবির সুপারস্টার, বহু হিট ছবি উপহার দিয়েছেন তিনি আমাদের। ওয়েব দুনিয়ায় তিনি পা রাখেন ‘কেস জন্ডিস’ নামের এক কমেডি সিরিজের মাধ্যমে। কোভিড ১৯ ও তার কারণে জারি হওয়া লক ডাউনের সময় সিরিজটি বানিয়েছিলেন শুভঙ্কর চট্টোপাধ্যায়। সকলেই সেই সময় গৃহবন্দি। বাড়ি থেকে ফোন ও ভিডিও কলের মাধ্যমে শুট করা হয় সিরিজটি। সে ছিল এক অভিনব প্রচেষ্টা। এই প্রচেষ্টার শরিক ছিলেন অঙ্কুশও এবং সেখানেও তাঁর স্বচ্ছন্দ অভিনয়, দুরন্ত কমিক টাইমিংয়ের পরিচয় মেলে। ‘শিকারপুর’ ওটিটি প্ল্যাটফর্মে তাঁর দ্বিতীয় কাজ। বলতে দ্বিধা করবো না, অঙ্কুশ ছাড়া আর কারোর পক্ষে এমন সহজাত ভাবে কেষ্ট হয়ে ওঠা সম্ভব ছিল না।

Images 2 9
'শিকারপুর'-এ রহস্য জমজমাট 9

গত জানুয়ারিতে ‘শিকারপুর’-এর স্ট্রিমিং শুরু হয়েছে। ক্রিয়েটর শ্যাডো ফিল্মস। গল্প ও চিত্রনাট্য নির্ঝর মিত্র, নীলাঞ্জন চক্রবর্তী, সায়ক রায়। পরিচালনা নির্ঝর মিত্র। উপস্থাপনা কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। শ্যাডো ফিল্মস-এর পক্ষে সিরিজটি প্রযোজনা করেছেন শ্যামসুন্দর দে। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সমালোচকরা ইতিমধ্যেই বেশ ভালো রেটিং দিয়েছে ‘শিকারপুর’-কে। উচ্চ প্রশংসিত কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় ও দেবাশিস মণ্ডলের অভিনয়। সত্যি কথা বলতে কী, আমার ব্যাক্তিগতভাবে এর মেকিং বেশ স্মার্ট লেগেছে। গতিও বেশ দ্রুত। পর্বগুলি আগ্রহ জাগিয়ে শেষ হয়। অর্থাৎ ‘শিকারপুর’ শুরু থেকেই তার মাল্টিসিজন হওয়ার সম্ভাবনা জিইয়ে রাখে। প্রথম সিজন শেষ হয় মধুরেন সমাপয়েত সুরে, পরের সিজনের অপেক্ষা রেখে।