Monday, February 3, 2025
কৃষ্টি-Culture

আগামী কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় প্রকাশ পাবে সাহিত্যিক শাহানাজ ইয়াসমিনের সাত নম্বর কেবিন।

শাহানাজ ইয়াসমিন বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সাহিত্যে উজ্জ্বল নক্ষত্র। কবিতা, গল্প, উপন্যাসে দুই বাংলায় বহুল আলোচিত, পাঠককুলে জনপ্রিয়। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৪ এ তাঁর “সাত নম্বর কেবিন” উপন্যাসটি প্রকাশিত হতে চলেছে। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ “গহিনের প্রেম”। দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ “নৈঃশব্দের কোলাহল”। এরপর তিনি একে একে বেশ কয়েকটি উপন্যাস লেখেন। কাব্যগ্রন্থের পর তাঁর লেখা প্রথম উপন্যাস ছিল “মেঘলা আকাশ”। উপন্যাসটি কলকাতায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল। তিনি কলকাতার বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেছিলেন এই উপন্যাসে যা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। বইটি প্রকাশিত হয়েছিল ২০১৭ সালে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় “অনিন্দ্য প্রকাশ” থেকে। বইটি পাওয়া যাবে কলকাতায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ বইমেলা ও ইন্টারন্যাশনাল বুকফেয়ারে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন “অনিন্দ্য প্রকাশ”এর স্টলে। “সমুদ্রের তরি” তাঁর দ্বিতীয় উপন্যাস এবং “ভালোবাসা ছুঁয়ে গেলে” তৃতীয় উপন্যাস। তাঁর লেখা এই বইগুলি নির্দ্বিধায় পাঠক মন ছুঁয়ে গেছে।

Img20190129145552
আগামী কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় প্রকাশ পাবে সাহিত্যিক শাহানাজ ইয়াসমিনের সাত নম্বর কেবিন। 7

“সাত নম্বর কেবিন” একটি রোম্যান্টিক উপন্যাস হলেও দুঃখ, বেদনা, আনন্দ, রহস্য এই সমস্ত কিছুরই মিশ্রণ রয়েছে বইটিতে। এটি তাঁর চতুর্থ উপন্যাস। নব্বইয়ের দশকে মুঠোফোনের প্রচলন ছিলনা বললেই চলে। দূর থেকে প্রিয়জনের খবর ও কুশলাদি জানা বা জানানোর একমাত্র মাধ্যম ছিল চিঠি অথবা টিএন্ডটি ফোন। জরুরী কোনো সংবাদ জানানোর জন্য ছিল ট্রাঙ্কল সংযোগ। সে সময়ে মানুষ হাতে লেখা একটি চিঠির রেশ বয়ে বেড়াতো মাসের পর মাস। বছরের পর বছর। ছিল ডাকপিয়নের অপেক্ষা। খাকি পোশাক পরা ডাকপিয়ন ভাইটি কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তির চিঠি এনে কবে কখন দরজায় কড়া নাড়বে, সেই অপেক্ষায় স্থির থাকতো কর্ণযুগল! এই সমস্ত কিছুর সমন্বয়ে রচিত “সাত নম্বর কেবিন” উপন্যাসটি। আশা করি কবি ও ঔপন্যাসিক শাহানাজ ইয়াসমিন-এর “সাত নম্বর কেবিন” উপন্যাসটি এবারও পাঠক মহলে তুমুল সমাদৃত হবে আমরা নিশ্চিত। এই উপন্যাসটি প্রকাশ করেছেন ; ‘আহমদ পাবলিশিং হাউস’, বাংলাদেশ, ঢাকা। প্রচ্ছদ করেছেন ; চিত্রশিল্পী – চারু পিন্টু। উপন্যাসটি ২০২৪ সালে কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে পাওয়া যাবে ‘আহমদ পাবলিশিং হাউস’ স্টলে।

