Monday, February 3, 2025
বলিউডলাইম-Light

স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে তৈরি ‘বাহাত্তর হুরেইন’

নতুন ছবির মুক্তি হোক বা নির্মাণ। পোস্টার, ট্রেলার রিলিজ। ছবি হিট এবং ফ্লপ। তারকাদের জীবনের ওঠাপড়া। বাংলা ও হিন্দি মিলিয়ে সিনেমার দুনিয়ায় প্রতি মুহূর্তে ঘটে চলেছে নানা বৈচিত্রপূর্ণ ঘটনা। সেইসবই এই বিভাগে, প্রতি সপ্তাহে। ধর্মান্ধতা যখন রাজনৈতিক সন্ত্রাসে পরিণত–এমনই এক বিষয় নিয়ে সঞ্জয় পূরণ সিং চৌহানের ছবি মুক্তি পাচ্ছে আজ। লিখেছেন অজন্তা সিনহা

পরিচালক সঞ্জয় পূরণ সিং চৌহান তাঁর ছবি ‘বাহাত্তর হুরেইন’ সম্পর্কে বলেছেন, ‘ট্র্যাজিক রিমাইন্ডার অফ দ্য পাওয়ার অফ ম্যানুপুলেশন’! ডার্ক কমেডি নির্ভর এই ছবিতে সন্ত্রাসবাদের শিকড় আসলে ঠিক কোথায়, তাকে খুঁজে বের করার কথা আছে, এমনটাই জানিয়েছেন তিনি। খুব বেশি প্রচার ছাড়া আজই মুক্তি পাচ্ছে ‘বাহাত্তর হুরেইন’। প্রচার-মাধ্যম মুখ ফিরিয়ে থাকার কারণ কী এর স্পর্শকাতর বিষয় ? হবে, হয়তো। সকলেই নিজের পিঠ বাঁচিয়ে চলতে চায়। তাতে অবশ্য শেষ পর্যন্ত পিঠ বাঁচে না। তবু, আমরা সত্যের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে আত্মপ্রবঞ্চনা করে চলি। এটাও বলা জরুরি, স্পর্শকাতরতার পাশাপাশি বিষয়টি খুবই প্রাসঙ্গিক ও গুরুত্বপূর্ণ!

ধর্মবিশ্বাস যখন চরম অন্ধতায় পর্যবসিত, সেই অন্ধতা যখন রাজনৈতিক অস্ত্রে পরিণত–তখন মনুষ্যত্ব যে সবচেয়ে বিপদের মুখে গিয়ে দাঁড়ায়, তা যুগ যুগ ধরে এ দেশের ইতিহাস বলে চলেছে। আমরা অবশ্য সেটা শুনেও শুনি না। এ ছবিতে এমনই ধর্মান্ধ একটি দল, যারা ‘ফিদাইঁ’ নামে বিখ্যাত বা কুখ্যাত। এটি একটি আরবী শব্দ, যার অর্থ তথাকথিত ভাবে বৃহদর্থে নিজেদের জীবনকে উৎসর্গ করে যে গোষ্ঠী। অবশ্যই এই আত্মোৎসর্গের ব্যাপারটা ঘটে চরমপন্থার হাত ধরে। এক্ষেত্রে যুক্তি-বুদ্ধির কোনও জায়গা নেই। সম্পূর্ণ বিষয়টাই তীব্র ভাবাবেগ, সেকথা বলাই বাহুল্য। এককথায় গোয়ার্তুমিও বলা যায়। যেন অদৃশ্য থেকে কেউ তাদের প্রভাবিত ও তাড়িত করে নিয়ে বেড়াচ্ছে ! তারা এগিয়ে চলেছে এক স্বর্গীয় জগতে। তাদের লক্ষ্য সেই বাহাত্তর জন কুমারী কন্যা, যাদের খ্যাতি ‘বাহাত্তর হুরেইন’ বলে !

ধর্মগ্রন্থে বর্ণিত কোনও এক বিশেষ অধ্যায় অথবা বাণীকে আধার করে, কীভাবে সাধারণ ধর্ম বিশ্বাসী মানুষের মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করার সাহায্যে তাদের ধর্মান্ধ সন্ত্রাসবাদীতে পরিণত করা হয়, সেটাই এ ছবির অন্তর কথা। বিশেষত সেই প্রবাদের প্রচার, ‘স্বর্গের বাহাত্তর কুমারী’ লাভ–এই বিশ্বাসে জিহাদের নামে তরুণ প্রজন্মকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেওয়ার এক চক্রান্ত ! আদতে তাদের ভিন্ন ধর্মের মানুষের প্রতি বিদ্বেষী করে তোলা ! পরিণতি চরম হিংসা ও সন্ত্রাস।

হিন্দি ছাড়াও ইংরেজি এবং দেশীয় ভাষা বাংলা, তামিল, তেলুগু, মালয়ালম, কন্নড়, পাঞ্জাবি, মারাঠি, অসমিয়া, ভোজপুরি, কাশ্মীরিতে ডাব করা হয়েছে এই ছবি। অভিনয়ে সরু মাইনি, আমির বশির, পবন মালহোত্রা, রশীদ নাজ, অশোক পাঠক, নম্রতা দীক্ষিত, মুকেশ অগ্রহারি, ভবানী বশির ইয়াসির, নরোত্তম বেইন, বিজয় সনপ প্রমুখ। প্রযোজনা গুলাব সিং তনওয়ার, অশোক পণ্ডিত, কিরণ দগর, অনিরুদ্ধ তনওয়ার। গল্প লিখেছেন অনিল পান্ডে। সিনেমাটোগ্রাফার চিরন্তন দাস। ছবিটি ইতিমধ্যেই সমালোচকদের দ্বারা প্রশংসিত ও বিভিন্ন উৎসবে পুরস্কৃত। এখন সাধারণ দর্শক এ ছবি কতটা গ্রহণ করে, সেটাই দেখার !