তাসের দেশে ভ্রমরের গুঞ্জন : শুধুই কি গান নাকি স্বাধীনতার বাণী
গত ২৪ শে মে ওটিটি মিউজিক-এর নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে মুক্তি পেয়েছে অতি পরিচিত রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘ঘরেতে ভ্রমর এলো‘। গানটি গেয়েছেন বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী স্নিতা প্রামাণিক Snita Pramanik । গানের ডিজিটাল ডিস্ট্রিবিউশন পার্টনার ওটিটি সলিউশনস প্রাইভেট লিমিটেড। ১৯১১ খ্রীষ্টাব্দে কলিঙ্গড়া রাগাশ্রয়ী এই গানটি রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি। দাদরা তালের এই গানটি প্রেম পর্যায়ের অন্তর্গত। পরবর্তীকালে তাঁর বিখ্যাত নৃত্যনাট্য ‘তাসের দেশ’-এ এই গানটি ব্যবহৃত হয়।
১৯০৫ এর কালপর্ব। তৎকালীন গভর্নর জেনারেল লর্ড কার্জন ঘোষণা করেন বঙ্গভঙ্গের কথা। আপামর বঙ্গবাসীকে সেই প্রেক্ষাপটে কবিগুরু বুঝিয়েছিলেন স্বাধীনতা ও সম্প্রীতির প্রয়োজনীয়তা। থেমে থাকেনি তাঁর লেখনীর জয়জয়কার Snita Pramanik । পূর্ণ স্বাধীনতা এবং পরিবর্তনের বাণী তাঁর দেশপ্রেম বিষয়ক সৃষ্টির প্রধান রসদ। নূতনের আহ্বায়ক রবীন্দ্রনাথ ছিলেন শুভ বিপ্লবের পূজারী। এ আলোচনা ‘তাসের দেশ’ -এর অবতারণা ব্যতীত অসম্পূর্ণ।
১৯৩৩ সালে বিপ্লবী সুভাষচন্দ্র বসুকে উৎসর্গ করে এই নৃত্যনাট্য প্রকাশিত হয়। মূল গল্পের সূচনা দুই বন্ধুর বচসাকে কেন্দ্র করে। বন্দীত্বের অসুখ আর মুক্তির সুখ এই ছিল যার উপজীব্য। যৌবনের একঘেয়েমি ছেড়ে রাজপুত্র খুঁজতে চান প্রেয়সীকে। অবশ্যই তা রক্ত মাংসে গড়া কোনো নারী নয়, জীবনানন্দের সুচেতনার মত সে এক মুক্ত মনের ভাবনা। পৌঁছে যান তাসের দেশে। তাসের দেশ যেন এক ‘অচলায়তন’। আর রাজপুত্র যেন সেই ‘অচলায়তন’-এ একপ্রস্ত দক্ষিণের বাতাস। মূল মন্ত্র ছিল এই যে – ঔপনিবেশিকতার নাগপাশ থেকে সকল দেশবাসীর স্বাধীনতা। শুধু তাই-ই নয়, পিতৃতান্ত্রিকতার কঠোর বিধিনিষেধে অবশ নারী মনে পুনরায় স্বাধীনতার সাড়া ফিরিয়ে দেওয়া। সেই প্রসঙ্গে ‘ঘরেতে ভ্রমর এলো’ গানটি হয়তো কেবল প্রেম আঙ্গিকের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। চিরাচরিত নর-নারীর প্রেমের উর্দ্ধে এই গান যেন রবীন্দ্রনাথের মানবপ্রেমের আদর্শে আঁকা এক অমোঘ সৃষ্টি।