বাংলার পরিচালকের বলিউড ডেবিউ ‘ছিপকলি’
নতুন ছবির মুক্তি হোক বা নির্মাণ। পোস্টার, ট্রেলার রিলিজ। ছবি হিট এবং ফ্লপ। তারকাদের জীবনের ওঠাপড়া। বাংলা ও হিন্দি মিলিয়ে সিনেমার দুনিয়ায় প্রতি মুহূর্তে ঘটে চলেছে নানা বৈচিত্রপূর্ণ ঘটনা। সেইসবই এই বিভাগে, প্রতি সপ্তাহে। এই সপ্তাহে অভিনেতা পরিচালক কৌশিক করের বলিউড ডেবিউ ‘ছিপকলি’ নিয়ে লিখেছেন অজন্তা সিনহা।
হিন্দি ছবির দর্শক সিনেমায় তাঁকে মূলত নেগেটিভ চরিত্রেই দেখেছেন। যদিও থিয়েটার নিবেদিত প্রাণ এই অভিনেতার প্রতিভা ও দক্ষতার ব্যাপ্তি বহুদূর। মঞ্চের দর্শক জানেন সে তথ্য। এমনকী বলিউডি ছবিতেও তাঁর ক্ষমতার ঝলক দেখা গেছে, হোক না সে অধিকাংশই খারাপ মানুষের চরিত্র। পাঠক স্মরণ করুন লগান-এর লখা, গঙ্গাজল-এর সুন্দর যাদব, অপহরণ-এর গয়া সিং, রাউডি রাঠোর-এর ইন্সপেক্টর বিশাল, অব তক ছপ্পন-এর ইমতিয়াজকে–নেগেটিভ বলি বা চরিত্রাভিনেতা–যশপাল শর্মা অননুকরণীয়। তাঁর তুলনা তিনিই ! এহেন যশপাল অভিনীত ‘ছিপকলি’-কে ঘিরে অন্তত কিছু ব্যতিক্রমী দর্শকের যে আগ্রহ তীব্র, তাতে সন্দেহ কী ! এঁদের জন্যই আশা করা যায়, বলিউডের একগুচ্ছ মশালা ছবির ভিড়ে হারিয়ে যাবে না এই ছবি।
ক্রাইম থ্রিলার ‘ছিপকলি’ অর্থাৎ ‘টিকটিকি’ কাহিনি ইতিমধ্যেই বাংলা রঙ্গমঞ্চ থেকে ওয়েব সিরিজে পরিবেশিত। নাটক হিসেবে ‘টিকটিকি’ চূড়ান্ত সফল। স্বপ্নসন্ধানী-র এই প্রযোজনায় প্রয়াত কিংবদন্তি অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও কৌশিক সেনের অভিনয় বাংলা মঞ্চে ইতিহাস সৃষ্টি করে। ওয়েব সিরিজে অভিনয় করেন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় ও অনির্বাণ ভট্টাচার্য। এঁরাও দুজনেই কামাল করা অভিনেতা ! ফলত, ধ্রুব বন্দোপাধ্যায় পরিচালিত ওয়েব সিরিজটিও প্রত্যাশিত মাত্রাতেই জমে যায়।
পরিচালক ও অভিনেতা কৌশিক কর মঞ্চ এবং পর্দার বাঙালি দর্শকের কাছে পরিচিত নাম। তাঁকে আমরা পেয়েছি ‘লড়াই’, ‘ব্যোমকেশ পর্ব’, ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ ছবিতে। বলিউডে ‘ছিপকলি’-র হাত ধরেই পরিচালক রূপে ডেবিউ করছেন কৌশিক। চিত্রনাট্যও তাঁরই লেখা। শোনা গেছে, তাঁর শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা সংবাদ মাধ্যমকে জানাতে গিয়ে কৌশিক সম্পর্কে উচ্ছ্বসিত হয়েছেন যশপাল। নিঃসন্দেহে বিষয়টা আমাদেরও আনন্দিত করে। ‘ছিপকলি’ প্রযোজনা করেছে স্টুডিওগ্রাফ এন্টারটেনমেন্ট ও সুয়ান সিলভার স্ক্রিন প্রোডাকসন্স। ছবির শুটিংয়ের পুরোটাই হয়েছে বহরমপুরে। ‘ছিপকলি’-তে যশপাল শর্মার সঙ্গে আছেন যোগেশ ভরদ্বাজ ও তন্নিষ্ঠা বিশ্বাস। যোগেশ জনপ্রিয় হরিয়ানি ওয়েব সিরিজ ‘কলেজ কাণ্ড’-এ যশপালের সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করেছেন। এখানে অবশ্য তিনি একেবারে ভিন্ন অবতারে। প্রত্যাশিত, দুজনের পর্দার রসায়ন আরও একবার টেনে রাখবে দর্শক মনোযোগ। তন্নিষ্ঠা বিশ্বাস বাংলা মঞ্চ ও ছবির পরিচিত নাম। বিভিন্ন বিনোদন মাধ্যমে সাফল্যের সঙ্গে কাজ করেছেন। ‘ছিপকলি’ তাঁর কেরিয়ারে কতটা বাড়তি মাত্রা যোগ করবে, তা সময়ই বলবে।
‘ছিপকলি’ কাহিনি পূর্ণমাত্রায় এক মনস্তাত্বিক নিবেদন, যেখানে পুরো বিষয়টি উঠে আসে একজন ডিটেকটিভ ও খুনের অভিযোগে সন্দেহের তালিকায় থাকা এক মানুষের মধ্যে প্রশ্নোত্তরের ভিত্তিতে। একজন লেখকের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তার স্ত্রী ও ছেলেকে খুন করার। যদিও হাইকোর্টে তার অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় সে ছাড়া পেয়ে যায়। বেশ কয়েক বছর পর, অন্য এক প্রেক্ষাপটে ঘটনাচক্রে এক চৌখস ডিটেকটিভ এই লেখককে সওয়াল জবাবের সামনে দাঁড় করায়। বিপরীতমুখী দুজনের মন ও জীবন দর্শন। ডিটেকটিভ প্রবল বাস্তববাদী। আর লেখক তথা সম্ভাব্য অপরাধী তার কল্পনার দুনিয়ায় বিচরণ করে। এমন দুই ভাবনার জগৎ একে অপরের সঙ্গে টক্কর দিলে কী ঘটতে পারে, তারই অন্তর্মুখী বিশ্লেষণ উঠে আসবে পরতে পরতে। বলা বাহুল্য, বুদ্ধিদীপ্ত সেইসব সংলাপই দর্শকের জন্য যোগান দেবে চুলচেরা ভাবনার রসদ।
দুটি চরিত্রের কথোপকথনে সামাজিক জীবন, তার রীতিনীতি, বিচার ব্যবস্থা এই সবকিছুর প্রসঙ্গই উঠে আসবে সূক্ষ বিশ্লেষণে। আমরা চোখে যা দেখি, সেটাই কী সবটা ? নাকি আমাদের দর্শনে থাকে অসম্পূর্ণতা ! বাস্তবতা আসলে কী ? সত্য আর মিথ্যের মাঝে আদতেই সীমারেখা টানা যায় কী ? এসব নানা প্রশ্নে দর্শকও সম্পৃক্ত হয়ে যাবেন। তাঁরা ভাবতে বাধ্য হবেন, সত্যি কী অপরাধ গোপন করে, তথাকথিত ভাবে আদালতের কাছ থেকে মুক্তির পরোয়ানা নিয়ে আমরা সম্পূর্ণ মুক্ত হতে পারি ? নির্ভুল অপরাধ বলে কী সত্যিই কিছু হয় ? যাবতীয় প্রশ্নে আপনাকে আলোড়িত করে তুলতে আগামী ৭ এপ্রিল মুক্তি পাবে ‘ছিপকলি’। আপাতত টানটান অপেক্ষা।