রঙে-রসে বৈচিত্র্যময় সুতানটি উৎসব
কলকাতা তথা বাংলার গৌরবময় ঐতিহ্য, তার সাংস্কৃতিক ধারাবাহিকতা রক্ষণাবেক্ষণ করে চলেছে সুতানটি পরিষদ ১৯৯২ সাল থেকে। এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে তারা এই কাজে। প্রতি বছর পরিষদ আয়োজন করে সুতানটি উৎসবের। সম্প্রতি শোভাবাজার নাটমন্দিরে আয়োজন করা হয় ৩০তম সুতানটি উৎসবের। চারদিন ব্যাপী বর্ণাঢ্য এই উৎসবে ছিল নানা আয়োজন। প্রথম দিন অনুষ্ঠান শুরু হয় মঙ্গলাচরণের মধ্য দিয়ে, শিল্পীরা হলেন পরিষদের সদস্য জয়া বন্দোপাধ্যায় ও অদ্রিজা বন্দোপাধ্যায়। এরপর ছিল সুতানটি পরিষদের সভাপতি অনিন্দ্য কুমার মিত্রের স্বাগত ভাষণ। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন পরিষদের পেট্রন ইন চিফ, রাজ্যের প্রাক্তন রাজ্যপাল শ্যামল কুমার সেন। প্রধান অতিথি রূপে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা।
এ বছর সুতানটি সম্মান দেওয়া হয় প্রখ্যাত বৈজ্ঞানিক ডঃ শিবাশিস সাহা, খ্যাতনামা তবলা শিল্পী পণ্ডিত সমর সাহা এবং বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদকে–তাঁদের অতুলনীয় অবদানের জন্য। সুতানটি উৎকর্ষ বৃত্তি হিসেবে এককালীন ৩০,০০০ টাকা পুরস্কার দেওয়া হয় লেখাপড়া, সঙ্গীত (কণ্ঠ ও যন্ত্র), খেলাধুলা জগতের চারজন মেধাবী ছাত্রছাত্রীকে। একই সঙ্গে শিক্ষাভাতা দেওয়া হয় চারজন দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীকে। চারদিনের এই অনুষ্ঠান সুন্দর কথার মালায় গেঁথে ও সুষ্ঠু পরিচালনায় দর্শক দরবারে পৌঁছে দেন শম্পা বটব্যাল। তাঁর সঞ্চালনায় গুরুত্বপূর্ণ এই উৎসব যথাযথ মাত্রা পায়। সঞ্চালন-সঙ্গী অংশুমান বন্দোপাধ্যায় ছিলেন শম্পার যথার্থ সহযোগী।
সুতানটি উৎসবে আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ছিল বৈচিত্রের বাহার। উল্লেখযোগ্য তালিকায় রয়েছে রাজ্যের বিধায়ক দেবাশিস কুমার ও অভিনেত্রী দেবযানী বসু কুমার পরিবেশিত শ্রুতি নাটক (‘রাজা’ নাটকের অংশবিশেষ)। শঙ্খমালা-র প্রযোজনা অডিও ভিস্যুয়াল শো ‘জলস্রোত কথা কয়’ মন্ত্রমুগ্ধ করে দেয় উপস্থিত দর্শকবৃন্দকে। পরিচালনা সুমন্ত্র সেনগুপ্ত। রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী শৌনক চট্টোপাধ্যায় উপস্থাপিত করেন ‘রাগাশ্রয়ী রবি’, রাগরাগিণী নির্ভর রবীন্দ্রগান, মূল রাগ পরিবেশন সহ। লখনউয়ের খ্যাতনামা কত্থক নৃত্যশিল্পী ডঃ মনীষা মিশ্র ও তাঁর দল পরিবেশন করেন কত্থক নৃত্য। উপভোগ্য হয়ে ওঠে সুতানটি বিতর্ক–বিষয় ছিল ‘কলকাতা আর ভারতের সাংস্কৃতিক রাজধানী নয়’! বিতর্ক সভা পরিচালনা করেন অনিন্দ্য মিত্র। পক্ষে ও বিপক্ষে ছিলেন গৌতম ভট্টাচার্য, ডঃ সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়, জয়ন্ত নারায়ণ চট্টোপাধ্যায়, অরুণোদয় (রাহুল) বন্দোপাধ্যায়, সুদীপ্ত সেনগুপ্ত, জহর সরকার, বিশ্বজিৎ মতিলাল, স্নেহাশিস শূর, সৈয়দ কাওসর জামাল ও শ্রবন্তী বসু বন্দোপাধ্যায়।
পরিষদের সদস্য ও তাঁদের পরিবারের পক্ষ থেকে নিবেদিত হয় কয়েকটি ভিন্নস্বাদের অনুষ্ঠান। তথ্যসমৃদ্ধ ছিল ‘রবীন্দ্রনাথের নাটকের গান’, পরিবেশনায় জয়া বন্দোপাধ্যায়, অদ্রিজা বন্দোপাধ্যায় ও অংশুমান বন্দোপাধ্যায়। শ্রুতি নাটক পরিবেশন করেন শুভাশিস ও আত্রেয়ী ঘোষ ঠাকুর। অনসূয়া ও শ্রীনাথ বোসের নিবেদনে ছিল আর একটি শ্রুতি নাটক। আবৃত্তি নিবেদন করেন গোপা সাহা ও প্রকৃতি দত্ত। মাউথ অরগান বাজিয়ে শোনান অনিরুদ্ধ দত্ত। তানিয়া ঘোষের পরিচালনায় সমবেত গান পরিবেশিত হয়–অংশগ্রহণে সুতানটি পরিষদ পরিবারের সদস্যরা। বাংলার প্রবাদপ্রতিম সঙ্গীতশিল্পী ও স্রষ্টা জুটি সতীনাথ মুখোপাধ্যায় ও উৎপলা সেন স্মরণে পরিবেশিত হলো ‘উৎ-সতী’। অংশ নেন রূপা সরকার, মিঠু ঘোষ, দীপ্তি ভট্টাচার্য চন্দ্র, অমৃতা দাস ভৌমিক, অভিজিৎ দাস, দেবব্রত ব্যানার্জি ও পার্থসারথী বটব্যাল।