Sunday, May 5, 2024
কৃষ্টি-Culture

শীতের কলকাতা মজে রইল স্বর সম্রাট ফেস্টিভ্যালে

দেখতে দেখতে এগারো বছরে পা দিল স্বর সম্রাট ফেস্টিভ্যাল। দেশের অন্যতম সেরা শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের উৎসব বলে সারা দেশেই সমাদৃত এখন এই আয়োজন। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। প্রসঙ্গত, দীর্ঘ এগারো বছর যাবৎ দেশের খ্যাতনামা সরোদ বাদক পন্ডিত তেজেন্দ্র নারায়ণ মজুমদার এবং তাঁর স্ত্রী বিদুষী মানসী মজুমদার এবং পুত্র ইন্দ্রায়ুধ স্বর সম্রাট ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করে আসছেন। দায়িত্বে আছে শ্রী রঞ্জনী ফাউন্ডেশন। পন্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ন তাঁর গুরু স্বর সম্রাট ওস্তাদ আলি আকবর খানের নামেই এই উৎসব করেন। গত ১৫, ১৬, ১৭ ডিসেম্বর–তিন দিন ধরে প্রতি বছরের মতো নজরুল মঞ্চে বসেছিল এই আসর।

এ বছর স্বর সম্রাট ফেস্টিভ্যালে শিল্পীদের তালিকা ছিল চোখ ধাঁধানোর মত। দেশের তাবড় তাবড় শিল্পীরা এসেছিলেন অনুষ্ঠান করতে। এই প্রথম কলকাতায় অনুষ্ঠান করতে এলেন দেশের প্রখ্যাত শাস্ত্রীয় সঙ্গীতশিল্পী রাহুল দেশপান্ডে। তাঁর পরিবেশনায় প্রায় দেড় ঘন্টা বুঁদ হয়ে রইলেন শ্রোতারা। এছাড়াও প্রথম দিনে তবলা শিল্পী পন্ডিত সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়ের একক তবলার অনুষ্ঠান ছিল অনবদ্য। তিনি তাঁর গুরু পন্ডিত জ্ঞানপ্রকাশ  ঘোষের তৈরি করা বহু সুর-তাল-লয় তবলার বোলে শোনালেন। প্রথম দিনে বিদুষী এন রাজম এবং  বিদুষী সঙ্গীতা শঙ্করের ভায়োলিন যুগলবন্দি ছিল মনে রাখার মতো। তবলায় সঙ্গত করছিলেন দিকপাল তবলা শিল্পী কুমার বোস। 

দ্বিতীয় দিনের অন্যতম আকর্ষণ ছিল ওস্তাদ শাহিদ পারভেজের সেতার বাদন। কলকাতার শ্রোতা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তাঁর বাজনা শুনলেন। এ বছর জীবনকৃতি পুরস্কার দেওয়া হলো কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী সঙ্গীতাচার্য অমিয়রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়কে, ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের আঙিনায় তাঁর অতুলনীয় অবদানকে ভাবনায় রেখে। জীবনকৃতি পুরস্কার গ্রহণ করার পর তাঁর অনুষ্ঠান ছিল দ্বিতীয় দিনের সেরা প্রাপ্তি। তিনি বলেন, “আমার জন্য যে এত কিছু আয়োজন করা হয়েছে, তাতেই আমি কৃতজ্ঞ।” এই বয়সেও তাঁর গায়কীতে মজে রইলেন শ্রোতারা। সরোদ বাদক পন্ডিত দেবজ্যোতি বোস এবং প্রখ্যাত তবলা শিল্পী পন্ডিত স্বপন চৌধুরীর যুগলবন্দি ছিল দ্বিতীয় দিনের আর এক না-ভোলা অভিজ্ঞতা। এছাড়াও, পন্ডিত কুমার বোসের আত্মজীবনী ‘তবলাওয়ালা’-র প্রচ্ছদ উন্মোচিত হয় এদিন। 

শেষদিনের মূল আকর্ষণ ছিল নিঃসন্দেহে স্বয়ং জাকির হোসেন–তবলার ঈশ্বরের উপস্থিতি। এদিন নজরুল মঞ্চ ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। স্বর সম্রাট ফেস্টিভ্যালে এই নিয়ে দশ বছর ধরে বাজিয়ে চলেছেন জাকির হোসেন। এবারেও তিনি বাজালেন এবং জয় করে নিলেন কলকাতার হৃদয়। “শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের এমন সমঝদার শ্রোতা কলকাতার মতো আর কোথাও নেই”–বললেন জাকির। রাগ যোগ দিয়ে শুরু করলেন। শেষ করলেন মহাদেবের ডমরু এবং শঙ্খের ধ্বনি শুনিয়ে। গোটা নজরুল মঞ্চের দর্শক তখন মন্ত্রমুগ্ধ।