গত দুবছর বই প্রকাশ না হওয়ায় বাংলাদেশে এবং কলকাতার প্রিয় পাঠকগণ খোঁজ নিতেন, আপু এবছর আপনার বই কি আসছে? অথবা দিদি এ বছর তোমার কি বই আসছে? তোমার বই পড়ে এক্টুও বোরিং হই না, শুধু মনে হয় এরপর কি আছে? এরপর কি আছে? বইয়ের নায়ক-নায়িকাদের মিলন ঘটাতে পাঠকরাই যেন সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন। তারা বলেন, আমরা চাই উপন্যাসের নায়ক-নায়িকাদের মিলন ঘটুক। কি করে এমন টাচি বই লেখো বলো তো! পাঠকদের এমন প্রশ্নের জবাবে শাহানাজ ইয়াসমিন হেসে বলেন – ‘আমি তো আসলে লেখক হয়ে বই লিখি না, আমি একজন পাঠক হয়ে বই লিখি।’ কতটা সুগভীর চিন্তাধারার মানুষ হলে এমন সহজ ভাষায় এত অসাধারন উত্তর দিতে পারেন তা সত্যিই ভাবার বিষয়।

শাহানাজ ইয়াসমিন সদা হাস্যময়ী এবং সুমিষ্ঠ ভাষী একজন মানুষ। তিনি অনেক সময় নাটক, সিনেমা এবং বিজ্ঞাপনে বিভিন্ন সংলাপে কন্ঠদান করে থাকেন। এছাড়াও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় বিভিন্ন অনুষ্ঠান সঞ্চালনার পাশাপাশি কিছু সংগঠনের সাথে যুক্ত আছেন। তিনি অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন এবং সাদা মনের একজন মানুষ। যে কোনো ধর্মের মানুষকে তিনি খুব সহজেই আপন করে নেন এবং মর্যাদা দেন। এছাড়াও তিনি একজন প্রকৃতি প্রেমী মানুষ। তাঁকে আকৃষ্ট করে নির্জন দুপুরে নীরব প্রকৃতি, গাছের ছায়া আর বিভিন্ন শব্দ। তিনি যেমন প্রকৃতির নীরব ভাষা বোঝার চেষ্টা করেন, তেমন পশু-পাখি তাদেরও বলতে না পারা ভাষা বোঝার ও কথা বলার চেষ্টা করেন। তিনি অত্যন্ত সৌখিন মনা এবং বিনয়ী স্বভাবের একজন মানুষ। বই পড়া, বই লেখা, রবীন্দ্রসংগীত শোনা এবং দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখা তাঁর অন্যান্য শখের মধ্যে প্রধান শখ। তিনি নিজের উপর আস্থা রেখে চলতে পছন্দ করেন, পর নির্ভরশীলতা এড়িয়ে চলেন। তাঁর ভাষ্যমতে, অন্যের উপর নির্ভরশীলতা মানুষকে দুর্বল করে, নিজের উপর আস্থা মানুষকে শক্তিশালী করে। সেই লক্ষেই তিনি সাহস ও শক্তি বৃদ্ধি করেন এবং সামনের দিকে এগিয়ে চলেন।

