Monday, February 3, 2025
সম্পাদকীয়

চূড়ান্ত দেখানোপনা

আমি ও আমার মেয়ে জলে পড়ে নেই। অভিষেক চ্যাটার্জি তাঁর স্ত্রী ও মেয়ের জন্য সব আর্থিক নিরাপত্তা দিয়ে গেছেন–স্বামীর শ্রাদ্ধের দিন কার্যত ক্ষোভে ফেটে পড়েন প্রয়াত অভিনেতার স্ত্রী সংযুক্তা চ্যাটার্জি। অভিষেক মারা যাওয়ার পর থেকেই তাঁর আর্থিক অবস্থা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রচুর লেখালেখি শুরু হয়। তাঁর সহকর্মী অর্থাৎ ইন্ডাস্ট্রির লোকজনের মুখ থেকেই এই সংক্রান্ত কথাবার্তা ছড়ায়। এই জাতীয় কথাবার্তার যা চরিত্র, রঙ চড়িয়ে পল্লবিত হয়ে সত্য-মিথ্যা একাকার হয়ে যায়। বলা বাহুল্য, এই প্রেক্ষিতে অভিষেকের স্ত্রী সংযুক্তার প্রতিক্রিয়া অত্যন্ত প্রত্যাশিত ও যুক্তিগ্রাহ্য। যেটা নয়, সেটা বলে, সস্তা মেলোড্রামা তৈরি করে লোকের, থুড়ি মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষন করতে গিয়ে সেই পরিবারটিকে যে অপমান করা হচ্ছে, সেটা মনেই রাখে না এরা।

শুধু আর্থিক পরিস্থিতিই নয়, কে কবে তাঁর সঙ্গে পেশাদারী শত্রুতা করেছে, সেই গল্প থেকে অভিষেকের অন্যান্য ব্যক্তিগত নানা বিষয় নিয়েও মুখরোচক বৃত্তান্ত ঘুরে বেড়ায় ইন্ডাস্ট্রি থেকে মিডিয়ার প্রচারে। সেইসবেরও প্রতিবাদ করে সংযুক্তা বার বার বলেছেন, আমাদের একটু প্রাইভেসি দিন দয়া করে! প্রাইভেসি–এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেলিব্রিটি হলেই এই এক জ্বালা–সঙ্গে তাঁর পরিবারেরও। একটা মানুষ চিরকালের মতো চলে গেছেন। তাঁর জন্য সবচেয়ে হাহাকার ও বেদনার গভীরে ডুবে আছে তো তাঁর পরিবার। ইন্ডাস্ট্রি আর মিডিয়া যেন যৌথভাবে মাঠে নেমেছে সেই গভীর জায়গাটাকে ছিন্নভিন্ন করার। যদি ঘোলা জলে দু’চারটে মাছ ধরা যায় !

মৃত্যু, কোথাও যে মরমি, সূক্ষ, সংবেদনশীল এক অনুভূতি। চলে যাওয়া মানুষটির সঙ্গে একান্তে যাঁরা জড়িয়ে থাকেন তাঁদের শোক, যন্ত্রণার মাঝে একটা নম্রতা থাকে। বাইরের কোলাহল সেই অনুভূতির জায়গাটায় অজান্তেই যে আঘাতটা করে, তা অত্যন্ত স্থূল। অভিষেক চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যু ও তাকে ঘিরে গত কয়েকদিন যা দেখলাম, তা বড্ড সস্তা ও নিম্নরুচির এবং উচ্চকিত–অতি নাটকীয় ও ভন্ড। এর সঙ্গে আর যাই হোক, অন্তরের কোনও যোগ নেই। যা আছে, তা শুধুই চূড়ান্ত দেখানোপনা।