শাহানাজ ইয়াসমিন একজন বহুল প্রতিভাবান মানুষ। জন্ম বাংলাদেশের বৃহত্তর রংপুর জেলায় এবং বসবাস ঢাকায়। ইতিহাসে এম এ। তিনি ছায়ানটে রবীন্দ্রসংগীত বিভাগের ছাত্রী ছিলেন যদিও চাকরি জীবনে কাজের ব্যাস্ততার কারনে তা সম্পন্ন হয়ে ওঠেনি। বাবা মোঃ আব্দুর রজ্জাক, মা শামসুন নাহার বেগম। করোনা আক্রান্ত হয়ে ২০২০ সালের জুলাই মাসের ০১ তারিখ তাঁর বাবা চলে যান না ফেরার দেশে এবং মা স্ট্রক করে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ২০২২ সালের ২০শে ফেব্রুয়ারি। আমরা তাঁর বাবা-মায়ের আত্মার শান্তি কামনা করছি। মাত্র আঠারো মাসের ব্যবধানে মা-বাবা দুজনকেই হারিয়ে শাহানাজ ইয়াসমিন মানসিকভাবে অত্যন্ত ভেঙে পড়েন এবং গত দু বছর বই প্রকাশে অপারগ হয়ে পড়েন। কিন্তু সময় ও প্রকৃতি তার নিজস্ব গতিতে পুনরায় মানুষকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করে। তাই তো প্রকৃতি তার উদারতায় পুনরায় শক্তির যোগান দিয়ে শাহানাজ ইয়াসমিনকে ঘুরে দাঁড়াতে শিখিয়েছে। তার বাবা-মা, দাদা-দাদি, তারা অত্যন্ত সৌখিন মনা এবং বিবেকবান মানুষ হিসাবে সকল শ্রেণীর মানুষকে খুব ভালোবাসতেন। শাহানাজ ইয়াসমিন অত্যন্ত সম্ভ্রান্ত পরিবারের একজন মেয়ে। তারা চার বোন এক ভাই। তাঁর নানা বাংলাদেশের মানুষ হলেও তিনি দেশ ভাগের পূর্বে দার্জিলিং, শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি সহ বিভিন্ন জায়গায় থেকেছেন ও চাকরি করেছেন। তিনি ছিলেন একজন পি ডব্লিউ ডি কর্মকর্তা। সেই সুবাদে তাঁর মায়ের বেড়ে ওঠা এবং লেখাপড়ার শুরু হয় দার্জিলিং এ। দেশ ভাগের সময় তাঁর নানা পরিবার নিয়ে ফিরে আসেন জন্মভূমি বাংলাদেশের নিজ বাড়িতে। মা শামসুন নাহার বেগম ছিলেন বেশ সংস্কৃতিমনা একজন মানুষ। শাহানাজ ইয়াসমিন যখন প্রাইমারি স্কুলের ছাত্রী ছিলেন তখন গান সম্পর্কে তাঁর কোনো অভিজ্ঞতাই ছিল না। মা শামসুন নাহার বেগম প্রায়ই অবসর সময়ে একটি রবীন্দ্রসংগীত গাইতেন আপন মনে-

চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙেছে,

উছলে পরে আলো,

ও রজনীগন্ধা তোমার গন্ধসুধা ঢালো

শাহানাজ ইয়াসমিন যখন সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী তখন বুঝতে পারেন, তাঁর মা অবসর সময়ে মাঝে মাঝে যে গানটি গাইতেন সেটি ছিল রবীন্দ্র সঙ্গীত। এরপর থেকেই তাঁর রবীন্দ্র সঙ্গীতের প্রতি ভালোবাসা তৈরি হয় এবং অষ্টম শ্রেণী থেকে ডায়েরি লেখার প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। বিভিন্ন বাস্তব অভিজ্ঞতা নিয়ে ডায়েরি লেখাটা যেন তাঁর প্রতিদিনের নিয়মে এসে দাঁড়ায়।

অষ্টম ও নবম শ্রেণীতে এসে পাঠ্য পুস্তকের পাশাপাশি অন্যান্য গল্পের বই পড়া,রবীন্দ্র সংগীত শোনা,কবিতা শোনা এসব যেন নেশায় পরিণত হতে থাকে শাহানাজ ইয়াসমিনের! তিনি মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষে বেশির ভাগ সময়ই রাত জেগে গল্পের বই পড়তেন আর ভোর ছটায় ঘুমাতে যেতেন। আবার কখনো কখনো ভোর ছটায় উপন্যাস পড়া শুরু করতেন এবং সন্ধ্যা ছটার মধ্যেই পুরো বই পড়ে শেষ করতেন। সেই থেকে বইয়ের প্রতি তাঁর নেশা তৈরি হয় এবং এই নেশা থেকেই তিনি চলে আসেন লেখার জগতে, যা বর্তমানে চলমান এবং আগামীতেও চলমান থাকবে।